কার্নিভাল উৎসবে ভাসছে জার্মানি৷ নানা রঙের, ঢঙের পোশাক পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সকলে৷ আগামী সোমবার, মানে ‘রোজেনমোনটাগ’ পর্যন্ত চলবে এই উৎসব৷ তবে আজ ‘ভাইবারফাস্টনাখট্’, অর্থাৎ আজকের সারাটা দিন একান্তই মেয়েদের৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার বেলা ঠিক ১১টা বেজে ১১ মিনিটে জার্মানির রাইন অঞ্চলের তিন বড় শহর কোলন, ড্যুসেলডর্ফ আর মাইনৎস বলতে গেলে রং-বেরঙের পোশাক আর মুখোশধারী মেয়েদের দখলে চলে গেল৷ কার্নিভালের জমে ওঠা মরশুমে এই দিনটির পোশাকি নাম ‘‘ভাইবারফাস্টনাখট্''৷
এদিন মেয়েদেরই দিন৷ অফিসে দোকানে বা রাস্তায় টাই বাঁধা পুরুষের টাইখানা কাঁচি দিয়ে কুচ করে কেটে দেন৷ প্রতিবাদ করার উপায় নেই৷ মেয়রের অফিসে হানা দিয়ে প্রমীলারা গ্যাঁট হয়ে বসে পড়েন খোদ মেয়েরের অফিসেই৷ রাস্তায় রাস্তায় চোখে পড়ে কার্নিভালের মজার পোশাক পরা মেয়েরা৷ তাদের সঙ্গে পুরুষরাও থাকে বৈকি৷ মাঝে মাঝে সশব্দ স্লোগান৷ কার্নেভালপ্রেমীদের স্বাগত – স্লোগান কোলন, আখেন, কোবলেন্স শহরে ‘‘আলাফ'' – ড্যুসেলডর্ফে আবার সে স্লোগান পাল্টে যায়৷ সেখানকার মানুষ বলে ওঠে ‘‘হেলাউ''৷
জার্মানিতে কার্নিভালের আয়োজনের প্রস্তুতির শুরুটা হয়েছে কিন্তু গত নভেম্বর মাসে৷ সেই মাসের ১১ তারিখে সকাল ১১ টা ১১ মিনিট ১১ সেকেন্ড থেকে শুরু হয় এর প্রস্তুতি নেয়া৷ আর এই উৎসব চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছবে আগামী সোমবার৷ যাকে বলা হয় ‘‘রোজেনমোনটাগ''৷
কোলনে কার্নিভালের চূড়ান্ত পর্বে উপস্থিত হয় দেশ-বিদেশের প্রায় দশ লাখ মানুষ৷ তাঁদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন প্রধান প্রধান রাস্তায় চলে দীর্ঘ শোভাযাত্রা৷ ছুঁড়ে দেয়া হয় অপেক্ষমান দর্শকদের দিকে চকলেট লজেন্স, ফুল, সুগন্ধী ও আরো নানা রকমের উপহার৷ কুড়িয়ে নেয় সে সব উপহার ছেলে বুড়ো মেয়ে পুরুষ সবাই৷ এ এক অন্যরকম উৎসব৷
কার্নিভালের রঙে রঙিন জার্মানি
জার্মানিতে এখন কার্নিভাল মৌসুম৷ কোলন, ড্যুসেলডর্ফ, মাইনৎসে মানুষের ঢল৷ কেউ সেজেছেন জলদস্যু, কেউ কাটছেন পুরুষের টাই৷ অনেকে আবার প্রতিক্ষায় আছে চুমুর৷ দেখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters
কোলনে ভাইবারফাস্টনাখট্
কোলনে ভাইবারফাস্টনাখট্ হচ্ছে ঐতিহ্যগতভাবে মেয়েদের দিন৷ দিনটি তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে ঘুরে বেড়িয়ে উদযাপন করে৷ এ সময় পুরুষদের বিশেষ সতর্ক থাকতে হয়, কেননা তাদের টাইগুলো হয়ে ওঠে নারীদের লক্ষ্যবস্তু৷ সুযোগ পেলেই মেয়েরা পুরুষের টাই কেটে দেয় এদিন৷ বিনিময়ে দেয় চুমু!
