নাম বদলে, ইতিহাসের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ঐতিহাসিক দলিল মুছে ফেলা যায় না। যোগী আদিত্যনাথের কাছে এটুকুই বলার।
বিজ্ঞাপন
ইতিহাস চর্চার নানা অভিমুখ থাকে। সে জন্যই ইতিহাসের বিভিন্ন পর্ব নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়। বিতর্ক হয়। সুস্থ বিতর্ক। বামপন্থী ঐতিহাসিকের কাছে কোনও ঐতিহাসিক ঘটনার যে ব্যাখ্যা, জাতীয়বাদী ঐতিহাসিকের কাছে তার ভিন্ন অর্থ থাকতেই পারে। কিন্তু গোটা বিতর্কই দাঁড়িয়ে থাকে একটি বা একাধিক সত্যের উপর। ইতিহাসের ভাষায় ওই সত্যকে বলা হয় ঐতিহাসিক দলিল। অর্থাৎ, তথ্য।
ঐতিহাসিক দলিল বা তথ্যকে উপেক্ষা করে যখন কেউ বা কারা ইতিহাস নিয়ে বুলি আওড়ান, তখন হয় তাঁদের 'বোধহীন' অথবা 'বিকৃতমনষ্ক' বলে দাবি করতে হয়। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বোধহীন নন। তিনি একজন রাজনীতিবিদ। অতীতে রাজনীতির ময়দানে তিনি বহু বিতর্কিত ঘটনা ঘটিয়েছেন। বহুবার বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছেন। এবং সেই বিতর্ক সামলেও নিয়েছেন। তিনি জানেন, রাজনীতির ময়দানে কী ভাবে কোন দিকে বল বাড়িয়ে গোল করতে হয়।
বাবরি মসজিদ: প্রতিষ্ঠা, ভাঙচুর, মামলা, রায়
হিন্দু দেবতা রামচন্দ্রের জন্মস্থান, রাম মন্দির, নাকি মোগল সম্রাট বাবরের আমলে নির্মিত একটি মসজিদ? বিষয়টি নিয়ে ১৮৫৩ সাল থেকে হিন্দু-মুসলমান বিরোধ চলেছে, যা চরমে ওঠে ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বরে৷
ছবি: dpa - Bildarchiv
১৫২৮ সালে নির্মাণ
রামায়ণ-খ্যাত অযোধ্যা শহর ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের ফৈজাবাদ জেলায় অবস্থিত৷ তারই কাছে রামকোট পর্বত৷ ১৫২৮ সালে সেখানে সম্রাট বাবরের আদেশে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়, যে কারণে জনমুখে মসজিদটির নামও হয়ে যায় বাবরি মসজিদ৷ আবার এ-ও শোনা যায়, গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকের আগে এই মসজিদ ‘মসজিদ-ই-জন্মস্থান' বলেও পরিচিত ছিল৷
ছবি: DW/S. Waheed
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি
বাবরি মসজিদ নিয়ে সংঘাত ঘটেছে বার বার৷ অথচ ফৈজাবাদ জেলার ১৯০৫ সালের গ্যাজেটিয়ার অনুযায়ী, ১৮৫২ সাল পর্যন্ত হিন্দু এবং মুসলমান, দুই সম্প্রদায়ই সংশ্লিষ্ট ভবনটিতে প্রার্থনা ও পূজা করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. E. Curran
সংঘাতের সূত্রপাত
প্রথমবারের মতো হিন্দু মুসলমানের মধ্যে সংঘাতের সূত্রপাত৷১৮৫৯ সালে ব্রিটিশ সরকার দেয়াল দিয়ে হিন্দু আর মুসলমানদের প্রার্থনার স্থান আলাদা করে দেয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/D .E. Curran
হিন্দুদের দাবি
আওয়াধ অঞ্চলের বাবর-নিযুক্ত প্রশাসক ছিলেন মির বকশি৷ তিনি একটি প্রাচীনতর রাম মন্দির বিনষ্ট করে তার জায়গায় মসজিদটি নির্মাণ করেন বলে হিন্দুদের দাবি৷
ছবি: AP
বেআইনিভাবে মূর্তি স্থাপন
১৯৪৯ সালের ২৩শে ডিসেম্বর – বেআইনিভাবে বাবরি মসজিদের অভ্যন্তরে রাম-সীতার মূর্তি স্থাপন করা হয়৷
ছবি: DW/S. Waheed
নেহরুর ঐতিহাসিক পদক্ষেপ
