ক্যানসারের লক্ষণ দেখা দেবার আগেই রোগনির্ণয়? মার্কিন গবেষকরা বলছেন, একটি রক্তপরীক্ষা থেকেই নাকি আট ধরনের ক্যানসার ধরা পড়বে৷
বিজ্ঞাপন
ডিম্বকোষ, যকৃৎ, পাকস্থলী, প্যানক্রিয়াস, খাদ্যনালী, মলাশয় ও স্তনের ক্যানসারের টিউমার নাকি ভবিষ্যতে শুধুমাত্র একটি রক্তপরীক্ষা থেকেই ধরা পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন৷ আরো বড় কথা হলো, এই রক্তপরীক্ষায় যখন ক্যানসার ধরা পড়বে, তখনও তা ছড়ায়নি বা বিশেষ বড় হয়নি, অর্থাৎ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে৷ এর ফলে কেমোথেরাপির দরকার পড়বে না, একটি ছোট অপারেশনেই টিউমার বাদ দেওয়া চলবে – তা ছড়ানোর আগেই৷
বহুবছর ধরে বিজ্ঞানীরা তথাকথিত ‘লিকুইড বায়োপ্সি'-র খোঁজে আছেন – যার অর্থ, শরীরের কোষসমষ্টি পরীক্ষা না করে রক্তের ডিএনএ পরীক্ষা করে টিউমারের উপস্থিতি নির্ধারণ করা৷ এমনকি এ ধরণের স্ক্রিনিং নিয়মিত হেল্থ চেক-এর অংশ হতে পারে৷ বালটিমোরের জন হপকিন্স স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীরা তাঁদের গবেষণার ফলাফল ‘সায়েন্স' জার্নালে প্রকাশ করেছেন ও সংশ্লিষ্ট রক্তপরীক্ষাটির নাম দিয়েছেন ‘ক্যানসার-সিক' (ক্যানসারএসইইকে)৷
ক্যানসারের দশ লক্ষণ
ক্যানসারের কিছু লক্ষণ আছে, যা মানুষ নিজের অজান্তেই এড়িয়ে যায়৷ অথচ রোগবালাই শুরুতে ধরা পড়লে চিকিৎসা অনেক সহজ হয়৷ তাই আজ জানাবো ক্যানসারের দশটি লক্ষণের কথা, যেগুলো সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব৷
ছবি: Fotolia/ Alexander Raths
ঘনঘন কাশি
মাঝে মাঝে কাশি হলে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই৷ কিন্তু ঘনঘন কাশি কিংবা কফের সঙ্গে রক্ত বের হলে, উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো ব্যাপার বৈকি! বেশিরভাগ কাশি বিপদের না হলেও কিছুক্ষেত্রে তা ফুসফুসে ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷ তাই এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত৷
ছবি: Fotolia/Brenda Carson
অন্ত্রের অভ্যাসে ঘনঘন পরিবর্তন
আপনার অন্ত্রের মধ্যে নড়াচড়া যদি সহজ না হয় এবং মল স্বাভাবিকের চেয়ে বড় কিংবা কোনোভাবে অস্বাভাবিক মনে হয়, তাহলে তা মলাশয়ে ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷ তাই এক্ষেত্রেও দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি৷
ছবি: Fotolia/Jiri Hera
মূত্রথলির অভ্যাসে পরিবর্তন
যদি কারো মূত্র বা প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত আসে, তাহলে তা মূত্রথলি বা কিডনির ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷ আবার মূত্রনালীতে সংক্রমণের কারণেও এটা হতে পারে৷ তাই সন্দেহ থাকলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই শ্রেয়৷
ছবি: imago/eyevisto
ঘনঘন অপ্রত্যাশিত ব্যথা
অধিকাংশ ব্যথাই ক্যানসারের লক্ষণ নয়, তবে ঘনঘন ব্যথা হলে তা চিন্তার বিষয়৷ তবে ক্রমাগত মাথাব্যথা হলে আবার এটা ভাবার কারণ নেই যে, কারো বুঝি ব্রেইন ক্যানসার হয়েছে৷ কিন্তু বুকে ক্রমাগত এবং নিয়মিত ব্যথা ফুসফুসের ক্যানসার কিংবা তলপেটে ক্রমাগত ব্যথা ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷
ছবি: Fotolia/Adam Gregor
আঁচিল বা তিলের আকৃতিতে পরিবর্তন
সব আঁচিল বা তিলের সঙ্গে টিউমারের সম্পর্ক নেই৷ তবে কোনো আঁচিল বা তিলের আকৃতি ক্রমাগত পরিবর্তন হতে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই ভালো৷
