বাংলাদেশে যৌন শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে আর তা স্কুলে এবং পরিবারেও, এমনটাই জানিয়েছেন বেশিরভাগ বন্ধু ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায়৷ তবে ভিন্ন মতও পোষন করেন কেউ কেউ৷
বিজ্ঞাপন
‘‘বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তির জামানা কাজেই সবাই মোটমুটি এসব বিষয় জানেন৷ তারপরও মা-বাবা তো আছেই, প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকারা ও এ সম্মন্ধে ভূমিকা রাখতে পারেন৷'' এ মন্তব্য আমাদের ফেসবুক বন্ধু কামালউদ্দিন ভুঁইঞার৷
সুজায়েত তাজিম ইমন যৌন শিক্ষার ব্যাপারে সবচেয়ে আগে ধর্মশিক্ষার দিকেই গুরুত্ব দিয়ে তিনি লিখেছেন এভাবে, ‘‘ছোটবেলা থেকে বইপত্রে পড়েছি কিভাবে চরিত্র গঠন করতে হয়, তখনো ঠিক বুঝতে পারেনি চরিত্র গঠন আসলে কী? তারপরে যখন হাদিস-কোরআন পড়েছি, তখন সত্য কী আর সত্যের সাথে জীবন পরিচালনা করাই বা কী তা বুঝতে পেরেছি৷ মানুষের শরীর মন সবকিছু সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়ে থাকে, আর এই পরিবর্তন মানুষকে পুরাতন থেকে নতুন কিছু শিক্ষা দেয়৷ জীবনে সব শিক্ষা বই পড়ে হয় না তাই কিছু শিক্ষা জীবন থেকে নিতে হয় আর জীবন যেখানে সৃষ্টিকর্তার হাতে তাই ধর্ম শিক্ষা সবার আগে প্রয়োজন৷''
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিরক্ত আরেকজন বন্ধু জানিয়েছেন, ‘‘শিশুদের শিক্ষাগ্রহণের অধিকার হচ্ছে মৌলিক অধিকার৷ শিশুদের যৌন শিক্ষার অধিকার নিয়ে বড় বড় কথা বলার কিছু নেই৷ যেখানে আমাদের পাঠ্যবইগুলোতে নৈতিক শিক্ষার উপরই জোর দেয়া হয় না, সেখানে যৌনশিক্ষার মতো বিষয় নিয়ে কথা বলা প্রশ্নের সৃষ্টি করে৷ নৈতিক শিক্ষাটা জরুরি৷''
বাংলাদেশে যৌন শিক্ষা
পাঠ্যপুস্তকে যৌন স্বাস্থ্যের বিষয়টি ইতিমধ্যেই অন্তর্ভুক্ত করেছে সরকার৷ কিন্তু যৌন শিক্ষা পড়ানো নিয়ে সমস্যা হচ্ছে৷ শিক্ষকরা এতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেননি, ছাত্র-ছাত্রীরাও বিষয়টিকে সহজভাবে নিচ্ছে না৷ কী বলছে আজকের তরুণ সমাজ?
