ভারতে মি-টু আন্দোলনের তীব্রতা ক্রমশ বাড়ছে৷ অনেক বিশিষ্ট মানুষের বিরুদ্ধে উঠছে যৌন হেনস্থার অভিযোগ৷ যদিও এই সমাজে যৌন নিগ্রহ একটি দৈনন্দিন বাস্তবতা৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে ‘মি-টু' আন্দোলনের সূত্রপাত, তা ইদানীং ভারতেও আলোড়ন তুলেছে৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এম জে আকবর থেকে বলিউড তারকা নানা পাটেকর ‘মি-টু' সূত্রেই খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন৷ অভিযোগকারীদের মধ্যে রয়েছেন তনুশ্রী দত্তের মতো অভিনেত্রী থেকে মহিলা সাংবাদিকও৷
কিন্তু, এটা হিমশৈলের চূড়া মাত্র৷ সমস্যা আদতে আরও বড় এবং তার অধিকাংশটাই প্রকাশ্যে আসে না৷ প্রকৃতপক্ষে, এই সমাজে যৌন হেনস্থা দৈনন্দিন বাস্তবতা৷ অফিস-কাছারি, রাস্তাঘাট থেকে গণপরিবহনের ট্রেন-ট্যাক্সি-বাস-অটোয় প্রতিনিয়ত এ ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে৷ পাশে বসার অছিলায় আপত্তিকর স্পর্শের অভিজ্ঞতা তো মেয়েদের হামেশাই হচ্ছে৷ সল্টলেকের দীপিকা ঘোষ ডয়চে ভেলেকে জানালেন নিজের অভিজ্ঞতার কথা৷ ‘‘এ অঞ্চলে অটোচালকের ব্যবহার মোটেই ভাল নয়৷ ট্যাক্সিচালকেরাও মাঝে মাঝে খারাপ আচরণ করে, অভব্য যাত্রী তো আছেনই৷ শুধু তাই নয়, ছোটবেলা থেকে আত্মীয়স্বজন কিংবা গৃহশিক্ষক, নানা ভাবে হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছে৷''
‘মহিলা হেল্পলাইনের পাশাপাশি লেডিস স্পেশ্যাল ট্রেনটি সম্পূর্ণভাবে মহিলা চালিত করার উদ্যোগও নিয়েছে রেল’
মহানগরের বুকে গণপরিবহণ মহিলাদের পক্ষে কতটা নিরাপদ? বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সুমন গুহ বললেন, ‘‘সবাই খারাপ নয়৷ ১০ শতাংশ ট্যাক্সিচালকের ক্ষেত্রে অভিযোগ এলেও বাকিরা ভালোই হন৷'' মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য তাঁরা ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে দাবি করলেন তিনি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা প্যানিক বাটন চালু করছি এই পুজোয়৷ মোবাইল অ্যাপসে প্যানিক বাটনে চাপ দিলেই স্থানীয় থানা বা ট্র্যাফিক পুলিশের কাছে খবর চলে যাবে৷ কোনও মহিলা সমস্যায় পড়লে হেল্প লাইন নম্বরে ফোন করতেও পারেন৷''
তবে অন্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের বাসে মহিলারা যথেষ্ট সুরক্ষিত থাকেন বলে দাবি করলেন ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দীপক সরকার৷ তিনি বলেন, ‘‘এত বড় রাজ্যে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে৷ তবে মোটের উপর পরিস্থিতি ভালো৷'' রেল পরিষেবায় নারী সুরক্ষার ব্যাপারে ইস্টার্ন রেলওয়ের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র ডয়চে ভেলেকে জানালেন, ‘‘মহিলাদের সঙ্গে কোনও অন্যায় হলে প্রতিবাদ সকলেরই করা উচিত৷ সাধারণ যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে সেটা ভালোই হবে৷ স্টেশন চত্বর এবং ট্রেনের কামরায় যাতে কোনও অঘটন না ঘটে, সেটার দিকে রেল প্রশাসন নজর রেখেছে৷ মহিলা হেল্পলাইনের পাশাপাশি লেডিস স্পেশ্যাল ট্রেনটি সম্পূর্ণভাবে মহিলা চালিত করার উদ্যোগও নিয়েছে রেল৷''
