শেষ হয়ে গেল আরও একটি বিশ্বকাপ! আবার চার বছরের অপেক্ষা৷ এই হাটে আনাগোনা বন্ধ হলো৷ চলছে লেনাদেনা মিটিয়ে নেওয়ার হিসাব৷ এর মধ্যেই এবারের বিশ্বকাপ একটু অন্য রকম কী কী খবর দিয়ে গেল, সেটাই পৃষ্ঠা উলটে দেখেছেন রাজীব হাসান৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বকাপের শুরুতেই স্প্যানিশ-কম্পন
স্পেন এবারের বিশ্বকাপে বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিতে এসেছিল৷ কিন্তু নিজেদের ম্যাচ শুরুর প্রায় আগমুহূর্তে সুখের সংসার তছনছ হয়ে গেল৷ একটা খবর, বলা ভালো, একটা টর্নেডো ধেয়ে আসায়৷ রেয়াল মাদ্রিদ কোচ হিসেবে নাম ঘোষণা করল ইউলেন লোপেটেগুইর৷ আর সেটাই হুল হয়ে বিঁধল স্পেন ফুটবল ফেডারেশনকে৷ লোপেটেগুইর সঙ্গে স্পেনের চুক্তি ছিল ২০২২ পর্যন্ত৷ কিন্তু জিনেদিন জিদানের বিদায়ের পর রেয়াল গোপনে চুক্তি করে রাখে এই কোচের সঙ্গে৷ বিশ্বকাপের পর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার কথা ছিল৷ ভেতরের খবর ফাঁস হয়ে যাচ্ছে দেখে রেয়াল তড়িঘড়ি করে জানিয়ে দেয় নতুন কোচের নাম৷ তাতেও বিস্ময়ের ভূমিকম্প ঠেকানো যায়নি৷ তবে প্রতিক্রিয়ায় স্পেন ফুটবল ফেডারেশন যা করে, সেটি আরও চমকে দেয়৷ নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামার আগমুহূর্তে ছাঁটাই করে কোচকে! ভারপ্রাপ্ত কোচ হিয়েরো দলের ভার বয়ে নিতে পারেননি৷ স্পেন বাদ পড়েছে দ্বিতীয় রাউন্ডে৷
বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮-এর শিরোপা ঘরে তুলেছে ফ্রান্স৷ ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুট পড়েছে তারা৷
ছবি: Reuters/C. Hartmann
গোল্ডেন বল
রাশিয়া বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় কে? কয়েকজনের নাম আসতে পারে৷ যেমন, বেলজিয়ামের হ্যাজার্ড, ফ্রান্সের এমবাপ্পে কিংবা গ্রিসমান৷ কিন্তু সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন যিনি, তিনি লুকা মদ্রিচ৷ ক্রোয়েশিয়ান ‘নাম্বার টেন’ তাই এবার জিতেছেন গোল্ডেন বল৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Hertzog
গোল্ডেন বুট
ইংল্যান্ড সেমিফাইনালে হেরেছে ক্রোয়েশিয়ার কাছে৷ এরপর তৃতীয় নির্ধারণী ম্যাচেও হেরেছে বেলজিয়ামের কাছে৷ এই দুই ম্যাচে কোনো গোল করেননি ইংলিশ ফরোয়ার্ড হ্যারি কেন৷ এমনকি সুইডেনের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে জয়ের দিনও কোনো গোল পাননি তিনি৷ কিন্তু তার আগেই করে ফেলেছেন ছয় গোল, যা আর কেউ টপকাতে পারেননি৷ তাই তিনি জিতেছেন গোল্ডেন বুট৷
বলাই বাহুল্য এই কৃতিত্বের ভাগীদার একমাত্র ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার এমবাপ্পেই৷ ৭ ম্যাচে ৪টি গুরুত্বপূর্ণ গোল করেছেন৷ একইসঙ্গে পেলের পর তিনিই একমাত্র টিনএজার হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন৷
ছবি: REUTERS
ফেয়ার প্লে
ফিফা ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ডটি ঘরে তুলেছে স্পেন৷ রাশিয়ার কাছে হেরে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে বিদায় নিলেও এই স্বীকৃতি সান্তনা হয়ে থাকবে টিকি-টাকাদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Bogodvid
6 ছবি1 | 6
আর্জেন্টিনা শিবিরে বিদ্রোহ
বিশ্বকাপে খেলতে নামার আগে কোচ হারানো বিরল ঘটনা৷ আরও বিরল ঘটনার জন্ম দিতে চলেছিল আর্জেন্টিনা৷ বিশ্বকাপের মধ্যেই ছাঁটাই হতে পারতেন কোচ হোর্হে সাম্পাওলি৷ বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার মুখে বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল দলের ভেতরে৷ কোচ সাম্পাওলির ফুটবলীয় জ্যামিতি নাকি পিথাগোরাসের উপপাদ্যের চেয়েও জটিল ঠেকছিল মেসি-আগুয়েরোদের মতো ভালো ছাত্রদের কাছেও৷ সাম্পাওলিকে হটিয়ে বিশ্বকাপের মধ্যেই তাঁরা কোচ হিসেবে চাইছিলেন বুরুচাগাকে৷ শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা ফুটবল সংস্থার প্রধানের মধ্যস্থতায় সাময়িক শান্তি ফিরে আসে৷ যদিও এই খবর তখন রটে যায়, খেলোয়াড়রা নাকি নিজেরাই নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে ঠিক করেছেন৷ কোচের কথা কেউ শুনবেন না৷ নাটকীয়ভাবে জিতে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করা নাইজেরিয়া ম্যাচে এর কিছু নজির দেখাও যাচ্ছিল৷ কোচ সাম্পাওলি নাকি আগুয়েরোকে নামানো হবে কিনা, এই সিদ্ধান্তও এক সময় মেসির কাছে চেয়েছেন!