ছবি: Fotolia/ Alexander Raths
ক্ষতস্থান না শুকালে
আপনার শরীরে কোনো ক্ষত যদি তিন সপ্তাহেও না শুকায়, তাহলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ থাকতে পারে৷ এ ধরনের পরিস্থিতিতে তাই দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Karl-Josef Hildenbrand
অপ্রত্যাশিত রক্তপাত
মাসিকের সময় ছাড়া অন্য সময়ে যোনি থেকে রক্তপাত সার্ভিকাল ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷ আর মলদ্বার থেকে রক্তপাতও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷
ছবি: Fotolia/absolutimages
অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন কমা
অনেকেই ওজন কমানোর জন্য নানারকম চেষ্টা করেন৷ কিন্তু যদি কোনোরকম চেষ্টা ছাড়াই কারো ওজন ক্রমাগত কমতে থাকে, তাহলে সেটা বিপদের লক্ষণ৷
ছবি: Fotolia/rico287
অপ্রত্যাশিত স্ফীতি
শরীরের কোথাও কোনো অপ্রত্যাশিত স্ফীতি বা কোনো ফোলা স্থানের আকার পরিবর্তন হতে থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন৷ মেয়েদের স্তনের মধ্যে কোনো অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ডের উপস্থিতিও কিন্তু ক্যানসারের লক্ষণ৷
ছবি: picture alliance/CHROMORANGE
ঘনঘন গিলতে সমস্যা হলে
এটা দু’ধরনের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷ ঘাড় এবং খাদ্যনালীর ক্যানসার৷ তাই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান৷ দ্রষ্টব্য: ছবিঘরটি তৈরিতে ‘‘ওম্যান’স হেল্থ’’ ম্যাগাজিন থেকে তথ্য সহায়তা নেয়া হয়েছে৷
ছবি: Fotolia/Dasha Petrenko
10 ছবি1 | 10
রক্তে ক্যানসারের ডিএনএ
শরীরের কোষ যখন ক্যানসারগ্রস্ত হয়, তখন সেই কোষের জেনেটিক পরিবর্তন ঘটে৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোষটি এমনভাবে বদলে যায় যে, সেই কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে৷ একটি টিউমার সেল মরলে, তার অবশিষ্টাংশ প্রায়ই রক্ত গিয়ে পড়ে – তখন সেই রক্ত পরীক্ষা করে ক্যানসার-সংক্রান্ত জিন ও প্রোটিনের উপস্থিতি নির্ণয় করা সম্ভব হয়৷ ‘ক্যানসার-সিক' পরীক্ষায় ক্যানসার সেলের আটটি প্রোটিন ও ১৬টি জেনেটিক মিউটেশন বা পরিবর্তন ধরা পড়ে৷
শুধু আট ধরনের ক্যানসার কেন? এ প্রশ্নের জবাবে ‘সায়েন্স' পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধটির মূল রচয়িতা জোশুয়া কোহেন জানিয়েছেন যে, তথাকথিত ‘টিউমার মার্কার'-দের একটি বিশেষ গোষ্ঠীর প্রতি মনোযোগ দেওয়ার কারণ, এর ফলে টেস্টে ভুল ‘পজিটিভ' ফলাফল দেখানোর সম্ভাবনা হ্রাস পাবে ও টেস্টটির দামও কম থাকবে – শেষমেষ এই স্ক্রিনিংয়ের খরচ ৫০০ ডলারের কম করার আশা রাখেন বিজ্ঞানীরা৷ তবে এই টেস্ট রুটিন চেক-আপের অঙ্গ হয়ে উঠতে এখনও বেশ কিছু সময় লাগবে৷
ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের ক্ষেত্রে সাফল্য বেশি, স্তন ক্যানসারে কম
বিভিন্ন পর্যায়ের ক্যানসারযুক্ত মোট ১,০০৫ জন রোগীর রক্তের নমুনা পরীক্ষা করেন গবেষকরা৷ এর মধ্যে ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে আস্থাজনকভাবে ক্যানসার ধরতে সমর্থ হয় ‘ক্যানসার-সিক' – অর্থাৎ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রোগীর ক্ষেত্রে এই টেস্ট ক্যানসার নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়৷
স্তন ক্যানসার থেকে সাবধান!