‘যৌন হেনস্থা মহিলার কাছে একটা বড় ট্রমা’
মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, ‘‘মহিলাদের নিরাপত্তার স্বার্থে মেট্রো ভবন থেকে ট্রেনে নজরদারি রাখা হয়৷ সিসিটিভিতে নজর রাখা হয় স্টেশনে৷ সাদা পোশাকে মহিলা পুলিশ ও আরপিএফ (রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স)-এর কর্মীরা থাকেন৷ কামরার মধ্যে যে হেল্পলাইন নম্বর রয়েছে, সেটিতে যে কোনও সময় যাত্রীরা ফোন করতে পারেন৷ নির্দিষ্ট কামরার নম্বর বলতে পারলে পরের স্টেশনে ট্রেন থামলেই সেই কামরায় হাজির হবেন আরপিএফের কর্মীরা৷''
সব পরিবহণের হেল্পলাইন রাখা হয়েছে বটে, কিন্তু কতজন মহিলাই বা এ ধরনের অভিজ্ঞতার পর মুখ খোলেন? থানায় অভিযোগ জানানো দূরের কথা! অভিযোগ না জানালে সেটা হিসাবে আসে না, যৌন নিগ্রহের ঘটনা বলে স্বীকৃত বা নথিভুক্ত হয় না৷
সবচেয়ে করুণ পরিস্থিতি হয় কর্মক্ষেত্রে যৌন লাঞ্ছনার শিকার মহিলাদের৷ কাজের ক্ষেত্রে যৌন নিগ্রহ যখন হয়, তখন একজন নিম্ন আয়ের মহিলার মতো সেলিব্রিটিরাও একইরকম সঙ্কটে পড়তে পারেন, এমনটাই মত নারী আন্দোলনের কর্মী, অধ্যাপক শাশ্বতী ঘোষের৷ তিনি বলেন, ‘‘অভিনেত্রীরাও এ ধরনের অভিজ্ঞতার সামনে পড়লে অসহায় বোধ করতে পারেন৷ তাঁরা বিখ্যাত মানুষ হলেও কাজ হারানোর ভয় তাঁদেরও রয়েছে৷
‘১০ শতাংশ ট্যাক্সিচালকের ক্ষেত্রে অভিযোগ এলেও বাকিরা ভালোই হন’
উচ্চমানের জীবনযাত্রা নির্বাহ করতে আমাদের থেকে তাঁদের আরও বেশি উপার্জন করতে হয়৷'' এ জন্য পুরুষদের শুধু দায়ী করতে রাজি নন শাশ্বতী৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘পুরুষতন্ত্র মানে শুধু পুরুষ নয়, এর মধ্যে মহিলারাও আছেন৷ আপনার নিগ্রহ হলে বাড়ির মা ও বৌদিরা সবার আগে প্রশ্ন তুলবেন, তুই ওর কাছে গিয়েছিলি কেন? জানিস তো লোকটা পাজি! অর্থাৎ মহিলারাই অপদস্থ হওয়ার পর মেয়েটিকে ভয় পেতে শেখায়৷'' তবে সমাজ প্রতিবাদী নারীকে এখন বাহবা দিচ্ছে, যদিও প্রতিবাদের জন্য মূল্য দিতে হচ্ছে বলে মত শাশ্বতীর৷
সম্প্রতি যে অভিযোগগুলি উঠছে, অনেকে বলছেন, সেগুলি প্রচার পাওয়ার চেষ্টা৷ তাই ‘মি-টু' নামে সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে৷ অভিযোগ থাকলে এতদিন মুখ বন্ধ করে ছিলেন কেন? পরিচালক ও অভিনেত্রী সুদেষ্ণা রায় বলেন, ‘‘যৌন হেনস্থা মহিলার কাছে একটা বড় ট্রমা৷ তাই সঙ্গে সঙ্গে মুখ খোলা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না৷ নিগৃহীতা যদি জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ২০ বছর আগের ঘটনার কথা বলেন, তাতে দোষের কিছু নেই৷ তখন সাহস হয়নি, এখন ফোরাম পাওয়া গিয়েছে, তাই সাহস করে বলতে পারছেন মহিলারা৷'' একসময় সাংবাদিকতার পেশায় জড়িয়ে থাকা সুদেষ্ণা বলেন, মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মহিলা সাংবাদিকদের অভিযোগ মিথ্যা নয়৷ একই কথা শিল্পী অভিজিতের ক্ষেত্রে খাটে৷''
‘এই বিষয়টা নিয়ে আরও বেশি আলোচনার দরকার ছিল’
কর্মস্থলে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হেনস্থা রুখতে সুপ্রিম কোর্ট বিশাখা কমিটি তৈরির নির্দেশ দিয়েছে৷ কিন্তু, তাতে কি মহিলাদের কাজের সুযোগ দেওয়া থেকে পদোন্নতি, এমন নানা প্রলোভন দেখিয়ে যৌন হেনস্থার প্রবণতা কমেছে? রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই বিষয়টা নিয়ে আরও বেশি আলোচনার দরকার ছিল৷ এর যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না৷ এই কমিটি গঠনের দায়িত্ব থাকছে সেই ব্যক্তির হাতে যিনি মহিলা কর্মীকে নিয়োগ করছেন৷ আবার কর্ণধার হিসেবে মহিলারা থাকলেও, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সেই নারী ক্ষমতায় থেকে পুরুষেরই সমমনস্ক হয়ে ওঠেন৷ তাই হেনস্থার সমাধান হয় না৷''
মহিলাদের মধ্যে থেকেই মি-টু নিয়ে একটা ভিন্নস্বর শোনা যাচ্ছে৷ অনেক পুরুষের মতোই তাঁরাও বলছেন, কিছুটা একতরফা হইচই হচ্ছে৷ দমদম পুরসভার জনপ্রতিনিধি ও আইনজীবী রিঙ্কু দে বলেন, ‘‘প্রতিবাদ হওয়া অবশ্যই দরকার৷ আমরা প্রতিনিয়ত এই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি৷ কিন্তু, একইসঙ্গে আমাদের নিজেদেরও পরিমার্জিত করতে হবে৷ অনেক ক্ষেত্রে মহিলারা এমন পোশাক পরেন, যেটা শোভন নয়৷''
আপনার কোনো মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷
বলিউডে যৌন হয়রানির অভিযোগ, ভারত জুড়ে তোলপাড়
সাবেক মিস ইন্ডিয়া থেকে বলিউড নায়িকা হলেও বহুদিন শিরোনামে ছিলেন না তনুশ্রী দত্ত৷ তবে দশ বছর আগে নানা পাটেকরের বিরুদ্ধে করা যৌন হয়রানির অভিযোগ ঘিরে এখন তোলপাড় চলছে ভারতে৷তনুশ্রীও ফিরেছেন শিরোনামে৷ বিস্তারিত এই ছবিঘরে৷
ছবি: imago/Hindustan Times/S. Bate
দশ বছর আগে...
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তনুশ্রী তুলে আনেন ২০০৮ সালের সেই ঘটনা৷ জানান, সে বছর ‘হর্ণ ওকে প্লিজ’ ছবির সেটে অভিনেতা নানা পাটেকার তাঁকে যৌন হেনস্থা করেছিলেন৷পরে সেই ছবি থেকে তিনি সরে দাঁড়ান৷ তাঁর বদলে নেওয়া হয় রাখি সাওয়ান্তকে৷ হেনস্থার বিষয়ে চলচ্চিত্র ও টিভি প্রোগ্রাম প্রযোজক সংস্থা, ‘সিন্টা’-র কাছে অভিযোগ করেও কোনো বিচার পাননি৷ এর আগে ২০১৩ সালেও এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে কথা বলেছিলেন তিনি৷
ছবি: Youtube/ABP News
কে এই তনুশ্রী দত্ত?
