উত্তরপ্রদেশে সরকারি মাদ্রাসায় গীতা ও রামায়ণ পড়ানোর প্রস্তাব ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। মাদ্রাসায় কেন এভাবে চাপিয়ে দেয়া হবে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ?
বিজ্ঞাপন
মালদার আবুর কথা মনে পড়ছে। আবু সিদ্দিকি ছোটবেলার বন্ধু। ওর মতো গম্ভীরা গান অনেকেই গাইতে পারে না। আবু গড়গড় করে রবি ঠাকুরের 'কর্ণ-কুন্তীর সংবাদ' আবৃত্তি করতো। আবৃত্তি শেষ করেই আবু ফুট কাটতো। কেন মহাভারতে কর্ণ ওর সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র তার হাজারটা ব্যাখ্যা দিত। আবার একই সঙ্গে কারবালার গল্প শোনাতো। কারবালা নিয়ে গানও বেঁধেছিল একটা।
আবুর সঙ্গে দেখা হয়নি দীর্ঘদিন। সরকারি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছে। এখন সরকারি চাকরি করে। এই লেখার সূত্রেই আবুর সঙ্গে আরেকবার কথা হলো। কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওপেন স্কুলিংয়ের (এনআইওএস) কথা শুনে আবু দৃশ্যত অবাক এবং ব্যথিত। এনআইওএস জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশের ১০০টি অটোনমাস মাদ্রাসায় রামায়ণ এবং গীতা পড়াতে হবে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের নিউ এডুকেশন পলিসি বা শিক্ষা প্রকল্প মেনেই এই নীতি নেওয়া হয়েছে বলে তারা জানিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, কেন মাদ্রাসায় রামায়ণ বা গীতার মতো ধর্মগ্রন্থ পড়ানো হবে?
ভারতে মূলত দুই ধরনের মাদ্রাসা আছে। এক, সরকার পরিচালিত মাদ্রাসা এবং দুই, স্বাধীনভাবে তৈরি হওয়া মাদ্রাসা। তবে পশ্চিমবঙ্গের মতো জায়গায় সরকার পরিচালিত মাদ্রাসার চল অনেক বেশি। বাম আমলে পশ্চিমবঙ্গে মাদ্রাসা বোর্ড তৈরি করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রমই সেখানে পড়ানো হয়। পাশাপাশি ধর্ম এবং ভাষা শিক্ষার আলাদা ব্যবস্থা আছে। ঠিক যেমন পশ্চিমবঙ্গে অসংখ্য খ্রিস্টান মিশনারি স্কুল আছে। তাদের পাঠ্যক্রম মাধ্যমিক বোর্ডের মতোই। শুধু তার সঙ্গে অতিরিক্ত ধর্মশিক্ষার পাঠের ব্যবস্থা আছে। রামকৃষ্ণ মিশনের স্কুলে যেমন সাধারণ পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার কখনো মাদ্রাসায় হিন্দু ধর্মগ্রন্থ পড়াতে বলেনি, ঠিক যেমন মিশনারি স্কুলে বা রামকৃষ্ণ মিশনের স্কুলে কোরান পড়ানোর প্রশ্ন ওঠেনি।
মাদ্রাসায় খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চা
বাংলাদেশে দু’ ধরনের মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা চালু আছে৷ একটি সরকার অনুমোদিত আলিয়া মাদ্রাসা, অন্যটি কওমি মাদ্রাসা৷ এসব মাদ্রাসায় খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ কেমন, তা জানা যাবে এই ছবিঘরে৷
ছবি: Sazzad Hossain
মাদ্রাসার সংখ্যা
বাংলাদেশে সরকার অনুমোদিত আলিয়া মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার৷ আর কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের হিসেবে, কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা ১৩,৭১০টি৷ অবশ্য বছর তিনেক আগে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস ডিগ্রিকে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর সমমান মর্যাদা দেয়া হয়৷ দুই ধারা মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ৷
দুই মাদ্রাসার দুই চিত্র
সরকার অনুমোদিত আলিয়া মাদ্রাসাগুলোতে খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ থাকলেও বেশিরভাগ কওমি মাদ্রাসাতেই সেই সুযোগ নেই৷
ছবি: DW/M. Mamun
বছরে দুটো ক্রীড়া প্রতিযোগিতা
