যোগীর ৮০-২০-এর অঙ্ক বনাম ‘বাটে তো কাটে’
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২যোগী আদিত্যনাথ বলেছিলেন, এবারের বিধানসভা ভোটের লড়াই হলো ৮০-২০-র লড়াই৷ এই ৮০ শতাংশ উন্নয়ন চান ও বিজেপির ভোটার, বাকি ২০ শতাংশ গুণ্ডামি, কুশাসনের পক্ষে, তারা বিরোধীদের ভোটার৷ ঘটনা হলো, উত্তরপ্রদেশে হিন্দু-মুসলিম জনসংখ্যার হারও ওই ৮০ ও ২০ শতাংশ৷ উত্তরপ্রদেশের ভোটে ৮০বিশের অঙ্ক তাই হটটপিক৷
কিন্তু ভোট যত এগোচ্ছে, ততই মুসলিম মহল্লায় যোগীর ৮০-২০-এর পাল্টা স্লোগান খুব বেশি করে শোনা যাচ্ছে। সেটা হলো, ‘বাটে তো কাটে’৷ সহজ বাংলায় এর অর্থ, মুসলিমদের ভোটের বিভাজন হলে, শেষ পর্যন্ত তারাই মারা পড়বে৷ বাটে তো কাটে-র স্লোগান যত প্রবল হচ্ছে, ততই যাবতীয় মুসলিম ভোট সমাজবাদী পার্টির প্রতীক সাইকেলে পড়ছে৷ প্রবীণ সাংবাদিক আসিফ, টোটোর মালিক ইশতিয়াক সহ লখনউয়ের মুসলিমদের মনে অন্তত এই. বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, তাদের ভোট ভাগ হবেনা৷ তারা এবার পুরোপুরি সাইকেলে সওয়ার৷
৮০-২০-এর ব্যাখ্যা
লখনউ বিধানসভা ভবনের ঠিক উল্টোদিকে বিজেপি -র সদরদফতর৷ দিল্লির দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গের বিশাল প্রাসাদের মতো হাইফাই সদরদফতর না হলেও বেশ বড়সড় বাড়ি৷ সেখানেই রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র রাজেশ ত্রিপাঠী গড়গড় করে ব্যাখ্যা দিলেন, ‘‘গতবার বিজেপি ৮০ ভাগ আসন পেয়েছিল, সপা, বসপা, কংগ্রেস মিলে পেয়েছিল ২০ শতাংশ। যোগীজি সেকথাই বলছেন৷ যারা এটা ধর্মের সঙ্গে মিশিয়ে দেখে, সেটা তাদের ব্যাখ্যা৷’’ সরল অঙ্কের ততোধিক সরল বিশ্লেষণ৷
ভারতে ভোট এলেই এখন প্রায় নিয়ম করে বিতর্কিত কথা বলেন বিজেপি নেতারা৷ দিল্লি বিধানসভা ভোটের সময় বলেছেন৷ পশ্চিমবঙ্গে ভোটের সময়ও বলেছেন। শুভেন্দু অধিকারী সেখানে ৭০-৩০ এর অঙ্ক ফেঁদেছিলেন৷ যোগীর উত্তরপ্রদেশে তা বদলে হয়েছে ৮০-২০, কারণ এখানে প্রায় ৮০ শতাংশ হিন্দু। মুসলিম প্রায় ২০ শতাংশ৷
কী বলছেন সাধারণ মানুষ
লখনউ সহ উত্তরপ্রদেশের মানুষের বড় বৈশিষ্ট্য হলো, কারা কাকে ভোট দেবেন তা কোনোরকম রাখঢাক না করে সোজাসাপটা জানিয়ে দেন। যেমন জানালেন রাকেশ নিষাদ৷