২০০৪ সালের মিস ইন্ডিয়া তনুশ্রী দত্ত একজন ভারতীয় মডেল এবং অভিনেত্রী৷ ‘চকলেট’ ও ‘আশিক বানায়া আপনে’-র মতো ছবিতে অভিনয় করে নজর কেড়েছিলেন তিনি৷ ২০০৪ সালের মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় দশজন ফাইনালিস্টের মধ্যেও ছিলেন তিনি৷ ২০০৮ সালের ঘটনার পর তনুশ্রী হতাশাগ্রস্ত হয়ে বলিউড থেকে বিদায় নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান৷
ছবি: Getty Images/AFP
দশ বছর পর...
যৌন হেনস্থাবিরোধী ‘মি টু’ আন্দোলনের ঢেউ অবশেষে ভারতেও লেগেছে৷ সম্প্রতি তনুশ্রী ভারতে ফিরে এসে জনসমক্ষে নানা পাটেকারকে অভিযুক্ত করেন, যার ফলে শুরু হয় তোলপাড়৷ দশ বছর আগে যে ঘটনায় কেউ কান দেয়নি, তা নিয়েই শুরু হয় তুমুল আলোচনা৷ দশ বছর আগে তনুশ্রীর বাবা যে নানা পাটেকার, পরিচালক রাকেশ সারং, কোরিওগ্রাফার গণেশ আচার্য ও প্রযোজক সামি সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে এফআইআর করেছিলেন – সেই সত্যও বেরিয়ে আসে৷
ছবি: Getty Images/AFP
মন্তব্যহীন ‘বিগ বি’
এক অনুষ্ঠানে বলিউড তারকা অমিতাভ বচ্চনের কাছে নানা পাটেকারের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য করতে বলে প্রসঙ্গটি তিনি বেমালুম এড়িয়ে যান৷ তিনি বলেন, ‘‘ আমার নাম তনুশ্রী দত্ত বা নানা পাটেকার কোনটিই নয়, এ বিষয়ে আমি কেন মন্তব্য করব?’’
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/India Today
সলমানও এড়িয়ে গেলেন
বলিউড সুপারস্টার সলমান খানও এই ঘটনা সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হননি৷ তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘‘আমার এ বিষয়ে ভালো জানা নেই৷ গোটা বিষয়টি এখনও বুঝে না উঠলেও আমি নিশ্চিত যে আইনি পথেই বিষয়টি চলবে৷’’
ছবি: DW/S. Zain
আমির সন্দিহান!
জনপ্রিয় অভিনেতা আমির খানও ঘটনাটি সম্পর্কে সরাসরি মন্তব্য না করে সমালোচিত৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি না যে, আমার এখানে কিছু বলা ঠিক হবে৷ আপাতত তদন্ত করে দেখা উচিত সত্যিই এই ধরনের ঘটনা আদৌ ঘটেছে কি না৷’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kakade
ভিডিও কী বলে?
