ওয়াং ওয়েনক্সি-র ডিজাইন করা এই বিছানা রাতে ঘুমের সময় হঠাৎ ভূমিকম্প শুরু হলে নিজে থেকেই মুড়ে একটা স্টিলের বাক্সে পরিণত হয়ে যায়, ছাদ ভেঙে পড়লেও যার ভিতর আপনি নিরাপদ৷
বিজ্ঞাপন
২০০৮ সালে চীনের সিচুয়ান প্রদেশের ভূমিকম্পে ৯০,০০০-এর বেশি মানুষ নিহত অথবা নিখোঁজ হন৷ তার পর থেকেই ভূমিকম্প প্রতিরোধী বাড়িঘর আর আসবাবপত্র বাজারে আসতে শুরু করে৷
ওয়াং ওয়েনক্সি-র ডিজাইন করা ভূমিকম্প প্রতিরোধী বিছানার পেটেন্ট নেওয়া হয় ২০১০ সালে৷ তার পর থেকে তিনি নানা ধরনের ভূমিকম্প প্রতিরোধী বিছানা ডিজাইন করেছেন৷
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিদ্রামগ্ন মানুষটি বিছানার দু'ধারের মাঝখানের ফাঁকটিতে পড়ে যান, ওপরের ঢাকনা বন্ধ হয়ে যায় – কিন্তু ভিতরে খাবার-দাবার, পানি ও অন্যান্য সরঞ্জাম রাখার জায়গা থাকে৷
ওয়াং-এর ভিডিও-তে যে দু'টি জিনিস দেখানো হয়নি, সে দু'টি হলো: ভূমিকম্পের পর ত্রাণকর্মীরা বাড়ির ধ্বংসস্তূপে এই বিছানা বা বাক্সটিকে খুঁজে পাবেন কি করে; দ্বিতীয়ত, বিছানা বা বাক্সের মালিকই বা তা থেকে বেরোবেন কী করে৷ তবে ঘুমের মধ্যে বাক্সের বাইরে হাত বা পা আছে বলে, সে হাত-পা ভাঙার সম্ভাবনা নেই – নিন্দুকরা যাই বলুন না কেন৷
খাঁচা বা ধাঁচা সুদ্ধু বিছানার ওজন আর দাম নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে৷ কিন্তু গভীর রাতে ভূমিকম্প হলে, ছাদ থেকে চাঙড় ভেঙে পড়লে যে বিছানা জান বাঁচাতে পারে, তাকে যে একটু শক্ত-পোক্ত হতে হবে, সে তো জানাই কথা৷
ওয়াং ঠিক পথই ধরেছেন, তবে তাঁকে ও তাঁর ভূমিকম্প-প্রতিরোধী বিছানাকে এখন সেই পথ ধরে আরো অনেকটা এগোতে হবে...৷
এসি/ডিজি
যে সাতটি এলাকায় ভূমিকম্প অস্বাভাবিক নয়
নেপালে সপ্তাহান্তে বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পর নিহতের সংখ্যা এখনো বেড়ে চলেছে৷ তবে ভূমিকম্প নতুন নয়, পৃথিবীর আরো কয়েকটি অঞ্চল বড় ভূমিকম্পের কবলে পড়েছে৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
পৃথিবী যেখানে কাঁপে
সাতটি টেকটনিক বা গঠনমূলক প্লেট দিয়ে তৈরি হয়েছে আমাদের ভূপৃষ্ঠ৷ যেসব স্থানে এসব প্লেটের মিলন ঘটেছে, সেসব স্থান সবচেয়ে ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত৷ নেপালে ভূমিকম্পের কারণ হচ্ছে ইন্ডিয়ান প্লেটের সঙ্গে ইউরেশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষ৷ পৃথিবীর সাতটি ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার একটি নেপাল৷
ভক্তপুর, নেপাল (আগে)
কাঠমান্ডু উপত্যকায় অবস্থিত সাতটি বিশ্ব এতিহ্য অসংখ্য নেপালী এবং বিদেশি পর্যটককে আকর্ষণ করেছে৷ ২০১৪ সালের আগস্টে তোলা হয়েছে ছবিটি৷
ছবি: picture alliance/landov
ভক্তপুর, নেপাল (পরে)
ভূমিকম্পের পরের ছবি এটি৷ উদ্ধারকর্মীরা ভেঙ্গে পড়া বিভিন্ন মন্দিরের নিচে চাপা পড়া মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা করছেন৷ নেপালে ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছে চার হাজারের বেশি মানুষ৷ উদ্ধার তৎপরতা এখনো চলছে৷
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
জাপানের উপকূল (এখন)
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত জাপান৷ সেখানকার বহুতল ভবনগুলোও এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে সেগুলো ভূমিকম্পের সময়ও টিকে থাকতে পারে৷ দেশটিতে বেশ কয়েকটি পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রও রয়েছে৷ ছবিটি সেরকম একটি বিদ্যুতকেন্দ্রের৷