মেসির পায়ে ‘তাবিজ'
গর্বিত, তৃপ্ত ভঙ্গিতে মিক্সড জোন দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন মেসি৷ এক আর্জেন্টাইন সাংবাদিকের ডাকে ঘুরে দাঁড়ালেন৷ সাংবাদিক আর্জেন্টাইন স্প্যানিশ ভাষায় কী যেন জানতে চাইলেন৷ মেসি তাঁর পায়ের মোজা তুলে দেখালেন৷ লাল রঙের কিছু একটা! কী সেটা? মুহূর্তেই সামাজিক মাধ্যমে বান ডাকলো এক তথ্য৷ নাইজেরিয়া ম্যাচের আগে ওই সাংবাদিক মেসিকে ডেকে হাতে তুলে দিয়েছিলেন তাঁর মায়ের দেওয়া লাল ফিতেমতোন কিছু একটা৷ এটি পরলে মেসিকে তাড়া করা সব অশুভ, অমঙ্গল ছায়া কাছে ঘেঁষতে পারবে না৷ সাংবাদিক নিজে বিশ্বাস করতে পারেননি, মেসি সেটি পরবেন৷ নাইজেরিয়া ম্যাচে দুর্দান্ত গোল করা, রোহোর নাটকীয় গোলে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করার পর মিক্সড জোনে ওই সাংবাদিক জানতে চান, মেসি লাল ফিতেটা কি সঙ্গে রেখেছিলেন? মেসি তখন দেখান, লাল সেই ফিতে বাঁধা আছে পায়ে! আর্জেন্টিনা অবশ্য দ্বিতীয় রাউন্ডের বাধা পেরোতে পারেনি৷ ফ্রান্সের কাছে হেরেছে ৪-৩ গোলে৷
জার্মানির এ কেমন পরাজয়!
02:49
চুমুর হিড়িক
‘ফ্রম রাশিয়া উইথ লাভ'....না জেমস বন্ড ছিলেন না৷ তবে বন্ডের অতি রোম্যান্টিক সত্তা বেশ ঘুরঘুর করছিল এবারের রাশিয়ায়৷ চুমুর রোগে পেয়ে বসেছিল যেন অনেককে৷ অন্তত তিনজন নারী সাংবাদিক লাইভে থাকার সময় চুমু-বিড়ম্বনার শিকার হন৷ ডয়চে ভেলের এক নারী সাংবাদিকও হন একই ঘটনার শিকার৷ স্প্যানিশ টিভি চ্যানেল ‘মিডিয়াসেট'-এর প্রতিবেদক মারিয়া গোমেজ মস্কো থেকে সরাসরি প্রতিবেদন পাঠাচ্ছিলেন৷ মাইক্রোফোনে কথা বলার সময় এক পুরুষ সমর্থক এসে তাঁর গালে চুমু বসিয়েই ভোঁ-দৌড় দেন৷ কলম্বিয়া-সুইডেন ম্যাচে সুইডিশ সংবাদকর্মী মাহলিন হোলবার্গও একই ঘটনার শিকার হন৷ কলম্বিয়ান সংবাদকর্মী জুলিয়েথ গঞ্জালেস অভিযোগ করেন, এক সমর্থক যৌন হয়রানি করেছে তাঁকে৷ ব্রাজিলের সংবাদকর্মী হুলিয়া গুইলমারায়েস সতর্ক ছিলেন বলে বেঁচে যান৷ শেষ মুহূর্তে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে চুমু শিকারি সমর্থককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন৷ বিষয়টি নিয়ে রাশিয়া এবং ফিফা খুবই বিব্রত ছিল৷ এভাবে নারী সাংবাদিকদের কেন যৌন নিপীড়ন করা হচ্ছে, এই বিতর্ক যখন তুঙ্গে, সেই সময় জিওন জিওয়াং রিওল নামের দক্ষিণ কোরিয়ান সাংবাদিককে লাইভে চুমু খেয়ে বসেন এক নারী সমর্থক! পুরুষ সংবাদকর্মীরাও বাদ যাবেন কেন!
অভিনেতা মারাদোনা!
মাঠে নেতা হিসেবে তিনি ছিলেন দুর্দান্ত৷ খেলা ছাড়ার পরও আর্জেন্টিনা দলটার ছায়াসঙ্গী হয়ে আছেন নেতার মতোই৷ এবারও গ্যালারিতে সীমাহীন আবেগ ছড়িয়ে আলোচনায় এসেছেন দিয়েগো মারাদোনা৷ তিনি এই হাসেন তো এই কাঁদেন৷ কখনো উত্তেজনায় শিশুদের মতো লম্ফঝম্প করেন, কখনো মেসিদের পারফরম্যান্স প্রত্যাশামতো না হলে ভীষণ বিরক্ত হন৷ নাইজেরিয়া ম্যাচের দিন মেসির গোলের পর তো উত্তেজনায় প্রায় রেলিং ভেঙে লাফিয়েই পড়তে বসেছিলেন৷ কোনোমতে তাঁকে ধরে রেখেছিলেন নিরাপত্তাকর্মীরা৷ ম্যাচের মধ্যেই মারাদোনার রক্তচাপ পরীক্ষা করতে দেখা গেছে৷ স্নায়ুক্ষরা সেই ম্যাচের পর তাঁকে হাসপাতালেও নিতে হয়েছে৷ এর মধ্যে কোনো এক সংবাদমাধ্যম তাঁর মৃত্যুসংবাদও ছড়িয়ে দিল; মারাদোনা নিজে সেই সাংবাদিককে খুঁজলেন পুরস্কার দেবেন বলে! এই তো দিয়েগো মারাদোনা৷ তবে তাঁর এমন উচ্ছ্বাস যতই আর্জেন্টিনা সমর্থকদের হৃদয় ছুঁয়ে যাক, ঢের বিতর্কের জন্মও দিয়েছে৷ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম প্রথমে জানায়, প্রতিটি ম্যাচ দেখতে ফিফা তাঁকে সম্মানী দিচ্ছে ১০ হাজার পাউন্ড৷ এই টাকা নিয়ে মারাদোনা ধূমপানমুক্ত গ্যালারিতে বসে সিগারেট টেনেছেন৷ অশ্লীলভাবে দেখিয়েছেন দুই হাতের মধ্যাঙ্গুলি৷ শুধু তা-ই নয়, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দাবি করে, রাশিয়া বিশ্বকাপে মারাদোনা গ্যালারিতে যা করছেন, সবই তাঁকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র শুটিংয়ের অংশ! নেতা মারাদোনা সেখানে অভিনেতা মাত্র!