ছবি: DW/K. Andrade
ফারজানা খানম
অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের মিডিয়া অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশনের তৃতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী ফারজানা৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষা হচ্ছে যা থেকে যৌনতা সম্পর্কে জানা যায়৷ এ শিক্ষা প্রত্যেকের জীবনে প্রয়োজন৷ বাচ্চাদের পরিবার এবং শিক্ষকরা এটা শিখাতে পারেন৷ এছাড়া যৌনতা সম্পর্কে তাদের জানার উৎস হতে পারে পরিবার অথবা বন্ধু-বান্ধব৷ তাছাড়া ইন্টারনেট থেকেও যৌনতা সম্পর্কে জানা যায়, জানান ফারজানা৷
ছবি: DW
নাফিসা হক অর্পা
অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের মিডিয়া অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশনের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্রী নাফিসা হক অর্পা৷ নারী-পুরুষের শারীরিক মিলন সম্পর্কে জ্ঞানকেই যৌন শিক্ষা৷ নাফিসার কথায়, ‘‘আমাদের সময়ে ইন্টারনেট এত সহজলভ্য ছিল না৷ তখন বন্ধু, সহপাঠী, আত্মীয়স্বজনরাই ছিলেন মূল ভরসা৷’’ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষাটাকে ট্যাবু হিসেবে না দেখে একে শিক্ষার অংশ করা উচিত৷ এতে করে যৌন বিষয়ক অপরাধ কমবে৷
ছবি: DW
জান্নাতুল ফেরদৌস কনক
নাফিসার মতোই মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়াশোনা করছেন জান্নাতুল ফেরদৌস কনক, তবে তিনি পড়ছেন পঞ্চম সেমিস্টারে৷ তাঁর মতে, যৌনতা হচ্ছে বয়সের পরিবর্তনে শারীরিক এক ধরণের চাহিদা৷ আগে এ নিয়ে সীমাবধ্যতা থাকলেও, এখন ছেলে-ছেলে কিংবা মেয়ে-মেয়ের যৌন সম্পর্কও বেশ জনপ্রিয়৷ ‘‘বন্ধুদের আড্ডায় এটাই সবচেয়ে আলোচিত বিষয়’’, জানান কনক৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষার দরকার না থাকলেও এ বিষয়ে জ্ঞান থাকা জরুরি৷
ছবি: DW
ইমরান খান
অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ইমরান খান৷ তিনি যৌন শিক্ষা বলতে যৌনতা সম্পর্কে সব ধরণের ধারণাকে বোঝেন৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষা সবার জন্য একটি অত্যন্ত জরুরি বিষয়৷ আর এ কথাটা শিশুদের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য৷ তবে ইমরানের কথায়, ‘‘সঠিক যৌন শিক্ষা স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, পরিবার থেকেই গড়ে উঠতে পারে৷’’
ছবি: DW
কেডিএস সাকিব
বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নাফিসা আর কনকের মতো মিডিয়া অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়ছেন সাকিব, পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষা হলো যৌন মিলনের উপর জ্ঞান৷ তবে শিক্ষকদের কাছ থেকে নয়, বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই বন্ধুদের কাছ থেকে এ বিষয়ে জেনেছেন তিনি৷ সাকিবের মতে, পর্যাপ্ত যৌন শিক্ষা অবশ্যই দরকার৷ যৌনতা সম্পর্কে তাঁর জানার মূল উৎস বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ব্লগ এবং এ সম্বন্ধে লিখা বিভিন্ন বই৷
ছবি: DW
মাহবুব টিপু
নাফিসা, কনক, সাকিব আর ফারজানার মতোই মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়াশোনা করছেন মাহবুব টিপু৷ অবশ্য তিনি এখনও দ্বিতীয় সেমিস্টারে৷ যৌন শিক্ষা তাঁর কাছে যৌনতা সম্পর্কে সঠিক শিক্ষা৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষাটা বয়সের সঙ্গে সঙ্গেই চলে আসে৷ এ বিষয়ে জানার সবচেয়ে বড় জায়গা বন্ধু-বান্ধব৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষার মৌলিক বিষয়গুলো সবারই কম-বেশি জানা থাকে৷ তারপরও এ বিষয়ে শেখার সবচেয়ে বড় মাধ্যম বিভিন্ন ওয়েবসাইট৷
