এইডস রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বাংলাদেশে৷ সরকারি হিসেবে ৫ হাজার বলা হলেও, বাস্তবে এইডস রোগীর সংখ্যা অন্তত ২০ হাজারের মতো৷ জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দীপক কুমার দাস৷
বিজ্ঞাপন
প্রবীণ এই চিকিৎসকের মতে, যৌনরোগ মানেই মারাত্মক কোনো অপরাধ বলে মনে করা হয়৷ তাই তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের সামাজিক এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে৷ কারণ নানাভাবে একজন মানুষের যৌনরোগ হতে পারে৷ একজন রোগীর এক্ষেত্রে হয়ত কোনো দায় নেই৷ তারপরও তাঁকে চিকিৎসাকেন্দ্রে যেতে হয় গোপনে৷''
ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে নানা ধরনের যৌনরোগ আছে৷ এর মধ্যে এইডস একটি রোগ৷ আপনি যেমনটা বললেন, অনেকক্ষেত্রেই এই রোগের জন্য রোগী দায়ী নন৷ অথচ তারপরও তাঁকে নানাভাবে ভুগতে হয়৷ এটা কেন?
ডা. দীপক কুমার দাস
ডা. দীপক কুমার দাস: কারুর এইডস রোগ হওয়া মানেই তাঁকে সামাজিকভাবে পরিহার করা হয়৷ তাঁর প্রতি কোনো দয়া-দাক্ষিণ্য দেখানো হয় না৷ ধরেই নেয়া হয় যে, সে একটা চরম অপরাধ করেছে৷ আর তাঁর সেই অপরাধের কারণেই এইডস রোগ হয়েছে৷ সবাই এতটাই ভীত হয়ে যায় যে, ধরেই নেয়া হয় এইডস রোগীকে স্পর্শ করলে আরেকজনের এইডস হয়ে যাবে৷ অথবা তাঁর খাবার খেলে বা পোশাক ছুলেই এইডস হয়ে যাবে৷ ফলে সামাজিকভাবে সেই এইডস রোগী চরমভাবে অবহেলিত হয়৷
অনেক ক্ষেত্রে যৌনরোগে আক্রান্তদের গোপনে চিকিৎসা করাতে হয়৷ এমনটা কেন হয়?
যৌনরোগীরা নিজেরা দায়ী কি দায়ী নন, এটা তো সমাজের লোকজন বুঝবে না৷ তারা তো এটা মানতে চায় না৷ তাই ধরেই নেয়া হয় যে, যৌনরোগে আক্রান্ত রোগী মারাত্মক কোনো অপরাধ করেছে, যে কারণে তাঁর এই অবস্থা৷
আমাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি কি বদলানো সম্ভব নয়?
একদিনে তা কখনোই সম্ভব নয়৷ তাই আস্তে আস্তে এটা করতে হবে৷ আমরা তো নানাভাবে প্রচারণা করে থাকি৷ বলে থাকি যে, এইডস কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়৷ আসলে এই রোগীদের প্রতি ভালো ব্যবহার করতে হবে৷ মানুষ হিসেবে তাঁদের চিকিৎসা করতে হবে৷ এ ধরনের প্রচার-প্রচারণা তো চলছেই৷
যৌনরোগ মানেই কি খারাপ কিছু?
যৌনরোগ মানেই খারাপ কিছু, এটা তো বলা যাবে না৷ এখানে রোগীকে কোনো দোষ দেয়া যাবে না৷ যে কোনো রোগের কারণে রোগীকে দোষ দেয়ার পক্ষে আমি নই৷
তাহলে যৌনরোগ কী?