বিশ্বকাপ ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট, মাক্রোঁ ও পুটিন
বিশ্বকাপ ফাইনালে সবার চোখ থাকবে মাঠে, এটাই খুব স্বাভাবিক৷ কিন্তু এবার গ্যালারিতেও বার বার চলে যাচ্ছিলো ক্যামেরার চোখ৷ গ্যালারিতে পুটিনের পাশাপাশি ছিলেন ক্রোয়েশিয়ার সুন্দরী প্রেসিডেন্ট এবং ফ্রান্সের সুদর্শন প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: Reuters/D. Sagolj
অভিবাদন
রোববার রাতে ৪-২ গোলে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে ২০ বছর পর আবার বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছে ফ্রান্স৷ ম্যাচের আগে দুই দলের সফলতা কামনা করে একে অপরকে অভিবাদন জানাচ্ছেন ফাইনালের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ফ্রান্স আর ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ আর কোলিন্ডা গ্রাবার-কিটারোভিচ৷
ছবি: Reuters/D. Sagolj
আত্মঘাতী গোলের পর প্রতিক্রিয়া
ক্রোয়েশিয়ার আত্মঘাতী গোলের পর হতাশ সে দেশের প্রেসিডেন্ট৷ এ সময় সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে এলেন স্বামী ইয়াকভ কিটারোভিচ৷
ছবি: Reuters/D. Martinez
পেনাল্টিতে গোল
ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলারের হাতে বল লাগার পর পেনাল্টিতে গোল দেয় ফ্রান্স৷ সেই উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে ভিআইপি গ্যালারিতে, প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁর মাঝেও৷
শিরোপার স্বপ্ন পূরণ হয়নি, কিন্তু লুকা মদ্রিচরা ক্রোয়েশিয়াকে এনে দিয়েছেন ইতিহাসের সেরা সাফল্য৷ পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলার জন্য মদ্রিচ পেয়েছেন গোল্ডেন বল৷ আর তাই প্রেসিডেন্ট উষ্ণ আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরেন মদ্রিচকে৷
ছবি: Reuters/
পরের বার হবে হয়ত
এবারের বিশ্বকাপে আয়োজক দেশ রাশিয়া শিরোপা না জিতলেও অনেক দূর গিয়েছিল৷ পুটিন যেভাবে কাপটি ছুঁয়ে দেখছেন তাতে মনে হচ্ছে তিনি মনে মনে যেন বলছেন, ‘‘এবার হয়নি, কিন্তু পরের বার এই কাপ আমাদের হবে৷’’
ছবি: Reuters/
10 ছবি1 | 10
বিশ্বকাপেও রাজনীতি
‘খেলাধুলার সঙ্গে রাজনীতি মেশাবেন না' তত্ত্ব খাটেনি রাশিয়া বিশ্বকাপে৷ বিশ্বকাপ শুরুর আগেই ব্রিটেন ও রাশিয়ার সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি হয়৷ কূটনৈতিকভাবে রাশিয়া বিশ্বকাপ বয়কটের ঘোষণা দেয় ইংল্যান্ড৷ ব্রিটেনের রাজপরিবারের কোনো সদস্য বা মন্ত্রী-সাংসদদের কেউ রাশিয়া যাবেন না বলে ঘোষণা করা হয়৷ অবশ্য ইংল্যান্ড ফাইনালে উঠে গেলে এই প্রতিজ্ঞায় তারা অটল থাকতে পারত কি না, তা নিশ্চিত নয়৷
ওদিকে মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ সৌদি আরব ও কাতারের মধ্যে বিশ্বকাপের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চলে টিভি সম্প্রচার নিয়ে আরেক যুদ্ধ৷ কাতারকে অবরোধ করে রেখেছিল সৌদি আরব ও তার মিত্র দেশগুলো৷ এ কারণে দেশটিকে কম ভোগান্তি পোহাতে হয়নি৷ বিশ্বকাপে কাতার নিয়েছিল পাল্টা পদক্ষেপ৷ এই অঞ্চলে বিশ্বকাপের খেলা দেখানোর একমাত্র স্বত্ব ছিল কাতারের বিইন স্পোর্টসের৷ তারা ঠিক করে, সৌদি আরবকে কোনো ফিড দেওয়া হবে না! যদিও সৌদি আরবের মানুষ ঠিকই বিশ্বকাপ দেখেছে, তবে তা অবৈধভাবে৷ বিষয়টি নিয়ে কাতার ফিফা ও উয়েফাকে পর্যন্ত টেনে এনেছিল৷
বিশ্বকাপ ফাইনালের যে ছবিগুলো আপনার দেখা উচিত
দুর্দান্ত ফিনিশিং, মুহুর্মুহু আক্রমণ-পালটা আক্রমণ আর বিতর্কিত এক পেনাল্টি৷ বিশ্বকাপ ফাইনালে আপনি যা যা চান তার প্রায় সবই ঘটেছে মস্কোয় অনুষ্ঠিত ফাইনালে৷ ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়ার এ ফাইনালের কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/D. Sagolj
দুর্ভাগ্যজনক আত্মঘাতী গোল
