দক্ষিণ অ্যামেরিকার কুরু থেকে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়৷ সেই জটিল প্রক্রিয়ার পেছনে রয়েছে অনেক পরিকল্পনা, প্রস্তুতির ও পরিশ্রম৷ ডয়চে ভেলের দুই সাংবাদিক সেই ঘটনার সাক্ষী ছিলেন৷
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ অ্যামেরিকার ফরাসি-গিয়ানায় কুরুতে রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের কনট্রোল রুম৷ ডানিয়েল নয়েনশ্ভান্ডার-এর উত্তেজনা বেড়ে চলেছে৷ তিনি ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা এসা-র অন্যতম ডিরেক্টর৷ সব পরিবহণ স্যাটেলাইটের দায়িত্ব তাঁরই কাঁধে৷ একটি আরিয়ান-৫ রকেট উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত৷ কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে৷ ডানিয়েল বলেন, ‘‘এক থেকে শূন্য ছুঁলেই উত্তেজনা অবশ্যই বেড়ে যায়, কারণ তখন সব সিস্টেমকে ঠিকমতো কাজ করতে হবে৷ প্রথমে মূল ইঞ্জিন, তারপর সাইড বুস্টার, তারপর গোটা সিস্টেম৷ কিন্তু সেটাই সবকিছু নয়৷ আজকের মিশন প্রায় ৪০ মিনিট সময় নেবে, যতক্ষণ না সব স্যাটেলাইট নির্ধারিত কক্ষপথে তাদের অবস্থান নেয়৷’’
দেখবেন নাকি রকেট উৎক্ষেপণ?
04:23
দুই দিন আগে প্যারিসে এসা-র সদর দফতরের দৃশ্য৷ এখানেই ডানিয়েল নয়েনশ্ভান্ডার-এর দফতর৷ এখান থেকেই তিনি আগামী রকেট প্রকল্পগুলি সমন্বয় করেন৷ তিনি ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করে বিমানের পাইলট হিসেবে কাজ করেছেন৷ বর্তমানে তিনি ইউরোপের রকেট প্রকল্পগুলির দায়িত্বে রয়েছেন৷
ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার ডিরেক্টরদের মিটিং বসেছে৷ তারপরেই আবার কাজে নামতে হবে৷ ৪২ বছর বয়স্ক নয়েনশ্ভান্ডার স্নায়ু ঠান্ডা রেখেছেন৷ গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে তিনি নিশ্চিত করতে চান, যে রকেট যেন পুরোপুরি নির্ভরযোগ্যভাবে কাজ করে৷
আবার বিশ্বের অন্য প্রান্তে কুরু-তে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে ফেরা যাক৷ প্রযুক্তিবিদরা আরিয়ান-৫ রকেটটি উৎক্ষেপণের জায়গায় নিয়ে এসেছেন৷ সেটি দু'টি দামি স্যাটেলাইট বহন করছে, যার কাজ বিশ্বে মোবাইল টেলিফোন নেটওয়ার্কের উন্নতি করা৷ ৭০০ টনেরও বেশি হাইটেক যন্ত্র মহাকাশে পৌঁছে দিতে হবে৷
নয়েনশ্ভান্ডার-এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাঁটা কঠিন৷ তিনি আমাদের দ্রুত পথ দেখিয়ে নিয়ে চলেছেন৷ রকেট উৎক্ষেপণের সময় এগিয়ে আসছে৷ গুরুদায়িত্ব সত্ত্বেও নয়েনশ্ভান্ডার বেশ শান্ত রয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘উৎক্ষেপণের সময় থেকে আরিয়ান-৫ রকেট স্বাধীনভাবে কাজ করে৷ সেটি নির্দিষ্ট এক করিডোরের মধ্যেই উড়ে যাবে, এমনভাবে প্রোগ্রাম করা হয়েছে৷ সেই করিডোরের মধ্যে থাকলে রকেট স্বাধীনভাবে উড়বে৷ বিচ্যুতি ঘটলে আরেকটি প্রোগ্রাম রকেটের আত্মহননের প্রক্রিয়া শুরু করবে৷’’
প্রথমে বেশি কিছু শোনা যায় না৷ তারপর আচমকা মাঁটি কাঁপতে শুরু করে৷ কানফাটা শব্দে বাতাস ভরে যায়৷ তারপরেই বোঝা যায়, আরিয়ান-৫ ঠিক পথেই চলেছে৷ উৎক্ষেপণ সফল হয়েছে৷
