ধারণা করা হচ্ছে ছয় লাখেরও বেশি মানুষ জড়ো হবেন আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে পোপ ফ্রান্সিসকে এক নজর দেখতে৷ কিন্তু তারপরও একসময়ের ক্যাথলিকদের ঘাঁটি এখন আর আগের মতো নেই৷
পোপকে এক নজর দেখতে হাজার হাজার ক্যাথলিক বিভিন্ন জায়গা থেকে জড়ো হয়েছেন ডাবলিনে৷ তাদের একজন পর্তুগাল থেকে আসা ২০ বছর বয়সি মিলেনা পেরেইরা বলছেন, ‘‘বিভিন্ন চার্চে যেসব বিতর্কের সৃষ্টি হচ্ছে, পোপ তা মোকাবিলার যথেষ্ট চেষ্টা করছেন৷''
পেরেইরার আশা, শিগগিরই পুরো ব্যবস্থাটা সংস্কার হবে, সমচিন্তার মানুষদের পোপ উচ্চ পদে নিয়োগ দেবেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই পোপ যদি আরো পাঁচ বছর থাকেন, তাহলে আমরা ভিন্ন এক চার্চ দেখতে পাবো৷''
শিশু নির্যাতন
১৯৭৯ সালে পোপ জন পল-২ যখন আয়ারল্যান্ডে এসেছিলেন, তখনও দেশটি ছিল ক্যাথলিকদের বেশ শক্ত ঘাঁটি৷ প্রায় ১৫ লাখ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন ফিনিক্স পার্কে৷ তখন পোপের উপস্থিতিতে কোনো প্রতিবাদ করাকে অপবিত্র বলে ধরে নেয়া হতো৷
কিন্তু এখন অবস্থা ভিন্ন৷ ডাবলিন সিটি মেয়র ম্যানিক্স ফ্লিন নিজেই শহরের বিনোদন এলাকা টেম্পল বারে একটি আর্ট ইনস্টলেশন স্থাপন করেছেন৷ সেখানে ১৯টি কাঠের বোর্ডে যাজকদের হাতে ধর্ষণ হওয়া শিশুদের কথা লেখা আছে৷
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
শিশুরা বিকৃতকাম মানুষের সহজ শিকার৷ সারল্যের সুযোগ নিয়ে সহজে ভোলানো যায় তাদের৷ অনেক সময় শিশুরা বুঝতে পারে না, চিনতে পারে না পিশাচের থাবা৷ আর বুঝলেও করতে পারে না প্রতিবাদ, প্রতিরোধ৷ শুধু একটা অস্বস্তি থেকে যায় সারাটা জীবন৷
ছবি: picture alliance/abaca
ভয়াবহ অবস্থা ভারতে
ভারতের জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের অর্ধেকেরও বেশি বাচ্চা যৌন নিগ্রহের শিকার৷ তবে সবচেয়ে ভয়ংকর সত্য হলো, নাবালিকা বা শিশুর ওপর যৌন হেনস্থার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে পরিবারের মধ্যে, পরিবারেরই কোনো মানসিক বিকারগ্রস্ত সদস্যের হাতে৷ তাই সে সব ঘটনা পুলিশের কাছে পৌঁছাচ্ছে না, হচ্ছে না কোনো ডাইরি অথবা মামলা৷
ছবি: Fotolia/Gina Sanders
হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব
এভাবে প্রতিদিন বিকৃত যৌন নির্যাতনে হারিয়ে যাচ্ছে অগুন্তি শৈশব৷ অনেকক্ষেত্রেই শিশুরা বুঝে উঠতে পারছে না, বলে উঠতে পারছে না তাদের অমানবিক সেই সব অভিজ্ঞতার কথা৷ তাই শিশুদের প্রতি যৌনাসক্ত, বিকৃত মানুষগুলো থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালে৷ সমাজবিদরা বলছেন, এ জন্য আগাম সতর্কতার দায়িত্ব নিতে হবে অভিভাবক এবং স্কুলের৷ শিশুকে দিতে হবে তার প্রাপ্য শৈশব৷
ছবি: Fotolia/Kitty
যেভাবে বোঝাবেন বাচ্চাদের
সহজ ভাষায় খেলা বা গল্পচ্ছলে শিশুদের এ বিষয়ে একটা ধারণা গড়ে তোলা যেত পারে৷ বাচ্চাদের বলতে হবে যে, তাদের শরীরটা শুধুমাত্র তাদের৷ অর্থাৎ কেউ যেন তাদের ‘গোপন’ জায়গায় হাত না দেয়৷ তাই কোনো আত্মীয় বা পরিচিত ব্যক্তির আচরণ অস্বস্তিকর ঠেকলে, কেউ তাদের জোর ঘরে কোনো ঘরে নিয়ে গেলে, খেলার ছলে চুমু দিলে বা শরীরের কোথাও হাত দিলে – তা যেন মা-বাবাকে জানায় তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিনিয়ে দিন যৌনাঙ্গ