ছবি: picture-alliance/dpa
শীতের সঙ্গে মানিয়ে পোশাক
একসময় কার্নিভালের এই পোশাক ছিল শিশুদের জন্য৷ কিন্তু এখন এটা বয়স্কদের মাঝেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷ এই ছবিটি কোলনের পুরনো শহর থেকে তোলা৷
ছবি: Reuters
পে-ফোনের কদর বাড়ে
কার্নিভালের সময় রাস্তায় বা স্টেশনে থাকা পে-ফোন বুথগুলোর কদর বেড়ে যায়৷ অনেক সময় অতিরিক্ত চাপের কারণে মোবাইল নেটওয়ার্ক জ্যাম হয়ে যায়৷ আবার বাড়তি ভিড়ের কারণে সঙ্গীদের সঙ্গে দেখা করার স্থানও খুঁজে পাওয়া যায় না৷ ভরসা তখন তাই পে-ফোন৷ কোলনে এ রকম অবস্থা বেশি হয়৷
ছবি: Reuters
পোশাকে বৈচিত্র
কার্নিভালের মূল কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয় কোলন শহরকে৷ এই উৎসব উপলক্ষ্যে সেখানে দেখা যায় বৈচিত্রময় পোশাকের সমাহার৷ কেউ সাজছেন রাইনল্যান্ডের প্রিন্স, কেউ বা কাউবয়, আবার কেউ সাজেন জলদস্যুর বেশে৷ নারীরা আবার রূপকথার রাজকন্যার বেশও ধারণ করেন কখনো কখনো৷
ছবি: Reuters
কোলনে ‘ডার্থ ভেডার’
কার্নিভাল উপলক্ষ্যে কোলনের রাস্তায় হাজির হন স্টার ওয়ারসের ‘ডার্থ ভেডার’৷ তিনি আবার একা আসেন না৷ তাদের জন্য প্রতি বছর হোটেল বুক করতে হয়৷ তবে এই উৎসব উপলক্ষ্যে হোটেল রুমের ঘাড়া যায় বেড়ে৷ স্বাভাবিকের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি ভাড়া গুনতে হয় কার্নেভার মৌসুমে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ড্যুসেলডর্ফের টাউনহলে ভিড়
ড্যুসেলডর্ফে এটাকে বলে ‘হেলাও’৷ কার্নিভালের দিন সেখানকার টাউন হলে ঠিক ১১.১১ সময়ে মেয়রকে অবরোধ করা হয়৷ অনেকে এরপর ড্যুসেলডর্ফের পুরনো শহরের বিভিন্ন বারে ঢুকে পড়েন৷ সেখানে আড্ডার মেয়াদ পরেরদিন সকাল অবধিও গড়ায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পোশাক পরিকল্পনা
কার্নিভালের প্যারেডে দেখা সব পোশাক কিন্তু বিক্রি হয় না৷ কার্নিভাল প্রেমীরা অনেক সময় সপ্তাহের পর সপ্তাহ সময় ব্যয় করে উৎসবের জন্য নিজের পোশাকটি তৈরি করেন৷ শুধু দেখতে সুন্দর হলেই হবে না, পোশাকটি ব্যতিক্রমও হতে হবে৷ তা না হলে নজর কাড়বে কিভাবে!
ছবি: picture-alliance/dpa
হেলাও এবং প্রস্ট
ড্যুসেলডর্ফের এই শয়তানের মতো অনেকেই নাচতে নাচতে গলা শুকিয়ে ফেলেন৷ এরপর গলা ভেজাতে সাহায্য করে এই গাঢ় বিয়ার৷ কার্নিভালের সময় রাস্তায় গ্লাস এবং বোতলে বিয়ার পান নিষিদ্ধ করেছে শহর কর্তৃপক্ষ৷ ফলে কদর বেড়েছে প্লাস্টিক কাপের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লম্বা লাইন প্রতীক্ষা
এটাও কার্নিভালের অংশ৷ এসময় বার এবং টয়লেট দু’জায়গার সামনেই এভাবে লম্বা লাইন দেখা যায়৷ কার্নিভালের কেন্দ্রগুলোতে ‘জল বিয়োগ’ এক বড় ইস্যু, সেটা ভালোই জানেন আয়োজকরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আমাকে চুমু দাও!
মাইনৎস শহরে ব্যাঙ রাজকুমারের গল্প সম্পর্কে সবাই জানেন৷ তাই যারা ‘ফ্রগ প্রিন্স’-এর পোশাকে ঘুরে বেড়ায়, তারা কিন্তু এক বিশেষ বার্তা বহন করে৷ আর তা হচ্ছে, ‘আমাকে চুমু দিতে পারো৷’
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
জার্মানিতে ‘রোজেনমোনটাগ’ বা গোলাপি সোমবারের শোভাযাত্রার আয়োজন করেছিল কোলনের বাসিন্দারাই, সেই ১৮২৩ সালে৷ এর দু’বছর পর ড্যুসেলডর্ফ শহর করে এই আয়োজন৷ আর ১৮৩৬ সালে মাইনৎসে৷
যাই হোক, এত বছরে এই উৎসব হয়ে উঠেছে জার্মানির, বিশেষ করে রাইন অঞ্চলের সবচেয়ে বড় উৎসব৷ স্কুলগুলোতে আগেই বলে দেয়া হয়েছে কোন স্কুলে কোন থিমের উপর পোশাক পরা হবে৷ কেবল বাচ্চারা নয়, মা বাবাকেও যোগ দিতে হয় শিশুদের সঙ্গে আনন্দ উৎসবে৷ আর এক এক দিন একেক এলাকায় আয়োজন করা হয়েছে অনুষ্ঠানের৷ সব মিলিয়ে জার্মানির বাতাসে এখন কার্নিভাল উৎসবের আমেজ৷