স্কুলে বাজপাখি পোষ্য এবং পাঠ্য
২৮ এপ্রিল ২০১৫স্টিয়াভনিৎস্কে বানিয়ে গ্রামটি কিছু অন্য ধরনের৷ মধ্য স্লোভাকিয়ার স্টিয়াভনিৎসা পাহাড়ি অঞ্চলের একটি গ্রাম৷ দেখতে ছিমছাম, নিরিবিলি – কিন্তু একটু রহস্যময়৷ এখানকার স্কুলের ছেলেমেয়েদের খেলার সাথী হল বাজপাখি!
বারো বছরের সারা বলে, ‘‘প্রথমে আমার পাখিগুলোকে দেখলে ভয় করতো৷ আজ আর ভয় করে না, ঈগল পাখি দেখলেও নয়৷''
এটা স্কুলের প্রধান পাভেল মিশাল-এর কীর্তি: তিনিই শিকারি পাখিদের স্কুলের পাঠ্যবিষয় করেছেন৷ এই বিচিত্র পন্থায় স্কুলটিকে বাঁচিয়েছেন৷ এই স্কুলে ‘ফ্যালকনরি' বা বাজপাখি পোষা সপ্তম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের বাধ্যতামূলক পাঠ্য বিষয়৷ খুদে পড়ুয়াদেরও উৎসাহ কম নয়৷ পাভেল বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীরা পাখিদের দায়িত্ব নিতে শেখে, কেননা তাদের প্রতিদিন পাখিদের জন্য কাজ করতে হয়, এমনকি ছুটি থাকলেও৷ তারা সিদ্ধান্ত নিতে শেখে, ধৈর্য ধরতে শেখে – কেননা তারা জীবন্ত পশুপাখিদের নিয়ে কাজ করছে৷ এটা সত্যিই খুব গুরুত্বপূর্ণ৷''
এছাড়া শিকারি পাখি পোষা সম্পর্কে শিখতে হবে: যেমন তাদের সাজসরঞ্জাম৷ কী ভাবে তাদের ধরতে কিংবা রাখতে হয়৷ সারা দেখাচ্ছে, বাজপাখিকে কী ভাবে ‘টোপর' পরাতে হয়৷ মার্কিন ‘বল্ড ঈগল' নিক্সন কিন্তু তাতে বিশেষ সুখি নয়৷ সারা তাকে বুঝিয়ে দেয়, এখানে কার কথা চলবে!
স্কুলের আজ নিজস্ব চল্লিশটি বাজপাখি আছে৷ কয়েকটি পাখির দাম পাঁচ হাজার ইউরোর বেশি৷ সবচেয়ে ছোটরা প্যাঁচাদের দেখাশুনো করে, একটু বেশি বয়সের ছাত্রছাত্রীরা দেখে শকুনি, বাজপাখি আর শিকারি বাজদের৷ পাভেল-এর মতে, ‘‘সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর মধ্যে পড়ে, খাবারটাকে কী ভাবে ঠিক করে দস্তানার উপর রাখতে হয়৷ পাখিদের শুধু মাংসটা খাওয়ার কথা, হাতে কামড় দিলে চলবে না৷''
সারা বলে, ‘‘পাখিটা শিকারি পাখি হওয়া সত্ত্বেও আমি তাকে যা শিখিয়েছি, যখন ঠিক তাই করে, তখন দারুণ লাগে৷''
প্রকৃতি আর মানুষের নৈকট্য, সান্নিধ্য, এই হল স্টিয়াভনিৎস্কে বানিয়ে স্কুলের বৈশিষ্ট্য৷ এই অঞ্চলে মধ্যযুগ থেকে সোনা আর রুপোর খনি ছিল৷ আজ তা লোপ পেলেও, এলাকাটি ইউনেস্কোর কাছ থেকে ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে৷ এখানকার ৮০০ বাসিন্দা পর্যটন শিল্প, কাঠ খোদাইয়ের কাজ আর বনবিভাগ থেকে জীবিকা অর্জন করেন৷ অনেকে আবার বেকার৷
কাজেই গ্রামটির ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হবে৷ পাভেল মিশাল-এর পরিকল্পনাটা ছিল সে রকম একটা সূচনা – অসাধারণ, অথচ এই এলাকার জন্য স্বাভাবিক৷ প্রকৃতিকে স্কুলের ক্লাসরুমে নিয়ে আসা – শিকারি পাখি হিসেবে৷ পাভেল ব্যবহারিক জীবনকেও জানেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ফ্যালকনরি ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের পথ খুলে দিতে পারে: তারা বিমানবন্দরে কাজ করতে পারবে, ব্রিডারদের কাছে অথবা পাখির প্রদর্শনীতে৷ স্লোভাকিয়ায় কাজ না পেলে বিদেশে কাজ খুঁজতে পারবে৷''
সারা ইউরোপে তাদের পাখিদের নিয়ে ‘প্রেজেন্টেশন' করেছে স্টিয়াভনিৎস্কে বানিয়ে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা৷ সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছে – শিকারি বাজের মাধ্যমে, যা কিনা আমিরাতের শেখদের প্রিয় শিকারি পাখি৷