কিছুদিন পরই শুরু হচ্ছে স্পেনের ঐতিহ্যবাহী বার্ষিক ষাঁড় দৌড়৷ আর এই উৎসবে কোনো নারী যাতে যৌন নিপীড়নের শিকার না হন, সেজন্য পামপ্লোনা শহরে মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে পুলিশ৷
বিজ্ঞাপন
৬ তারিখ শুরু হচ্ছে ষাঁড় দৌড়৷ দেশ বিদেশের অগণিত পর্যটক এই উৎসবে যোগ দিতে আসবেন এই শহরে৷ এর আগে যৌন নির্যাতনের আশংকায় অনেকে উৎসব বয়কটের হুমকিও দিয়েছিলেন৷ কিন্তু পুলিশ বলছে, নারীদের তাঁরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেবে৷
২০১৬ সালের উৎসবে এক নারীকে হেনস্তা করার অভিযোগ ওঠে পাঁচ ব্যক্তির বিরুদ্ধে৷ তাঁরা পরিচিত হয়ে ওঠে ‘উলফ প্যাক' নামে৷ তবে সম্প্রতি অভিযোগ থেকে তাদের নাম তুলে নেওয়া এবং জামিনে মুক্তি, নারীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে৷
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আয়োজন বয়কটের ঘোষণা ছড়িয়ে পড়েছে৷ কিন্তু সিটি কাউন্সিলর ইৎজিয়ার গোমেজ সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছেন প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখার৷ ‘যৌন নিপীড়নমুক্ত পামপ্লোনা' নামে একটি ক্যাম্পেইনও শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ৷
সমতা ও এলজিবিটি বিষয়ক কাউন্সিলর লরা বেরোও নারীদের রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন৷ ‘‘এখন নারীদের আরো বেশি করে রাস্তায় নেমে আসা উচিত, যাতে অন্য নারীরাও ভরসা পায়, যে সে একা না৷''
‘উলফ প্যাক' ঘটনার আগে থেকেই যৌন নির্যাতনের রাশ টানার চেষ্টা করে আসছে পাম্পলোনা পুলিশ৷ হাজার হাজার পুলিশ অফিসার একাধিক ভাষায় সেবা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন৷ কিন্তু ২০১৬ সালের ঘটনা তাঁদেরকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে৷
‘আগ্রে স্টপ/এরা স্টপ' নামের এই ফ্রি অ্যাপের মাধ্যমে যে-কোনো নারী পুলিশের কাছে নির্যাতনের ঘটনার রিপোর্ট করতে পারবেন৷ সাথে সাথেই সেই নারীর অবস্থান জেনে যাবে পুলিশ৷ এর ফলে দ্রুতই ঘটনাস্থলে পৌঁছানো সম্ভব হবে৷
যৌন নির্যাতনের ঘটনার দিক দিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ১৭তম অবস্থানে রয়েছে স্পেন৷ ২০১৫ সালে ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে প্রতি ১ লাখে ১৮ দশমিক ৬ জন নাগরিক যৌন নির্যাতনের শিকার হন৷ তবে ২০১৬ সালের ‘উলফ প্যাক' ঘটনার পর থেকে এ হার বেড়েই চলেছে৷
এডিকে/এসিবি (রয়টার্স, ইএফই)
স্পেনের পামপ্লোনায় ষাঁড় খেদা
উত্তর স্পেনের পামপ্লোনা শহর ‘ষাঁড় খেদার’ বা ‘বুল ফাইটিং’-এর জন্য বিখ্যাত৷ সন্ত ফিরমিনের সম্মানে এই ন’দিনব্যাপী উৎসবে খোলা রাস্তা দিয়ে বুলফাইটিং-এর ষাঁড়দের তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় – একটি রক্তাক্ত ও বিতর্কিত প্রথা৷
ছবি: Reuters/E.Alonso
সানফারমিনেস – সন্ত ফিরমিনের উৎসব