আলিয়া মাদ্রাসাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড৷ এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক কায়সার আহমেদ ডয়চে ভেলেকে জানান, বোর্ডের অধীনে প্রতিবছর শীত ও গ্রীষ্মকালে দুটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়৷ যদিও তিনি মনে করেন, মনিটরিংয়ের অভাব কিংবা শিক্ষকদের উদাসীনতার কারণে জাতীয় পর্যায়ের খেলাধুলায় স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েদের চেয়ে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে আছে৷
ছবি: Privat
কওমি মাদ্রাসার কথা
বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও ‘আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম’-এর সহকারী অধ্যাপক মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কওমি মাদ্রাসায় শুধু ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয়৷ জাগতিক বিষয়গুলো সেখানে গৌন৷ শরিয়তের সীমাবদ্ধতার কারণে কিছু বিষয়, যেমন টিভি দেখার মতো বিনোদনমূলক বিষয়গুলো সেখানে নিষিদ্ধ৷ খেলাধুলার ক্ষেত্রেও তারা নিরুৎসাহিত করে থাকে৷’’
ছবি: Privat
আছে ব্যতিক্রম
ঢাকার নূরীয়া হাজারীবাগ মাদ্রাসা একটি কওমি মাদ্রাসা৷ সেখানকার নূরানী বিভাগের প্রধান শিক্ষক হাফেজ মো: মুজিবুল হক মনে করেন, শিক্ষার্থীদের একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য খেলাধুলা ও বিনোদনের প্রয়োজন আছে৷ তিনি জানান, তার মাদ্রাসায় প্রতি বৃহস্পতিবার গজল ও কেরাতের উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ এছাড়া বছরে তিনবার গজল ও কেরাত প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়৷
ছবি: Sazzad Hossain
সরকারি সহায়তা প্রয়োজন
ফেঞ্চুগঞ্জের মদিনাতুল উলুম শাহ মালুম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা ফখরুল ইসলাম জানান, তার মাদ্রাসায় শরীরচর্চার শিক্ষক নেই৷ তবে ছেলেরা সময় পেলে মাদ্রাসার সামনের মাঠে খেলাধুলা করে৷ মাদ্রাসা থেকে কোনো সরঞ্জাম দেয়া হয় না৷ শিক্ষার্থীরাই ব্যাট-বল নিয়ে আসে৷ তিনি বলেন, ‘‘খেলাধুলার জন্য সরকারের সহায়তা পেলে ভালো হয়৷’’ ছবিতে ঢাকার হাজারীবাগের আল-জামি’আ মাদীনাতুল উলূম মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Sazzad Hossain
ফুটবল খেলতে ভালো লাগে
ঢাকার নূরীয়া হাজারীবাগ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী তানিমের (১২) ফুটবল খেলতে ভালো লাগে৷ তাই বিকেল হলেই সে মাঠে ফুটবল খেলতে যায়৷
ছবি: Sazzad Hossain
খেললে পড়াশোনায় মন বসে
ঢাকার নূরীয়া হাজারীবাগ মাদ্রাসার আরেক শিক্ষার্থী হাছান (১৫) মনে করে, খেলাধুলা করলে মন ভালো থাকে, পড়াশোনায় মন বসে৷
ছবি: Sazzad Hossain
মন ভালো থাকে
নূরীয়া হাজারীবাগ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মোঃ ইমরান হোসাইন ক্রিকেট, ফুটবল ও ব্যাডমিন্টন খেলতে ভালোবাসে৷ খেলাধুলা করলে মন ভালো থাকে বলে মনে করে সে৷
ছবি: Sazzad Hossain
কওমিতে সৃজনশীল চর্চার সুযোগ কম
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক (সম্পাদক, প্রকাশনা বিভাগ) আনোয়ার কবীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, কওমি ধারায় সৃজনশীল চর্চার সুযোগ অনেক কম৷ কারণ, তারা নিজেরাই সিলেবাস নিয়ন্ত্রণ করে৷ তাই কওমি-পড়ুয়া শিশুদের গোঁড়ামিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে তৃণমূল পর্যায়ে সৃজনশীল চর্চা প্রসারিত করতে হবে বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: Privat
উদ্যোগ