অনেক বাবা-মা নিজ সন্তানের সঙ্গে যৌনাঙ্গ নিয়ে কথা বলতে কুণ্ঠা বোধ করেন৷ কিন্তু এই লজ্জা কাটিয়ে উঠতে হবে এবং খুব ছোটবেলাতেই ছবি এঁকে অথবা গল্পে-গানে বাচ্চাকে তার শরীরের অন্য সব অঙ্গের মতো যৌনাঙ্গ, লিঙ্গ ইত্যাদি চিনিয়ে দিতে হবে৷ এমনটা করলে কেউ যদি তাদের সঙ্গে পিশাচের মতো ব্যবহার করে, তাহলে শিশুরা সহজেই বলতে পারবে কে, কখন, কোথায় হাত দিয়েছিল৷
ছবি: DW/S.Rahman
শিশুর কথা শুনুন, তার পক্ষ নিন
শিশু যাতে আপনাকে বিশ্বাস করতে পারে, বন্ধুর মতো সবকিছু খুলে বলতে পারে – সেটা নিশ্চিত করুন৷ আপনার বাচ্চা যদি পরিবারের কাউকে বা আপনার কোনো বন্ধুকে হঠাৎ করে এড়িয়ে যেতে শুরু করে অথবা আপনাকে খুলে বলে বিকৃত সেই মানুষের কৃতকর্মের কথা, তবে সময় নষ্ট না করে শিশুটির পক্ষ নিন আর তিরস্কার করে বাড়ি থেকে বার করে দিন ঐ ‘অসুস্থ’ লোকটাকে৷
ছবি: Fotolia/pegbes
স্কুলেরও দায়িত্ব আছে
বাচ্চারা দিনের অনেকটা সময় স্কুলে কাটায়৷ তাই যৌন শিক্ষার ক্ষেত্রে স্কুলের একটা বড় দায়িত্ব থেকে যায়৷ তবে স্কুলের মধ্যে, বিদ্যালয় চত্বরেও ঘটতে পারে শিশু নির্যাতনের ঘটনা৷ তাই স্কুল থেকে ফেরার পর বাচ্চা যদি অতিরিক্ত চুপচাপ থাকে, একা একা সময় কাটায় বা পড়াশোনা করতে না চায়, তাহলে ওর সঙ্গে কথা বলুন৷ জানতে চান কী হয়েছে, প্রয়োজনে স্কুল কর্তৃপক্ষকেও জানান৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel
ছেলে-মেয়ে সমান!
আমাদের সমাজে ছোট থেকেই মেয়েদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়৷ মেয়ে হলেই হাতে একটা পুতুল আর ছেলে হলে ধরিয়ে দেয়া হয় বল বা খেলনার পিস্তল৷ ছেলের পাতে যখন তুলে দেয়া হয় মাছের বড় টুকরোটা, তখন মেয়েটির হয়ত এক গ্লাস দুধও জোটে না৷ এ বৈষম্য বন্ধ করুন৷ বাবা-মায়ের চোখে ছেলে-মেয়ে সমান – সেভাবেই বড় করুন তাদের৷ তা না হলে নারীর ক্ষমতায়ন হবে কীভাবে? কীভাবে কমবে শিশু নির্যাতন?
ছবি: picture alliance/abaca
7 ছবি1 | 7
ফ্লিন নিজেও এই শিশুদের একজন৷ ১১ বছর বয়সে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের প্রার্থনা বা সমবেদনার প্রয়োজন নেই৷ এসব মানুষ এবং যারা এসব ঘটনা ধামাচাপ দিতে চেয়েছে, তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে এবং আদালতে হাজির করতে হবে৷''
১৯৯০ সালে আয়ারল্যান্ডে ক্যাথলিক চার্চের পতন শুরু হয়৷ তখনই ক্যাথলিক যাজকদের যৌন নিপীড়ণে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রথম সামনে আসে৷ ১৯৯২ সালে গ্যালওয়ের বিশপ এমন ক্যাসে জানা যায় তার ১৭ বছর বয়সি এক ছেলে আছে৷ ক্যাসে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগে বাধ্য হন৷
মুখ ফেরাচ্ছেন বিশ্বাসীরাও
এর পর থেকে ক্যাথলিক স্কুল এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও নির্যাতনের খবর প্রকাশ পেতে থাকে৷ আইরিশরা এসব খবরে হতভম্ভ হয়ে পড়েন৷ যখন জানা যায় চার্চের হর্তাকর্তারা এসব যাজকদের রক্ষা করেছেন এবং অন্য জায়গায় বদলি করে দিয়ে এমন আরো ঘটনা ঘটানোর সুযোগ করে দিয়েছেন, তখন অনেকেই এসব ঘটনার পর চার্চ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন৷
২০০৫ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে চার্চে যাওয়া ক্যাথলিকদের সংখ্যা কমে যায় ২০ শতাংশ৷