ছবি: DW
সামিয়া রহমান
সামিয়া রহমানও মিডিয়া অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশনের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী৷ যৌন শিক্ষা বলতে তিনি বোঝেন নারী ও পুরুষের শারীরিক সম্পর্ক বিষয়ে জ্ঞান৷ তাঁর কথায়, ‘‘যৌন শিক্ষা আমাদের দেশে নিষিদ্ধ একটি বিষয়ের মতো৷ তাই এ বিষয়ে আমি শিক্ষা পায়নি৷’’ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষা খুবই জরুরি৷ এ বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকায় অনেকেই ভুল পথে চলে যায়৷ তাই বাবা-মায়েরও এ বিষয়ে সন্তানদের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলা উচিত৷
ছবি: DW
নাফিউল হক শাফিন
টিপু আর সামিয়ার মতো অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের মাস কমিউনিকেশন বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নাফিউল৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষা জীবনের জৈবিক চাহিদা সম্পর্কে জানা এবং যৌনতার সঠিক প্রয়োগ ও সতর্কতাকে বোঝায়৷ তিনি শিক্ষকদের কাছ থেকে এ বিষয়ে কিছু শেখেননি৷ তবে এই শিক্ষাটা খুবই জরুরি বলে মনে করেন তিনি৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষার জন্য বড় কেউ কিংবা সহপাঠীরাই বড় মাধ্যম৷
ছবি: DW
মালিহা রহমান
মালিহা রহমানও ঐ একই বিশ্ববিদ্যালয়ে মিডিয়া অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশনের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষা হলো শারীরিক সম্পর্কের হাতে কলমে শিক্ষা৷ অবশ্য তাঁর কথায়, যৌন শিক্ষা একটা স্বাভাবিক বিষয় যেটা মানুষ থেকে শুরু করে সব প্রাণীই প্রাকৃতিকভাবে জানে৷ তাঁর মতে, এ বিষয়ে আগে থেকে জানার কিছু নেই, নেই ভালো কোনো দিক৷ যখন এ বিষয়ে জানার প্রয়োজন হবে তখন এমনিতেই তা জানা যাবে৷
ছবি: DW
9 ছবি1 | 9
মো. হাবিবুল্লাহ বয়ঃসন্ধি সম্পর্কে জোর না দিয়ে পাঠ্য-পু্স্তকের উপর জোর দেওয়ার কথা জানিয়েছেন৷ তাহলেই নাকি দেশটা সভ্য হতো বলে তিনি মনে করেন৷
জাকির হোসেন অবশ্য পুরোপুরি অন্য কথা বলছেন৷ তাঁর ধারণা, যৌন শিক্ষা দিলে নাকি বাংলাদেশেও ওয়েস্টার্ন কালচারই হয়ে গেল৷
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে ঢেলে সাজানো দরকার বলে মনে করেন বন্ধু জিনাত মহল মিশোর৷ তবে সেখানে যৌন শিক্ষা থাকা দরকার কিনা, সে সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করেননি৷ আর জহিরুল ইসলাম মনে করেন, ‘‘যৌন শিক্ষায় সামাজিক বাঁধা বলতে কিছু নাই, মূল্যবোধ, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি....এগুলো সম্পর্কে সজাগ থাকলেই হয়৷ একটা সমাজ বা দেশে চলমান অবস্থার বিপরীতে অতি আধুনিকতাও একটা গোড়ামি৷''
তবে আমাদের ফেসবুক বন্ধু নূর আলম যৌন শিক্ষা সম্পর্কে সরাসরি তাঁর মতামত না জানালেও আমাদের লেখা প্রতিবেদনগুলো তাঁর কাছে ভালো লেগেছে জানিয়েছেন৷ এ ব্যাপারে পাঠক জিনাত, জসিম খলিফাও বন্ধু নূর আলমের সাথে একমত৷
অন্যদিকে আল-আমিন লিখেছেন, বাংলাদেশে যৌনশিক্ষা বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ কথা কবিতাও তাই বলছেন৷
‘‘যৌন শিক্ষা বিষয়টা ট্যাবু নয়, এটাকে সাধারণ ভেবে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে৷'' – এই মন্তব্য ত্রিদিপ অধিকারীর৷ শফিকুজ্জামান মতে যৌন শিক্ষা বাংলাদেশের জন্য খুব দরকার৷
