উত্তর ইউরোপের দেশ এস্তোনিয়া৷ মাত্র ১৩ লক্ষ মানুষের বাস সেখানে৷ যে কোনো সময় যে-কোনো স্থানে তাঁরা বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন৷ কারণ সরকার মনে করে এটি নাগরিকদের মৌলিক অধিকার৷
বিজ্ঞাপন
শুধু বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার নয়, প্রায় সব ধরণের সরকারি সেবাও পাওয়া যায় অনলাইনে৷
বর্তমানে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া মার্কোস ইসোটাম প্রোগ্রামিং করছে পাঁচ বছর বয়স থেকে৷ সেসময় মিনি রোবট নিয়ন্ত্রণের সফটওয়্যার তৈরি করেছে সে৷ মার্কোস বলছে, ‘‘সফটওয়্যার বানাতে চাইলে আপনাকে এমন পারদর্শী হতে হবে, যেন আপনি যা চান, রোবট ঠিক তাই করে৷ আমি এস্তোনিয়ার সেরা প্রোগ্রামার হতে চাই৷''
এস্তোনিয়ার এই অবস্থার পেছনে আছেন সরকারের আইটি উপদেষ্টা সিম সিকুট৷ ডিজিটাল আইডি দিয়ে তিনি তাঁর সব ডিজিটাল তথ্য দেখতে পারেন৷ যেমন ব্যক্তিগত তথ্য ও চিকিৎসা, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং আয় সংক্রান্ত তথ্য৷ মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আয়করও দাখিল করতে পারেন৷
‘ডিজিটাল এস্তোনিয়া’ – ইন্টারনেট বিশ্বের স্বপ্ন
04:23
তবে সমস্যা হলো, আগে থেকে ব্লক না করলে অন্যরাও এ সব তথ্য দেখতে পান৷ সিম সিকুট বলেন, ‘‘আমরা নাগরিকদের গোপনীয়তা রক্ষার সুযোগ দিয়েছি৷ কে বা কারা তথ্য দেখছে লগবুকের মাধ্যমে তা জানা যায়৷ যেমন এখানে আমি দেখতে পাচ্ছি, আমার পারিবারিক ডাক্তার ও দাঁতের চিকিৎসক আমার তথ্য দেখেছেন৷
সেটা ঠিক আছে৷ কিন্তু যদি দেখি, এমন কেউ আমার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য দেখছে, যার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই, তাহলে আমি ব্যবস্থা নিতে পারি৷ এভাবে পুলিশ ও নার্সদের শাস্তি পাওয়ারও উদাহরণ আছে৷''
সব কিছু অনলাইন হওয়ার কারণে বছরে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ইউরো বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে বলে জানান তিনি৷
তবে এমন ডিজিটাল ব্যবস্থা অরক্ষিতও বটে৷ ২০০৭ সালে একবার সাইবার হামলার শিকার হয়েছিল এস্তোনিয়া৷ এখন তারা দেশের বাইরের সার্ভারে ব্যাকআপ স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপত্তা বাড়াতে চাইছে৷
সিম সিকুট বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সংঘাত কিংবা অন্য কোনো কারণে ডিজিটাল ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দিলেও আমাদের সরকার পুরোপুরি কাজ করতে পারবে, নাগরিকরা সব সেবা ব্যবহার করতে পারবেন৷ কারণ ভবিষ্যতে দেশের বাইরে স্থাপিত সার্ভারে সব তথ্য জমা থাকবে৷ ফলে আমরা সব সেবা দিতে পারবো৷''
ইন্টারনেটে সবচেয়ে প্রভাবশালী যারা
ইন্টারনেটে যে কেউ যে কোনো সময় আলোচনায় আসতে পারেন৷ আফগানিস্তানের এক গ্রাম থেকে পোস্ট করা ছবি মেসি অবধি পৌঁছাতে পারে, আলোড়ন তুলতে পারে যেকোন ভিডিও৷ চলুন ইন্টারনেটে সবচেয়ে প্রভাবশালীদের দেখে নেই৷
ছবি: Colourbox/L. Dolgachov
গেমারের ভক্ত চার কোটি!