ক্যানসারের কথা শুনলে কে ভয় না পায়? আর তা যদি তাঁর নারীত্বের প্রতীক, সুন্দর, সডৌল স্তনটিতে হয়, তাহলে ভয়ের মাত্রা আরো বেড়ে যায়৷ দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি যে অন্যান্য ক্যানসারের চেয়ে স্তন ক্যানসারেই মারা যায় সবচেয়ে বেশি নারী৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জার্মান ক্যানসার সোসাইটির তথ্য
জার্মান ক্যানসার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, জার্মানিতে প্রতি বছর প্রায় ৭০ হাজার নারীর স্তন ক্যানসার নির্ণয় করা হয়, যার মধ্যে মারা যায় ১৭ হাজার৷ নারীদের অন্যান্য ক্যানসারের মধ্যে স্তন ক্যানসারেই হয় সবচেয়ে বেশি নারী৷ এতে মানুষ মারা গেলেও, এ ক্যানসার খুব মারাত্বক নয়৷ কারণ সময় মতো ধরা পড়লে এ রোগ প্রতিরোধ সম্ভব৷
ছবি: Fotolia/S. Bähren
স্তন ক্যানসারের লক্ষণ
স্তনের চামড়ায় ভাজ, লাল হওয়া বা কুচকে যাওয়া, স্তনবৃন্ত ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া কিংবা বৃন্ত থেকে রস ক্ষরণ হওয়া – স্তনে এ ধরনের কোনো পরিবর্তন দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার৷ তবে সব টিউমার বা পরিবর্তনই যে ক্যানসারে রূপ নেয়, তা কিন্তু নয়!
ছবি: Getty Images/J. Sullivan
মেমোগ্রাফি
‘মেমোগ্রাফি’ এমন একটি পরীক্ষা যাতে স্তনে একেবারে ক্ষুদ্র গিট, চাকা বা মাংসপিণ্ডের উপস্থিতি ধরা পড়ে৷ তাই সময়মতো মেমোগ্রাফি করানো প্রয়োজন৷ বিশেষকরে ৫০-এর ঊর্ধে যাঁদের বয়স, তাঁদের ক্ষেত্রে অবশ্যই এটা নিয়মিত করাতে হবে৷ তাছাড়া প্রত্যেক নারীরই বছরে অন্তত একবার স্ত্রী বিশেষজ্ঞের কাছে স্তন ও জরায়ু পরীক্ষা করানো উচিত৷
ছবি: Colourbox
নিজেই পরীক্ষা করুন
৩০ বছর বয়সের পর থেকে প্রত্যেক নারীর নিজেরই নিজের স্তন পরীক্ষা করা উচিত৷ এই পরীক্ষা করতে হবে ‘পিরিয়ড’ বা মাসিক হওয়ার ঠিক পরে, অর্থাৎ মাসে অন্তত একবার৷ স্তনের ওপর থেকে নীচে, নীচ থেকে ওপরে এবং এপাশ থেকে ওপাশ – নানাভাবে স্তন দুটি টিপে পরীক্ষা করতে হবে৷ বোঝার চেষ্টা করতে হবে স্তনের ভেতর শক্ত কিছু আছে কিনা৷ তবে স্তনে গিট, চাকা বা টিউমার আছে কিনা তা বোঝার জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়াই স্রেয়৷
ছবি: Fotolia/Forgiss
স্তন ক্যানসার রোধে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
হলিউডের ‘আইকনিক’ অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলির মা মারা যান স্তন ক্যানসারে৷ সেই জিন রয়েছে অ্যাঞ্জেলিনার শরীরে৷ আর সেজন্যই অ্যাঞ্জেলিনা স্তন ক্যানসারকে প্রতিরোধ করতে ‘মাস্টেকটমি’ বা স্তনব্যবচ্ছেদ করিয়েছেন৷ শুধু তাই নয়, অন্য মহিলাদের সচেতন করতে জানিয়েছেন তাঁর নিজের অভিজ্ঞতার কথাও৷
ছবি: Reuters/D. Moloshok
ক্যানসারের জিন
স্তন ক্যানসার হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই৷ তবে কারুর পরিবারে মা, খালা, ফুপু বা দাদি-নানির স্তন ক্যানসার থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ এমনটা হলে সেক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতার প্রয়োজন৷ অর্থাৎ খামখেয়ালি না করে নিয়মিত ডাক্তারি চেকাআপ করানো আর পাশাপাশি শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার৷ছবিতে মায়ের সাথে অ্যাঞ্জেলিনা৷
ছবি: Reuters
ক্যানসার নির্ণয়ে মেমোগ্রাফিই সবচেয়ে ভালো পন্থা
‘‘গবেষকরা সবসময়ই ব্রেস্ট ক্যানসারের নতুন নতুন জিন খুঁজে পাচ্ছেন৷ তাই এর চিকিৎসাও নির্ভর করে স্তনের টিউমারের ধরণের ওপর৷ মেমোগ্রাফি ব্রেস্ট ক্যানসার নির্ণয় করার জন্য সবচেয়ে ভালো পন্থা৷ তবে স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া প্রয়োজন৷’’ বলেন জার্মানির অন্যতম ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. কার্ল হাইৎস ম্যুলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়...
