সিরিয়া সংকটের পাঁচ বছর পূর্ণ হলো৷ এই পাঁচ বছরে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে, দুর্ভোগ ক্রমেই বেড়েছে বেঁচে থাকা সিরীয়দের৷ সবচেয়ে বেশি দুঃসময় শিশুদের৷ সিরিয়ায় যেন শিশুদের বেঁচে থাকার মতো জায়গাই নেই!
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ-এর সিরিয়া সংকট বিষয়ক সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ কথাই বলা হয়েছে৷ প্রতিবেদনের শিরোনাম, ‘নো প্লেস ফর চিলড্রেন', অর্থাৎ শিশুদের জন্য কোনো জায়গাই নেই৷
জায়গা নেই বলতে সুস্থ জীবনযাপন দূরের কথা, সুস্থ, স্বাভাবিক চিন্তাভাবনা নিয়ে নিরাপদে বড় হয়ে ওঠারও কোনো জায়গা নেই৷ থাকার কথাও নয়৷ পাঁচটি বছর ধরে যুদ্ধ চলছে একটি দেশে৷ এ সময়ে জন্ম নিয়েছে কমপক্ষে ৩৭ লাখ শিশু৷ যুদ্ধের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্কই নেই, অথচ যুদ্ধ তাদের জীবনকে গ্রাস করে বসে আছে৷
ওই শিশুদের সকালে ঘুম ভাঙে গোলাগুলির শব্দে৷ ঘরে এসে পড়ে বোমা৷ স্কুলে গেলে সেখানে চলে হামলা৷ স্কুলে যাওয়ার পথে হামলা, স্কুল থেকে ফেরার পথে হামলা৷ সিরীয় শিশুরা কোথায় নিরাপদ?
যুদ্ধের ডামাডোলে অবোধ অসহায় শিশু
চার বছরেরও বেশি হয়ে গেল সিরিয়ায় যুদ্ধ চলছে৷ ইরাক আর আফগানিস্তানেও চলছে বড়দের ক্ষমতার লড়াই৷ তার মাঝেই নিরীহরা লড়ছে বেঁচে থাকার আপ্রাণ লড়াই৷ শিশুরাই বেশি অসহায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Habibi
আশ্রিতের কষ্ট
সিরিয়া থেকে প্রাণ রক্ষার্থে এখনো শত শত মানুষ আসছে ইউরোপে৷ জীবন হাতে নিয়ে কোনো রকমে সাগর পার হয়ে ইউরোপে পা রাখতে পারলেই স্বস্তি৷ গ্রিসের একটি দ্বীপে পৌঁছানোর পর তেমন স্বস্তিই অশ্রু হয়ে ঝরছে এক শরণার্থীর চোখ থেকে৷
ছবি: Reuters/D. Michalakis
যুদ্ধক্ষেত্রের স্বাভাবিকতা
সিরিয়ার এই দুটি শিশুর কাছে যুদ্ধই এখন স্বাভাবিক ঘটনা৷ তাই মৃত্যুভয় নিয়েও তারা হাসতে জানে, খেলতে পারে৷ একটু আগেও ওরা খেলেছে, তবে এখন ওরা যুদ্ধ থামার অপেক্ষায়৷ যুদ্ধটা একটু থামলেই এক দৌড়ে বাবা-মায়ের কাছে যাবে৷
ছবি: DW/Kamal Sheikho
পিতা-পুত্র
দেশের সীমানা একবার পার হতে পারলে সিরীয়রা প্রথমে যায় তুরস্কে, তারপর সোজা ইউরোপে৷ ছবির এই পিতা-পুত্র তুরস্কের সীমান্তেই পুলিশি বাঁধার মুখে অসহায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
তবু আনন্দ জাগে
তুরস্কের এক শরণার্থী শিবির৷ সেখানে শিশুদেরও মেনে নিতে হয় মানবেতর জীবন৷ তবু সুযোগ বা উপলক্ষ্য পেলেই আনন্দে মাতে তাদের মন৷ এই শিশুটিও মেতেছে আনন্দে৷
ছবি: picture-alliance/AA/I. Erikan
অস্ত্র নিয়ে হাসি-তামাশা
এই শিশুটি আফগানিস্তানের৷ তার বাবাও জঙ্গি৷ আরেক জঙ্গি খুনসুটিতে মেতেছে তার সঙ্গে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Habibi
5 ছবি1 | 5
অনিচ্ছাকৃত হামলার শিকার হলে হয়ত বলা যেত সিরিয়ায় শিশুদের বেঁচে থাকার তবু একটু আশা আছে৷ কিন্তু ইউনিসেফ এমন অন্তত ১৫০০ ঘটনা সম্পর্কে জেনেছে যেগুলোতে ভয়াবহভাবে ভয়াবহভাবে লঞ্ছিত হয়েছে শিশু অধিকার৷ দেড়শ'রও বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে স্কুলে, স্কুলে যাওয়ার পথে কিংবা স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে চালানো হামলায়৷
প্রায় সব হামলাই পরিকল্পিত৷ জার্মানির ইউনিসেফ কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক ক্রিস্টিয়ান শ্নাইডার জানালেন শিশুদের ঠান্ডা মাথায় গুলি করে মারার মতো ঘটনাও হরহামেশা ঘটছে সিরিয়ায়৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘স্নাইপাররা এখন সরাসরি শিশুদেরও টার্গেট করছে৷ স্কুলে চালানো হচ্ছে বোমা হামলা৷ যে যুদ্ধের সঙ্গে শিশুদের কোনো সম্পর্ক নেই, সশ্স্ত্র জঙ্গিরা সেই যুদ্ধে শিশুদেরই নামিয়ে দিচ্ছে৷'' ইউনিসেফ-এর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর প্রত্যক্ষ যুদ্ধে কমপক্ষে ১০০ শিশু নিহত বা আহত হয়েছে৷
ইউনিসেফ-এর প্রতিবেদনের শিরোনাম তাই, ‘সিরিয়া: যেখানে শিশুর জন্য কোনো জায়গা নেই৷' অবশ্য যেখানে শিশুদেরই বাঁচার জায়গা নেই সেখানে কোনো মানুষেরই বা নিরাপত্তা থাকে!