মারিও মানসুকিচ (বাম থেকে পঞ্চম) চেয়েছিলেন বলটি বাইরে পাঠাতে৷ কিন্তু, প্রতিপক্ষের গ্রিসমানের ফ্রি কিকটি কিনা তাঁর মাথায় লেগেই ঢুকে গেল নিজের দলের গোল পোস্টে! ফাইনালের শুরুতে ক্রোয়েশিয়া দল বড় ধাক্কা খেয়েছে তাঁর এই আত্মঘাতী গোলে৷
ছবি: Reuters/C. Recine
তবে ঘুরে দাঁড়াতে সময় নেয়নি ক্রোয়েশিয়া
আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়লেও হতাশা পেয়ে বসেনি এই প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা ক্রোয়েশিয়াকে৷ বরং ইভান পেরিসিচ চমৎকার এক গোল করে খেলায় সমতা ফেরান৷ আর সেটা ঘটেছে প্রথম গোলের দশ মিনিট পরেই৷
ছবি: Reuters/C. Recine
ভিএআর বিতর্ক
ভিডিও অ্যাসিস্টেন্ট রেফারি, অর্থাৎ ভিএআর প্রযুক্তির সুবিধা আবার এগিয়ে দেয় ফ্রান্সকে৷ পেরিসিচ নিজ দলের ডি-বক্সের মধ্যে বলে হাত লাগিয়েছিলেন কিনা তা পরীক্ষা করতে ভিএআর-এর সহায়তা নেন আর্জেন্টিনার রেফারি নেস্তঁর পিটানা৷ পিটানা টিভিতে রিপ্লে দেখে ফ্রান্সকে পেনাল্টি দেন৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
ফ্রান্সের এগিয়ে যাওয়া
গ্রিসমানের পেনাল্টি শটের গোল ফ্রান্সকে ২-১ গোলে এগিয়ে দেয়৷ এবারের বিশ্বকাপে রীতিমতো বড় তারকা বনে যাওয়া ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক সুবাসিচকে পুরোপুরি বোকা বানান গ্রিসমান৷ এটা ছিল চলতি বিশ্বকাপে তাঁর চতুর্থ গোল৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
পগবাও আবার চেনালেন নিজেকে
ফাইনালে নিজের অপেক্ষাকৃত দুর্বল পা দিয়ে গোল করে সমালোচনার জবাব দিলেন পল পগবা৷ ফ্রান্সের বড় কোনো টুর্নামেন্টে এটা তাঁর তৃতীয় গোল এবং ইউরো ২০১৬ কোয়ার্টার ফাইনালের পর প্রথম গোল৷
ছবি: Reuters/M. Shemetov
উচ্ছ্বসিত ফরাসি প্রেসিডেন্ট
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ স্টেডিয়ামের ভিআইপি বক্সে বসে প্রতিপক্ষ দল ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা গ্রাবার-কিটারোভিচ এবং আয়োজক দেশ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে খেলা দেখেছেন৷ ফাইনালে ফ্রান্সের এগিয়ে যাওয়ার এক পর্যায়ে এভাবেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তিনি৷
ছবি: Reuters/D. Sagolj
ইতিহাসের অংশ এমবাপ্পে
কিলিয়ান এমবাপ্পে (বামে) ফাইনালে দলের পক্ষে চতুর্থ গোলটি করে ক্রোয়েশিয়ার সব সম্ভাবনা কার্যত শেষ করে দেন৷ ১৯ বছর বয়সি এই খেলোয়াড় হচ্ছেন ১৯৫৮ সালে পেলের পর বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করা প্রথম টিনএজার৷
ছবি: Reuters/D. Staples
ক্রোয়েশিয়াকে উপহার
ফরাসি গোলরক্ষক উগো ল্যরিস (ডানে) ক্রোয়েশিয়াকে একটি গোল বলতে গেলে উপহারই দিয়েছেন৷ সতীর্থ ডিফেন্ডারের কাছ থেকে ব্যাক পাসে বল পেয়েছিলেন তিনি৷ মারিও মানসুকিচ ছুটে এসেছিলেন বল কেড়ে নিতে৷ তাঁকে কাটাতে গিয়েই বিপদ ডেকে আনেন ল্যরিস৷বল নাগালে পেয়ে এক টোকাতেই ফরাসি গোলরক্ষককে বোকা বানান মানসুকিচ৷
ছবি: Reuters/M. Shemetov
হাওয়ায় ভাসছেন কোচ
দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জয়ের পর কোচ দিদিয়ে দেশঁ-কে এভাবেই শূণ্যে ছুঁড়ে দেন ফরাসি খেলোয়াড়রা৷ দেশঁ ছিলেন ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি দলের অধিনায়ক৷ বিশ্বকাপ ইতিহাসে খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ী তৃতীয় ব্যক্তি তিনি৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
সবই জিতলো ফ্রান্স!
ফরাসি খেলোয়াড়রা যখন বিশ্বকাপ ট্রফি তুলে ধরেন, তখন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিলো মস্কোর লুঝনিকি মাঠে৷ এবার গোটা আসরে ভালো খেলে বিশ্বকাপ জয় করেছে ফ্রান্স৷ আগামী চারবছরের জন্য তারাই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন৷ ২০২২ সালে কাতারে অন্য কেউ কী পারবে ফরাসিদের বিজয় রথ থামাতে?
