1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফেসবুক স্ট্যাটাসটি কার?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১২ নভেম্বর ২০১৭

যার ‘কথিত ফেসবুক পোস্ট' নিয়ে রংপুরে হিন্দুদের বাড়ি ঘরে হামলা, আগুন আর লুটপাট করা হয়েছে, সেই টিটু রায় লেখা-পড়াই জানে না, এলাকায় নেই সাত বছর ধরে৷ খুলনার এক মাওলানার ফেসবুক থেকে স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়ে বলে জানা গেছে৷

ছবি: bdnews24.com

খুলনার মাওলানা আসাদুল্লাহ হামিদির ফেসবুকে একটি স্ক্রিন শট শেয়ার করা হয় ২৫শে অক্টোবর, তিনি অন্য একজনের ফেসবুক স্ট্যাটাস শেয়ার করেছিলেন৷ একই স্ট্যাটাস আবার ‘বাংলাদেশি টিনএজার' নামে একটি গ্রুপের সাথে শেয়ার করতে দেখা গেছে৷ তবে রংপুরের ঐ এলাকার স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, এলকাবাসীকে ওই একই ফেসবুক স্ট্যাটাসের ছবি দেখানো হয়েছে৷ তাতে দেখা যায় টিটুর ছবি দিয়ে একটি আইডি৷ কিন্তু ফেসবুক আইডি'র নাম এমডি টিটু৷

মাওলানা আসাদুল্লাহ হামিদি ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ-এর খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সভাপতি এবং খুলনা জেলা শাখার সহ সাংগঠনিক সম্পাদক৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমি সংবাদ মাধ্যমে জেনেছি যে আমি যে স্ট্যাটাস শেয়ার করেছি তা নিয়ে রংপুরে হিন্দুদের ওপর হামলা হয়েছে৷ কিন্তু আমি যে স্ক্রিন শট শেয়ার করেছি তা টিটু নামের কেউ দেয় নাই৷ দিয়েছে আর একজন৷ সে আমার ফেসবুক বন্ধু না৷ আর ওই আইডি আসল না নকল তাও আমি জানি না৷ তবে আমি শুনেছি, যে ব্যক্তি ঐ স্ট্যাটাস দিয়েছিল সিলেট থেকে অনেক আগেই গ্রেপ্তার হয়েছে সে৷''

‘টিটু লেখাপড়া করেনি, কোনোমতে নিজের নামটা স্বাক্ষর করতে জানে’

This browser does not support the audio element.

এধরণের স্ট্যাটাস কেন শেয়ার করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমি বিচার চেয়েছি যারা এই কাজ করেছে তাদের৷ তাই বলে হিন্দুদের বাড়ি ঘরে হামলা, লুটপাট কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না৷ যারা এই হামলা করেছে তাদের বিচার দাবি করছি৷'' তিনি আবারো বলেন,‘‘টিটুর সঙ্গে আমার শেয়ার করা স্ট্যাটাসের কোনো সম্পর্ক নেই৷''

রংপুরের স্থানীয় সাংবাদিক এবং প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী বাদল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মো. টিটু (MD TITU) নামে দু'মাস আগে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়, টিটু রায় নয়৷ তবে আইডিতে রংপুর সদরের ঠাকুরপাড়া গ্রামের টিটু রায় ও তার পরিবারের ছবি রয়েছে৷ আর ওই আইডি থেকে স্ট্যাটাসটি শেয়ার করা হয়েছে৷ তবে যে ব্যক্তির স্ট্যাটাস শেয়ার করা হয়েছে, সেই ব্যক্তিকে চিনতে পারেননি স্থানীয়রা৷''

ঠাকুরপাড়াবাসী ও স্বজনদের কাছ থেকে জানা গেছে, এই গ্রামের মৃত খগিন্দ্র চন্দ্রের ছেলে টিটু রায়৷ সে লেখাপড়া করেনি, কোনোমতে নিজের নামটা শুধু স্বাক্ষর করতে জানে৷ প্রায় সাত বছর আগে পাওনাদারের ভয়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে ঢাকায় চলে যায় টিটু৷

‘হিন্দুদের বাড়ি ঘরে হামলা, লুটপাট কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না’

This browser does not support the audio element.

সে বিভিন্ন এনজিওর কাছে ঋণ নিয়ে টাকা পরিশোধ করতে পারেনি৷ পাওনাদারদের অত্যাচারে বাড়ি থেকে একাই পালিয়ে চলে যায়৷ এরপর সে কখনই তার বাড়িতে আসেনি৷ প্রায় পাঁচ বছর আগে তার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়োরাও চলে যায় টিটুর কাছে৷ এখন সে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করছে৷''

রংপুর জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি যে পোস্টটি কার ফেসবুক থেকে দেয়া হয়েছে৷ বিষয়টি নিয়ে ঢাকার পুলিশ সদর দপ্তর-এর সাইবার অপরাধ টিম কাজ করছে৷ এটা নিয়ে তদন্ত চলছে৷''

এই ফেসবুক স্ট্যাটাস ব্যবহার করে মোসাদ্দেকুর রহমান নামে এক ব্যক্তি ফেসবুক ইভেন্ট খুলে প্রচারণা চালায় ওই এলাকায়৷ তিনি প্রথমে তার আইডি থেকে ইভেন্ট খোলার কথা স্বীকার করলেও পরে প্রশ্নের মুখে ফোন লাইন কেটে দেন৷

‘হামলাকারীদের ছবি আছে, সেই ছবি দেখে আটক করছি’

This browser does not support the audio element.

অভিযোগ উঠেছে ঘটনার দু' সপ্তাহ আগে থেকেই এই কথিত ফেসবুক পোস্ট নিয়ে উত্তেজনা চলছিল৷ পুলিশ আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে এই পরিস্থিতি হত না৷ পুলিশ সুপার এই অভিযোগের জবাবে বলেন, ‘‘আমরা আগে থেকেই পুলিশ মোতায়েন করেছিলাম৷ শুক্রবার জুমার নামাজের পর মিছিল করে বিক্ষোভকারীরা চলেও যায়৷ কিন্তু বিকেলে সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নে একটি জানাজার নামাজের পর জামাত শিবিরের কিছু লোক সাধারণ মুসল্লিদের উত্তেজিত করে ধান ক্ষেতের মধ্য দিয়ে গিয়ে হামলা চালায়৷ তারা প্রথমেই হামলা চালায় টিটু রায়ের পৈত্রিক বাড়িতে৷''

ঘটনার সাথে জড়িতদের সনাক্ত করছেন কীভাবে? এ প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘আমাদের কাছে হামলাকারীদের ছবি আছে৷ সেই ছবি দেখে এখন আটক করছি৷''

শুক্রবার বিকেলে রংপুর সদরের ঠাকুপাড়ায় হামলা চালিয়ে হিন্দুদের ৩০ টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়, ভাঙচুর করা হয় আরো ২৫টি বাড়িতে৷ চালানো হয় লুটপাট৷  রংপুর সদর এবং গঙ্গাচড়া এই দুই উপজেলা থেকেই জড়ো হয়ে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়৷ এপর্যন্ত ৩৯ জনকে হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটক করেছে পুলিশ৷  মামলায় জামায়াত, বিএনপি এবং ওলামা দলের নেতা-কর্মীদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে৷

এ প্রসঙ্গে আপনার মতামত লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