যে পিৎজার দোকানে অটিজম আক্রান্তরা কাজ করেন
৮ মে ২০২৫
আকাম্পোরা বলেন, ‘‘আমাদের এক ছেলের অটিজম আছে৷ যখন প্রথম তার এই রোগটি নির্ণয় করা হয়, তখন আমাদের পৃথিবী ভেঙে পড়েছিল, কারণ, আমরা জানতাম যে, তার জীবন কঠিন হবে৷ এক রাতে আমি আমার স্ত্রীকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বলেছিলাম, ‘স্টেফানিয়া, আমাদের এমন একটি রেস্তোরাঁ শুরু করতে হবে যেখানে অটিজম আক্রান্ত তরুণেরা কাজ কররে'৷ সে তখন আমাকে বলেছিল, ‘আবার ঘুমাও৷ তুমি তো একটা ডিমও সিদ্ধ করতে পারো না'৷ যাত্রার শুরুটা এভাবেই হয়েছিল৷''
পিজআউটের প্রথম পিৎজা ২০২১ সালে তৈরি করা হয়েছিল৷ এখন দুটি রেস্টুরেন্ট আছে যেখানে ৪১ জন অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তি কাজ করেন৷ লরেঞ্জো বোনাচিনা কয়েক বছর আগে সেখানে ওয়েটার হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন৷
লরেঞ্জো জানিয়েছেন, ‘‘পিজআউট আমার জীবন পুরোপুরি বদলে দিয়েছে৷ আগে আমি একটি প্রতিবন্ধী কেন্দ্রে ছিলাম৷ কিন্তু এখানে আমি সত্যিকার অর্থে উন্নতি করেছি৷ প্রবেশনকাল ছিল দুই বছর৷ প্রথমে আমি সত্যিই জানতাম না অতিথিদের সাথে কীভাবে আচরণ করতে হয়৷ এখন আমি সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষ৷''
আকাম্পোরা বলেন, ‘‘লরেঞ্জো আমাকে বলেছিল, প্রতিবন্ধী কেন্দ্রে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে, সে একবার কাঁটাচামচ দিয়ে নিজের মাথায় আঘাত করেছিল৷ অটিজম আক্রান্ত অনেক মানুষ যখন চাপ অনুভব করেন, তখন নিজেদের আঘাত করেন৷ লরেঞ্জো একজন দারুণ মানুষ এবং সে একজন দুর্দান্ত ওয়েটার হয়ে উঠেছে৷''
একদিন ৩০০ জনেরও বেশি অতিথি রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলেন৷ এই ধরনের হট্টগোল অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে৷ তাদের প্রায়ই অন্য ব্যক্তির অনুভূতি, মেজাজ এবং মুখের ভাব পড়তে অসুবিধা হয়৷ অটিজমের এত বেশি মাত্রা রয়েছে যে, একে অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার বলা হয়৷ প্রক্রিয়াটি স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে বললে এবং রুটিন থাকলে সহায়তা হয়৷
আকাম্পোরা বলেন, ‘‘সবকিছু সুনির্দিষ্টভাবে সাজানো থাকলে তারা স্বাধীন ও নিরাপদভাবে তাদের কাজ করতে পারে৷ এটা তাদের আরও উৎপাদনশীল করে তোলে৷''
রেস্টুরেন্টটি তার কর্মীদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে: টেবিলে যাওয়ার জন্য পরিষ্কার পথ, শব্দ নিরোধক ব্যবস্থা এবং দেয়ালে মাত্র তিনটি রঙ৷ লরেঞ্জো এই কাজের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছে৷
লরেঞ্জো জানিয়েছেন, ‘‘আমি মনে করি, অটিজম নিয়ে বেঁচে থাকা অসাধারণ৷ আপনার এমন ক্ষমতা থাকে, যা সাধারণ মানুষের থাকে না৷ আমি এভাবে থাকতে পেরে খুশি, আর আমি আর কখনও এর জন্য লজ্জিত হবো না৷''
মাত্তেও চেলেগিনের সজাগ নজরদারিতে পিৎজা তৈরির কাজ চলে৷
কনভেয়ার বেল্টসহ একটি বিশেষ ওভেন থাকায় পিৎজা কখনও পোড়ে না৷ তবে তারপরও কাজটি চাপের বলে জানান মাত্তেও৷ তিনি বলেন, ‘‘সব অর্ডার শেষ করার পর আমি একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারি৷ কিন্তু আমাদের পিৎজা যে এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, তা সত্যিই অবাক করার মতো৷''
পিজআউট একটি লাভজনক ব্যবসায়িক মডেল, যা অতিথি ও কর্মী সবার মুখেই হাসি ফোটায়৷
গুস্তাভ হফার/জেডএইচ