দু'ধরনের যৌনরোগ আছে৷ একটা ছোঁয়াচে, অন্যটা ছোঁয়াচে নয়৷ যেটা ছোঁয়াচে সেটা অনিরাপদ যৌনমিলন বা মেলামেশার কারণে হয়৷ একজন নারী বা পুরুষ অপর একজন মানুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়লে, একজনের থেকে অন্যজনের যৌনরোগ হতে পারে৷ তবে সেক্ষেত্রে অন্তত একজনের যৌনরোগ থাকলে তবেই সেটা সম্ভব৷ আবার যৌনরোগ শুধুমাত্র মানসিকও হতে পারে৷ এই যেমন, ঠিকমত ‘সেক্স' হচ্ছে না বা যৌনমিলনে অসুবিধা হচ্ছে – এ সবও কিন্তু যৌনরোগের মধ্যে পড়ে৷ তবে এটা ছোঁয়াচে নয়৷
বাংলাদেশের এইডস পরিস্থিতি
একটা সময় ছিল যখন এইডস রোগের নাম শুনলেই মানুষ ভয় পেত৷ এখন সেই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে৷ বাংলাদেশে এইডস প্রতিরোধে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলো কাজ করছে৷
ছবি: AP
প্রথম রোগী
১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম এইডস রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়৷ এইচআইভি-র কারণে সৃষ্ট এই রোগটি শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়৷ ফলে একজন এইডস রোগী খুব সহজেই যে-কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন – যা শেষ পর্যন্ত তাঁর মৃত্যু ঘটাতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হাজার পেরিয়ে গেছে
বর্তমানে বাংলাদেশে এইডস রোগীর সংখ্যা ১,২৯৯৷ পরিসংখ্যানটা অবশ্য ২০১৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সংগৃহীত৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম নিজেই চলতি বছরের জুনে সংসদকে এই তথ্য জানিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা
এইডস রোগীর সংখ্যা ১,২৯৯৷ কিন্তু এইচআইভি বা ‘হিউম্যান ইমিউনোডেফিশিয়েন্সি ভাইরাস’-এ আক্রান্তের সংখ্যা ৩,২৪১৷ ২০১৩ সালের ১লা ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবসের এক অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানানো হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিহতের সংখ্যা
ঐ একই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যসচিব জানান এইডসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত ৪৭২ জন মারা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিকিৎসা সেবা
আশার আলো সোসাইটি, মুক্ত আকাশ বাংলাদেশ কনফিডেনশিয়াল অ্যাপ্রোচ টু এইডস প্রিভেনশন (ক্যাপ) নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান এইডস আক্রান্তদের ‘অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল’ বা এআরভি ওষুধ সহ অন্যান্য সেবা দিচ্ছে৷ সরকার ও ‘দ্য গ্লোবাল ফান্ড’-এর কাছ থেকে ওষুধ কেনার অর্থ পায় এই তিন সংস্থা৷
ছবি: AP
সরকারি সেবা
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জুন মাসে জানান আটটি সরকারি হাসপাতালে ‘সিডি-৪’ সেন্টারের মাধ্যমে এইডস রোগীদের শারীরিক অবস্থা নির্ণয় করাসহ এ সব প্রতিষ্ঠানসমূহে রোগীদের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও ‘কাউন্সেলিং’ সেবা দেয়া হচ্ছে৷ অবশ্য সেটা ঠিক নয় বলে ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন ‘মুক্ত আকাশ বাংলাদেশ’-এর নির্বাহী পরিচালক এম এস মুক্তি৷
ছবি: AP
6 ছবি1 | 6
আমাদের দেশে যে ধরনের যৌনরোগের কথা আমরা জানি, তার ওষুধ কি সচরাচর পাওয়া যায়?
সব ওষুধই পাওয়া যায়৷ দুনিয়ার সব জায়গায় যৌনরোগের যে চিকিৎসা পাওয়া যায়, আমাদের এখানেও পাওয়া যায়৷ অবশ্য যেটা পাওয়া যায় না, যেমন এইডস-এর স্থায়ী চিকিৎসা দুনিয়ার কোথাও নেই৷ তাই সেটা আমাদের এখানেও নেই৷
আমরা জানি এইডস শুরু হয়েছে অনেক বছর আগে৷ তা বাংলাদেশে এইডস-এ আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে না কমছে?
বাড়ছে৷ সরকারি হিসেবে এই সংখ্যা ৫ হাজার৷ আমাদের ধারণা, এই সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে৷ আসলে সব তো আর রিপোর্ট করা হয় না৷ সেই কারণে সরকারি হিসেবের চেয়ে বাইরের হিসেব অনেক বেশি৷
অবস্থার উন্নতি করার জন্য আমাদের সরকার বা রাষ্ট্রের কী করা উচিত?
বাংলাদেশে জাতীয় এইডস কমিটি আছে৷ তারা নানাভাবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে৷ ডাক্তারদের জন্য, রোগীদের জন্য, সাধারণ মানুষের জন্য আমাদের নানান ধরনের প্রচারণা আছে৷
এতে কতটা কাজ হচ্ছে?