ছবি: REUTERS
10 ছবি1 | 10
বিশ্বরাজনীতির আরও দুই যুযুধান দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের লড়াইটা ছিল অন্য৷ ইরান দলের ক্রীড়াসরঞ্জাম সরবরাহের দায়িত্ব ছিল নাইকির৷ যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিষ্ঠান বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র দুদিন আগে ইরানকে জানিয়ে দেয়, ‘অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা'র কারণে তারা খেলোয়াড়দের বুট সরবরাহ করতে পারবে না৷ বাধ্য হয়ে ইরান রাশিয়ায় পৌঁছে স্থানীয় দোকান থেকে বুট কিনে খেলেছে৷
সার্বিয়ার বিপক্ষে জয়সূচক গোল করার পর জাতীয়তাবাদী উদযাপন করেছিলেন সুইস তারকা জেরদান শাকিরি৷ সার্বিয়ার বিপক্ষে নিজের জন্মভূমি কসোভোর রক্তাক্ত অতীতকে ইঙ্গিত করা সেই উদযাপনে ফিফার তোপের মুখে পড়েছেন তিনি৷ দুই ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধও হতে হয় শাকিরিকে৷ রাশিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে জয়ের পর ক্রোয়েশিয়া দলের ক'জন জয়টি ইউক্রেনকে উৎসর্গ করে, যা খেপিয়ে দিয়েছিল রাশিয়াকে৷
ভাঁজে জমে থাকা রাজনীতির এই উত্তাপের প্রতীকী ছবি ছিল যেন উদ্বোধনী ম্যাচ৷ একপাশে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, অন্যপাশে রাশিয়া প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷ মাঝখানে ফিফা প্রধান ইনফান্তিনো! অবশ্য ইনফান্তিনোকে আরও অনেক ম্যাচে বাফার স্টেটের ভূমিকা নিতে হয়েছে৷ রাশিয়ায় কম রাষ্ট্রপ্রধান তো যাননি৷ পুরুষ রাষ্ট্রপ্রধানদের ভিড়ে আলাদা দ্যুতি ছড়িয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ অনেককে চমকে দিয়ে ফাইনালে চলে যাওয়া ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা গ্রাবার কিতারোভিচ ছিলেন শেষ পর্যন্ত আলোচনায়৷
নেইমারের গড়াগড়ি
নেইমার ছেলেটা তো বেশ পড়ুয়া৷ শুধু পড়ে আর পড়ে! ব্রাজিল তারকাকে নিয়ে এভাবেই সামাজিক মাধ্যমে ট্রল হয়েছে এবার৷ বানানো হয়েছে মিমের পর মিম৷ নেইমারকে অনুকরণ করে মাটিতে পড়ে যাওয়ার একের পর এক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে৷ এমনকি এ নিয়ে এক ফাস্ট ফুড চেইন পর্যন্ত ভিডিও বানিয়ে মুফতে প্রচার কামিয়ে নিয়েছে৷ এর রেশ শেষ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছিল এমনকি উইম্বলডনেও! একটুতেই মাটিতে পড়ে যাওয়া, তীব্র যন্ত্রণায় কাতরানোর অভিনয়, ডাইভ দিয়ে পেনাল্টি আদায়ের চেষ্টা....এ সব কারণে নেইমারের তীব্র সমালোচনা হয়েছে৷ এ খোঁচাও শুনতে হয়েছে, এবারের বিশ্বকাপে নেইমারের অর্জন দু’টি গোল আর তিনটি হেয়ারস্টাইল৷ বিশ্বকাপের আগে যে আলোচনায় ছিল নেইমারের ‘নুডলস চুল'ও৷ এমন হিসাবও বের হয়ে গেল, পুরো বিশ্বকাপে নেইমার প্রায় ১৫ মিনিট মাটিতে গড়াগড়ি খেয়েছেন! সেরা দল নিয়েও ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনালে বাদ পড়ায় নেইমারের ওপর ঝাল ঝেড়েছে ব্রাজিল সমর্থকেরাও৷ তবে নেইমারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন দুই ব্রাজিলের সাবেক তারকা কাফু ও রোনাল্ডো৷ কাফু বলেছেন, নেইমার শুধু মাঠে ওই মুহূর্তগুলোর জন্ম দেননি, খেলেছেনও দুর্দান্ত৷ পারেননি, এ তাঁর একার ব্যর্থতা নয়৷ নেইমারকে শুধু ৩০ মিনিট দিয়ে বিবেচনা করা যাবে না৷ আর দ্য ‘ফেনোমেনন' রোনাল্ডো মনে করিয়ে দিয়েছেন, নেইমার এই বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ফাউলের শিকার হওয়া খেলোয়াড় ছিলেন৷ কড়া ট্যাকল থেকে বাঁচার জন্যও নেইমার এমনটা করেন বলেও মন্তব্য করেছেন রোনাল্ডো৷
বিশ্বকাপে বেশি গোল করেছেন যাঁরা
বিশ্বকাপ শুরুর আগে বেশি আলোচনায় ছিলেন মেসি, রোনাল্ডো, নেইমাররা৷ তারকাদ্যুতিতে যে অনেক এগিয়ে তাঁরা! কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্সে তাঁরা থেকে গেলেন নিষ্প্রভ৷ সেখানে সবচেয়ে উজ্জ্বল হ্যারি কেন৷ তাঁর পরে কারা?
ছবি: picture-alliance/V.R.Caivano
হ্যারি কেন, ৬ গোল
বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতাকে ‘গোল্ডেন বুট’ পুরস্কার দেয়ার চল শুরু ১৯৮২-র আসর থেকে৷ সেবার সবাইকে অবাক করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইটালি৷ আরো অবাক করেছিলেন পাওলো রসি৷ আসর শুরুর আগে যাঁকে কেউ প্রায় চিনতোই না, সেই রসিই পুরস্কারটি জিতেছিলেন প্লাতিনি, জিকো, মারাদোনাদের পেছনে ফেলে৷ এবারের আসরে পানামার বিপক্ষে একটি হ্যাটট্রিকসহ মোট ৬ গোল করায় ‘গোল্ডেন বুট’ জিতে নিলেন ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন৷
ছবি: Reuters/C. Barria
গ্রিসমান, ৪ গোল
২০ বছর পর ফ্রান্স আবার চ্যাম্পিয়ন৷ দলকে চ্যাম্পিয়ন করায় গ্রিসমানের অবদান ৪ গোল৷
ছবি: Reuters/A. Vaganov
কিলিয়ান এমবাপে, ৪ গোল
আর্জেন্টিনাকে বলতে গেলে একাই বিদায় করেছেন তিনি৷ ১৯ বছর বয়সি এ ফরোয়ার্ড নিজে করেছেন দুই গোল আর পেনাল্টি আদায় করে আরেকটি গোলেও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান৷ ফাইনাল শেষে তাঁর নামের