রাম-সীতার মূর্তি স্থাপনের পর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী গোবিন্দ বল্লভ পন্থকে চিঠি লিখে হিন্দু দেব-দেবীদের মূর্তি অপসারণ করার নির্দেশ দেন, তিনি বলেন ‘‘ওখানে একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা হচ্ছে’’৷
ছবি: Getty Images
মসজিদের তালা খোলার আন্দোলন
১৯৮৪ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ মসজিদের তালা খুলে দেওয়ার দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে৷ ১৯৮৫ সালে রাজীব গান্ধীর সরকার ঠিক সেই নির্দেশই দেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
দুই সম্প্রদায় মুখোমুখি অবস্থানে
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ রাম মন্দির নির্মাণের জন্য একটি কমিটি গঠন করে৷ ১৯৮৬ সালে মসজিদের তালা খুলে সেখানে পূজা করার অনুমতি প্রার্থনা করে হিন্দু পরিষদ৷ অন্যদিকে, মুসলমানরা বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটি গঠন করেন৷
ছবি: AP
‘রাম রথযাত্রা'’
১৯৮৯ সালের নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের আগে ভিএইচপি বিতর্কিত স্থলটিতে (মন্দিরের) ‘শিলান্যাস'-এর অনুমতি পায়৷ ভারতীয় জনতা পার্টির প্রবীণ নেতা লাল কৃষ্ণ আডভানি ভারতের দক্ষিণতম প্রান্ত থেকে দশ হাজার কিলোমিটার দূরত্বের ‘রাম রথযাত্রা'’ শুরু করেন৷
ছবি: AP
১৯৯২
১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর এল কে আডভানি, মুরলি মনোহর যোশি, বিনয় কাটিয়াসহ অন্যান্য হিন্দুবাদী নেতারা মসজিদ প্রাঙ্গনে পৌঁছান৷ ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপি, শিব সেনা আর বিজেপি নেতাদের আহ্বানে প্রায় দেড় লাখ মানুষ বাবারি মসজিদে হামলা চালায়৷ ছড়িয়ে পড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা৷
ছবি: AFP/Getty Images
সমঝোতার উদ্যোগ
২০০২ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী দু’পক্ষের সমঝোতার জন্য বিশেষ সেল গঠন করেন৷ বলিউডের সাবেক অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহাকে হিন্দু ও মুসলমানদের নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করার দায়িত্ব দেয়া হয়৷
ছবি: AP
শিলালিপি কী বলে
পুরাতাতত্বিক বিভাগ জানায়, মসজিদের ধ্বংসাবশেষে যে সব শিলালিপি আবিষ্কৃত হয়, তা থেকে ধারণা করা হয়, মসজিদের নীচে একটি হিন্দু মন্দির ছিল৷ আবার ‘জৈন সমতা বাহিনী'-র মতে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাবরি মসজিদের নীচে যে মন্দিরটির ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে, সেটি ষষ্ঠ শতাব্দীর একটি জৈন মন্দির৷
ছবি: CC-BY-SA-Shaid Khan
বিজেপি দোষী
বিশেষ কমিশন ১৭ বছরের তদন্তের পর ২০০৯ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনায় প্রতিবেদন জমা দেয়৷ প্রতিবেদনে ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপিকে দোষী দাবি করা হয়৷
ছবি: AP
এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়
২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট তার রায়ে জানান, যে স্থান নিয়ে বিবাদ তা হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া উচিত৷ এক তৃতীয়াংশ হিন্দু, এক তৃতীয়াংশ মুসলমান এবং বাকি অংশ নির্মোহী আখড়ায় দেওয়ার রায় দেন৷ রায়ে আরো বলা হয়, মূল যে অংশ নিয়ে বিবাদ তা হিন্দুদের দেয়া হোক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হিন্দু ও মুসলমানদের আবেদন