সেটা বলা মুশকিল৷ তবে কিছু যে হচ্ছে না, সেটা তো বলা যাবে না৷ সুনির্দিষ্ট করে কতটা হচ্ছে সেটা বলা আসলেই বলা কঠিন৷
আমাদের দেশে যে ধরনের যৌনরোগ হয়, তার মধ্যে প্রধান রোগ কী কী?
প্রধান রোগের মধ্যে সিফিলিস, গনোরিয়া, মূত্রনালীর প্রদাহ – এ সব রয়েছে৷ এ সবের জন্য বাংলাদেশে এক ধরনের ভাইরাল ওয়ার্ড আছে৷ আজকাল কিন্তু আমরা এই ভাইরাল ওয়ার্ডে রোগী প্রচুর পাচ্ছি৷
বাংলাদেশের যৌনকর্মীদের কথা
পৃথিবীর আদিম এক পেশা পতিতাবৃত্তি৷ বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই চালু রয়েছে এই পেশা৷ বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়৷ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেমন আছেন বাংলাদেশের যৌনকর্মীরা? এই ছবিঘরে তাঁদের অবস্থা কিছুটা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images
যেভাবে যৌনপল্লীতে আগমন
বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে প্রতারণার শিকার হয়ে যৌনপল্লীতে হাজির হন মেয়েরা৷ প্রত্যন্ত অঞ্চলের অতিদরিদ্র্য পরিবারের সদস্যরা কখনো কখনো অর্থের লোভে মেয়েদের বিক্রি করে দেন বলে জানিয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা৷ এছাড়া ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে কিংবা বিদেশ যাওয়ার লোভ দেখিয়েও মেয়েদের যৌনপল্লীতে আনা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/Munir uz ZAMAN
যৌনকর্মীদের জন্য ‘গরুর ট্যাবলেট’
ফরিদপুরের সরকার অনুমোদিত যৌনপল্লীর ছবি এটি৷ অভিযোগ রয়েছে, পল্লীর মালিক নতুন আসা যৌনকর্মীদের স্টেরয়েড ট্যাবলেট সেবনে বাধ্য করেন, যা সাধারণত গরুকে খাওয়ানো হয়৷ গরুর স্বাস্থ্য বাড়াতে ব্যবহার করা এই ট্যাবলেট মানুষের দেহের জন্য ক্ষতিকর৷
ছবি: M.-U.Zaman/AFP/GettyImages
অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ‘ইনজেকশন’
বাংলাদেশের এক যৌনপল্লীর মালিক রোকেয়া জানান, স্টেরয়েড ওষুধ প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ভালো কাজে দেয়৷ কিন্তু অপ্রাপ্তবয়স্ক, বিশেষ করে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সি মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি কার্যকর নয়৷ অপ্রাপ্তবয়সিদের স্বাস্থ্য ভালো করতে বিশেষ ধরনের ইনজেকশন ব্যবহার করা হয় বলে জানান ৫০ বছর বয়সি রোকেয়া৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/M. Candela
অধিকাংশ যৌনকর্মী ‘স্টেরয়েড আসক্ত’
আন্তর্জাতিক উন্নয়নসংস্থা একশনএইড ইউকে এক সমীক্ষার ভিত্তিতে ২০১০ সালে জানায় যে, বাংলাদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ যৌনকর্মী ওরাডেক্সন বা অন্যান্য স্টেরয়েড ট্যাবলেট নিয়মিত গ্রহণ করে৷ তাঁদের গড় বয়স ১৫-৩৫ বছর৷ বাংলাদেশে দু’লাখের মতো যৌনকর্মী রয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/M. Candela
সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ
স্টেরয়েড ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচারণা চালাচ্ছে একশনএইড৷ সংস্থাটির বাংলাদেশ অংশের কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার জানিয়েছেন, ‘‘ওরাডেক্সন গ্রহণ করার পর শুরুতে মেয়েদের শরীরে চর্বির পরিমাণ বাড়তে থাকে৷ কিন্তু এটি নিয়মিত সেবন করলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, চামড়ায় ক্ষতসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়৷’’
ছবি: GMB Akash
এইচআইভি সংক্রমণ
