যৌথ অভিযানে নিহত ইরাক ও সিরিয়ার ‘ইসলামিক স্টেট' প্রধান
১৫ মার্চ ২০২৫
ইরাকি গোয়েন্দা সংস্থা ও মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছেন ইরাক ও সিরিয়ায় তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট (আইএস)' প্রধান৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নিজেই বিষয়টি জানিয়েছেন৷
একসময় নিয়ন্ত্রণে রাখা বেশিরভাগ অঞ্চল হারিয়েছে, তবুও ‘ইসলামিক স্টেট‘ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে এখনও প্রভাবশালী৷ছবি: CPA Media/picture alliance
বিজ্ঞাপন
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি শুক্রবার জানিয়েছেন, ইরাকি গোয়েন্দা সংস্থা এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর অভিযানে ইরাক ও সিরিয়ায় তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট (আইএস)'-এর নেতা নিহত হয়েছেন৷
মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্স প্ল্যাটফর্মে তিনি লিখেছেন, ‘‘অন্ধকার ও সন্ত্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে ইরাকিরা তাদের চমকপ্রদ বিজয় অব্যাহত রেখেছে৷''
এতে তিনি আরো লিখেছেন, ‘‘ইরাকি জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার বীরেরা আন্তর্জাতিক যৌথবাহিনীর সহায়তা ও সমন্বয়ের পরিচালিত অভিযানে সন্ত্রাসী আবদুল্লাহ মাকি মুসলেহ আল-রিফাই [ডাকনাম আবু খাদিজা]-কে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছেন৷''
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প তার নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া একটি পোস্টেও আবু খাদিজার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন৷
অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘‘আমাদের সাহসী যোদ্ধারা তাকে নিরলসভাবে তাড়া করছিল৷ ইরাকি সরকার এবং কুর্দি আঞ্চলিক সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে আইএস-এর আরেক সদস্যসহ তার দুর্বিষহ জীবনের ইতি টানা হয়েছে৷''
ডনাল্ড ট্রাম্প আরো লিখেছেন, ‘‘শক্তির মাধ্যমে শান্তি!''
অভিযান সম্পর্কে যা জানা গেছে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বা ইরাকি প্রধানমন্ত্রী দুই জনই এই ইস্যুতে সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দিলেও সেখানে অভিযান সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য ছিল না৷
বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, পশ্চিম ইরাকের আনবার প্রদেশে বিমান হামলা চালিয়ে অভিযানটি পরিচালিত হয়েছিল৷ সংবাদ সংস্থাটি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়েছে৷
অপর একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে অভিযানটি চালানো হয়েছিল৷ তবে শুক্রবার জঙ্গি নেতার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে৷
ডিসেম্বরে আসাদ শাসনের পতনের পর সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ হাসান আল-শিবানি প্রথমবারের মতো ইরাক সফর করছেন৷ সফরকালে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুই দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করেছেন৷ ‘ইসলামিক স্টেট' যা আইসিস নামেও পরিচিতি, তাদের মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন৷
এক সংবাদ সম্মেলনে ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ হুসেন বলেন, কর্মকর্তারা ‘‘সিরিয়া-ইরাকি সীমান্তে, সিরিয়ার অভ্যন্তরে বা ইরাকের অভ্যন্তরে আইসিসের গতিবিধি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন৷''
তিনি আইসিসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সিরিয়া, ইরাক, তুরস্ক, জর্ডান এবং লেবানন নিয়ে গঠিত একটি অপারেশন রুমের কথা উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে এটি শিগগিরই কাজ শুরু করবে৷
টিএম/এআই (এএফপি, এপি, রয়টার্স)
ইসলামিক স্টেটের শক্তি এখন কেমন?