হিন্দু ও মুসলমানদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১১ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের সেই রায় বাতিল করে৷ দুই বিচারপতির বেঞ্চ বলেন, বাদী বিবাদী কোনো পক্ষই জমিটি ভাগ করতে চান না৷
ছবি: AP
ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়
ভারতে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের কণ্টকিত ইতিহাসে বাবরি মসজিদে হামলা একটি ‘কলঙ্কিত অধ্যায়’৷ গুটি কয়েক হিন্দু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী দিনটিকে সূর্য দিবস বলে আখ্যায়িত করলেও বেশিরভাগ ভারতীয় দিনটিকে ‘কালো দিন’ বলে উল্লেখ করেন৷ অনেকেই বলেন, এই ঘটনায় দেশের অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তি একেবারে ভূলুন্ঠিত হয়েছিল৷
ছবি: AP
মন্দিরের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের রায়
ভারতের অযোধ্যার এক বিতর্কিত জমি নিয়ে কয়েক দশক অপেক্ষার পর ৯ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত৷ রায়ে ওয়াকাফ বোর্ডের আর্জি এবং নির্মোহী আখড়ার জমির উপর দাবি দুটোই খারিজ করে দেন বিচারকরা৷ বিতর্কিত সেই জমিতে একটি ট্রাস্টের অধীনে মন্দির নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত৷ পাশাপাশি, একটি মসজিদ গড়তে কাছাকাছি অন্য কোথাও মুসলমানদের পাঁচ একর জমি দিতেও বলা হয়েছে রায়ে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Armangue
17 ছবি1 | 17
তাঁর রাজনীতি, রাজনৈতিক বোধের সঙ্গে কারো দ্বিমত থাকতেই পারে। গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় বিভিন্ন মতামত, বিভিন্ন কণ্ঠ থাকবে, সেই তো স্বাভাবিক। তিনি বা তাঁর দল ইতিহাস নিয়েও আলোচনা করতে পারেন। সেই মত অনেকের সঙ্গে না-ই মিলতে পারে। কিন্তু তাঁর ইতিহাসের ব্যাখ্যা যখন তথ্যবিকৃত হয়ে যায়, তখন তাঁকে প্রশ্ন করার, কাঠগড়ায় তোলার যথেষ্ট কারণ থাকে। আঙুল তুলে তাঁকে প্রশ্ন করতেই হয়, কেন এই মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন?
২০১৫ সাল থেকে উত্তরপ্রদেশের আগ্রায় তাজমহলের কাছেই তৈরি হচ্ছে মুঘল জাদুঘর। মুঘল আমলের যাপন নিয়ে তৈরি এই জাদুঘর নিঃসন্দেহে আগ্রার মতো পর্যটন কেন্দ্রে আলাদা মাত্রা যোগ করবে। ১৫২৬ থেকে ১৮৫৭ পর্যন্ত মুঘলরা ভারতীয় উপমহাদেশে শাসন করেছে। সবমিলিয়ে তিনশ বছরের মুঘল ইতিহাস (মাঝে হুমায়ুন কিছুদিন রাজ্যহারা ছিলেন) পরবর্তীকালের ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গিয়েছে। ভাষা থেকে প্রশাসন, খাদ্যাভ্যাস থেকে পোশাক, সাহিত্য থেকে সংগীত-- ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জুড়ে আছে মুঘল সময়। আগ্রার নতুন জাদুঘরে সেই সংস্কৃতিকেই ধরে রাখার কথা ভাবা হচ্ছে।
