ড্রোনের ব্যবহার আজ সর্বত্র৷ পুলিশ ড্রোন ব্যবহার করে, দমকল ড্রোন ব্যবহার করে, ড্রোনে প্যাকেট পাঠানো হয়৷ কিন্তু ড্রোনে ক্যামেরা বসিয়ে বাজপাখির আকাশে শিকার ধরার ছবি তোলার চেষ্টা বোধহয় পল ক্লিমার-এর আগে কেউ করেননি৷
বিজ্ঞাপন
‘স্কাই' নাম হলেও, জীবটি আসলে একটা বড়সড় বাজপাখি, গোল্ডেন ঈগল৷ স্কাই-এর ট্রেনার হলেন পল ক্লিমা, পেশায় ফ্যালকনার৷ ট্রেনিং গ্রাউন্ড হলো আল্পস পর্বতমালার সুউচ্চ উপত্যকা৷ বাজপাখি নিয়ে একটা কাহিনিচিত্র তৈরি করার কথা হচ্ছে, স্কাই হবে তার নায়ক৷
জন্তু-জানোয়ারের ছবি তোলার নিত্য নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার হচ্ছে৷ বিশেষ করে উড়ন্ত অবস্থায় পাখিদের ছবি তোলা খুব কঠিন৷ যে কারণে স্কাই-এর মতো বড় ঈগলপাখিদের আকাশে শিকার ধরার ছবি আজ অবধি কেউ তুলতে পারেনি৷
যদি বাজপাখির মতো উড়তে পারতাম...
আজ থেকে ১০০ বছর আগে অটো লিলিয়েনথাল পাখিদের ওড়া দেখে মানুষের আকাশে ওড়ার পন্থা আবিষ্কার করতে চেয়েছিলেন৷ আজ মিউনিখের গবেষকরা আরো ভালো প্লেন ও ড্রোন তৈরির আশায় বাজপাখিদের নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন৷
ছবি: picture alliance/dpa/S. Hoppe
বাজপাখির উড়াল
উইন্ড টানেল দিয়ে জোরে বাতাস বইছে, সেই বাতাসে পাখা মেলেছে এক বাজপাখি৷ দশটি হাই স্পিড ক্যামেরা তার উড়ালের প্রতিটি মুহূর্ত ক্যামেরায় ধরে রাখছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/S. Hoppe
অসাধারণ ছবি
প্রতিটি ক্যামেরা সেকেন্ডে ১,০০০ ছবি তোলে৷ কাজেই মিউনিখে অবস্থিত জার্মান সামরিক বাহিনীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ ফ্লুইডমেকানিক্স অ্যান্ড এয়ারোডাইন্যামিক্সের বিজ্ঞানীরা বাজপাখির উড়াল বিশ্লেষণ করার জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য পাচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
পাখিদের কাছে উড়তে শেখা
বিশেষ করে ড্রোন তৈরির কাজে বাজপাখিদের পাখা না ঝাপটে, শুধু পাখা মেলে বাতাসে ভেসে থাকার ক্ষমতাটা বিজ্ঞানীদের কাজে আসতে পারে৷
ছবি: picture alliance/dpa/S. Hoppe
উচ্চগতি সম্পন্ন
বাজপাখিরা বিশ্বের দ্রুততম পাখিদের মধ্যে পড়ে৷ এক কিলো মতো ওজনের, এক মিটার উইং স্প্যানের এই পাখিরা নোজডাইভ, অর্থাৎ পাখা মুড়ে ওপর থেকে নীচে ঝাঁপ দেবার সময় ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার গতি অর্জন করতে পারে৷
ছবি: Hannes Lenhart
মানুষও ওড়া শিখতে চেয়েছে
যেমন জার্মানির অটো লিলিয়েনথাল, যাঁকে বিমানচালনার পথিকৃৎ বলে গণ্য করা হয়৷ তিনি ওড়া সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছিলেন সারস পাখিদের দেখে৷ ছবিতে বার্লিনের ফ্লিগেব্যার্গে লিলিয়েনথালের সেই ঐতিহাসিক উড়ালের একটি দৃশ্য দেখা যাচ্ছে৷
পাখির পালক
বাজপাখিদের বাদামি-সাদা দু’ধরনের পালক থাকায় তাদের পর্যবেক্ষণ করা সোজা, বলে ফ্যালকনার, অর্থাৎ যারা সাধ করে বাজপাখে পুষে থাকেন, তাদের ধারণা৷ সত্যিই এ ধরনের ছবির জন্য আলাদা করে রং দিতে হয় না৷
ছবি: picture alliance/dpa/S. Hoppe
শ্যেনচক্ষু
মিউনিখের বিজ্ঞানীরা সারা বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবেন, তারপর তাঁদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করবেন৷ অবশ্য বাজপাখিরা তা পড়বে কিনা সন্দেহ!