বাংলাদেশে যৌনকর্মীদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ বা এইডস রোগ হওয়ার খবর মাঝে মাঝে পত্রিকায় প্রকাশ হয়৷ তবে ঠিক কতজন যৌনকর্মী এইচআইভি আক্রান্ত তার হালনাগাদ কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি৷ অনেকক্ষেত্রে কনডম ব্যবহারে খদ্দেরের অনীহা যৌনকর্মীদের মাঝে যৌনরোগ ছড়াতে সহায়ক হচ্ছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: AP
‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ যৌনকর্মী
বাংলাদেশের যৌনপল্লীগুলোতে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের জোর করে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করানোর অভিযোগ রয়েছে৷ আর এই পেশায় যাঁরা একবার প্রবেশ করছেন, তাঁদের জীবনেও নানা ঝুঁকি থাকে৷ পতিতাপল্লীতে হামলার খবর কিন্তু মাঝেমাঝেই শোনা যায়৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: M.-U.Zaman/AFP/GettyImages
শত বছরের পুরনো পল্লী উচ্ছেদ
মাদারিপুরের পতিতাপল্লীটি ছিল শত বছরের পুরনো৷ গত বছর এই পল্লী উচ্ছেদ করেছেন স্থানীয়রা৷ এমনকি পল্লীটি জোরপূর্বক উচ্ছেদ না করার হাইকোর্টের আদেশও এক্ষেত্রে উপেক্ষা করা হয়েছে৷ সেখানে পাঁচশ’র মতো যৌনকর্মী বাস করতেন৷ কিছুদিন আগে টাঙ্গাইলের একটি পতিতাপল্লীও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ এ রকম উচ্ছেদের আতঙ্কে রয়েছেন আরো অনেক যৌনকর্মী৷
ছবি: M.-U.Zaman/AFP/GettyImages
মধ্যপ্রাচ্যে ‘যৌনদাসী’ বাংলাদেশের মেয়েরা!
বাংলাদেশের বেশ কয়েক নারীকে মধ্যপ্রাচ্যে যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে৷ তাঁদের পাচার করে সিরিয়ায় নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক বার্তাসংস্থা৷ এ সব নারীকে ফিরিয়ে আনতে সরকারি উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে৷ তবে শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিভিন্ন পতিতালয়েও বাংলাদেশি নারীদের জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তিতে নিয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
9 ছবি1 | 9
এই রোগগুলো ছড়ায় কিভাবে?
যৌনরোগের মধ্যে যেটা সংক্রামক, সেটা একজনের থেকে অন্যজনে ছড়ায়৷ এ সব রোগই মূলত অনিরাপদ যৌনমিলন বা মেলামেশা থেকে ছড়ায়৷
এছাড়া অন্য কোনোভাবে কি এই রোগ ছড়াতে পারে?
সম্ভবনা খুবই কম৷ তবে হ্যাঁ যৌনসঙ্গম ছাড়াও যৌনরোগ ছড়াতে পারে৷ যেমন ধরুন, সিফিলিস বা এইডস রোগীর রক্ত যদি অন্য কাউকে দেয়া হয়, তাহলে এই রোগগুলো ছড়াতে পারে৷ তারপর যদি মায়ের এমন কোনো রোগ থাকে, তবে বাচ্চার তা হতে পারে৷
এই রোগগুলো প্রতিরোধে আমাদের চিকিৎসকদের ভূমিকা কতখানি?
আমি যৌনরোগের চিকিৎসা করি৷ অর্থাৎ আমার কাছে যখন রোগী আসে, তখন তাঁকে সাধ্যমত চিকিৎসা দেই এবং যে পরামর্শগুলো আছে, সেগুলো দেই৷ এ সব রোগের ভালো-মন্দ তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করি৷ তাছাড়া সার্বিকভাবে পরামর্শের জন্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগ আছে, তারাও কাজ করে যাচ্ছে৷
আগে আমরা দেখতাম, এই ধরনের রোগ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে তারা রোগীকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখেন৷ সেই দৃষ্টিভঙ্গি কি বদলেছে?
আমার মনে হয়, এই দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই বদলেছে৷
এরপরও তো এখনও অনেকেই যৌনরোগের চিকিৎসা করতে চিকিৎসকের কাছে যেতে লজ্জাবোধ করেন৷ তাঁদের ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কী?
