ভারতে যৌনকর্মীদের অবস্থা বদলেছে, কিন্তু বদলায়নি তাঁদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী৷ ফলে এখনও বিশ্বের আদিমতম এই পেশার সঙ্গে যুক্ত মেয়েদের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়৷
সোনাগাছিতে জন্ম নেওয়া শিশুরাছবি: Sirsho Bandopadhyay
বিজ্ঞাপন
কলকাতার সোনাগাছি৷ ভারতীয় উপমহাদেশের সবথেকে পুরনো, সবচেয়ে বড় যৌনপল্লিগুলির মধ্যে অন্যতম৷ আজ থেকে ২৫/-৩০ বছর আগেও এই সোনাগাছি ছিল সমাজের মূলস্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন, অসংগঠিত যৌনকর্মীদের এলাকা, যেখানে চলতো গুন্ডা, মাস্তান আর পুলিশের দাপট৷ যৌনরোগের সংক্রমণ ছিল ব্যাপক৷ যৌনকর্মীদের আর্থিক সুরক্ষা বলে কিছু ছিল না৷ তাঁদের সন্তানদেরও ছিল না কোনো ভবিষ্যৎ৷ যৌনকর্মীর কন্যাসন্তান ফের একজন যৌনকর্মীই হবে, এটাই ছিল একমাত্র নিশ্চয়তা৷
সেসময় বহু মেয়েকে ফুসলিয়ে বা জোর করে ধরে নিয়ে এসে, তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যৌনপেশায় নামিয়ে দেওয়া হতো৷ এরা প্রায় সব ক্ষেত্রেই হতো গরিব পরিবারের সন্তান, অনেকেই নাবালিকা৷ তারা না চাইলেও যৌনবৃত্তিতে বাধ্য হতো৷ পুলিশ বা প্রশাসন তাদের পাশে দাঁড়াত না৷ উল্টে হেনস্থা বাড়ত৷ রাজনৈতিক দলগুলোও ভোট চাওয়ার বাইরে এই এলাকায় পা রাখত না. তবে পৌঁছে গিয়েছিল মারাত্মক রোগ ‘এইডস'৷ যৌনকর্মীদের থেকে যে রোগ ছড়িয়ে পড়ত বৃহত্তর সমাজে৷
যেসব দেশে পতিতাবৃত্তি বৈধ
পতিতাবৃত্তি নাকি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন পেশা৷ কিন্তু কোনো যুগে, কোনো দেশেই মানুষ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেনি, আজও করে না৷ তবে বিশ্বের বহু দেশেই পতিতাবৃত্তি বৈধ এবং সেখানে যৌনকর্মীরা নিয়মিত আয়করও দেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Vennenbernd
হল্যান্ডের ‘পতিতাপল্লী’ পর্যটকদের মূল আকর্ষণ
নেদারল্যান্ডসে পতিতাবৃত্তি শুধু বৈধ নয়, ইউরোপের এই দ্বীপদেশটির পতিতাপল্লী সত্যিকার অর্থেই বিশ্ববিখ্যাত৷ ঐ ‘রেডলাইট জোন’ দেখতে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার পর্যটক আসে আমস্টারডামে৷ নেদারল্যান্ডসের মতো ইউরোপের আরেক দেশ বেলজিয়ামেও দেহব্যবসা সম্পূর্ণ বৈধ৷
ছবি: picture-alliance/AP
জার্মানি এবং ফ্রান্সে কঠোর আইন
জার্মানি এবং ফ্রান্সেও দেহব্যবসা বৈধ৷ তবে এ দু’দেশেই যৌনকর্মীদের এই ব্যবসা করতে হয় কঠোর আইন মেনে৷ জার্মানির কিছু শহরে এখনো যৌনকর্মীরা রাস্তায় নেমে খদ্দের ডাকতে পারেন না, এভাবে খদ্দের সংগ্রহ করা সেসব জায়গায় আইনত দণ্ডনীয়৷ ফ্রান্সেও ২০১৪ সালে এমন একটা আইন হয়েছে, যা মেনে যথেচ্ছ দেহব্যবসা করা খুব কঠিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সুইডেন আর নরওয়েতেও নিয়ন্ত্রিত পতিতাবৃত্তি
ফ্রান্স ২০১৪ সালে যে আইন প্রবর্তন করে, সেটা প্রথম চালু হয়েছিল সুইডেনে, ১৯৯৯ সালে৷ এ কারণে আইনটি ‘সুইডিশ মডেল’ হিসেবে পরিচিত৷ এ আইনে যৌনকর্মীদের অধিকার রক্ষা করে দালালদের নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ায় স্বাস্থ্যপরীক্ষা বাধ্যতামূলক
সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়াতেও দেহব্যবসা বৈধ৷ তবে এ দু’টি দেশে ১৯ বচর বয়স না হলে কেউ দেহব্যবসায় আসতে পারেন না৷ যৌনকর্মীদের যাতে কোনো যৌনরোগ না হয়, কিংবা তাঁদের মাধ্যমে খদ্দেরদের মাধ্যে যাতে এইডস, সিফিলিস বা অন্য কোনো রোগ ছড়াতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে যৌনকর্মীদের নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে হয়৷ অবশ্য শুধু সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়াতে নয়, জার্মানিতেও ঐ একই নিয়ম৷
ছবি: AFP/Getty Images
গ্রিস এবং তুরস্কে পতিতাবৃত্তি নিয়ন্ত্রিত
গ্রিস এবং তুরস্কেও পতিতাবৃত্তি পুরোপুরি বৈধ, তবে দেহ ব্যবসার আইন খুব কঠিন৷ জার্মানির মতো এই দু’টি দেশেও যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্যবীমা করা বাধ্যতামূলক৷ এছাড়া যৌনকর্মীরা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান কিনা, তা সবসময় তদারক করা হয়৷ স্বাস্থ্যকার্ডেই লেখা থাকে স্বাস্থপরীক্ষার সব তথ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Vennenbernd
যে দুই দেশের পতিতাপল্লীতে ধীরে চলা মানা
ব্রিটেন আর আয়ারল্যান্ডের পতিতাপল্লী বা ‘রেড লাইট জোন’-এর প্রায় সব আইনই জার্মানির মতো ছিল৷ তবে সম্প্রতি ব্রিটেনে কিছু বেসরকারি সংস্থার দাবিতে এতে নতুন কিছু বিষয় যোগ করা হয়েছে৷ ব্রিটেনের রেড লাইট জোন-এ এখন যেমন ধীরে গাড়ি চালানো নিষেধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কাউকে জোর করে পতিতা বানানো যায় না
ইউরোপের সব দেশেই পতিতাবৃত্তি আইনত বৈধ৷ তবে আইন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেশভেদে একটু হলেও অন্যরকম৷ যেমন স্পেন এবং পর্তুগালেও দেহব্যবসা বৈধ৷ কিন্তু স্পেনে কাউকে জোর করে বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌনকর্মী বানানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Dedert
দক্ষিণ অ্যামেরিকায় অন্যরূপ
দক্ষিণ অ্যামেরিকার অধিকাংশ দেশেই যৌনব্যবসা বৈধ৷ তবে কিছু দেশে মাফিয়া এবং মানবপাচার বড় সমস্যা হয়ে ওঠায়, এই ব্যবসার ওপর কড়াকড়ি এবং তদারকি বেড়েছে৷ দেহব্যবসাকে মাফিয়া চক্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখতে ব্রাজিল এবং মেক্সিকোতে রয়েছে কঠোর আইন৷ তারপরও দেশ দু’টিতে মাফিয়া চক্রের আধিপত্য রয়ে গেছে৷
ছবি: Yasuyoshi Chiba/AFP/Getty Images
প্রতিবেশী হয়েও নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া আলাদা
নিউজিল্যান্ডে যৌনব্যবসা একেবারেই বৈধ৷ তবে প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রেলিয়ার অনেক রাজ্যে এই ব্যবসা এখনো অবৈধ৷ ২০০৩ সালে আইন করে সব প্রাপ্তবয়স্কের জন্য যৌনব্যবসাকে বৈধ করে দেয় নিউজিল্যান্ড৷
ছবি: picture-alliance / rolf kremming
এশিয়ায় লুকোনো পতিতাবৃত্তি
ভারতের পতিতাবৃত্তি বৈধ৷ তারপরও পতিতাবৃত্তি চলে আড়ালে-আবডালে৷ রাস্তায় নেমে পতিতারা খদ্দের সংগ্রহ করতে পারেন না৷ খদ্দেররা অর্থের বিনিময়ে যৌনক্ষুধা মেটাতে যায় রাতের আঁধারে৷ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে পতিতালয় কমলেও মাসাজ পার্লার এবং আবাসিক হোটেলে প্রায়ই চলে পুলিশি অভিযান৷ খদ্দেরসহ পতিতা আটকের খবর আসে তখন৷ থাইল্যান্ড ও ফিলিপিন্সে পতিতাবৃত্তি চলে অবাধে৷ তবে দেশ দুটিতে এই ব্যবসা আইনের চোখে অবৈধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