যৌন শিক্ষা বিষয়ক একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মতামত তুলে ধরা হয়েছে৷ তাঁদের মতামত পড়ে পাঠক মহসিন হাসান ডয়চে ভেলেকে লক্ষ্য করে লিখেছেন, ‘‘আমি সত্যিই হতাশ, আপনারা কি মনে করেন ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ? তাছাড়া শুধু একটি মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টদের মতামত নেয়া হলো কেন?'' তাঁর মতে, ‘‘কমপক্ষে আরো দু-তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মতামত নেওয়া উচিত ছিল৷''
সন্তানের সাথে সুন্দর সম্পর্ক রাখার কিছু উপায়
বাবা-মায়ের কাছে সন্তানের চেয়ে মূল্যবান কি আরো কিছু আছে? এককথায় ‘না’৷ এ সম্পর্ক খারাপ হলে পরিবারে নানা জটিলতা আর অশান্তির সৃষ্টি হয়৷ সম্পর্ক সুন্দর রাখার কিছু সহজ উপায় থাকছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: Colourbox
মায়ের সাথে সম্পর্ক
ছোটবেলায় শিশুরা বেশিরভাগ সময় যে মায়ের সাথেই থাকে – এ কথা ঠিক৷ তাই বলে যে মায়ের সাথে পরেও সম্পর্ক ভালো থাকবে এমন কোনো কথা নেই কিন্তু! সব সময় সম্পর্ক ভালো এবং সুন্দর সম্পর্ক রাখার জন্য অবশ্যই সে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে আর সেটা করতে হবে ছোটবেলা থেকেই৷ কিন্তু কিভাবে?
ছবি: Colourbox
সম্পর্ক তৈরি
দায়িত্ব পালন এক বিষয়, আর বন্ধুত্বের সম্পর্ক সম্পূর্ণ অন্য একটা বিষয়৷ ছোটবেলা থেকেই শিশুর সাথে খেলাধুলা করুন, বই পড়ুন৷ শিশুর সাথে বসে টিভিতে শিশুদের অনুষ্ঠান দেখুন৷ শিশুকে অন্য শিশুর সাথে মিশতে, খেলতে দিন৷ এতেই বোঝা যাবে আপনার শিশুর পছন্দ, অপছন্দ, ভালো লাগা আর না লাগার কথা৷ শিশুর পছন্দকে গুরুত্ব দিন তবে ওর পছন্দই যেন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব না পায়৷
ছবি: Stadt Stuttgart/Kraufmann/Hörner
বাবার দায়িত্ব
সময়ের দাবির কারণে কিছুটা পরিবর্তন এলেও এখনো দেখা যায় যে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সন্তানরা বেশিরভাগই মায়ের সাথে যতটা সহজ, বাবার সাথে তেমনটা নয়৷ তাই বাবাও সন্তানের জন্য কিছুটা সময় বের করে সন্তানের সাথে থাকুন৷ জার্মানিতে অনেক বাবাকেই দেখা যায় ছুটির দিনে সন্তানকে নিয়ে পার্কে, মিউজিয়ামে বা অন্য কোথাও ঘুরতে যেতে৷ এর মাধ্যমে বাবার সাথে সন্তানের গড়ে ওঠে ঘনিষ্ঠতা৷
ছবি: colourbox/S. Darsa
সমান দায়িত্ব
সন্তানদের সাথে ভালো এবং মধুর সম্পর্ক গড়া মা-বাবার সমান দায়িত্ব তাই দায়িত্ব ভাগ করে নিয়ে সব বিষয়ে কথা বলুন৷ এতে ছেলে-মেয়েরা সহজ হয়ে ওদের দুঃখ, কষ্ট ও সমস্যার কথা জানাতে দ্বিধা করবে না৷ শিশুদের ভয় দেখিয়ে কখনো কাছে আনা যায় না৷ওরা কোনো অপরাধ করলে তা নিয়ে সরসরি আলোচনা করতে হবে৷ ছোটবেলায় সন্তনকে ভয় দেখিয়ে কাজ হলেও, বড় বয়সে কিন্তু আর সে সম্পর্ক সুন্দর থাকে না৷ তাই সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশতে হবে৷
ছবি: Getty Images/D. Silverman
সম্পর্কে দূরত্ব আনে প্রযুক্তির ব্যবহার
আজকাল প্রায়ই দেখা যায় একদিকে মা, একদিকে বাবা, আর অন্যদিকে সন্তান – যে যার মতো ব্যস্ত ফেসবুক, কম্পিউটার বা ট্যাবলেট নিয়ে৷ অর্থাৎ পরিবারের সদস্যদের ভেতর কথাবার্তা তেমন হচ্ছে না৷ তাই প্রয়োজন ছাড়া এই যন্ত্রগুলোকে সরিয়ে রেখে দিয়ে নিজেদের মধ্যে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন শিশু-কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ গুন্ডুলা গ্যোবেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Tetra Images
সন্তানের সামনে ঝগড়া নয়!
