ইবোলা-কালে যৌনতার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ উঠল রিপাবলিক অফ কঙ্গোর একাধিক ডাব্লিউএইচও কর্মীর বিরুদ্ধে।
বিজ্ঞাপন
ভয়াবহ রিপোর্ট হাতে এসেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লিউএইচও-র হাতে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে কঙ্গোয় ইবোলা এপিডেমিকের চেহারা নিয়েছিল। সে সময় বহু কর্মী নিয়োগ করতে হয়েছিল ইবোলার সঙ্গে লড়াই করার জন্য। একাধিক নারী কর্মীকে যৌনতার বিনিময়ে চাকরির শর্ত দিয়েছিল সেখানকার ডাব্লিউএইচও কর্মীরা। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ডাব্লিউএইচও প্রধান সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছেন, গোটা ঘটনার জন্য তিনি ক্ষমাপ্রার্থী। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
অভিযোগ আগেই কানে এসেছিল ডাব্লিউএইচও-র। তারই ভিত্তিতে একটি স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সম্প্রতি তাদের রিপোর্ট ডাব্লিউএইচও-র হাতে এসেছে। ৩৫ পাতার রিপোর্টে একাধিক অভিযোগের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
যখন যখন ডব্লিউএইচও-র বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ‘বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউএইচও৷ এর আগেও নানা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি জরুরি অবস্থা জারি করে৷
ছবি: AP
জনস্বাস্থ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা
বিশ্বের কোথাও মরণব্যাধির প্রাদুর্ভাব হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একদল বিশেষজ্ঞ পরিস্থিতি বিবেচনা করে ‘পাবলিক হেল্থ ইমার্জেন্সি অব ইন্টারন্যাশনাল কনসার্ন’ (পিএইচইআইসি) ঘোষণা করেন৷ ২০০৫ সাল থেকে পিএইচআইসি ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ছয় বার বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে৷
ছবি: AP
করোনা ভাইরাস
উহান শহরে প্রাদুর্ভাবের পর করোনা ভাইরাস দ্রুত আশেপাশের নগরীতে ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শুরুতে চীনে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে৷ কিন্তু আরো কয়েকটি দেশে এই ভাইরাসে সংক্রমিত রোগী পাওয়ার পর বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Yu
সোয়াইন ফ্লু
২০১৯ সালে মেক্সিকোর ভেরাক্রুজ নগরীতে এইচ১এন১ ইনফ্লুয়েঞ্জার (সোয়াইন ফ্লু নামে পরিচিত) প্রাদুর্ভাব হয়৷ যা পরে আরো কয়েকটি দেশে জড়িয়ে পড়ে৷ সোয়াইন ফ্লুতে প্রায় পৌনে তিন লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷ যদিও আনুষ্ঠানিক হিসেবে মৃতের সংখ্যা সাড়ে ১৮ হাজার বলা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP
পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা
পশ্চিম আফ্রিকার তিন দেশ সিয়েরা লিওন, গিনি ও লাইবেরিয়ায় ২০১৩ ও ২০১৬ সালে ইবোলা ভাইরাস মারাত্মক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল৷ ইবোলায় আক্রান্ত হয়ে দেশগুলোতে ১১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়৷
ছবি: Reuters
পোলিও
বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ এখন পোলিও মুক্ত৷ কিন্তু পাকিস্তান সরকার দেশজুড়ে পোলিও প্রতিরোধে ব্যর্থ হলে ২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাধ্য হয়ে রোগটি আবারও ছড়িয়ে পড়া নিয়ে ‘পাবলিক হেল্থ ইমার্জেন্সি অব ইন্টারন্যাশনাল কনসার্ন’ জারি করে৷ পাকিস্তান, সিরিয়া ও ক্যামেরনে এখনো শিশুদের পোলিও আক্রান্ত হতে দেখা যায়৷ বিশ্বে বর্তমানে পোলিও আক্রান্ত ৪১৭ শিশুর মধ্যে এক-পঞ্চমাংশের বেশি পাকিস্তানি৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/M. Achakzai
জিকা
২০১৬ সালে জিকা ভাইরাস নিয়ে ডব্লিউএইচও ‘পাবলিক হেল্থ ইমার্জেন্সি অব ইন্টারন্যাশনাল কনসার্ন’ জারি করে৷ তার এক বছর আগে ব্রাজিলে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়, যা পরে আরো ৬০টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়ে৷ এমনিতে প্রাণঘাতী না হলেও অন্তঃস্বত্তা নারী জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে গর্ভের শিশু মাইক্রোসেফালিতে আক্রান্ত হতে পারে৷ ওই সময় প্রায় ২৩০০ শিশু মাইক্রোসেফালি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Lacerda
কঙ্গোতে ইবোলা
২০১৯ সালের জুলাই মাসে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে নতুন করে ইবোলার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে৷ ২০১৮ সালের অগাস্ট থেকে ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত কঙ্গোতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ইবোলা রোগী সনাক্ত হয়৷ যাদের মধ্যে ২২৩৬ জনা মারা গেছেন৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
7 ছবি1 | 7
রিপোর্ট অনুযায়ী, অন্তত ৮০টি এমন অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। অভিযুক্ত প্রায় ২০ জন ডাব্লিউএচও কর্মী। তাদের অধিকাংশই কঙ্গোর নাগরিক। তবে বিদেশিও আছে। অন্তত ৩০ জন নারী সরাসরি ডাব্লিউএইচও কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। অন্তত ৫১ জন নারী ডাব্লিউএইচও ছাড়াও ইউনিসেফ, অক্সফ্যামের মতো সংস্থার কর্মীদের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেছেন।
আক্রান্ত নারীদের অভিযোগ, ইবোলার সময় বেশ কিছু চাকরির সুযোগ তৈরি হয়েছিল। ইবোলার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য সাময়িক সময়ের শর্তে বহু স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করেছিল ডাব্লিউএইচও। অভিযুক্ত কর্মীরা সে সময় বহু চাকরিপ্রার্থী নারীর ইন্টারভিউ নেয়। তাদেরকে সরাসরি প্রশ্ন করা হয়, বসের সঙ্গে যৌনতায় তাদের আপত্তি আছে কি না। যৌন সংসর্গ করলে পদোন্নতির কথাও বলা হয়।
আক্রান্ত নারীদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, কাজের প্রয়োজনে তারা রাজি হয়েছিলেন। সেই সুযোগে তাদের ধর্ষণও করা হয়েছে।
ডাব্লিউএইচও-র বক্তব্য, যে ব্যক্তিদের নামে অভিযোগ, তাদের অধিকাংশই টেম্পোরারি স্টাফ। অর্থাৎ, তাদেরকেও ইবোলা মোকাবিলা করার জন্য দ্রুত নিয়োগ করা হয়েছিল। সকলের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে অভিযুক্তদের নাম প্রকাশিত হয়নি। তবে কঙ্গোর ঘটনা একটি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলেও একইরকম ঘটনা ঘটছে না তো?