1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যৌন হয়রানি: ১০ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি আদালতের নির্দেশনা

মাসুম বিল্লাহ
১৯ এপ্রিল ২০১৯

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যৌন হয়রানি ঠেকাতে ২০০৯ সালে নীতিমালা করে দিয়েছিল বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট৷ কিন্তু ১০ বছর পার হলেও সেটির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি৷

Bangladesch - Proteste für mehr Lohn für Textilarbeit
ছবি: bdnews24

সম্প্রতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির ঘটনাবড় বড় শিরোনাম হওয়ার প্রেক্ষাপটে আদালতের নীতিমালার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে৷

ওই নীতিমালার বাস্তবায়ন নিয়ে ২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা সর্বোচ্চ আদালত করে দিলেও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই সেটি সম্পর্কে জানেন না৷

আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যাকশনএইডের উদ্যোগে বছর খানেক আগে ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ : সুপ্রিম কোর্টের ২০০৯ সালের নির্দেশনার প্রয়োগ ও কার্যকারিতা' শিরোনামের গবেষণাটি করা হয়৷

ওই গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক তাসলিমা ইয়াসমিন বলছেন, পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা করতে না পারা এবং সচেতনতার অভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি বেড়েই চলেছে৷

‘‘সচেতনার উপর বাধ্যবাধকতা ছিল (ওই নীতিমালায়)৷  কিন্তু প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে দু-একটা ছাড়া প্রপারলি বাস্তবায়ন হয়নি৷ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো কিছুই নেই৷ কয়েক জায়গায় কাগজে করে রাখলেও অনেক জায়গায় তা-ও নেই,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন তিনি৷

‘‘আমাদের প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, সেটা মাদ্রাসা বলেন, স্কুল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বলেন, আমরা যৌন হয়রানিকে কম অ্যাটেনশন দিই৷ মনে হয়, এটা কোনো ব্যাপার না৷ একজন স্টুডেন্ট যে একজন শিক্ষকের কাছে ভালনারেবল হতে পারে, এই কালচারটাই আমাদের ডেভেলপ করেনি৷''

‘পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা এবং সচেতনতার অভাবে যৌন হয়রানি বাড়ছে’

This browser does not support the audio element.

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ২০০৯ সালে একটি যুগান্তকারী নির্দেশনা দেয় সুপ্রিম কোর্ট৷

নির্দেশনায় বলা হয়, কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা৷ সচেতনতা বৃদ্ধি, কমিটি গঠন ও আইনের প্রয়োগের বিষয়টি শিক্ষার্থীদের অবহিতকরণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশও দেওয়া হয় সেই সময়৷

যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটলে বিদ্যমান আইনে এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিচার নিশ্চিত করার কথাও বলা আছে, যেটি কর্মক্ষেত্রের যে-কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্যও প্রযোজ্য৷

নির্দেশনায় বলা হয়, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে যতদিন না একটি পৃথক ও পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন করা হয় ততদিন পর্যন্ত গণপরিসরে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ের সকল কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে৷

ওই নির্দেশনার পর একটি নীতিমালা করার প্রক্রিয়া সরকার শুরু করলেও তা শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি৷

এরমধ্যে ২০১৪ সালের এক জরিপে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ৭৬ শতাংশ ছাত্রীই কোনো-না-কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হন৷

এক্ষেত্রে যৌন হয়রানিকে ‘স্বাভাবিক'হিসাবে মেনে নেওয়ার প্রবণতাও দায়ী বলে মনে করছেন গবেষক তাসলিমা ইয়াসমীন৷

‘‘শিক্ষক যদি ছাত্রীকে বলে, ‘আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই'- অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে এটাকে যৌন হয়রানি হিসাবে বিবেচনা করা হয় না৷ এটা স্বাভাবিক হিসাবে ধরে ছেড়ে দিলাম৷ যেন কোনো ব্যাপারই না৷ সুতরাং এই কালচারটা তৈরি করতে হবে, স্ট্রিক্ট হতে হবে৷''

তাসলিমা ইয়াসমীন বলেন, ‘‘লিগ্যাল এনফোর্সমেন্ট প্রয়োজন, সচেতনতা প্রয়োজন, যাতে শিক্ষকরাও জানবে, আমরা এমন এক সমাজে আছি, যেটা যৌন নিপীড়নের বিষয়ে খুব কঠোর৷ আমরা যে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে স্ট্রিক্ট আছি, এটা যতক্ষণ না একটা ইনস্টিটিউশন তৈরি করবে নিজেদের মধ্যে, ততক্ষণ পর্যন্ত ছাত্রীদের ভালরানেবল পজিশনেই রাখছি৷''

মাদ্রাসাগুলোতে কি যৌন হয়রানি বেড়েছে?

সম্প্রতি ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা করার পর মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়৷ এ ঘটনা সাড়া দেশে আলোড়ন তোলে৷ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার পর নুসরাতের মৃত্যু হয়৷

‘সামাজিক অবক্ষয় ঘটছে’

This browser does not support the audio element.

এই ঘটনার রেশ না কাটতেই ১২ এপ্রিল চাঁদপুরে আরেক মাদ্রাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে৷শাহরাস্তির ভোলদিঘী কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ এনে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা৷

এসব বড় বড় শিরোনাম হওয়ার পর নৈতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিবেচিত মাদ্রাসাগুলোতে যৌন হয়রানি অবাধে চলছে কিনা এমন প্রশ্ন উঠে৷

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এরা তো আর অন্য গ্রহ থেকে আসে না৷ এই সমাজের পরিবেশেই বেড়ে উঠেছে৷ ইদানিং বেড়েছে এমন কথা ঢালাওভাবে বলা যাবে না৷ আগে সংবাদপত্রগুলো খোঁজ-খবর রাখতো না রক্ষণশীলতার কারণে, তাই সেভাবে আসতো না৷ আগে একদম ছিল না, সেটা বলা যাবে না৷''

এসব ঘটনার জন্য সামাজিক অবক্ষয়কে দায়ী করে মাওলানা মাসউদ বলেন, ‘‘সামাজিক অবক্ষয় ঘটছে, তেমনিভাবে এই প্রতিষ্ঠানগুলিও সমাজের একটি অঙ্গ৷ এই প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা অস্বীকার করা যাবে না৷ আগে এগুলো নৈতিক রক্ষণশীলতার ব্যাপার ছিল৷ এগুলো প্রকাশের পর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে,'' বলেন তিনি৷

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