বাবা-মায়ের নিয়মিত ঝগড়া সন্তানদের মনে ভীষণভাবে রেখাপাত করে, যা বড় বয়সেও তারা ভুলতে পারে না৷ শুধু তাই নয়, যারা খুব বেশি ঝগড়া করেন, তাঁদের অকালমৃত্যুর ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ বেশি৷ এই তথ্য পাওয়া গেছে ডেনমার্কের কোপেনহাগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের করা এক গবেষণার ফল থেকে৷ তাছাড়া বাবা-মা সারাক্ষণ ঝগড়া করলে সন্তানরা বিষণ্ণতায় ভোগে, যা পরবর্তিতে তাদের ভেতরে থেকে যায়৷
ছবি: Fotolia
আলোচনার বিকল্প নেই
পরিবারের সুখ-শান্তি রক্ষায় আলোচনার কোনো বিকল্প নেই৷ তাই ‘‘শিশুকে শিশু না ভেবে একজন সম্পূর্ণ মানুষ হিসেবে গণ্য করে আলোচনায় ওকেও অংশ নিতে নিন৷ শিশুর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং ওকে বলার সুযোগ দিন৷ এর মধ্য দিয়ে আপনার সন্তানটিও বুঝবে যে সে পরিবারের একজন সদস্য এবং ওর মতামতেরও মূল্য আছে৷ এতে শিশুর দায়িত্ববোধ এবং অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধাও বাড়বে’’, বলেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture alliance/zb/Hans Wiedl
বকা বা ভয় দেখাবেন না!
আজকের যুগের জীবনযাত্রা মোটেই সহজ নয়, কিন্তু তারপরও মা-বাবা তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের চাপ সন্তানদের ওপর চাপিয়ে দেবেন না৷ কারণ শিশুদের মন খুবই নরম, ওরা সব বাবা-মায়ের সব কথার উত্তর না দিলেও তা ওদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ভেলে, খুব সহজেই৷ দৈনন্দিন সমস্যার কথাও সন্তানদের সাথে শেয়ার করুন৷ হয়ত ওদের কাছে থেকেই পেয়ে যাবেন সমস্যার সমাধান৷বকাঝকা করে বা ভয় দেখিয়ে সন্তানদের কাছে আনা যায় না৷
ছবি: Sandy Schulze/Fotolia
স্বপ্ন আর বাস্তব – এক নয়!
প্রতিটি বাবা-মা চান তাঁদের সন্তান সব কিছুতেই ভালো করুক, যা খুবই স্বাভাবিক৷ তবে এটাও মনে রাখা দরকার যে, ‘স্বপ্ন আর বাস্তব’ – এক নয়৷ তাই পরীক্ষায় ভালো ফলাফল হয়নি বা অন্য কোনো প্রতিযোগিতায় মনের মতো সাফল্য দেখাতে পারেনি বলে তাকে বকাঝকা না করে বরং আরও একটু বেশি যত্ন নিন, সাহস দিন আগামীবারের জন্য৷ তাছাড়া পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করাই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়, কখনোই!