ছবি: picture alliance/dpa/S. Hoppe
7 ছবি1 | 7
শৈলা নামের শিকরে বাজ
পল ক্লিমা একটি বিশেষ পদ্ধতিতে ঠিক সেটাই করতে চান৷ তবে আগে পদ্ধতি পরীক্ষা করে দেখা দরকার৷ সেজন্য আছে শৈলা নামের এক সেকার ফ্যালকন৷ এই বিরল ও বহুমূল্য শিকরে বাজ খুব তাড়াতাড়ি শিখতে পারে, এদের প্রশিক্ষণ দেওয়াও সহজ৷ কিন্তু তার বিদ্যুৎগতিতে শিকার ধরার ছবি ক্যামেরায় তোলা আরো শক্ত৷ বিশেষ করে ঝাঁপ খাবার সময় শিকরে বাজদের গতি ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার ছাড়াতে পারে৷
হেলিকপ্টার থেকে সেই ছবি তোলার ব্যবস্থা করতে গিয়ে পল ক্লিমা ব্যর্থ হয়েছেন, কেননা হেলিকপ্টারের পাখার আওয়াজে বাজপাখিরা চঞ্চল হয়ে পড়ে৷ তাই পল-কে অন্য ব্যবস্থা দেখতে হয়েছে৷ পুলিশ অথবা দমকল যেমন ছোট ছোট ড্রোন ব্যবহার করে, সেভাবে কি কাছ থেকে বাজপাখিদের ছবি তোলা যায় না?
মাটি থেকে রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে ড্রোনটাকে খুব ভালোভাবে চালানো যায়, এমনকি জোরালো বাতাস থাকলেও৷ ক্যামেরা নিজে থেকেই নড়াচড়া সামলে নেয়৷ কিন্তু শৈলা কি এই আট রোটরের মাকড়শা দেখে ভয় পাবে না? না, শৈলা বিশেষ নার্ভাস হয়নি৷ কিন্তু তা-তেই কাজ হয়ে গেল না, কেননা কাছ থেকে শৈলার শিকার ধরার ছবি তোলার মতো গতিবেগ ড্রোনটার নেই৷
নাবিক ছাড়াই চলবে জাহাজ
04:20
ড্রোনের চোখে শৈলার শিকার ধরা
সেজন্য আকাশেই টোপ রাখতে হবে একটা বেলুন থেকে ঝুলিয়ে, যা-তে শৈলা তার দুর্ধর্ষ গতিতে ঝাঁপ না খেয়ে, কাছ থেকে শিকার ধরে৷ বেলুনের মধ্যে একটি জিপিএস ট্রান্সমিটার রাখা আছে, যার সিগনাল সরাসরি ড্রোনে যাচ্ছে৷ ড্রোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই সব কোঅর্ডিনেট ফলো করে চলেছে৷
কিন্তু এই পাহাড়ি এলাকায় বাজপাখির শিকার ধরার ছবি তুলতে হলে ড্রোনটিকে আরো অনেকক্ষণ উড়তে হবে৷ কাজেই স্বপ্ন সফল করতে ফ্যালকনার পল ক্লিমারকে এখনও অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যেতে হবে৷
আপনার-আমার ড্রোন
ড্রোন-কে অনেকে কোটি কোটি ডলার মূল্যের যুদ্ধদানব বলে থাকে৷ তবে বহুদিন ধরে বেসামরিক কাজেও চালক-বিহীন বিমান ব্যবহার করা হচ্ছে৷ সাধারণ ইলেকট্রনিক দোকানে ৩০০ ইউরোর কমেও এমন ড্রোন কিনতে পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সস্তার ড্রোন
চারটি প্রপেলার, দুটি ক্যামেরা, ব্যাটারিচালিত এই ড্রোনের নাম ‘কোয়াড্রোকপ্টার’৷ প্যারিসের এক কোম্পানি এটি বাজারে এনেছে৷ স্মার্টফোন-কেই রিমোট হিসেবে ব্যবহার করে এই ড্রোন ওড়ানো যায়৷ ক্যামেরায় তোলা ছবিও ফোনের পর্দায় দেখা যায়৷ অতএব বে-আইনি হলেও প্রতিবেশীর জানালায় উঁকি মারা সম্ভব৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ডালে-ডালে, পাতায়-পাতায়
ড্রেসডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ড্রোন দিয়ে গাছের চূড়া পর্যবেক্ষণ করেন৷ গাছের থ্রিডি মডেলও তৈরি করেন৷ রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রীও এই কর্মকাণ্ড দেখতে নিজে এসেছিলেন৷ অর্থাৎ, এখনো এই পদ্ধতি বেশ বিরল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘আসল’ ড্রোন