কওমি শিক্ষাধারাকে মূলধারার সমান্তরাল করতে সরকারি কিছু উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে৷ কওমি মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ’ বা বেফাক নেতাদের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ আগের তুলনায় বেড়েছে৷ কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে বছর তিনেক আগে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর সমমান মর্যাদা দেয়া হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
11 ছবি1 | 11
পশ্চিমবঙ্গে মাদ্রাসায় হিন্দু ছাত্ররা পড়তে যায়। মিশনারি স্কুলে মুসলিম ছাত্ররা পড়তে যায়। আবার রামকৃষ্ণ মিশনে মুসলিম এবং ক্রিস্টান ছাত্ররা পড়তে যায়। শিক্ষার মান এবং দূরত্ব দেখে বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের স্কুলে পাঠান। ধর্ম সেখানে কখনোই প্রাধান্য পায় না। সে জন্যই আবু মাদ্রাসায় পড়ে যেমন ইসলাম জেনেছে, তেমনই নিজের ইচ্ছায় অন্য ধর্মের বইও পড়েছে। নিজের জ্ঞান বাড়িয়েছে। সেই আবুই নতুন নিয়ম শুনে হাহুতাশ করছে। আবু বিশ্বাস করে, এভাবে চাপিয়ে দিয়ে কাউকে কিছু শেখানো যায় না। বরং বিভেদ তৈরি হয়।
স্বাভাবিক ভাবেই উত্তরপ্রদেশে নতুন এই নিয়ম নিয়ে ঝড় বইছে। একাধিক মুসলিম সংগঠন এবং ইসলামিক স্কলাররা এর বিরোধিতা করেছেন। লখনউয়ের ইসলামিক সেমিনারি দারুল উরুল ফিরাঙ্গি মহল সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো। সেখানে এখন নাজিম বা চেয়ারম্যান মৌলানা খালিদ রশিদ। ডিডাব্লিউকে তিনি জানিয়েছেন, ''মাদ্রাসার উপর এভাবে সরকারি সংস্থা কিছু চাপিয়ে দিতে পারে না। বেসরকারি মাদ্রাসা তার নিজের পাঠ্যক্রম নিজে ঠিক করে। সরকার কীভাবে সেখানে হস্তক্ষেপ করবে? শুধু তাই নয়, সরকারি মাদ্রাসাতেও এভাবে সরকার কিছু চাপিয়ে দিতে পারে না। এতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হবে।''
স্কুল পর্যায়ের শিক্ষা নিয়ে পাকিস্তানের দুশ্চিন্তা
পাকিস্তান চিন্তায় আছে স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়ে যাওয়া পাঁচ কোটি শিশুকে নিয়ে৷ এত শিশুকে পড়ানোর মতো স্কুল এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নেই বলে বিষয়টি এখন বড় উদ্বেগের কারণ৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/C. Firouz
সারা দেশে ২ লক্ষ ২২ হাজার স্কুল
পাকিস্তানে মোট স্কুল আছে ২ লক্ষ ২২ হাজারটি৷ কিন্তু প্রায় ২০ কোটি মানুষের দেশের জন্য সংখ্যাটা খুব বড় নয়৷
ছবি: DW/I. Jabeen
অনেক শিশু শিক্ষার অধিকারবঞ্চিত
২০১৬ সালের এক প্রতিবেদনে পাকিস্তান সরকার বলেছে, দেশে কমপক্ষে ২ কোটি শিশু লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে না৷ স্কুলে যেতে না পারা শিশুর প্রকৃত সংখ্যাটা ২ কোটির চেয়ে বেশি হবে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা৷
ছবি: Reuters/C. Firouz
তিনবেলা খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা
প্রয়োজনের তুলনায় দেশে স্কুল অনেক কম৷ তাছাড়া দরিদ্র বাবা-মায়েদের পক্ষে সন্তানের লেখাপড়ার খরচ দেয়া কঠিন৷ এমন পরিবারের সন্তানদের মধ্যে মাদ্রাসায় যাওয়ার প্রবণতা প্রকট৷ মাদ্রাসায় থাকার ব্যবস্থা এবং তিন বেলা খাবার তো থাকে! গরিবের সন্তানরা ওইটুকুতেই খুশি৷
ছবি: Reuters/C. Firouz
শিক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ছে
গত কয়েক বছর ধরে জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে৷ ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর শতকরা প্রায় ১৫ ভাগ ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/C. Firouz
তবু অপ্রতুল
জাতিসংঘ এক প্রতিবেদনে বলেছে, পাকিস্তানে শিক্ষাখাতের বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ২ দশমিক ৬৫ ভাগ৷
ছবি: Reuters/C. Firouz
সমাধান কী?
