ধূসর জগতে রংয়ের ছোঁয়া কার না মন মাতায়? স্পেনের এক স্ট্রিট আর্টিস্ট দেশ-বিদেশে একাধিক ভবনকে নিজের সৃষ্টির মোড়কে পরিবেশন করে আশাবাদ ও মুক্তি জাগিয়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
জগতকে রংয়ে ডুবিয়ে দেওয়াই ওকুদা সান মিগেলেটির উদ্দেশ্য৷ তিনি ধূসর জগতকে রঙিন পরিবেশে রূপান্তরিত করতে ভালোবাসেন৷ ওকুদা এবার স্পেনের উত্তরের উপকূলের একটি স্মারক বেছে নিয়েছেন৷ বিলবাও শহরের কাছে ‘কাবো দে আখো’ নামের লাইটহাউসে রংয়ের ছোঁয়া দিতে চান তিনি৷
প্রায় একশো বছর ধরে ৭০ মিটারেরও বেশি উঁচু এই লাইটহাউস মাথা উঁচু করে রয়েছে৷ ওকুদা বলেন, ‘‘আমার কাছে এই প্রকল্পের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে৷ কারণ প্রথমত আমার নিজের দেশে সেটি ঘটছে৷ দ্বিতীয়ত আমি প্রথম বার কোনো লাইটহাউস রং করছি৷ তাছাড়া আমি এখানে জন্মেছি বলে সমুদ্র আমার রক্তের মধ্যে রয়েছে৷’’
ধবধবে সাদা ভবনটিকে রংয়ের রংমশালে রূপান্তরিত করতে ওকুদা সান মিগেল ও তার টিম ৭২টি বিভিন্ন রং বেছে নিয়েছেন৷ রঙিন জ্যামিতিক ফর্ম বা আকার তাঁর কাজের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পড়ে৷
স্পেনের স্ট্রিট আর্টিস্ট ওকুদার কথা
03:07
বস্তুগুলির নেপথ্যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, অনন্তকাল ও জীবনের অর্থের মতো নানা গভীর বিষয় লুকিয়ে রয়েছে৷ ওকুদা বলেন, ‘‘জামাকাপড় হোক, অথবা কাজ – সব ক্ষেত্রেই রং আমার সাইকোলজি৷ আমার মতে, আমি দর্শকদের একটা গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিচ্ছি, যা হলো আশাবাদ ও মুক্তি৷ যদিও আমার সৃষ্টি কখনো দুঃখের বিষয় তুলে ধরে অথবা বাস্তব প্রায়ই কঠিন হয়৷ তা সত্ত্বেও আমার বার্তা আশাবাদ ও মুক্তি৷’’
‘এল তিতানেস’ নামের একটি বড় প্রকল্পেও সেই বার্তা উঠে এসেছে৷ শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী মানুষ এবং অন্যান্য শিল্পীদের সঙ্গে ওকুদা স্পেনের দক্ষিণে ‘লা মানচা’ অঞ্চলে বাতিল আধার দিয়ে বিশালাকার ওপেন এয়ার মিউজিয়াম গড়ে তুলেছেন৷ ওকুদা বলেন, ‘‘আমার মত, এটি আসলে সামাজিক ও শিল্প-সংস্কৃতির মিশ্র প্রকল্প৷ সেখানে বিশেষ গুণসম্পন্ন মানুষের জন্য আমরা মঞ্চ সৃষ্টি করছি৷ তাছাড়া পতিত জায়গায় নতুন প্রাণ সঞ্চার করছি৷’’
২০১৫ সালে একটি গির্জাকে স্কেটপার্কে পরিণত করে স্ট্রিট আর্টিস্ট হিসেবে ওকুদা আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন৷ সেটির নাম ছিল ‘কাওস টেম্পল’৷
ইতিমধ্যে তার সৃষ্টিকর্ম গোটা বিশ্বের বিভিন্ন ভবন মুড়ে দিয়েছে৷ নিউ ইয়র্ক, হাভানা, মস্কো, মানহাইম, টোরন্টো ও হংকং শহরে তার নিদর্শন দেখা যাবে৷
আনা কার্টহাউস/এসবি
ব্যাংকসির যত রাজনৈতিক শিল্পকর্ম
ব্রিটিশ শিল্পী ব্যাংকসির শিল্প তার রাজনৈতিক বক্তব্যের কারণে বিশ্বে সাড়া জাগায়৷ বিস্তারিত জানুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/G. Alexopoulos
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য জাহাজ
শরণার্থী সংকটের পর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সমুদ্র পারাপারের সময় অভিবাসনপ্রত্যাশী প্রাণ হারান৷ ব্রিটিশ স্ট্রিট আর্টিস্ট ব্যাংকসি এমন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিরাপদ পারাপারের সুযোগ করে দিতে একটি জাহাজের জন্য অর্থায়ন করেছেন৷ উনিশ শতকের ফরাসী নারীবাদী লুই মিশেলের নামে রাখা হয়েছে জাহাজের নাম৷
ছবি: Louise Michel
বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ব্যাংকসি
২০২০ সালের জুনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইন্সটাগ্রামে একটি ছবি শেয়ার করেন ব্যাংকসি৷ অ্যামেরিকায় পুলিশি নির্যাতন ও বর্ণবাদ ইস্যুতে তাঁর বক্তব্য সাড়া জাগায়৷ চলমান ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের প্রতি এভাবেই সমর্থন জানান তিনি৷