বাংলাদেশে যৌন শিক্ষা
পাঠ্যপুস্তকে যৌন স্বাস্থ্যের বিষয়টি ইতিমধ্যেই অন্তর্ভুক্ত করেছে সরকার৷ কিন্তু যৌন শিক্ষা পড়ানো নিয়ে সমস্যা হচ্ছে৷ শিক্ষকরা এতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেননি, ছাত্র-ছাত্রীরাও বিষয়টিকে সহজভাবে নিচ্ছে না৷ কী বলছে আজকের তরুণ সমাজ?
ছবি: DW/K. Andrade
ফারজানা খানম
অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের মিডিয়া অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশনের তৃতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী ফারজানা৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষা হচ্ছে যা থেকে যৌনতা সম্পর্কে জানা যায়৷ এ শিক্ষা প্রত্যেকের জীবনে প্রয়োজন৷ বাচ্চাদের পরিবার এবং শিক্ষকরা এটা শিখাতে পারেন৷ এছাড়া যৌনতা সম্পর্কে তাদের জানার উৎস হতে পারে পরিবার অথবা বন্ধু-বান্ধব৷ তাছাড়া ইন্টারনেট থেকেও যৌনতা সম্পর্কে জানা যায়, জানান ফারজানা৷
ছবি: DW
নাফিসা হক অর্পা
অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের মিডিয়া অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশনের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্রী নাফিসা হক অর্পা৷ নারী-পুরুষের শারীরিক মিলন সম্পর্কে জ্ঞানকেই যৌন শিক্ষা৷ নাফিসার কথায়, ‘‘আমাদের সময়ে ইন্টারনেট এত সহজলভ্য ছিল না৷ তখন বন্ধু, সহপাঠী, আত্মীয়স্বজনরাই ছিলেন মূল ভরসা৷’’ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষাটাকে ট্যাবু হিসেবে না দেখে একে শিক্ষার অংশ করা উচিত৷ এতে করে যৌন বিষয়ক অপরাধ কমবে৷
ছবি: DW
জান্নাতুল ফেরদৌস কনক
নাফিসার মতোই মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়াশোনা করছেন জান্নাতুল ফেরদৌস কনক, তবে তিনি পড়ছেন পঞ্চম সেমিস্টারে৷ তাঁর মতে, যৌনতা হচ্ছে বয়সের পরিবর্তনে শারীরিক এক ধরণের চাহিদা৷ আগে এ নিয়ে সীমাবধ্যতা থাকলেও, এখন ছেলে-ছেলে কিংবা মেয়ে-মেয়ের যৌন সম্পর্কও বেশ জনপ্রিয়৷ ‘‘বন্ধুদের আড্ডায় এটাই সবচেয়ে আলোচিত বিষয়’’, জানান কনক৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষার দরকার না থাকলেও এ বিষয়ে জ্ঞান থাকা জরুরি৷
ছবি: DW
ইমরান খান
অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ইমরান খান৷ তিনি যৌন শিক্ষা বলতে যৌনতা সম্পর্কে সব ধরণের ধারণাকে বোঝেন৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষা সবার জন্য একটি অত্যন্ত জরুরি বিষয়৷ আর এ কথাটা শিশুদের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য৷ তবে ইমরানের কথায়, ‘‘সঠিক যৌন শিক্ষা স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, পরিবার থেকেই গড়ে উঠতে পারে৷’’
ছবি: DW
কেডিএস সাকিব
বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নাফিসা আর কনকের মতো মিডিয়া অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়ছেন সাকিব, পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষা হলো যৌন মিলনের উপর জ্ঞান৷ তবে শিক্ষকদের কাছ থেকে নয়, বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই বন্ধুদের কাছ থেকে এ বিষয়ে জেনেছেন তিনি৷ সাকিবের মতে, পর্যাপ্ত যৌন শিক্ষা অবশ্যই দরকার৷ যৌনতা সম্পর্কে তাঁর জানার মূল উৎস বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ব্লগ এবং এ সম্বন্ধে লিখা বিভিন্ন বই৷
ছবি: DW
মাহবুব টিপু