নবাবের শহরে স্থাপত্যের সেরা উদাহরণ বড়া ইমামবাড়ার কাছে ডাব বিক্রি করেন৷ কাকে ভোট দেবেন জানতে চাওয়ার পর এক মুহূর্ত সময় না নিয়ে জানিয়ে দিলেন, বিজেপিকে ভোট দেবেন। কেন, ৮০-২০-র অঙ্কের জন্য? দ্রুত মাথা নেড়ে বললেন, ‘‘না, না, আমি, আমার পুরো পরিবার এবং নিষাদ সমাজের সিংহভাগ ভোট পড়ে বিজেপি-তে। যোগীর ৮০-২০-র অঙ্কের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই।’’
একটা টোটো(ব্যাটারি চালিত অটো) আছে ইশতিয়াকের। বড়া ইমামবাড়া থেকে ক্লক টাওয়ার হয়ে যাত্রীদের গাইড কাম চালক তিনি। যোগীর অঙ্ক নিয়ে তার মত হলো, এসব তো হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের জন্য মুখ্যমন্ত্রী বলছেন। গত পাঁচ বছর ধরে নানাভাবে বলছেন। তার ধারণা, এবার মুসলিমরা ঢালাওভাবে অখিলেশকে ভোট দেবেন। বলা যেতে পারে এ হলো ‘বাটে তো কাটে’-র যুক্তি।
কিছুদিন আগে কংগ্রেস, বামেদের ছেড়ে এভাবেই তো মুসলিম ভোট পুরোপুরি মমতার দিকে চলে গেছিল। তাই বাম বা কংগ্রেস একটা আসনেও জিততে পারেনি। এবার উত্তরপ্রদেশে ওয়েইসি, কংগ্রেস, বসপা ছেড়ে মুসলিম ভোট যদি অখিলেশের দিকে যায়, তাহলে মুলায়ম-পুত্রর কপাল খুলতে পারে।
সপার আশা
রাজভবন ছাড়িয়ে একটু যাওয়ার পর সমাজবাদী পার্টির অফিস । তার একপাশে ছোট মাঠের একদিকে স্থায়ী মঞ্চ, অন্যদিকে স্টেডিয়ামের মতো গ্যালারিতে বসার জায়গা। তার একদিকে মিডিয়া ইনচার্জ রাজেন্দ্র চৌধুরীর অফিসঘর। জোরের সঙ্গে তার দাবি, প্রথম দুই পর্বে ১১৩টি আসনে ভোট হয়েছে। সপা সেখানে ৭০ থেকে ৮০ আসন পাবে। এটা সম্ভব হবে, মুসলিমদের পাশাপাশি হিন্দু ভোট পেয়ে। তার দাবি, এবারের ভোটে অনেক অঙ্ক উল্টে যাবে। কারণ সপা ৮০ শতাংশ আসনে জিতবে।
উল্টো ফল?
যোগীর দাবি কি মুসলিম ভোটকে সংগঠিত করছে? প্রবীণ সাংবাদিক ও উত্তরপ্রদেশ বিশেষজ্ঞ, শরদ গুপ্তার মনে হয়েছে, পাঁচ বছর আগের তুলনায় এবার বিভাজনের পরিমাণ কম। বিভাজন, মেরুকরণ হচ্ছে, তবে তার সেই জোর নেই।
আসিফ তো মনে করেন, যোগীর ৮০-২০ অঙ্ক. মুসলিমদেরই অখিলেশের পাশে পুরোপুরি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
এর ফলে, অখিলেশের আসন কত বাড়বে, তিনিও মমতার মতো লাভবান হতে পারবেন কি না তা পরে জানা যাবে। আপাতত এটুকু বলা যায়, ৮০-২০ এর অঙ্ক বিফল হলে যোগীর অনেক হিসাবেই মিলবে না। তখন অখিলেশের সাইকেল গড়গড়িয়ে যাবে। আর অঙ্ক মিললে যোগীকে ঠেকাবার কেউ থাকবে না। এজন্যই তো অঙ্ক চিরকালই কঠিন। যোগী সেই কঠিন পিচে ব্যাট করছেন।