পাশে লেখা চার গোল৷ এমবাপের মাঝে আগামীর সুপারস্টারকে দেখতে শুরু করেছেন অনেকেই৷
ছবি: Reuters/D. Martinez
রোমেলু লুকাকু, ৪ গোল
বেলজিয়ামের ফরোয়ার্ড লুকাকুও কম যান না৷ ইংল্যান্ডের হয়ে প্রথম দুই ম্যাচে ১৫৩ মিনিট খেলে ৫ গোল করেছেন হ্যারি কেন৷ লুকাকু খেলেছেন তার চেয়েও কম, মাত্র ১৪৯ মিনিট৷ ওই সময়েই আদায় করে নিয়েছেন ৪ গোল৷
ছবি: imago/Photonews/Panoramic
ডেনিস চেরিশেভ, ৪ গোল
রাশিয়ার এই মিডফিল্ডারও করেছেন ৪ গোল৷ তবে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে করা গোলটিই ছিল এ আসরে তাঁর শেষ গোল৷ কারণ, সেই ম্যাচ টাইব্রেকারে হেরে যাওয়ায় তাঁর দেশ রাশিয়ার জন্য শেষ হয়ে গেছে বিশ্বকাপ অভিযান৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো, ৪ গোল
পর্তুগালের প্রথম তিন ম্যাচ শেষে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর নামের পাশেও লেখা হয়ে যায় ৪ গোল৷ তারপর অবশ্য আর গোলের দেখা পাননি৷ তাঁর বিশ্বকাপ জয়ের বাসনা অপূর্ণ রেখেই উরুগুয়ের কাছে হেরে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছে পর্তুগাল৷
ছবি: Reuters/M. Sezer
এডেন হ্যাজার্ড, ৩ গোল
বেলজিয়ামের হ্যাজার্ড ৭ ম্যাচে করেছেন ৩ গোল৷ দলের সাফল্যে তাঁর অবদান অবশ্য তার চেয়ে অনেক বেশি৷ মধ্যমাঠে দলের মধ্যমণিই ছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/V.R.Caivano
মারিও মানসুকিচ, ৩ গোল
ক্রোয়েশিয়ার এই ফরোয়ার্ডও সাত ম্যাচ খেলে করেছেন ৩ গোল৷
ছবি: picture-alliance/GES/M. Gilliar
ইভান পেরিসিচ, ৩ গোল
মদ্রিচ, মানসুকিচের মতো ক্রোয়েশিয়ার ইভান পেরিসিচের খেলাও এবার সবার নজর কেড়েছে৷ ৭ ম্যাচে তিনিও করেছেন ৩ গোল৷
ছবি: Reuters/D. Staples
এডিনসন কাভানি, ৩ গোল
প্রথম রাউন্ডে একেবারেই নিষ্প্রভ ছিলেন তিনি৷ তিন ম্যাচে করেছিলেন মাত্র ১ গোল৷ কিন্তু ঠিক সময়েই জ্বলে উঠে উরুগুয়েকে তুলে দিয়েছেন কোয়ার্টার ফাইনালে৷ কাভানির জোড়া গোলের কারণেই রোনাল্ডোর আশাভঙ্গ হয়েছে, বিদায় নিয়েছে পর্তুগাল৷
ছবি: Reuters/T. Hanai
আর্টেম জিয়ুবা, ৩ গোল
রাশিয়ার এই ফরোয়ার্ডে প্রথম রাউন্ড শেষ করেছিলেন দুই গোল নিয়ে৷ কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডে স্পেনকে বিদায় করা ম্যাচে এক গোল করায় তিনিও উঠে এসেছে স্বদেশী চেরিশেভের পাশে৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
ইয়েরি মিনা, ৩ গোল
খামেস রদ্রিগেস দলে থাকতেও এবার কলম্বিয়ার ইয়েরি মিনা নজর কেড়েছেন৷ দ্বিতীয় রাউন্ডে ইনজুরির জন্য খেলতে পারেননি রদ্রিগেস৷ মিনার গোলেই ম্যাচে সমতা ফিরিয়েছিল কলম্বিয়া৷ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচ টাইব্রেকারে হেরে যাওয়ায় অবশ্য সেখানেই শেষ হয়ে যায় কলম্বিয়া আর মিনার ২০১৮-র বিশ্বকাপ মিশন৷
ছবি: Reuters/C. Garcia Rawlins
দিয়েগো কস্তা, ৩ গোল
পর্তুগালের বিপক্ষে তিনি যেন রোনাল্ডোর সঙ্গে গোল করার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন৷ তবে কস্তা দুই গোল করে থামলেও রোনাল্ডো থেমেছেন শেষ মুহূর্তের গোলে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করে৷ প্রথম রাউন্ড শেষ করেছিলেন তিন ম্যাচে তিন গোল নিয়ে৷ তারপরই স্পেনের বিদায় এবং কস্তার জন্যও বিশ্বকাপ আপাতত শেষ৷
ছবি: Reuters/L. Nicholson
জন স্টোনস, ২ গোল
এই তালিকায় জন স্টোনসের নামটা কিন্তু বিস্ময় জাগানোর মতো৷ ডিফেন্ডার হয়েও ইতিমধ্যে করে ফেলেছেন ২ গোল৷ পানামাকে ৬-১ গোলে হারিয়ে এ আসরে প্রথম রাউন্ডে সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ডটি গড়েছে ইংল্যান্ড৷ সেই ম্যাচেই দুই গোল করেছিলেন স্টোনস৷
ছবি: Reuters/M. Childs
ফিলিপে কুটিনিয়ো, ২ গোল
নেইমার যখন গোলের দেখা পাচ্ছেন না, তখনই ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছিলেন কুটিনিয়ো৷ প্রথম ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রাজিলের একমাত্র গোলটি এসেছিল তাঁর পা থেকেই৷ কোস্টারিকা ম্যাচেরও গোল-বন্ধ্যাত্ব ঘুচিয়েছিলেন প্রথম পর্বের পারফর্ম্যান্সে নেইমারসহ অনেক বড় তারকাকেই ছাড়িয়ে যাওয়া এই মিডফিল্ডার৷
ছবি: Reuters/D. Staples
মোহামেদ সালা, ২ গোল
ভক্তদের অনেক আশা ছিল তাঁর কাছে৷ কিন্তু ইনজুরির কারণে বেশি কিছু করতে পারেননি মিশরের মোহামেদ সালা৷ দুই ম্যাচ খেলে করেছেন দুই গোল৷
ছবি: Reuters/H. Romero
আরো যাঁদের ২ গোল
ব্রাজিলের নেইমার, জাপানের তাকাশি ইনুই, নাইজেরিয়ার আহমেদ মুসা, ক্রোয়েশিয়ার লুকা মডরিচ, উরুগুয়ের লুই সুয়ারেজ, সুইডেনের আন্দ্রেয়াস গ্রাঙ্কভিস্ট, আর্জেন্টিনার আগুয়েরো, দক্ষিণ কোরিয়ার সন হিউংমিন, টিউনিশিয়ার খাজরি আর অস্ট্রেলিয়ার জেডিনারও করেছেন দু’টি করে গোল৷
ছবি: Reuters/C.G. Rawlins
পারলেন না মেসি
এবারও বিশ্বকাপ জেতা হলোনা লিওনেল মেসির৷ দ্বিতীয় রাউন্ডেই আর্জেন্টিনার ৪-৩ গোলে হেরে গেছে ফ্রান্সের কাছে৷ মেসির বিশ্বকাপ মিশনও শেষ হয়েছে মাত্র ১ গোল নিয়ে!