নাফিসা, কনক, সাকিব আর ফারজানার মতোই মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়াশোনা করছেন মাহবুব টিপু৷ অবশ্য তিনি এখনও দ্বিতীয় সেমিস্টারে৷ যৌন শিক্ষা তাঁর কাছে যৌনতা সম্পর্কে সঠিক শিক্ষা৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষাটা বয়সের সঙ্গে সঙ্গেই চলে আসে৷ এ বিষয়ে জানার সবচেয়ে বড় জায়গা বন্ধু-বান্ধব৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষার মৌলিক বিষয়গুলো সবারই কম-বেশি জানা থাকে৷ তারপরও এ বিষয়ে শেখার সবচেয়ে বড় মাধ্যম বিভিন্ন ওয়েবসাইট৷
ছবি: DW
সামিয়া রহমান
সামিয়া রহমানও মিডিয়া অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশনের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী৷ যৌন শিক্ষা বলতে তিনি বোঝেন নারী ও পুরুষের শারীরিক সম্পর্ক বিষয়ে জ্ঞান৷ তাঁর কথায়, ‘‘যৌন শিক্ষা আমাদের দেশে নিষিদ্ধ একটি বিষয়ের মতো৷ তাই এ বিষয়ে আমি শিক্ষা পায়নি৷’’ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষা খুবই জরুরি৷ এ বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকায় অনেকেই ভুল পথে চলে যায়৷ তাই বাবা-মায়েরও এ বিষয়ে সন্তানদের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলা উচিত৷
ছবি: DW
নাফিউল হক শাফিন
টিপু আর সামিয়ার মতো অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের মাস কমিউনিকেশন বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নাফিউল৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষা জীবনের জৈবিক চাহিদা সম্পর্কে জানা এবং যৌনতার সঠিক প্রয়োগ ও সতর্কতাকে বোঝায়৷ তিনি শিক্ষকদের কাছ থেকে এ বিষয়ে কিছু শেখেননি৷ তবে এই শিক্ষাটা খুবই জরুরি বলে মনে করেন তিনি৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষার জন্য বড় কেউ কিংবা সহপাঠীরাই বড় মাধ্যম৷
ছবি: DW
মালিহা রহমান
মালিহা রহমানও ঐ একই বিশ্ববিদ্যালয়ে মিডিয়া অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশনের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষা হলো শারীরিক সম্পর্কের হাতে কলমে শিক্ষা৷ অবশ্য তাঁর কথায়, যৌন শিক্ষা একটা স্বাভাবিক বিষয় যেটা মানুষ থেকে শুরু করে সব প্রাণীই প্রাকৃতিকভাবে জানে৷ তাঁর মতে, এ বিষয়ে আগে থেকে জানার কিছু নেই, নেই ভালো কোনো দিক৷ যখন এ বিষয়ে জানার প্রয়োজন হবে তখন এমনিতেই তা জানা যাবে৷
ছবি: DW
9 ছবি1 | 9
এখন কিন্তু এ ধারণা অনেকটাই কমে গেছে৷ বরং আমার তো মনে হয়, আজকাল বহু রোগীই বেশ স্বাভাবিকভাবেই চিকিৎসকের কাছে আসেন৷
কোন রোগের রোগী সবচেয়ে বেশি আসেন?
আমাদের কাছে আসার আগেই কিন্তু রোগীরা চিকিৎসা পেয়ে থাকেন৷ আমরা তো পার্শিয়ালি চিকিৎসা করি৷ যেমন ভাইরাল ওয়ার্ডের বা গনোরিয়ার রোগীদের সাধারণ ডাক্তাররা চিকিৎসা দিতে পারে না৷ তখন তাঁরা আমাদের কাছে আসেন৷
স্কিন সমস্যা নিয়ে বলুন?
পরিবেশ দূষণ, ঘনবসতিপূর্ণ জায়গায় বসবাস, স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের অভাবের কারণে দেশে চর্মরোগীর সংখ্যা বাড়ছে৷ যদিও চিকিৎসকের সংখ্যাও বাড়ছে৷
সব মিলিয়ে চর্ম ও যৌনরোগীদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?
আমাদের পরামর্শ হলো, এই ধরনের রোগ ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া৷ পাশাপাশি আমরা তো আছিই৷ আমাদের কাছে কেউ এলে তাঁদের আমরা বলে দেই যে, কী করতে হবে আর কী করা যাবে না৷ খাবারের ক্ষেত্রেও আমরা বলে দেই, কী খেলে অ্যালার্জি বাড়ে৷ অবশ্য আপনি নিজেও বুঝতে পারবেন যে, কী খেলে আপনার অ্যালার্জি বাড়ছে৷ সেটা তখন পরিহার করতে হবে৷ এভাবেই আমরা পরামর্শ দিয়ে থাকি, যাতে রোগীরা নিজেরাই সচেতন হয়ে নিজের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারেন৷