কিন্তু এ সব এখন ইতিহাস৷ ১৯৯০-এর দশকেই পরিবর্তনটা শুরু হয়েছিল৷ আর এখন আমূল বদলে গেছে সোনাগাছি৷ এক কথায় বলতে গেলে, এখানকার মেয়েদের এক বিপুল ক্ষমতায়ন হয়েছে গত আড়াই দশকে, যার শুরু হয়েছিল আদতে এইডস সংক্রমণ রোখার লড়াই এবং নারী পাচার বন্ধের উদ্যোগের হাত ধরে৷ জন্ম নিয়েছিল যৌনকর্মীদের নিজস্ব সংগঠন ‘দূর্বার মহিলা সমিতি', যা এখন দূর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি৷ সামাজিকভাবে প্রথম যে গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি কাজটা করেছিল দূর্বার, তা হলো সোনাগাছির যৌনকর্মীদের জন্যে একটা মঞ্চ গড়ে দেওয়া, যার ওপর দাঁড়িয়ে তাঁরা নিজেদের কথা বলতে পারেন৷ মাথার ওপর একটা ছাতা হয়ে দাঁড়ানো, আপদে-বিপদে যে ছাতার তলায় তাঁরা আশ্রয় নিতে পারেন৷ এবং শুধু যৌনকর্মীরাই নন, তাঁদের ‘খদ্দেররা', চলতি ভাষায় যাঁদের ‘বাবু' বলা হয়, তাঁদেরকেও সংগঠিত করেছে দূর্বার৷ এই বাবুদের জন্যে তৈরি হয়েছে ‘সাথী' সংগঠন, যার ‘সহায়তা কিয়স্ক' চালু হয়েছে সোনাগাছি ও শহরের অন্য যৌনপল্লিতে, যেখানে তাঁরা দরকার হলেই গিয়ে সাহায্য চাইতে পারেন৷ সাধারণভাবে যাঁরা নিয়মিত যৌনপল্লিতে যাতায়াত করেন, তাঁরা সামাজিকভাবে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, যেহেতু সমাজ তাঁদের সুনজরে দেখে না৷ সেই মানসিকতা থেকে তাঁদের মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে এবং একই সঙ্গে এইডস ও অন্যান্য যৌন রোগ সম্পর্কে এক বৃহত্তর সচেতনতার প্রসার ঘটানো সম্ভব হয়েছে৷ পরিণতিতে সব ধরনের যৌন রোগের প্রকোপ আজ অনেক কমে গেছে সোনাগাছিতে৷
একই ঘটনা ঘটেছে যৌনকর্মীদের সন্তানদের ক্ষেত্রে৷ তাদের পড়াশোনা শেখানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা অন্য পেশায় যেতে পারে, স্বাবলম্বী হয়৷ যৌনকর্মীর সন্তানেরা যাতে কোনোভাবে সমাজে নিজেদের অচ্ছ্যুৎ বা অপাংক্তেয় না মনে করতে পারে, সেজন্য খুব জরুরি ছিল এই উদ্যোগ৷ এখন যৌনকর্মীর সন্তানেরাও মূল ধারার স্কুলে ভর্তি হচ্ছে৷ তাদের নিজস্ব একটা ফুটবল দল হয়েছে, যে দল গত বছর তৃতীয় ডিভিশনে খেলার পর দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলার যোগ্যতামান পার করেছে৷ এর মধ্যে একবার ইউরোপে খেলে এসেছে এই ফুটবল দল৷ এছাড়া মাঝেমধ্যেই নানা ধরনের আন্তর্জাতিক প্রকল্প, কর্মসূচির শরিক হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে এরা৷ কয়েক বছর আগেই যেমন জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেসকোর একটি প্রকল্পে এদের হাতে ক্যামেরা তুলে দেওয়া হয়েছিল, যাতে ছবির ভাষায় এরা নিজের মনের কথা প্রকাশ করতে পারে৷
বাংলাদেশের যৌনকর্মীদের কথা
পৃথিবীর আদিম এক পেশা পতিতাবৃত্তি৷ বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই চালু রয়েছে এই পেশা৷ বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়৷ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেমন আছেন বাংলাদেশের যৌনকর্মীরা? এই ছবিঘরে তাঁদের অবস্থা কিছুটা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images