সুইডেনের কম্পিউটার গেমার ফিলিক্স আরভিড উলফ শেলবের্গের ইউটিউব চ্যানেলের সাবসক্রাইবারের সংখ্যা চার কোটির বেশি৷ গত বছর টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ইন্টানেটে প্রভাবশালীদের তালিকায় তাঁকে সবার আগে রাখা হয়েছে৷ তালিকায় থাকা আরো কয়েকজন সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন নেক্সট বাটনে৷
ছবি: Roslan Rahman/AFP/Getty Images
সংগীত তারকার উত্তর
২৫ বছর বয়সি সংগীত তারকা টেইলর সুইফটের ইন্টারনেট ভক্তের সংখ্যা কয়েক কোটি৷ তাঁর সবগুলো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম অ্যাকাউন্টই ভক্ত সংখ্যার বিবেচনায় বেশ উপরের দিকে৷ ভক্তদের সঙ্গে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেন৷ কেউ গালি দিলে জবাব দেয়া কিংবা প্রেমে ব্যর্থ ভক্তের জন্য গান খুঁজে দেয়ার মতো কাজও করেছেন তিনি৷ ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া মানুষদের নিয়ে একাধিক পার্টিও করেছেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/G. Denholm
দ্য জেস্টার
কারো কাছে হিরো, বাকিদের কাছে ক্রিমিনাল৷ দ্য জেস্টার ইন্টারনেটে প্রভাবশালী হ্যাক্টিভিস্টদের একজন, যাদের কাজ হচ্ছে ইন্টারনেট সন্ত্রাসী এবং ঘৃণা ছড়ানো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করা৷ জেস্টার দাবি করেন, তিনি তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস-সহ ক্ষতিকর ১৮০টি ওয়েবসাইট হ্যাক করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Tirl
ভাইনে সবচেয়ে জনপ্রিয় যিনি
সোশ্যাল মিডিয়া ভাইন যারা ব্যবহার করেন কিংবা যারা এখন টিনএজার, তাদের কাছে এক অতি পরিচিত নাম ন্যাশ গ্রিয়ার৷ ১৭ বছর বয়সি এই তরুণের ভাইনে ফলোয়ারের সংখ্যা এক কোটি পচিশ লাখের বেশি৷
ছবি: picture alliance/empics/A. Matthews
ফেসবুকে যাকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করা হয়
বলছি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কথা৷ টাইমের হিসেবে ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি লাইক পাওয়া বিশ্বে নেতা তিনি, টুইটারে সবচেয়ে বেশি অনুসারী আছেন এমন বিশ্ব নেতাও তিনি৷ রেডিট-এর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিবার প্রদর্শিত হয়েছে বারাক ওবামার ‘আস্ক মি এনিথিং’ পাতাটি৷
ছবি: Gabriel Bouys/AFP/Getty Images
ইন্সটাগ্রাম রানি কিম কার্দেশিয়ান
মার্কিন টিভি তারকা কিম কার্দেশিয়ান নানাভাবে নিজেকে আলোচিত রাখেন৷ ইন্সটাগ্রামে তাঁর ভক্তের সংখ্যা ছয় কোটির মতো৷ সেখানে মূলত সেলফি পোস্ট করে এত ভক্তকে সন্তুষ্ট রেখেছেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/D. Becker
আছেন এক লাইফস্টাইল ব্লগারও
টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ত্রিশ ব্যক্তির তালিকার প্রথম সাতজনের মধ্যে আছেন একজন লাইফস্টাইল ব্লগারও৷ ব্লগার জয় চো আছেন জনপ্রিয় সব সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে৷ তবে পিন্টারেস্ট-এ তাঁর এক কোটি ত্রিশ লাখ ভক্ত থাকাটা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়৷
ছবি: Colourbox/L. Dolgachov
7 ছবি1 | 7
এমন পরিবেশ পেয়ে একের পর এক স্টার্টআপ কোম্পানি গড়ে উঠছে৷ আলভার লুমবার্গ ও তাঁর এক সহকর্মী মাত্র ১৮ মিনিটে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন৷ এ জন্য তাদের কারও সঙ্গে কথা বলতে হয়নি কিংবা জটিলতা পোহাতে হয়নি৷
তাদের কোম্পানি অনলাইনে অর্থ প্রেরণ সুবিধা দিয়ে থাকে – ব্যাংকের চেয়ে কম দামে৷
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীন হয় এস্তোনিয়া৷ এরপর একেবারে নতুন করে শুরু করে দেশটি৷