কোলার/অট/এসবি
মহাকাশে প্রথম মানুষ থেকে প্রথম ফুল
মহাকাশে মানুষের যাওয়া একটা সময় অকল্পনীয়ই ছিল৷ কুকুর পাঠিয়ে স্বপ্নযাত্রার সোপান তৈরি হলো৷ প্রথম মানুষ হিসেবে ইউরি গ্যাগারিন গেলেন৷ তারপর প্রথম নারী, প্রথম ফুল হয়ে এবার শুরু হলো মহাকাশে প্রথম টমেটো দেখার অপেক্ষা৷
ছবি: Colourbox/M. Bell
সবার আগে ফলের মাছি
মহাকাশে প্রথম প্রাণী ফলের মাছি৷ হ্যাঁ, ১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিকিরণের প্রভাব পরীক্ষা করার জন্য ভি-টু রকেটে মানুষ না পাঠিয়ে এক ধরণের মাছিই পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ দু’বছর পর শুরু হয় বানর পাঠানো৷ ঊনিশ শতকের পঞ্চাশের দশকে ইঁদুর এবং কুকুরও পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷
তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়ন, অর্থাৎ আজকের রাশিয়াও মহাকাশে পরীক্ষামূলকভাবে প্রাণী পাঠিয়েছে বেশ কয়েকবার৷ তবে ১৯৫১ সালে প্রথম তাদের পাঠানো দু’টি কুকুর মহাকাশ থেকে জীবিত ফেরে৷ তবে কোনো প্রাণীই মহাকাশে গিয়ে অরবিট প্রদক্ষিণ করেনি৷ ১৯৫৭ সালে সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়নেরই আরেক কুকুর লাইকা৷ লাইকা অরবিট থেকে ফেরায় মানুষেরও মহাকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন জাগে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রথম মানুষ ইউরি গ্যাগারিন
মহাকাশ ঘুরে আসা প্রথম মানুষ ইউরি গ্যাগারিন৷ ১৯৬১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভস্টক নভোযানে চড়ে পৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করে আসেন তিনি৷ ছবিতে স্ত্রী এবং সন্তানের সঙ্গে আনন্দঘন মুহূর্তে ইউরি গ্যাগারিন৷
ছবি: AFP/Getty Images
মহাকাশে প্রথম নারী
মহাকাশে প্রথম নারী পাঠাতেও দেরি করেনি সোভিয়েত ইউনিয়ন৷ ১৯৬১ সালেই ৪০০ আবেদন থেকে বেছে নেয়া হয় ভ্যালেন্টিনা টেরেশকোভাকে৷ ভস্টক চালিয়ে মহাকাশে গিয়ে ভেলেন্টিনা টেরেশকোভা সুস্থ, স্বাভাবিক অবস্থাতেই ফিরেছিলেন নিজের দেশে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রথম ফুল
কয়েকদিন আগেই পাওয়া গেছে মজার এক খবর৷ মহাকাশে এবার ফুল ফুটেছে৷ জিনিয়া ফুল৷ মহাকাশে মাটিই নেই৷ তারপরও সেখানে ফুল ফোটানো কিন্তু মহাবিস্ময়েরই ব্যাপার৷ নাসার নভোচারীরা এবার তা-ও সম্ভব করেছেন৷ আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র (আইএসএস)-এর নভোচারী স্কট কেলি টুইটারে একটি জিনিয়া ফুলের ছবি পোস্ট করে জানিয়েছেন, এটা মহাকাশে প্রথম ফোটা ফুল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NASA
তারপর টমেটো?
নভোচারীরা ধীরে ধীরে মহাকাশে খাদ্যশস্য ফলানোর দিকে এগিয়ে যেতে চান৷ সেই লক্ষ্যের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবেই আসলে জিনিয়া ফোটানো৷ ইতিমধ্যে খুব ছোট আঙ্গিকে লেটুস চাষের চেষ্টা শুরু হয়েছে৷ খুব শিগগির নাকি তাজা টমেটোও দেখা যাবে মহাকাশে!