যেভাবে যৌনপল্লীতে আগমন
বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে প্রতারণার শিকার হয়ে যৌনপল্লীতে হাজির হন মেয়েরা৷ প্রত্যন্ত অঞ্চলের অতিদরিদ্র্য পরিবারের সদস্যরা কখনো কখনো অর্থের লোভে মেয়েদের বিক্রি করে দেন বলে জানিয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা৷ এছাড়া ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে কিংবা বিদেশ যাওয়ার লোভ দেখিয়েও মেয়েদের যৌনপল্লীতে আনা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/Munir uz ZAMAN
যৌনকর্মীদের জন্য ‘গরুর ট্যাবলেট’
ফরিদপুরের সরকার অনুমোদিত যৌনপল্লীর ছবি এটি৷ অভিযোগ রয়েছে, পল্লীর মালিক নতুন আসা যৌনকর্মীদের স্টেরয়েড ট্যাবলেট সেবনে বাধ্য করেন, যা সাধারণত গরুকে খাওয়ানো হয়৷ গরুর স্বাস্থ্য বাড়াতে ব্যবহার করা এই ট্যাবলেট মানুষের দেহের জন্য ক্ষতিকর৷
ছবি: M.-U.Zaman/AFP/GettyImages
অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ‘ইনজেকশন’
বাংলাদেশের এক যৌনপল্লীর মালিক রোকেয়া জানান, স্টেরয়েড ওষুধ প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ভালো কাজে দেয়৷ কিন্তু অপ্রাপ্তবয়স্ক, বিশেষ করে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সি মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি কার্যকর নয়৷ অপ্রাপ্তবয়সিদের স্বাস্থ্য ভালো করতে বিশেষ ধরনের ইনজেকশন ব্যবহার করা হয় বলে জানান ৫০ বছর বয়সি রোকেয়া৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/M. Candela
অধিকাংশ যৌনকর্মী ‘স্টেরয়েড আসক্ত’
আন্তর্জাতিক উন্নয়নসংস্থা একশনএইড ইউকে এক সমীক্ষার ভিত্তিতে ২০১০ সালে জানায় যে, বাংলাদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ যৌনকর্মী ওরাডেক্সন বা অন্যান্য স্টেরয়েড ট্যাবলেট নিয়মিত গ্রহণ করে৷ তাঁদের গড় বয়স ১৫-৩৫ বছর৷ বাংলাদেশে দু’লাখের মতো যৌনকর্মী রয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/M. Candela
সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ
স্টেরয়েড ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচারণা চালাচ্ছে একশনএইড৷ সংস্থাটির বাংলাদেশ অংশের কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার জানিয়েছেন, ‘‘ওরাডেক্সন গ্রহণ করার পর শুরুতে মেয়েদের শরীরে চর্বির পরিমাণ বাড়তে থাকে৷ কিন্তু এটি নিয়মিত সেবন করলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, চামড়ায় ক্ষতসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়৷’’
ছবি: GMB Akash
এইচআইভি সংক্রমণ
বাংলাদেশে যৌনকর্মীদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ বা এইডস রোগ হওয়ার খবর মাঝে মাঝে পত্রিকায় প্রকাশ হয়৷ তবে ঠিক কতজন যৌনকর্মী এইচআইভি আক্রান্ত তার হালনাগাদ কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি৷ অনেকক্ষেত্রে কনডম ব্যবহারে খদ্দেরের অনীহা যৌনকর্মীদের মাঝে যৌনরোগ ছড়াতে সহায়ক হচ্ছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: AP
‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ যৌনকর্মী
বাংলাদেশের যৌনপল্লীগুলোতে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের জোর করে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করানোর অভিযোগ রয়েছে৷ আর এই পেশায় যাঁরা একবার প্রবেশ করছেন, তাঁদের জীবনেও নানা ঝুঁকি থাকে৷ পতিতাপল্লীতে হামলার খবর কিন্তু মাঝেমাঝেই শোনা যায়৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: M.-U.Zaman/AFP/GettyImages
শত বছরের পুরনো পল্লী উচ্ছেদ
মাদারিপুরের পতিতাপল্লীটি ছিল শত বছরের পুরনো৷ গত বছর এই পল্লী উচ্ছেদ করেছেন স্থানীয়রা৷ এমনকি পল্লীটি জোরপূর্বক উচ্ছেদ না করার হাইকোর্টের আদেশও এক্ষেত্রে উপেক্ষা করা হয়েছে৷ সেখানে পাঁচশ’র মতো যৌনকর্মী বাস করতেন৷ কিছুদিন আগে টাঙ্গাইলের একটি পতিতাপল্লীও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ এ রকম উচ্ছেদের আতঙ্কে রয়েছেন আরো অনেক যৌনকর্মী৷
ছবি: M.-U.Zaman/AFP/GettyImages
মধ্যপ্রাচ্যে ‘যৌনদাসী’ বাংলাদেশের মেয়েরা!
বাংলাদেশের বেশ কয়েক নারীকে মধ্যপ্রাচ্যে যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে৷ তাঁদের পাচার করে সিরিয়ায় নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক বার্তাসংস্থা৷ এ সব নারীকে ফিরিয়ে আনতে সরকারি উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে৷ তবে শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিভিন্ন পতিতালয়েও বাংলাদেশি নারীদের জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তিতে নিয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
9 ছবি1 | 9
তা হলে পুরো ছবিটাই কি প্রগতির এবং খুব আশাজনক? না, বলছেন ডা. স্মরজিৎ জানা, যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন দূর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটিকে৷ কিছু সাফল্য অবশ্যই এসেছে৷ যেমন সোনাগাছির যৌনকর্মীদের যে সমবায় তহবিল, সেই ‘ঊষা কোঅপারেটিভ ক্রেডিট লিমিটেড'-এর নিবন্ধিকরণ করা গেছে যৌনকর্মীদের নামেই৷ এটা একটা বিরাট বড় সাফল্য, যেহেতু যৌন পেশা এখনও বৈধ বৃত্তি বলে স্বীকৃত নয় ভারতের আইনে৷ কিন্তু ঐ মূল জায়গাটায় সমস্যা থেকে গেছে৷ বহু উদ্যোগ সত্ত্বেও যৌনবৃত্তিকে বৈধ পেশার স্বীকৃতি দেওয়া যায়নি৷ এ নিয়ে আইন সংশোধনের কিছু সুপারিশ করা হয়েছে, কিন্তু ঐ পর্যন্তই৷ যেমন যৌনকর্মীর সন্তানদের জন্য বারুইপুরে একটি হস্টেল চালু হয়েছে, যেখানে থেকে সাধারণ স্কুলে, আর পাঁচটা সাধারণ বাচ্চার সঙ্গে পড়াশোনা করতে পারবে তারা৷ আলাদা পরিবেশে থেকে৷ কিন্তু সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গী তো এখনও বদলায়নি৷ ফলে কোনো শিক্ষকই হয়ত ঘুরিয়ে এমন কোনো একটা খোঁচা দিয়ে দিলেন যে, বাচ্চাটির খারাপ লাগল৷ যে কারণে স্কুল থেকে ‘ড্রপ আউট'-এর সংখ্যাও খুব বেশি, জানালেন ডা. জানা৷
তবু চেষ্টা চলছে, লড়াই চলছে, চলবেও৷ সোনাগাছি এবং কলকাতার খিদিরপুর, কাশীপুর, বউবাজার অঞ্চলের যৌনপল্লির মেয়েরা এখন অন্তত এটা জানেন যে তাঁরা আর একা নন৷ নিজেদের অধিকারের লড়াইটা তাঁরা নিজেরাই লড়ছেন, তবে একসঙ্গে৷