ছবি: Getty Images/G. Rossi
18 ছবি1 | 18
চ্যাম্পিয়নদের অভিশাপ
পোজ্জো হতে পারবেন ল্যোভ? বিশ্বকাপের আগে এমন জিজ্ঞাসা বেরিয়ে এসেছিল বিশ্লেষকদের কলমে৷ টানা দুই বিশ্বকাপ জেতার একমাত্র কীর্তি আছে ইটালিয়ান কোচ ভিতোরিও পোজ্জোর৷ এবার সেই কীর্তির সামনে ছিলেন ইয়াওখিম ল্যোভ৷ দুর্দান্ত একটা দল নিয়ে জার্মানি গিয়েছিল বিশ্বকাপে৷ অথচ প্রতিভায় ঠাসা সেই দল নিয়ে প্রথমে মেক্সিকোর কাছে হার, দ্বিতীয় ম্যাচে শেষ মুহূর্তে টোনি ক্রুসের ফ্রি কিক থেকে জয় পেলো সুইডেনের বিপক্ষে আর শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে যোগ করা সময়ে দুই গোল হজম করে বাদ পড়লো প্রথম রাউন্ড থেকে! গত ১৬ বছরে এ নিয়ে চারবার ইউরোপের কোনো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দল বাদ পড়লো প্রথম রাউন্ড থেকে৷ ২০০২-এ ফ্রান্স, ২০১০-এ ইতালি, ২০১৪-তে স্পেন....এই ধারা অনুসরণ করে ২০১৮ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়েছে জার্মানি৷ এ অভিশাপ নয়ত কী!
রেকর্ড, রেকর্ড, রেকর্ড
রেকর্ডের পসরা বসেছিল এবারের বিশ্বকাপে৷ ফাইনাল পর্যন্ত ২৯ পেনাল্টি থেকে গোল হয়েছে মো ২২টি৷ এক বিশ্বকাপে এর আগে পেনাল্টি থেকে সর্বোচ্চ ১৭টি গোল হয়েছিল ১৯৯৮ সালে৷ গোলের সংখ্যাটি আরও বাড়তো৷ কিন্তু প্রথমে মেসি, এরপর ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো, সবশেষে লুকা মদ্রিচের মতো তারকারা এবার পেনাল্টি মিস করেছেন৷ ফাইনাল পর্যন্ত ১৬৭ গোলের ৭২টিরই উৎস যে সেট পিস৷ এটিও নতুন রেকর্ড৷
এবারের বিশ্বকাপের যা কিছু সেরা
আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় একটি মাত্র দল৷ সেরা খেলোয়াড়, সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কারও জোটে একজনের ভাগ্যে৷ কিন্তু ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় আসরে এর বাইরেও তো স্মরণীয় অনেক কিছু থাকে৷ সেরকম বিষয়গুলো নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: Reuters/G. Dukor
বেশি গোল যে দলের
এবারের আসরে সবচেয়ে বেশি গোল কোন দল করেছে, বলুন তো? বেলজিয়াম৷ হ্যাঁ, সেমি ফাইনাল থেকে বিদায় নেয়ার আগে ১৪ গোল করে তারা৷ তারপর তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারানোয় সংখ্যাটি বেড়ে হয়ে যায় ১৬৷ এত গোল আর কোনো দল করতে পারেনি৷
ছবি: Reuters/S. Perez
সবচেয়ে আক্রমণাত্মক দল
কোন দল কতটা আক্রমণাত্মক তা নির্ধারণের একটাই উপায় আর তা হলো কোন দল কত বেশি আক্রমণ করেছে সে হিসেবটা দেখা৷ সেই হিসেবে ব্রাজিলই ছিল সবচেয়ে এগিয়ে৷ কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচ খেলে সব মিলিয়ে ২৯২টি আক্রমণ শানিয়েছে নেইমারের দল৷ তবে পরে ক্রোয়েশিয়া পেছনে ফেলে তাদের৷ ফাইনাল শেষে, অর্থাৎ ব্রাজিলের চেয়ে দুই ম্যাচ বেশি খেলায় ক্রোয়েশিয়ার আক্রমণ সংখ্যায় দাঁড়ায় ৩২২৷
ছবি: Reuters/M. Shemetov
সবচেয়ে বেশি পাস
এখানে কারা এগিয়ে ইংল্যান্ড৷ মোট সাতটি ম্যাচে সর্বোচ্চ ৩৩৩৬টি পাস দিয়েছে তারা৷
ছবি: Reuters/L. Smith
সেরা গোলরক্ষক?