বাংলাদেশের শিশুরা কি নিরাপদ? আপনার মন্তব্য জানান, নীচের ঘরে৷
এসিবি/ডিজি (এএফপি, এপি)
‘এতিম’ শিশু শরণার্থীরা ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার
ইউরোপে আশ্রয় মিলছে শরণার্থীদের৷ খারাপ খবরও আসছে তাদের নিয়ে৷ সপ্তাহে একটি দেশেই অন্তত ৭০০ এমন শিশু আসছে যাদের বাবা-মা সঙ্গে নেই৷ ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অনেকেই৷ গ্রিসে শুরু হয়েছে শরণার্থী-পুলিশ সংঘর্ষ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Djurica
বছরে ৫ লাখ শরণার্থী নেবে জার্মানি
কয়েক হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী নিরাপদ এবং উন্নত জীবনের আশা নিয়ে প্রবেশ করেছে জার্মানি ও অস্ট্রিয়ায়৷ জার্মানির ডেপুটি চ্যান্সেলর সিগমার গাব্রিয়েল জানিয়েছেন, আগামী কয়েক বছর জার্মানি বছরে ৫ লক্ষ করে অভিবাসনপ্রত্যাশী নিতে পারবে৷ তিনি আরো জানান, এত শরণার্থী নিলেও সরকার জনগণের ওপর বাড়তি করারোপ করবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
বাড়িতে শরণার্থী রাখতে আগ্রহী ব্রিটিশরা, সরকারের ওপর বাড়ছে চাপ
শিশু আয়লানের লাশের ছবি নিয়ে আলোড়নের পর বছরে ২০ হাজার শরণার্থী নিতে রাজি হয়েছে ব্রিটেন৷ তবে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের এই ঘোষণায় ব্রিটিশরাই সন্তুষ্ট নয়৷ এখনো অনেক ব্রিটিশ ইন্টারনেটে নিজের বাড়িতে শরণার্থী রাখার আগ্রহ প্রকাশ করে সরকারের প্রতি আরো উদার হবার আহ্বান জানাচ্ছেন৷ প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টিও একই দাবি তুলেছে৷ ব্রিটেন আরো বেশি শরণার্থী নেবে কিনা এ নিয়ে আলোচনা হবে সংসদে৷
ছবি: Reuters/T. Melville
গ্রিসে শরণার্থী-পুলিশ সংঘর্ষ, শঙ্কিত ইইউ সভাপতি
শরণার্থী আর পুলিশের মধ্যে আবার সংঘর্ষ শুরু হয়েছে গ্রিসের লেসবস দ্বীপে৷ আড়াই হাজারের মতো অভিবাসনপ্রত্যাশী এথেন্সে যাওয়ার জন্য জোর করে জাহাজে উঠতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়৷ তারপরই শুরু হয় সংঘর্ষ৷ এদিকে তুরস্কের কাছাকাছি দেশ হওয়ায় গ্রিসে সিরীয় শরণার্থীর ঢল অব্যাহত রয়েছে৷ ইইউ সভাপতি ডোনাল্ড টাস্ক এ নিয়ে শঙ্কিত৷ তিনি মনে করেন, সিরিয়া থেকে অবাধে লোক আসার এই ধারা আগামী কয়েক বছর ধরে চলতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AA/A. Mehmet
সুইডেনে ‘এতিম’ শিশু শরণার্থী
তাদের বাবা-মা বেঁচে আছে কিনা, বেঁচে থাকলে কোথায় আছে- শিশুরা তা বলতে পারেনা৷ প্রাণ বাঁচাতে একা একাই দেশ ছেড়ে তারা চলে এসেছে ইউরোপে৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি সপ্তাহে শুধু সুইডেনেই ৭০০-র মতো এমন শিশু আসছে৷ ওপরের ছবিটি হাঙ্গেরির৷
ছবি: Reuters/L. Balogh
পথে পথে শিশুনির্যাতন
শুধু সিরিয়া নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ, এমনকি আফ্রিকা অঞ্চল থেকেও আসছে শিশু শরণার্থী৷ ডেনমার্কের ওরেসুন্ড ব্রিজ হয়ে তারা ঢুকে পড়ছে সুইডেনে৷ শিশুদের অনেকেই আহত, শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনে বিপর্যস্ত৷ চলন্ত ট্রাক থেকে লাফিয়ে নামতে গিয়ে আহত হচ্ছে অনেকে৷ অনেকে আবার ধর্ষণ, নির্যাতনের শিকার৷ মানবপাচারকারীরাই করছে ধর্ষণ, নির্যাতন৷