প্রকৃতি নারীদের স্তনযুগল উপহার দিয়েছে, যাতে তাঁরা শিশুদের দুধ পান করাতে পারেন৷ তাই অনেকের কাছেই স্তন নারীত্বের প্রতীক৷ তবে এই নারীত্ব ধরে রাখতে প্রয়োজন সচেতনতার৷ জার্মান ক্যানসার সমিতির করা এক সমীক্ষা থেকে জানা যায়, প্রতিদিন আধঘণ্টা ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার, ধূমপান না করা, শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা ইত্যাদি করলে শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ ক্যানসারের ঝুঁকি কমে৷
ছবি: lunamarina/Fotolia.com
পুরুষদেরও কিন্তু স্তন ক্যানসার হয়!
পুরুষরা মনে করেন যে, স্তন ক্যানসার কেবল নারীদেরই হয়৷ তাই তারা এ ব্যাপারে মোটেই সচেতন নন৷ পুরুষদেরও স্তন ক্যানসার হয়, যদিও তা তুলনামূলকভাবে নারীদের চেয়ে অনেক কম৷ তাই পুরুষদেরও নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করানো উচিত৷
ছবি: Benny Weber/Fotolia
9 ছবি1 | 9
বিশেষ করে স্তনের ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্রতি তিনজন রোগীর মধ্যে মাত্র একজনের ক্ষেত্রে ক্যানসার নির্ণয় করা সম্ভব হয়৷
অপরদিকে ডিম্বাশয় ও যকৃতের ক্যানসারের ক্ষেত্রে শতকরা ৯৮ ভাগ টিউমার নির্ণয় করে ‘ক্যানসার-সিক' টেস্ট৷
আরো বড় কথা, ‘ক্যানসার-সিক' যে আট ধরনের ক্যানসার নির্ণয় করতে সক্ষম, তার মধ্যে পাঁচ ধরনের ক্যানসারের ক্ষেত্রে অন্য কোনো উপায়ে ক্রিনিং করা, অর্থাৎ ক্যানসার ধরা বর্তমানে সম্ভব নয়৷ তবে কোলন বা মলাশয়ের ক্ষেত্রে প্রথাগত কোলোনোস্কপিতেই আপাতত প্রাথমিক পর্যায়ের কোলন ক্যানসার ধরা পড়ে৷
বিজ্ঞানীরা সেই সঙ্গে ৮০০ জনের বেশি সুস্থ মানুষের রক্ত পরীক্ষা করে দেখেছেন, কেননা টেস্টে কতবার বা কী পরিমাণ ভুল ফলাফল দেখানো হচ্ছে, সেটাও জানা দরকার৷ সুস্থ মানুষদের ক্ষেত্রে মাত্র সাত জনের ক্ষেত্রে – অর্থাৎ মাত্র এক শতাংশ ক্ষেত্রে ভুল ‘পজিটিভ' ফলাফল দেখিয়েছে ‘ক্যানসার-সিক৷'
তবুও ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা এই টেস্ট থেকে বেশি প্রত্যাশা করা সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছেন৷ বিশেষ করে গোড়ার দিকের টিউমার ধরার ক্ষেত্রে ‘ক্যানসার-সিক' অর্ধেকের কম টিউমার ধরতে পেরেছে৷ ক্যানসার পর্যাপ্ত পরিমাণ বাড়ার পরেই যদি শুধু ‘ক্যানসার-সিক' স্ক্রিনিংয়ে তা ধরা পড়ে – যখন রোগের অন্যান্য লক্ষণ ইতিমধ্যেই দেখা দিয়েছে – তাহলে এই পরীক্ষার উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে বৈকি৷
‘ক্যানসার-সিক' টেস্টে ভুল ‘পজিটিভ' ফল দেখানোর সম্ভাবনা বাস্তবে আরো বেশি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, কেননা, ক্রনিক বা দীর্ঘকাল ধরে অপরাপর রোগে আক্রান্ত রোগীদের পরীক্ষা থেকে বাদ দেওয়া হয়৷ অথচ ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহের রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তে প্রায়ই এমন একটি প্রোটিন পাওয়া যা যা ‘ক্যানসার-সিক' টেস্টেও ধরা পড়ে৷
