বিশ্বের বিশ কোটির বেশি নারী যৌনাঙ্গচ্ছেদের শিকার, জানিয়েছে জাতিসংঘ৷ শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় বিশ্ব সংস্থাটি৷ যৌনাঙ্গচ্ছেদের এই হিসাব আগের সকল পরিসংখ্যানের চেয়ে অনেক বেশি৷
বিজ্ঞাপন
নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা সত্ত্বেও কিছু দেশে নারী স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এই ধারা অব্যাহত রয়েছে৷ সে'সব দেশের কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতির অবমূল্যায়ন করছে, মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷
নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদ রোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশেষ আন্তর্জাতিক দিবসের প্রাক্কালে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এই প্রতিবেদন প্রকাশ করলো৷ সংস্থাটির মতে, চলতি ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী পনের বছরে যৌনাঙ্গচ্ছেদের শিকার মেয়ে ও নারীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে৷
ইউনিসেফ-এর প্রতিবেদনে মোট ৩০টি দেশ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে৷ তবে এই বর্বরতার শিকার অর্ধেক নারীর অবস্থান মিশর, ইথিওপিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায়৷ গতবছরের তুলনায় এই হিসেব প্রায় সাত কোটি বেশি৷ গত বছরের হিসেবে ইন্দোনেশিয়ার কোনো তথ্য ছিল না৷
তিনি বলেন, ‘‘যৌনাঙ্গচ্ছেদ প্রত্যেক ক্ষেত্রেই মেয়ে ও নারীর অধিকারের লঙ্ঘন৷ এই চর্চা বন্ধে তাই সরকার, স্বাস্থ্য সেবাদাতা, কমিউনিটি নেতা, পিতামাতা এবং পরিবারসহ সবার কাজ করতে হবে৷''
যৌনাঙ্গচ্ছেদের প্রাচীন এই চর্চা মূলত আফ্রিকা, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে এখনও প্রচলিত রয়েছে৷ মেয়ে বা নারীর যৌনাঙ্গের বাইরের অংশ আংশিক বা পুরোপুরি কেটে এই চর্চা পালন করা হয়৷ এই চর্চার সবচেয়ে ভয়াবহ সংস্করণে মেয়েদের যোনির মুখ সেলাই করে বন্ধ করে দেয়া হয় যাতে সে বিয়ের আগে কোনো যৌনসম্পর্কে জড়াতে না পারে৷ বিয়ের পর স্বামী সেই সেলাই খোলে যা অনেক সমাজে বিয়ের পূর্বশর্ত৷
প্রতিবাদ সত্ত্বেও চলছে নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদ
আফ্রিকার দেশগুলোতে এখনো চলছে নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদ৷ যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে তা নিষিদ্ধ৷ ঐতিহ্য রক্ষার নামে নারীর উপর বর্বর নির্যাতনের কিছু ছবি পাবেন এই ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/S. Modola
সবার জন্য একই ব্লেড
কেনিয়ার রিফ্ট গ্রামের এই নারী হাতে থাকা ব্লেডটি দিয়ে ইতোমধ্যে চারজনের যৌনাঙ্গচ্ছেদ করেছেন৷ পোকোট জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্য অনুযায়ী, ব্লেড দিয়ে মেয়েদের যৌনাঙ্গের বাইরের অংশ কেটে বা যৌনাঙ্গচ্ছেদের মাধ্যমে তাঁদের মেয়ে থেকে নারীতে পরিণত করা হয়৷ যদিও বিশ্বের অনেক দেশে এটা নিষিদ্ধ, তাসত্ত্বেও অনেক নারী এখনো এই বর্বরতার শিকার হন৷
ছবি: Reuters/S. Modola
অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি
যৌনাঙ্গচ্ছেদের অনুষ্ঠান বা আচার শুরুর আগের প্রস্তুতির ছবি এটি৷ পোকোট জনগোষ্ঠীর নারী এবং শিশুরা আগুনের পাশে বসেছেন শীত থেকে বাঁচতে৷ এখানকার নারীদের মধ্যে যাঁরা যৌনাঙ্গচ্ছেদ বা ‘ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন’ (এফজিএম) করতে চান না, তাঁদের সহজে বিয়ে হয় না৷ আর প্রত্যন্ত এই এলাকায় বিয়ে ছাড়া মেয়েদের পক্ষে চলা কার্যত অসম্ভব৷