২০১৯ সালের মার্চে সিরিয়া-ইরাক সীমান্তের বাঘুজে সংঘাতের পর ইসলামিক স্টেট তথা আইএস-এর পতন ঘটেছিল৷ এরপর সেটি এখন গেরিলা সংগঠনে পরিণত হয়েছে৷ বুধবার মার্কিন অভিযানে তাদের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা প্রাণ হারান৷
ছবি: Dabiq/Planet Pix via ZUMA Wire/ZUMAPRESS/picture alliance
পতন
২০১৯ সালের মার্চে সিরিয়া-ইরাক সীমান্তের বাঘুজে সংঘাতের পর ইসলামিক স্টেট তথা আইএস-এর পতন ঘটেছিল৷ এরপর ঐ বছরের অক্টোবরে আইএস-এর প্রতিষ্ঠাতা আবু বকর আল-বাগদাদি নিহত হন৷ একসময় ইরাক ও সিরিয়ার একটি বিশাল এলাকার লাখ লাখ মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রণ করলেও বর্তমানে সংগঠনটি গেরিলা হামলা চালানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Cacace
দুই শীর্ষ নেতার মৃত্যু
বাগদাদির মৃত্যুর পর আইএস এর প্রধান হন ইরাকের আবু ইব্রাহিম আল-হাশেমি আল-কুরেশি৷ একসময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে কারাবন্দি ছিলেন৷ গত বুধবার রাতে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনা অভিযানের সময় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তিনি নিহত হন৷ কুরেশি ছাড়া সংগঠনটির আর কোনো নেতা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায় না, কারণ আইএস এখন গোপনভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে৷
ছবি: Mohamed Aldaher/REUTERS
কত সদস্য আছে?
বাঘুজে লড়াই শেষে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইরত মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট জানিয়েছিল, প্রায় তিন হাজার বিদেশিসহ সংগঠনে এখনও ১৪ থেকে ১৮ হাজার সদস্য আছে৷ তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, আইএস-এর অনেক স্থানীয় সদস্য হয়ত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছে৷ কিন্তু সুযোগ পেলেই তারা আবার আবির্ভূত হতে পারে৷
ছবি: Dabiq/Planet Pix via ZUMA Wire/ZUMAPRESS/picture alliance
তিনবছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় হামলা
সপ্তাহ দুয়েক আগে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের হাসাকা শহরের একটি জেলখানায় হামলা চালায় আইএস৷ সেখানে তাদের সদস্যদের বন্দি রাখা হয়েছিল৷ ঐ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করা কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস জানিয়েছে, হামলায় তাদের ৪০ জন সদস্য, কারাগারের ৭৭ জন নিরাপত্তা প্রহরী ও চারজন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারান৷ আর ইসলামিক স্টেটের ৩৭৪ জন হামলাকারী বা বন্দি ঐ হামলায় নিহত হন৷
মার্কিন সরকারের সবশেষ প্রতিবেদন বলছে, গত তিন মাসে আইএস ইরাকে ১৮২টি ও সিরিয়ায় ১৯টি হামলা চালিয়েছে৷ আইএস এখনও প্রাণঘাতী ও জটিল হামলা চালাতে সক্ষম৷
ছবি: HUSSEIN FALEH/AFP/Getty Images
ভবিষ্যৎ কৌশল?
ইসলামিক স্টেটের পূর্বসূরি সংগঠনের নাম ছিল ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক৷ ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে স্থানীয়দের সঙ্গে মিলে যুক্তরাষ্ট্র ঐ সংগঠনকে ধ্বংস করে দিয়েছিল৷ এরপর ঐ সংগঠনের সদস্যরা গোপনে চলে গিয়েছিলেন৷ তারপর সুযোগ বুঝে সামনে এসেছিল তারা৷ এবারও কি সেই কৌশল নেবে তারা?
ছবি: SDF/AP photo/picture alliance
কী ছিল সেই কৌশল?
ইরাকে শিয়া নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় সুন্নিদের মধ্যে অসন্তোষ এবং সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সামনে আসা শুরু করেছিল আইএস৷ ২০১২ ও ২০১৩ সালে ইরাকের বিভিন্ন কারাগারে হামলা চালিয়ে অনেক সদস্যকে মুক্ত করে তারা৷ একই সময়ে মানুষজনকে ভয় দেখিয়ে এবং চুরি, ছিনতাই ইত্যাদি উপায় ব্যবহার করে অর্থ সংগ্রহ করেছিল৷ এরপর ২০১৪ সালে মসুল ও ইরাকের উত্তরাঞ্চলের এক বিশাল এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল আইএস৷
ছবি: Dabiq/Planet Pix via ZUMA Wire/ZUMAPRESS/picture alliance