অখিলেশ যাদব মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ওই জাদুঘরের ছাড়পত্র দিয়েছিলেন। যোগী আদিত্যনাথ সেই জাদুঘরের নাম বদলে রাখলেন মারাঠা রাজ ছত্রপতি শিবাজীর নামে। যাঁর সঙ্গে উত্তর ভারতের মুঘল ইতিহাসের কোনও সংযোগ নেই। শুধু তাই নয়, যোগী আদিত্যনাথ মহাশয় একই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন, যে ইতিহাসে দাসত্ব প্রতিফলিত হয়, নতুন উত্তরপ্রদেশে তার কোনও চিহ্ন থাকবে না। অর্থাৎ, মুঘলদের ইতিহাস, দাসত্বের ইতিহাস।
তাজমহলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ বিদেশিরা
নেতা হোক বা অভিনেতা, বিদেশ থেকে বড় মাপের কেউ ভারতে এলে অবশ্যই তাজমহল দর্শন করেন৷ ছবিঘরে দেখুন কোন কোন বিদেশি তাজমহলের অপার সৌন্দর্যে মুগ্ধ, বাক্যহারা৷
ছবি: picture alliance/AP
জাস্টিন ট্রুডো
ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত সফরে এসেছিলেন৷ তখনই সপরিবারে তাজমহল দেখে নিয়েছিলেন তিনি৷ এছাড়া আমেদাবাদের সবরমতী আশ্রম থেকে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরেও গিয়েছিলেন ট্রুডো৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
কেট ও উইলিয়ম
২০১৬ সালে ব্রিটেনের যুবরাজ উইলিয়ম এবং কেট তাজমহল দর্শনে এসেছিলেন৷ এর আগে উইলিয়মের মা ডায়ানাও তাজমহল দেখে গিয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S.Das
প্রিন্সেস ডায়ানা
১৯৯২ সালে প্রিন্সেস ডায়না একাই তাজমহল দেখতে ভারতে এসেছিলেন৷ তখন অবশ্য প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয়নি৷ ফিরে যাওয়ার পর পরই তাঁদের বিচ্ছেদ ঘটে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
ভ্লাদিমির পুটিন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন পত্নী লুডমিলার সঙ্গে ২০০০ সালে তাজমহল দেখতে আসেন৷ তাজমহলে এসে তাঁদের প্রেম অমর হয়নি৷ কারণ এ ঘটনার তিন বছর পর তাঁদেরও বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Macdougall
এমানুয়েল মাক্রোঁ
ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল মাক্রোঁ ২০১৮ সালে স্ত্রী ব্রিগিটের সঙ্গে তাজমহল দেখতে আসেন৷ মাক্রোঁ এবং তাঁর স্ত্রীর মধ্যে বয়সের ব্যবধান থাকলেও তাঁদের প্রেম কিন্তু আজও অটুট৷
ছবি: picture alliance/abaca/D. Jacovides
সার্কোজি
২০০৮ সালে ফ্রান্সের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি নিকোলা সারকোজি তাজমহল পরিদর্শনে এসেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Benainous
টম ক্রুজ
২০১১ সালে টম ক্রুজ নিজের ছবির প্রচার করতে ভারতে এসেছিলেন৷ তাজমহল দেখতে সে সময়ে তাঁর সঙ্গে যান বলিউড অভিনেতা অনিল কাপুর৷
ছবি: AP
লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও
প্রচার ছাড়াই এই ‘টাইটানিক’ অভিনেতা তাজমহলের সামনে চলে আসেন৷ একান্ত গোপনীয় এই সফরে তিনি কেবল সেল্ফি তুলেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
বিল ক্লিন্টন
২০০০ সালে অ্যামেরিকার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিন্টন মেয়ে চেলসির সঙ্গে ভারতে আসেন, দেখেন তাজমহল৷ পরে উনি বলেছিলেন, তাজমহল এত সুন্দর যে এখান থেকে ফেরাই উচিত নয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/P.J. Richards
হিলারি ক্লিন্টন