ছবি: Reuters/S. Modola
বাধা দেয়া সম্ভব নয়
যোনাঙ্গচ্ছেদের আগে মেয়েদের উলঙ্গ করে ধোয়া হয়৷ এর ফলে পরবর্তীতে তাঁদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা হতে পারে, কারণ তাঁদের মায়েদেরও সমস্যা হয়েছে৷ যৌনাঙ্গচ্ছেদের কারণে সংক্রমণ, বন্ধ্যাত্ব এমনকি সন্তান জন্ম দেয়ার সময় সমস্যাও হতে পারে৷ আফ্রিকার ২৮টি দেশে, আরব উপদ্বীপে এবং এশিয়ার কিছু দেশে এখনো এই চর্চা রয়েছে৷ ইউরোপের অভিবাসী মেয়েরাও অনেক সময় এই ঝামেলায় পড়েন৷
ছবি: Reuters/S. Modola
ভীতিকর পরিস্থিতি
রিফট উপত্যকার একটি কুঁড়েঘরে যৌনাঙ্গচ্ছেদের জন্য অপেক্ষা করছেন কয়েকজন পোকোট মেয়ে৷ ২০১১ সালে কেনিয়া সরকার এই চর্চা নিষিদ্ধ করেছে৷ তবে ইউনিসেফ-এর প্রকাশিত তথ্য অনযায়ী, দেশটির ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সি অন্তত ২৭ শতাংশ মেয়ের যৌনাঙ্গচ্ছেদ করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/S. Modola
ব্যথা সহ্য করে থাকতে হবে
একজন খৎনাকারী একটি মেয়ের যৌনাঙ্গচ্ছেদ করছেন৷ স্থানীয়রা আশা করেন যে, মেয়েরা এ সময় মুখ বুজে ব্যথা সহ্য করে যাবে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, দশ শতাংশ মেয়ে যৌনাঙ্গচ্ছেদের সময় মারা যায়৷ আরো ২৫ শতাংশ মারা যায় যৌনাঙ্গচ্ছেদের কারণে সৃষ্ট শারীরিক জটিলতার কারণে৷ সোমালিয়ার ৯৮ শতাংশ মেয়ে যৌনাঙ্গচ্ছেদের শিকার৷
ছবি: Reuters/S. Modola
পাথরের উপর রক্ত
একেক গোষ্ঠী একেকভাবে যৌনাঙ্গচ্ছেদ করে থাকে৷ পোকোট সম্প্রদায় যোনিদ্বার কেটে ফেলে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, মূলত তিনভাবে যৌনাঙ্গচ্ছেদ করা হয়৷ প্রথম পদ্ধতি হচ্ছে, ক্লিটোরিয়াস বা ভঙ্গাকুর কেটে ফেলা৷ দ্বিতীয় পদ্ধতিতে, যোনিদ্বারের বাইরের এবং ভেতরের কিছু অংশ কেঁটে ফেলা হয়৷ আর তৃতীয় পদ্ধতিতে কার্যত যোনিদ্বার পুরোটা কেটে সমান করে ফেলা হয়৷
ছবি: Reuters/S. Modola
সাদা রং করা
পোকোটদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে মেয়েদের দেহে সাদা রং করা হয়৷ তারা আগে থেকেই ধরে নেয় যে, এতে করে সংক্রমণে বা মাত্রাতিরিক্ত রক্তপাতের কারণে মেয়েটি মারা যেতে পারে৷ এমন বর্বরতা থেকে মেয়েদের বাঁচাতে ২০১৪ সালে বিশেষ পুলিশ বাহিনী তৈরি করেছে কেনিয়া৷
ছবি: Reuters/S. Modola
জীবনভর যন্ত্রণা
যৌনাঙ্গচ্ছেদের পর একটি মেয়েকে পশুর চামড়া জড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ পোকোট জনগোষ্ঠীর ধারা অনুযায়ী, মেয়েটি এখন বিয়ের উপযোগী হয়েছে৷ অনেক উপজাতী গোষ্ঠী মনে করে, এফজিএম হচ্ছে স্বাস্থ্যকর ব্যাপার৷ এরফলে মেয়েরা আরো বেশি গর্ভধারণের উপযোগী হয় এবং স্বামীর প্রতি অনুগত থাকে৷
ছবি: Reuters/S. Modola
মা থেকে মেয়েতে?
এই কিশোরী কোনোদিন যৌনাঙ্গচ্ছেদের যন্ত্রণার কথা ভুলবে না৷ কিন্তু ভবিষ্যতে সে কি এই ব্যথা থেকে তার মেয়েকে রক্ষা করতে পারবে? কিছু দেশে এখন শিশুদের যৌনাঙ্গচ্ছেদ করা হয়৷ কেননা বাচ্চাদের করা হলে সেটা আলাদাভাবে মানুষের নজর কাড়ে না!
ছবি: Reuters/S. Modola
9 ছবি1 | 9
সাধারণত মেয়ের বয়স পাঁচ বছর পার হওয়ার আগেই যৌনাঙ্গচ্ছেদ করা হয়৷ অনেকে ধর্মের দোহাই দিয়ে এটা করলেও কোরান এবং বাইবেলে এ রকম কিছু লেখা নেই বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা৷ বরং যৌনাঙ্গচ্ছেদের কারণে রক্তক্ষরণ বা সংক্রমণে মেয়েদের মৃত্যুও ঘটে৷