অনেকে বলছেন, স্কুল বাড়ানো হোক, বাড়ানো হোক শিক্ষাখাতের বরাদ্দ৷ কিন্তু তাতেই কি সমাধান হয়ে যাবে? পাকিস্তানের অনেক শিক্ষাবিদই তা মনে করেন না৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে আল নাদওয়া মাদ্রাসার শিক্ষক ইরফান শের বলেন, ‘‘শিক্ষার প্রতি সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গিটাই বদলাতে হবে৷ পরিবর্তন আনার একমাত্র উপায় যে মানসম্পন্ন শিক্ষার সুযোগ ছড়িয়ে দেয়া, তা তাদের (সরকার) বুঝতে হবে৷’’
ছবি: Reuters/C. Firouz
6 ছবি1 | 6
বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার মৌলানা ইয়াসুব আব্বাসের বক্তব্য, ''ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে হিন্দু এবং মুসলিম কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে। এদেশে সকলে একসঙ্গে থাকে এবং নিজের নিজের ধর্ম পালন করে। কেউ কারো উপর কিছু চাপিয়ে দেয়নি। নতুন সরকার বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছে।''
যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশ এর আগেও একাধিক বিতর্কিত আইন প্রণয়ন করেছে। লাভ জিহাদের আইন সেখানে পাশ হয়েছে। হিন্দু মুসলিমের মধ্যে যা বিভাজন তৈরি করতে পারে। সেই আইন নিয়েও বহু আলোচনা এবং আন্দোলন চলছে। কিন্তু মাদ্রাসায় হিন্দু ধর্মগ্রন্থ পড়ানোর এই আইন আগের সব কিছুকে ছাপিয়ে গেছে।
দীর্ঘদিন ধরে ভারতের মুসলিম সমাজ নিয়ে কাজ করেন সাংবাদিক মিলন দত্ত। তাঁর প্রশ্ন, আরএসএস পরিচালিত স্কুলগুলিতে কোরান পড়ানো হবে? সংস্কৃতের টোলে কি কোরান পড়ানো হবে? সরকার কি সেই আইন করবে? তার বক্তব্য, সকলে সব কিছু পড়তে পারেন। নিজের ইচ্ছায় পড়তে পারেন। জানার কোনো শেষ নেই। কিন্তু কোনো ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এভাবে ধর্মগ্রন্থ চাপিয়ে দেওয়া যায় না। বিশেষত মাদ্রাসায়। যা তৈরিই হয়েছে নির্দিষ্ট একটি ধর্মের সংস্কৃতি অবলম্বনে।
ভারতে আবুর মতো মানুষ কম নন। বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন কলেজের বেদান্তের শিক্ষক শামিম আহমেদ। দীর্ঘদিন ধরে মহাভারত নিয়ে তিনি পড়াশোনা করেছেন এবং পড়াচ্ছেন। শামিমের বক্তব্য, ''রামায়ণ-মহাভারত ভালোবেসে পড়েছি। ছোটবেলায় যদি চাপিয়ে দেওয়া হতো, তাহলে হয়তো আজ তা নিয়ে এত পড়াশোনাই করা হতো না।''
ভারতীয় সংস্কৃতির গোড়ার কথাই হলো বৈচিত্র্য। নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধানের দেশে যখন এভাবে একজনের সংস্কৃতি অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, তখন গোড়ার স্পিরিটটিকেই অস্বীকার করা হয়। আর এই কাজ করতে গেলে আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে। আগুন একবার লেগে গেলে তা নেভানো মুশকিল। ভারতের ইতিহাস সে কথা জানে। গত কয়েক বছর ধরে বিজেপি সরকার সেই আগুন নিয়েই খেলছে। দিকে দিকে বিভেদের রাজনীতি মাথা তুলছে। সরকারের মনে রাখা দরকার, নগর পুড়লে, দেবালয় রক্ষা পায় না। আগুন লেগে গেলে তার তাপ সকলের উপর এসে পড়বে। সে আগুন সামলানো কঠিন। খুব কঠিন।