1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যৌন অপরাধ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখাটাই গর্বের

জাহিদুল হক৯ অক্টোবর ২০১৪

আগের যে-কোনো সময়ের তুলনায় এখন বাংলাদেশের নারীরা চাকরি বা ব্যবসায় বেশি যুক্ত হচ্ছেন৷ মেয়েদের শিক্ষার হারও বাড়ছে৷ সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেন বাড়ছে যৌন হয়রানির ঘটনা৷

প্রতীকী ছবিছবি: Fotolia/snaptitude

সংবাদমাধ্যমে এ ধরণের অপরাধের খবর প্রায়ই চোখে পড়ে৷ এই তো কদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ আনেন তাঁরই এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে৷ পরে ঘটনার তদন্তের স্বার্থে শিক্ষা কার্যক্রমসহ সব ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন অভিযুক্ত ঐ শিক্ষক৷ ভাবা যায়, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের এক ছাত্রী নিরাপদ নন তাঁর নিজের শিক্ষকের কাছেই! তাহলে অন্যদের যে কী অবস্থা তা তো বোঝাই যাচ্ছে৷

জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান ইউএন-উইমেনের করা এক জরিপ বলছে, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রায় ৭৬ শতাংশ ছাত্রীই নাকি যৌন হয়রানির শিকার হন৷ আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি এ হার সবচেয়ে বেশি – প্রায় ৮৭ শতাংশ! এরপর রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (৭৬ শতাংশ), বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় (৬৬ শতাংশ) এবং মেডিকেল কলেজ (৫৪ শতাংশ)৷

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেমন কর্মক্ষেত্রেও তেমনি নারীরা পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন৷ তৈরি পোশাক খাতে কর্মরত নারী শ্রমিকরা যেন এক্ষেত্রে একটু বেশিই বিপদে আছেন৷ অবস্থার উন্নয়নে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি-র উদ্যোগে ও হাইকোর্টের নির্দেশনায় ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন' শীর্ষক একটি খসড়া আইন তৈরি করে আইন কমিশন৷ সেটা প্রায় বছর চারেক আগের কথা৷ সম্ভবত এখনো তা আইনে পরিণত হয়নি৷

জাহিদুল হকছবি: DW/Matthias Müller

হাইকোর্টের ঐ নির্দেশনায় ১৬ ধরনের কর্মকাণ্ডকে যৌন হয়রানি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়৷ এর মধ্যে রয়েছে সরাসরি কিংবা ইঙ্গিতে অশালীন আচরণ, হয়রানি বা নিপীড়নমূলক উক্তি ও মন্তব্য বা ভঙ্গি, প্রাতিষ্ঠানিক এবং পেশাগত ক্ষমতা ব্যবহার করে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা৷ এছাড়া চিঠি, মোবাইল, খুদে বার্তাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যৌন ইঙ্গিতমূলক অপমানজনক কথা লেখা, চরিত্র হননের জন্য স্থির বা ভিডিওচিত্র ধারণ করা, প্রেমের প্রস্তাব করে প্রত্যাখ্যাত হয়ে হুমকি দেওয়া প্রভৃতি৷

অবশ্য আইন করে যে এসব অপরাধ বন্ধ করা যাবে তা নয়৷ ভারতে গত বছর থেকেই এ ধরণের একটি আইন কার্যকর রয়েছে৷ তবে সেটা পর্যাপ্ত মনে না হওয়ায় ইতিমধ্যে আইনটি সংশোধনের কথা উঠেছে৷

তবে এটা ঠিক আইন দিয়ে অপরাধ বন্ধ করা না গেলেও কিছুটা কমানো যেতে পারে৷ তাই আইনটা প্রণয়ন করা জরুরি৷ আইন কমিশন যেহেতু একটি খসড়া প্রকাশ করেছে সেহেতু সরকারের উচিত হবে এই আইন পাসে যত দ্রুত সম্ভব উদ্যোগ নেয়া এবং তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া৷

এছাড়া একজন কেন যৌন হয়রানির মতো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয় তা বিবেচনা করে দেখতে হবে এবং সেই অনুযায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে হবে৷ ছোট থেকেই শিক্ষার্থীদের এ ব্যাপারে সচেতন করে তুলতে হবে৷ এক্ষেত্রে শিক্ষকদের চেয়ে মা-বাবাকেই বেশি দায়িত্ব নিতে হবে৷ মা-বাবা যতটা যৌনতাকে ‘ট্যাবু'-র পরিধি থেকে বের করে এনে সন্তানের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে পারবেন ততই মঙ্গল৷ পারিবারিক শিক্ষা যৌন হয়রানি বন্ধে একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে৷ এর সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যদি আরেকটু জোর দিয়ে যৌন বিষয়ক শিক্ষার প্রচলন করা যায় তাহলে আরও ভালো হবে৷

কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বন্ধে সেখানকার কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী হতে হবে৷ অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বিধানের পাশাপাশি সহকর্মীদের সঙ্গে ভালো আচরণের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থাও করা যেতে পারে৷

সর্বোপরি, ধূমপান করার চেয়ে না করে থাকতে পারাটা যেমন এক ধরনের মানসিক দৃঢ়তার প্রমাণ, তেমনি যৌন হয়রানির মতো ঘৃণ্য অপরাধ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখাটাও গৌরবের বিষয় – মানুষ হিসেবে আমাদের সবাইকে এমন মনোভাব ধারণ করা শিখতে হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