এবারের বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষক কে? অনেকের নামই হয়ত উঠে আসবে৷ কিন্তু সবচেয়ে বেশি গোল বাঁচানো যদি মানদণ্ড হয়, তাহলে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবেন মেক্সিকোর গুইলেরমো ওচোয়া৷ দ্বিতীয় রাউন্ড পর্যন্ত চার ম্যাচে সর্বোচ্চ ২৫টি গোল বাঁচিয়ৈছিলেন তিনি৷ তবে পরে বেলজিয়ামের গোলরক্ষক কর্তোই তাঁকেও ছাড়িয়ে যান৷ ৭ ম্যাচে তিনি বাঁচিয়েছেন ২৭টি গোল৷
ছবি: Reuters/S. Perez
সবচেয়ে আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়
নিন্দুকেরা তাঁর মাঠে গড়াগড়ি দেখতে দেখতেই হয়রান, অথচ পরিসংখ্যান বলছে নেইমার জুনিয়রই ছিলেন এবারে বিশ্বকাপের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ফরোয়ার্ড৷ ব্রাজিল তো কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছে৷ তাই মাত্র পাঁচটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন নেইমার৷ ওই পাঁচ ম্যাচে প্রতিপক্ষের গোলপোস্ট লক্ষ্য করে শট নিয়েছেন মোট ২৭টি৷ এত শট আর কোনো ফরোয়ার্ড নিতে পারেননি৷
ছবি: Reuters/C.G. Rawlins
সবচেয়ে পরিশ্রমী পেরিসিচ
ক্রোয়েশিয়া যে এবার বিশ্বকাপ মাতালো, তার মূল কৃতিত্ব যদি একজন খেলোয়াড়কে দিতে চান, কার কথা বলবেন আপনি? নিশ্চয়ই লুকা মদ্রিচ! সেমিফাইনাল পর্যন্ত ক্রোয়েশিয়ার ছয়টি ম্যাচে সব মিলিয়ে ৬৩ কিলোমিটার দৌড়েছেন ৩৩ বছর বয়সি এই প্লে-মেকার৷ তবে ফাইনাল শেষে দেখা যায় তাঁকে পেছনে ফেলে দিয়েছেন পেরিসিচ৷ ৭ ম্যাচে ৭২ কিলোমিটার দৌড়েছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/M. Shemetov
সেরা রক্ষণভাগ
বিশ্বকাপে অংশ নেয়া ৩২টি দলের রক্ষণভাগের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ক্রোয়েশিয়াই সেরা৷ ফাইনাল পর্যন্ত সাতটি ম্যাচে মোট ৩০১টি ক্লিয়ারেন্স, ট্যাকল এবং সেভ করেছে ক্রোয়াট ডিফেন্ডাররা৷
ছবি: Reuters/G. Dukor
রামোসকে মনে রাখতে হবে যে কারণে
স্পেনের রক্ষণভাগের অতন্দ্র প্রহরী সার্হিয়ো রামোস৷ তবে এবার শুধু রক্ষণের কাজেই ব্যস্ত ছিলেন না রেয়াল মাদ্রিদ অধিনায়ক৷ আক্রমণ রচনাতেও ভূমিকা রেখেছেন অনেক৷ তাই বিশ্বকাপের অন্য সব খেলোয়াড়ের চেয়ে বেশি পাস দিয়েছেন তিনি৷ এ আসরে মোট ৪৮৫টি পাস দিয়েছেন রামোস৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
বেশি গোলের ম্যাচ
এবারের বিশ্বকাপ শুরুই হয়েছিল সৌদি আরবের বিপক্ষে রাশিয়ার ৫-০ গোলের জয় দিয়ে৷ স্পেন-পর্তুগাল ৩-৩ গোলে ড্র ম্যাচেও দেখা গেছে গোলের ছড়াছড়ি৷ পরে দু’টি ম্যাচে আরো বেশি গোল হয়েছিল৷ বেলজিয়াম-টিউনিশিয়া (৫-২) ও ইংল্যান্ড-পানামা (৬-১) ম্যাচে সাতটি করে গোল দেখা গেছে৷ ওই দু’টিই এবারের আসরের সবচেয়ে বেশি গোলের ম্যাচ৷
ছবি: Reuters/M. Childs
এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি কার্ড
ম্যাচে খুব বেশি উত্তেজনা থাকলে বা লড়াইটা খুব জমজমাট হলেই সাধারণত খেলোয়াড়রা মেজাজ হারান৷ পরিস্থিতি শান্ত রাখতে তখন কঠোর হতে হয় রেফারিকে৷ তখন কার্ডও দেখাতে হয় বেশি৷ কিন্তু বেলজিয়াম বনাম পানামা ম্যাচটিতে সে অর্থে কোনো উত্তেজনাই ছিল না৷ তারপরও ম্যাচে মোট আটটি কার্ড দেখিয়েছেন রেফারি৷ এবারের আসরে সবচেয়ে বেশি কার্ড দেখানো হয়েছে সেই ম্যাচেই৷
ছবি: Reuters/H. McKay
এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি পাস
বেশি পাসের প্রসঙ্গ এলে স্পেনের নাম আসবেই৷ এই বিশ্বকাপে যে ম্যাচে সবচেয়ে বেশি পাস হয়েছে, সেখানেও স্পেন আছে৷ কিন্তু তাদের প্রতিপক্ষ ছিল রাশিয়া৷ হ্যাঁ, স্পেন-রাশিয়া ম্যাচেই হয়েছিল সবচেয়ে বেশি পাস৷ সেই ম্যাচে দু’দলের খেলোয়াড়রা মোট ১২৩৫টি পাস দিয়েছিলেন৷
ছবি: Reuters/M. Shemetov
11 ছবি1 | 11
ম্যাচের শেষ পাঁচ মিনিটে এবার ২৯টি গোল হয়েছে, যার ১৯টিই আবার ইনজুরি টাইমে৷ আগের রেকর্ডটি ১৯৯৮ বিশ্বকাপের, ফ্রান্স বিশ্বকাপে শেষ পাঁচ মিনিটে গোল হয়েছিল ২৪টি৷ এবার ১৭টি ম্যাচের ফল নির্ধারিত হয়েছে শেষ মুহূর্তের গোলে৷ এবারের আগে এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৬টি আত্মঘাতী গোল দেখেছিল ১৯৯৮ বিশ্বকাপে৷ এবার সংখ্যাটা কিনা ১২!
এবং অন্যান্য
এবারের বিশ্বকাপে নানাভাবে অন্য খবরের জন্ম দিয়েছে কাতারের গুনিন উট শাহিন৷ আলোচনায় এসেছিল গোলরক্ষকদের হাস্যকর কিছু ভুল৷ কাজান নামের মাঠটিতে খেলে বিদায় নিতে হয়েছে জার্মানি, আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলকে৷ এটিও বেশ আলোচনার জন্ম দেয়৷ বিশ্বকাপ থেকে কান্নাভেজা বিদায় নিলেও জাপানের সমর্থক আর ফুটবল দল মন জিতে নেয় গ্যালারি ও ড্রেসিংরুম নিজেরাই পরিষ্কার করে৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