ইতিমধ্যে ২০০৮ সালে অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্তের গাড়ি ভাঙচুরের দৃশ্যসম্বলিত একটি ভিডিও বিভিন্ন মাধ্যমে ঘোরাফেরা করছে৷ ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কিছু লোক তনুশ্রীর গাড়ির উপর হামলা করছে৷ তনুশ্রী মনে করেন, নানা পাটেকারের হয়ে একটি রাজনৈতিক দলের গুন্ডারা এ হামলা চালিয়েছিল৷ তাঁর মতে, অভব্য আচরণের প্রতিবাদে তিনি শুটিং স্পট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর নানা পাটেকারই মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার ওই সদস্যদের খবর দিয়েছিলেন৷
ছবি: Youtube/ABP News
নানার পাল্টা জবাব
তনুশ্রী দত্তের নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে নানা পাটেকার বলেন, ‘‘১০ বছর আগে যা সত্য ছিল আজও তাই আছে ও আগামীতেও তাই থাকবে৷’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘আমার আইনজীবী আমাকে বিষয়টি সম্পর্কে কথা না বলার পরামর্শ দিয়েছেন বলেই আমি নীরব৷ নইলে, প্রেসে কথা বলার কোনো সমস্যা আমার নেই৷’’ নানা পাটেকরের আইনজীবী ইতিমধ্যে তনুশ্রীকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন৷
ছবি: Gety Images/AFP
তনুশ্রীর পাশে সোহা আলি খান
অভিনেত্রী সোহা আলি খান তনুশ্রীর পাশে দাঁড়াতে গিয়ে বলেন,‘‘ভারতের মতো দেশে নারীর সঙ্গে প্রতিদিনই কিছু-না-কিছু ঘটতে থাকে৷’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘এমন ঘটনার বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াতে অনেক সাহস লাগে, তাই আমি মনে করি নারীদের এই বিষয়ে সমর্থন জানাতে হবে, উৎসাহিত করতে হবে।’’ সোহা জানান, তিনি তনুশ্রী বা যৌন হয়রানির শিকার এমন যে কোনো মহিলার পাশে আছেন৷
ছবি: UNI
ফারহানও তনুশ্রীর পাশে
তনুশ্রীর সাহসের প্রশংসা করে চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা ফারহান আখতার বলেছেন, ‘‘যদি কোনো নারী নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলতে চায়, তবে আমাদের তা শোনা অন্তত উচিত৷ আমরা তার কথা শোনার আগেই ঘোষণা করছি যে, অভিনেত্রী হিসেবে তাঁর কেরিয়ার শেষ হওয়ার কারণে তিনি মিডিয়ার আলোচনায় আসতে চান!’’ অভিযোগ তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন তিনি৷ নেহা ধুপিয়া, অর্জুন কাপুরের মতো তারকারাও তনুশ্রীকে সমর্থন জানিয়েছেন৷
ছবি: AP
দায় এড়ানোর কৌশল?
২০০৮ সালে চলচ্চিত্র ও টিভি অনুষ্ঠান প্রযোজক অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে থাকা সাবেক সেন্সর বোর্ডপ্রধান পহলাজ নিহলানি পুরো বিষয়টিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে দাবি করেছেন, তিনি শুধু শুটিং সেটে মনোমালিন্য সম্পর্কে জানতেন৷ তনুশ্রী আগে কখনো হয়রানি সম্পর্কে কিছু বলেননি বা না পাটেকারের নাম কোথাও উল্লেখ করেননি বলেও দাবি তাঁর। অথচ দশ বছর আগেই এফআইআর করেছিলেন তনুশ্রী৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
তনুশ্রীর জবাব
মহারাষ্ট্র রাজ্য মহিলা কমিশনে ইতিমধ্যে নানা পাটেকার, রাকেশ সারং, গণেশ আচার্য ও সামি সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন তনুশ্রী৷ ১০ বছর আগে রাজনৈতিক হুমকি ও সহিংস হামলার জন্য মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার কর্মীদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
আরো কেচ্ছা বেরোলো
এই ঘটনাবলীর আলোকে, 'মি টু' আন্দোলন ভারতে যেন নতুন প্রাণ পেয়েছে। রজত কাপুর ও বিকাশ বেহলের মতো তারকাদের বিরুদ্ধেও নতুন ও পুরোনো অভিযোগ খবরে উঠে আসছে। এখন দেখার এটাই যে, আন্দোলনটি আদৌ সমাজে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করতে সক্ষম হয় কিনা।