ছবি: Reuters/Instagram/@banksy
করোনাযোদ্ধাদের পাশে
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে ব্যাটম্যান বা সুপারম্যানের তুলনায় সমাজের প্রথম সারিতে থাকা করোনাযোদ্ধারাই হয়ে উঠুক শিশুদের ‘সুপারহিরো’, এমন বার্তা জানিয়ে মে মাসে ব্যাংকসি একটি স্ট্রিট আর্ট তৈরি করেন৷ কোভিড সংকট মোকাবিলায় ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য কর্মীদের শ্রদ্ধা জানান তিনি৷
ছবি: Reuters/Banksy Imstagram
গৃহহীনদের নিয়ে শিল্প
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ক্রিসমাসের আমেজের সাথে সামাজিক বার্তা দিতে অভিনব একটি দৃশ্য সৃষ্টি করেন ব্যাংকসি৷ স্যান্টা ক্লজের বদলে বেঞ্চে ঘুমন্ত এক গৃহহীনের ছবি দিয়ে উৎসবের আমেজে গৃহহীনদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা তুলে ধরেন৷
ছবি: Reuters/Instagram/@banksy
সংসদ নিয়ে ঠাট্টা
২০০৯ সালে ব্রিটিশ সংসদের একটি ছবি আঁকেন ব্যাংকসি৷ নাম ‘ডেভেলাপড পার্লামেন্ট’৷ সেই ছবির বিশেষত্ব, সংসদসদস্যদের বদলে সেখানে সবক’টি আসনে রয়েছে শিম্পাঞ্জি৷ এই ছবিটি আনুমানিক ১১ মিলিয়ন ইউরোতে বিক্রি হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/G. Alexopoulos
কিনতেই কুচিকুচি!
লন্ডনের বিখ্যাত এক নিলামসংস্থা ২০১৮ সালে ব্যাংকসির ‘গার্ল উইথ ব্যালুন’ ছবিটি নিলামে তোলে৷ যে মুহূর্তে এক মিলিয়ন পাউন্ডে ছবিটি বিক্রি হয়, ঠিক সেই মুহূর্তেই নিজে থেকে ছিঁড়ে কুচি কুচি হয়ে যেতে শুরু করে ছবিটি৷ ছেঁড়া হয়ে গেলে দেখা যায়, সেখানে রয়েছে আরেকটি শিল্পকর্ম, যার নাম ‘লাভ ইজ ইন দ্য বিন’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Deck
নিলামে নয় ব্যাংকসি
‘ডেভেলাপড পার্লামেন্ট’ ছবিটি বিশাল মূল্যে বিক্রি হলে তা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়৷ পরে ব্যাংকসি লন্ডনের একটি বন্ধ দোকানের জানলায় তাঁর একটি শিল্পকর্ম রেখে জানান যে, শিল্পের স্থান নিলামে নয়, মানুষের মধ্যে৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা এখন বিত্তশালীদের কুক্ষিগত হয়ে গেছে৷
ছবি: Getty Images/P. Summers
পুঁজিবাদ ও ব্যাংকসি
ব্যাংকসির অন্যতম বিখ্যাত একটি সৃষ্টিতে ছিল সিরিয়া থেকে পালিয়ে আসা এক শরণার্থীর ছবি৷ উল্লেখ্য, সেই শরণার্থীর হাতে ধরা প্রথম ‘ম্যাক’ কম্পিউটার, শরণার্থীর মুখ অবিকল ম্যাক-অ্যাপলের সৃষ্টিকর্তা স্টিভ জবসের মতো, কারণ স্টিভের বাবা ছিলেন সিরিয়ার মানুষ৷ এভাবেই রাজনীতি ও পুঁজিবাদের সম্পৃক্ততাকে তুলে ধরেন ব্যাংকসি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Spingler
ব্রেক্সিট বিষয়ে ব্যাংকসি
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পতাকার ১২টি তারার একটি সরিয়ে দিচ্ছে এক যুবক৷ এমনই একটি চিত্র রাতারাতি যুক্তরাজ্যে ডোভার শহরের বন্দরেরে কাছের একটি বাড়ির গায়ে দেখা যায়৷ ২০১৭ সালের এই ছবি ছিল ব্যাংকসির ব্রেক্সিট বিষয়ে প্রথম শিল্পকর্ম৷
ছবি: Reuters/H. McKay
ব্যাংকসির হোটেল
২০১৭ সালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সীমান্তবর্তী পশ্চিম তীর অঞ্চলে একটি হোটেল চালু করেন ব্যাংকসি৷ ‘ওয়াল্ড অফ’ নামের এই হোটেলের প্রতিটি কোণে রয়েছে যুদ্ধবিরোধী বার্তা৷ হোটেলের অতিথিরা সেখানে গেলে ব্যাংকসির অন্যান্য সৃষ্টির প্রদর্শনীও দেখতে পারেন৷
ছবি: Getty Images/I. Yefimovich
সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা
যুদ্ধ ও সন্ত্রাসবাদের সংবাদ পরিবেশনায় সংবাদমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনা করে ব্যাংকসি ২০১৮ সালে একটি শিল্পকর্ম সৃষ্টি করেন৷ ‘মিডিয়া অ্যাট ওয়ার’ নামের এই সৃষ্টি দেখায় কীভাবে বর্তমান সময়ে সংবাদমাধ্যমে সম্প্রচারিত হয় যুদ্ধের ভয়াবহতা৷