চেলসি এর আগে ১৯৯৫ সালে মা হিলারি ক্লিন্টনের সঙ্গেও তাজমহল ঘুরে গিয়েছিলেন৷ তাজমহলে মায়ের সঙ্গে প্রায় ৯০ মিনিট কাটিয়েছিলেন ক্লিন্টন-তনয়া৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. E. Curran
10 ছবি1 | 10
এখানেই ইতিহাসের ভুল তথ্য দেওয়া হলো। মুঘল আমলের সঙ্গে দাসত্বের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং ভারতীয় উপমহাদেশের এগিয়ে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। মুঘল আমলে অন্যায় কি হয়নি? নিশ্চয় হয়েছে। সব আমলই ভালো খারাপ মিশিয়ে হয়। সম্রাট আকবর আর সম্রাট ঔরঙ্গজেবের মুঘল যুগ একরকম ছিল না। কিন্তু সার্বিক ভাবে যখন ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস বিশ্লেষণ করতে হবে তখন মুঘল আমলকে অস্বীকার করার উপায় নেই। তাকে অন্ধকার বা দাসত্বের আমল বলে চালিয়ে দেওয়ারও সুযোগ নেই।
বলতে দ্বিধা নেই, যোগী আদিত্যনাথ মহাশয়ের ইতিহাসের যথেষ্ট জ্ঞান নেই। তা নিয়ে তিনি যে আজগুবি কথা বলছেন, তার পিছনে আবার একটি মস্ত চক্রান্ত রয়েছে। গৈরিক ঐতিহাসিকরা ভারতীয় ইতিহাস চর্চায় নতুন ব্যাখ্যার আমদানির চেষ্টা চালাচ্ছেন। তথ্যের উপর দাঁড়িয়ে সেই বিতর্ক হলে তর্ক করতে অসুবিধা নেই। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তা হচ্ছেও। কিন্তু যোগী যে ইতিহাস বলছেন, তা বিতর্কেরও অযোগ্য। ভাবতে অবাক লাগে, তাঁর পারিষদগণ, তাঁর আধিকারিকরা মুখ্যমন্ত্রীকে ভুল ধরিয়ে দিতে পারেন না। বা ভয় পান।
ছত্রপতি শিবাজীর নামে আলাদা জাদুঘর হতেই পারে, কিন্তু মুঘল জাদুঘর তাঁর নামে হলে তা যে হাস্যকর হবে, বিশ্বের সামনে ভারতকে হাসির কারণ করে তোলা হবে, তা বোঝার জন্য ইতিহাসের ছাত্রও হতে হয় না। সামান্য বোধ থাকলেই হয়। ওই যে বললাম, যোগী আদিত্যনাথ বোধহীন, এ কথা বলার কারণ নেই। প্রখর বোধের পরিচয় দিয়েই তিনি ভারতের সব চেয়ে বড় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেছেন। তিনি আসলে ঐতিহাসিক তথ্যকে বিকৃত করে রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন। হিটলারের মতো অনেক স্বৈরাচারী এটা করার চেষ্টা করেছেন। যোগীর রাজনীতিটা হচ্ছে হিন্দুত্বের রাজনীতি। তাই অতীতের অ-হিন্দু শাসন তাঁর কাছে দাসত্ব ছাড়া আর কিছু নয়। সে জন্যই হিন্দুত্ববাদীদের আইকন শিবাজির নামে জাদুঘরের নাম রাখা। সে জন্যই ইতিহাস বদলে দেয়ার চেষ্টা। এটা কট্টর মাসনিকতাকে তুষ্ট করবে, তাঁর প্রশাসনিক ব্যর্থতা থেকে নজর অন্যদিকে ঘোরাবে। হয়তো বা ভোট পেতেও ঢালাও সাহায্য করবে। তবে বলে রাখা ভালো, এক বা একাধিক ব্যক্তি শত চেষ্টা করলেও ইতিহাস বদলাবে না। ঐতিহাসিক দলিল আগুন দিয়েও পুড়িয়ে ফেলা যায়, কিন্তু সত্যকে আড়াল করা যায় না।
ভারতীয় ইতিহাসে একটি কথা বহুল প্রচলিত। রাজার ইতিহাস। এই যোগী আদিত্যনাথরাই বলেন, মুঘল রাজারা তাঁদের মতো করে ইতিহাস রচনা করিয়েছেন। তাই মুঘলদের অন্ধকার দিকটি অনেকের চোখে পড়ে না। যোগীরাও ঠিক সেই কাজটিই করার চেষ্টা করছেন। নিজেদের ক্ষমতা দেখিয়ে ইতিহাস নিজেদের মতো লিখিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু একশ বছর পর কোনও ঐতিহাসিক যখন এই সময়ের অন্ধকার দিকটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবেন, তখন কি তা খুব গৌরবের হবে?