বিদেশি কোম্পানিগুলো যেন এস্তোনিয়ার ডিজিটাল সেবা ব্যবহার করতে পারে সেজন্য সরকার তাদেরও ‘ই-রেসিডেন্সি' সুবিধা দিচ্ছে৷ এই বিষয়টিকে অন্যায় হিসেবে দেখছেন না তাঁরা৷ উদ্যোক্তা লুমবার্গ বলেন, ‘‘আমাদের দেশ ছোট৷ তাই, শুধু এস্তোনিয়ার বাজারের জন্য কিছু বানানোর মানে নেই৷ এ কারণে শুরু থেকেই আপনাকে বৈশ্বিক পরিসরে ভাবতে হবে৷ আর সেটা শুরু করা মানেই আপনি বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে গেছেন৷''
তথ্য গোপন রাখার সাতটি সহজ উপায়
আধুনিক প্রযুক্তির কারণে মানুষের সুযোগ-সুবিধা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে তথ্য চুরির ঘটনা৷ ফোর্বস জানাচ্ছে কোন সাতটি উপায়ে আপনি খুব সহজেই ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষা করতে পারেন৷
ছবি: Fotolia/davidevison
পাসওয়ার্ড নিজের কাছে রাখুন
কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের পাসওয়ার্ড যেন কখনই এক না হয়৷ আর ব্যাংক কার্ড-এর সঙ্গে যেন এই পাসওয়ার্ডের মিল না থাকে৷ এছাড়া কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটে কোনো পাসওয়ার্ড লিখে রাখবেন না৷ এর ফলে আপনার তথ্য চুরির সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়৷ বাড়ির বাইরে গেলে এগুলি ‘লক’ করে যাবেন৷
ছবি: Sergey Nivens - Fotolia.com
নামে ‘গুগল অ্যালার্ট’ ব্যবহার করুন
এটা খুব সহজ পন্থা, আপনি যদি দেখতে চান ইন্টারনেটে আপনার সম্পর্কে সবাই কী বলছে৷ সোজা এই ঠিকানায় যান – http://www.google.com/alerts এবং আপনার নাম লিখুন৷ তারপর আপনার নামের বিভিন্ন ধরন লিখে, তার আগে ও পরে ‘কোটেশন মার্ক’ জুড়ে দিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
ব্যবহারের পর লক্ষ্য রাখা
আপনি যদি অন্য কারো কম্পিউটার বা ট্যাবলেট ব্যবহার করেন, তবে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন৷ আপনার পর যিনি সেটা ব্যবহার করবেন, তিনি যাতে আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে না পারে – সেটা খেয়াল রাখুন৷ আপনি যদি এটা করতে ভুলে যান, তাহলে ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে৷
ছবি: AFP/Getty Images
ফোন, ই-মেল বা জিপ কোড ব্যবহার করতে না দেয়া
অচেনা কোনো মানুষ এই নম্বরগুলো জানতে চাইলে, আপনারা দেবেন না৷ দেখা যায় কোনো অফিস তাঁর কর্মীর কাছ থেকে এ সব তথ্য চাইলে, অনেকেই সেচ্ছ্বায় তা দিয়ে দেয়৷ বহু অফিস এ নিয়ে একটি প্রোফাইল তৈরি করে৷ আপনার কিন্তু এ সব তথ্য না দেয়ার অধিকার আছে৷ তাই আপনি যদি এতে স্বাচ্ছ্বন্দ্যবোধ না করেন, তবে দেবেন না৷
ছবি: picture-alliance/ZB
কার্ড নয় ক্যাশ
আপনি যদি চান আপনি যে পণ্যটি কিনছেন, সেই কোম্পানি আপনারা পরিচয় না জানুক, তবে নগদ অর্থে জিনিস কিনুন৷
ছবি: AP
ফেসবুকে নিরাপত্তার জন্য ‘ফ্রেন্ডস’ ব্যবহার করুন
ফেসবুকে সবসময় ‘সিকিউরিটি’ বা নিরাপত্তা পরীক্ষা করুন৷ পোস্ট করার পর লক্ষ্য রাখুন আপনি আপনার ছবি বা মন্তব্য ‘ফ্রেন্ডস’ করে রেখেছেন, নাকি ‘পাবলিক’ করেছেন৷ আপনি যদি ‘স্পেশ্যাল’ নির্বাচন করেন এবং ঠিক করে দেন কে কে আপনার পোস্ট দেখতে পাবে, তবে সেটা আপনার তথ্য নিরাপত্তার জন্য তুলনামূলকভাবে ভালো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Bozoglu
‘হিস্ট্রি’ এবং ‘কুকিস’ মুছে ফেলুন
আপনি সবশেষ কবে এটা করেছেন? আপনি যদি নিশ্চিত না হন, ব্রাউজারে গিয়ে এটা পরিবর্তন করুন৷ ব্রাউজারের ‘প্রাইভেসি সেটিংস’-এ যান, সেখানে ‘নেভার রিমেমবার হিস্ট্রি’ নির্বাচন করুন৷ এর ফলে ইন্টারনেটে আপনাকে ‘ট্র্যাক’ করাটা হ্যাকারদের জন্য কঠিন হবে৷ এছাড়া আপনি ‘অ্যাড অন’-ও ব্যবহার করতে পারেন৷