ছবি: AFP/Getty Images/JIJI Press
জাপানের উপকূল (আগে)
জাপানের দূরত্ব নেপাল থেকে পাঁচহাজার কিলোমিটার৷ ২০১১ সালের মার্চে বড় ধরনের ভূমিকম্পের কবলে পড়ে জাপান৷ সেসময় আঠারো হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারায় ফুকুশিমার পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের রিঅ্যাক্টরগুলোও গলতে শুরু করে এবং রেডিওঅ্যাক্টিভ পদার্থ গিয়ে সমুদ্রে পানিতে মেশে৷ তা সত্ত্বেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে জাপান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আন্দামান সাগর, ভারত মহাসাগর (এখন)
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ, যেটা কিনা ভারতের অংশ, ইন্ডিয়ান প্লেট এবং ইউরেশিয়ান কন্টিনেন্টাল প্লেটের সংযোগ স্থলের কাছাকাছি অবস্থিত৷ সেখানে ভূমিকম্প যে কোনো সময় হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আন্দামান সাগর, ভারত মহাসাগর (তখন)
সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প ঘটেছে ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর৷ এখন পর্যন্ত হিসেবে রাখা তৃতীয় শক্তিশালী ভূমিকম্প ছিল সেটি৷ ভূমিকম্প এবং পরবর্তীতে সুনামির কারণে সে সময় ২৩০,০০০ মানুষ প্রাণ হারায়৷
ছবি: AFP/Getty Images/Choo Youn Kong
ইয়ুনান, চীন (আগে)
চীনের ইয়ুনান প্রদেশ এরকম অসাধারণ ল্যান্ডস্কেপের জন্য পরিচিত৷ তবে এই অঞ্চলটিও ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press
ইয়ুনান, চীন (পরে)
২০১৪ সালের আগস্টে ভূমিকম্পের পর তোলা ছবি এটি৷ ভূমিকম্পে ৪০০-র বেশি মানুষ মারা যায় এবং একলাখের মতো গৃহহীন হয়ে পড়ে৷ চীনে বড় ভূমিকম্প দুর্লভ নয়৷ ২০০৮ সালে অপর এক ভূমিকম্পে সেদেশে প্রাণ হারায় সত্তর হাজার মানুষ৷
ছবি: Reuters
লাকিলা, ইটালি (আগে)
যদিও ইউরোপ ঠিক ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত নয়, তবে ভূমিকম্প এখানে অস্বাভাবিক নয়৷ ইটালিতে আফ্রিকার প্লেট ইউরোপীয় মহাদেশের প্লেটের বিপরীতে চাপ সৃষ্টি করছে৷ ফলে দেশটি ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার মধ্যে রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Barone
লাকিলা, ইটালি (পরে)
২০০৯ সালে ইটালির লাকিলা শহরে ভূমিকম্পে তিনশো মানুষ প্রাণ হারায়, গৃহহীন হয় দশ হাজারের মতো মানুষ৷ সেসময় ভূমিকম্প সম্পর্কে পূর্বাভাষ দিতে ব্যর্থতার দায়ে সাত বিজ্ঞানীকে অভিযুক্ত করা হয়৷ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এটির সমালোচনা হয়েছে কেননা বিজ্ঞান অনেক এগিয়ে গেলেও এখনো ভূমিকম্পের আগাম সতর্ক বার্তা দিতে সক্ষম নয়৷
ছবি: picture alliance/INFOPHOTO
সান ফ্রান্সিসকো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
১৯০৬ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে ভূমিকম্প থেকে শহরে আগুন ধরে যায়৷ ফলে তিন হাজার থেকে ছয় হাজার মানুষ প্রাণ হারায়৷ মার্কিন ইতিহাসের অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে একটি এটি৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
ভালডিভিয়া, চিলি
ভূকম্পণের মাত্রা মাপা শুরু পর থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ভূকম্পণের ঘটনা ঘটেছে চিলিতে৷ ১৯৬০ সালে সেদেশে নয় দশমিক পাঁচ মাত্রার ভূমিকম্প হয়৷ এতে চিলির দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ স্থাপনা ধ্বংস হয়, প্রাণ হারায় কমপক্ষে ১,৭০০ মানুষ৷