আসলে কিন্তু বিশেষ এক জাতের পুরুষ মাছিকেই ‘ড্রোন’ বলা হতো৷ বিশাল চোখ ও হুল ফোটানোর ক্ষমতা রয়েছে সেই মাছির৷ ‘ভোঁ-ভোঁ’ করা থেকেই ‘ড্রোন’ শব্দটি এসেছে৷
ছবি: picture-alliance/Wildlife
মায়ের বিকল্প ড্রোন
মা নেই? ড্রোন তো আছে! মিউনিখ ও বোলোনিয়ার বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রজাতির সুরক্ষার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন৷ অনাথ পক্ষীশিশুদের বাঁচাতে ড্রোনই হয়ে উঠছে মা-পাখি৷
ছবি: picture alliance/augenklick
দমকল ড্রোন
জার্মানিতে কয়েক বছর ধরেই দমকল ড্রোন ব্যবহার করছে৷ তারা বিশেষ ইনফ্রারেড ক্যামেরা নিয়ে আকাশ থেকে নিখোঁজ মানুষের খোঁজ করে৷ বিপজ্জনক এলাকায় গিয়েও ছবি তুলতে পারে এই যন্ত্র৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিরাপদ দূরত্ব
এক সার কারখানায় আগুন লেগে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল৷ এমনকি বিশেষজ্ঞরাও বিপদের আশঙ্কায় দুই দিন ধারে-কাছে ঘেঁষতে পারেন নি৷ ড্রোন থেকেই প্রাথমিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তেজস্ক্রিয় বিকিরণ
জাপানে ফুকুশিমা পরমাণু দুর্ঘটনার পরেও পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পেতে ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল৷ কোনো ঝুঁকি নিতে হয়নি৷ সেই ছবি থেকে ক্ষয়ক্ষতির সার্বিক চিত্র উঠে এসেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভারতে তৈরি প্রোটোটাইপ
ভারতেও ড্রোন নিয়ে গবেষণা চলছে৷ ব্যাঙ্গালোরের কাছে অনেক এয়ারোস্পেস সংস্থা মিনি-ড্রোন নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে৷ সন্ত্রাসবাদী বা বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় এই ড্রোন আকাশ থেকে এলাকার ছবি তুলতে পারবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কোটি কোটি টাকার সহায়তা
জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ড্রোন প্রযুক্তির উন্নতির কাজ চলছে৷ যেমন ইলমেনাউ-এর গবেষকরা এমন এক কোয়াড্রোকপ্টার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন, যা মোবাইল টাওয়ার মেরামত করতে পারবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাগরতলে ড্রোন
‘ডিপ ড্রোন ৮০০০’ নামের এই যন্ত্র উড়তে পারে না বটে, কিন্তু তাতে কী এসে যায়! সংজ্ঞা অনুযায়ী ড্রোন মানব-বিহীন হলেই চলবে৷ অর্থাৎ ড্রোন ডুবুরিও হতে পারে৷ মার্কিন নৌ-বাহিনীর তৈরি এই ড্রোন ২,৫০০ মিটার গভীরে গিয়ে ডুবোজাহাজ উদ্ধারে সাহায্য করতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রতিবাদ অব্যাহত
বেসামরিক ব্যবহার বাড়লেও মানুষের মূল নজর সামরিক ড্রোনের দিকে৷ সমালোচকদের চোখে এই সব ড্রোন গোয়েন্দাগিরি ও ধ্বংসের কাজেই ব্যস্ত৷ অবৈধ পথে মানুষ খুন করাও এদের কাজ৷ এই কর্মসূচির প্রতিবাদে জার্মান সংসদের সামনে বিক্ষোভ দেখা গেছে৷