উৎসবটা যে কেন সন্ত ফিরমিনের নামে, তা পামপ্লোনার বাসিন্দারাও ঠিক জানেন না৷ সন্ত ফিরমিন এই শহর বা অঞ্চলের রক্ষাকর্তা নন; তাঁর পরবের দিনটিও আসে অক্টোবর মাসে; তবে সন্ত ফিরমিনের জন্ম এখানেই৷ চতুর্দশ শতাব্দী থেকে পামপ্লোনায় সানফারমিনেস বা সন্ত ফিরমিনের উৎসব চলে আসছে৷
ছবি: Reuters/S.Vera
গলিঘুঁজি দিয়ে দৌড়
মনে রাখা দরকার, এই ষাঁড়গুলোর এক একটির ওজন ৬০০ কিলোগ্রাম৷ পামপ্লোনার গলিঘুঁজি দিয়ে তাদের তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বুলফাইটিং-এর অ্যারেনার দিকে – যেখানে সন্ধ্যায় বুলফাইটার বনাম ষাঁড়ের লড়াইতে এই প্রাণীগুলির জীবন শেষ হয়৷ দু’লাখ বাসিন্দার শহর পামপ্লোনায় প্রতিবছর ১৫ লাখ মানুষ আসেন ষাঁড় খেদা দেখতে৷
ছবি: Reuters/E.Alonso
দুঃসাহস
দর্শক আর ষাঁড়গুলোর মধ্যে বেড়া দেওয়া আছে, যাতে কেউ আহত না হয় – আবার পামপ্লোনার ষাঁড় খেদার মজাই হলো এই যে, ষাঁড়গুলোই আসলে মানুষকে খেদিয়ে নিয়ে যাবে৷ বিশেষ করে ছেলে-ছোকরারা বেড়া টপকে পথে নামে, ষাঁড়গুলোর নামানো মাথা আর ব্যাঁকানো শিং-এর সামনে কিছুদূর দৌড়ে, তারা যে কতটা সাহসী, সেটা প্রমাণ করে দেবার জন্য৷
ছবি: Reuters/E.Alonso
তিন মিনিটের দৌড়
উৎসবের চলাকালীন প্রত্যেক দিন সকাল আটটায় সন্ত ফিরমিনের নামে প্রার্থনা ও গানের পর ষাঁড়গুলোকে ছেড়ে দেওয়া হয়: ৮২৫ মিটারের পথ যেতে – বা দৌড়তে – ষাঁড়েদের মিনিট তিনেকের বেশি লাগে না৷
ছবি: picture alliance/dpa/R.Jimenez
মরণ খেলা
প্রতিবারই কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটে৷ এ বছর ষাঁড় খেদার প্রথম কয়েক দিনেই বহু মানুষ আহত হয়েছেন৷ পামপ্লোনার ষাঁড় খেদায় শেষবার কারো প্রাণ হারানোর ঘটনা ঘটেছে ২০০৯ সালে৷ ১৯১১ সালে যাবৎ সন্ত ফিরমিনের ষাঁড়েদের দৌড়ে প্রাণ হারিয়েছেন মোট ১৫ জন মানুষ৷
ছবি: Reuters/V.West
চোট তো লাগবেই
২০১৭ সালের ‘বুল রান’ বা ষাঁড়ের দৌড়ে শুধুমাত্র প্রথম দিনেই চোট পেয়েছেন পাঁচজন মার্কিনি, তিনজন স্প্যানিশ ও দু’জন ফরাসি পর্যটক৷ সকলকেই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হয়েছে৷ দু’জন মার্কিন টুরিস্টকে শিং দিয়ে ফুঁড়ে দিয়েছে ষাঁড়েরা; বাকিরা পামপ্লোনার প্রাচীন অংশের সংকীর্ণ, পাথর-বসানো গলি দিয়ে ষাঁড়েদের সঙ্গে দৌড়নোর সময় চাপে পড়ে কিংবা পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছেন৷
ছবি: Reuters/J.Etxaburu
‘জীবজন্তুকে কষ্ট দেওয়াটা খেলা নয়’
পামপ্লোনার ষাঁড় খেদার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দানা বাঁধছে বৈকি৷ এ বছর পামপ্লোনার পৌরভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন পশুপ্রেমীরা৷ ষাঁড়েরা দৌড়তে অভ্যস্থ নয়; রাস্তার পাথরের ওপর তাদের খুর পিছলে যায়, ফলে তারা পড়ে গিয়ে চোট পায়: আবার সন্ধ্যায় এই চোট পাওয়া জীবগুলোকে হত্যা করা হয় – একে খেলা বা সংস্কৃতি বলে মানতে রাজি নন তারা৷