কাজেই আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন ও তা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে৷ ৬৫ থেকে ৭৫ বছরের ৫০,০০০ মহিলা, যারা কোনোদিন ক্যানসারে ভোগেননি, তাদের নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছেন পেনসিলভানিয়ার গেইজিঙ্গার হেল্থ সিস্টেম ও জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির গবেষকরা৷
আপনার খাবার ঘরে এই জিনিসগুলোর অবশ্যই দেখা মিলবে৷ আর এগুলোতে এমন কিছু উপাদান আছে, যা ক্যানসারের কারণ হতে পারে৷ ছবিঘরে সেই সব খাদ্যের তালিকাই তুলে ধরা হলো৷
ছবি: Printemps / Fotolia
সাদা ময়দা
ময়দা সাদা করার জন্য গমকে প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং তাতে ক্লোরিন ব্যবহার করা হয়৷ এই একই ক্লোরিন কিন্তু কাপড়ের রং ওঠাতেও ব্যবহার করা হয়৷ বলা বাহুল্য, এই ক্লোরিন ব্যবহারের ফলে খাদ্যের সব পুষ্টিগুণ কমে যায়৷
ছবি: Fotolia/BK
লবণাক্ত স্ন্যাকস
পট্যাটো বা আলুর চিপসে অতিরিক্ত লবণ থাকে৷ তাই খুব বেশি চিপস খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত৷ ক্যানসার সৃষ্টির জন্য সব ধরনের উপাদান রয়েছে এই চিপসে৷ এছাড়া চিপসকে মচমচে করতে যে অ্যাক্রিলামাইড ব্যবহার করা হয়, সেই একই উপাদান পাওয়া যায় সিগারেটেও৷
ছবি: picture-alliance/Romain Fellens
লাল মাংস
অল্প মাত্রায় এ ধরনের মাংস খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক নয়৷ কিন্তু ‘লাল মাংস’ যদি খুব বেশি পরিমাণে খাওয়া হয়, তাহলে কোলন বা প্রস্টেট ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়ে যায়৷ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুযায়ী, রেড মিট বা গরু, ছাগল এবং ভেড়ার মাংসে এক ধরনের সিলিসিক অ্যাসিড থাকে, যেটা ক্যানসারের কারণ৷
ছবি: Fotolia/hjschneider
কোমল পানীয়
কোকাকোলা, পেপসি এবং এ ধরনের অন্যান্য পানীয়তে উচ্চ মাত্রায় চিনি রয়েছে, যা কৃত্রিমভাবে রং করা৷ এ ধরনের কোমল পানীয় ভীষণ ক্ষতিকর৷ এছাড়া কৃত্রিম সুইটেনারে বেশি মাত্রায় সোডিয়াম থাকে৷ যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও মাদক প্রশাসন জানিয়েছে, এ সব কোমল পানীয় গ্রহণ করলে মানুষের মস্তিষ্ক রাসায়নিক দ্রব্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে৷
ছবি: Fotolia/B. Hofacker
ভেজিটেবল তেল
সূর্যমুখী তেলে এক ধরনের রং ব্যবহার করা হয়, যাতে তা ক্রেতাকে আকৃষ্ট করে৷ এই তেলে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা স্বাস্থ্যকর৷ কিন্তু তেলে যদি রঙের পরিমাণ বেশি হয়, তবে তা স্তন ও প্রস্টেট ক্যানসারের কারণ হতে পারে৷ ক্লিনিকাল ইনভেস্টিগেশন জার্নালে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি৷
ছবি: Printemps / Fotolia
প্রক্রিয়াজাত মাংস
সসেজ, নানা রকম সালামি – এগুলো দেখতে এবং খেতে ভালোই লাগে৷ কিন্তু এগুলো সংরক্ষণের জন্য উচ্চমাত্রার ‘প্রিজারভেটিভ’ ব্যবহার করা হয়৷ যত বেশি প্রিজারভেটিভ থাকে খাবারে বিষাক্ত সোডিয়াম নাইট্রেটের পরিমাণ তত বেড়ে যায়৷ ফলে ক্যানসারের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়৷
ছবি: eyewave - Fotolia.com
নন-অরগ্যানিক ফল
সেসব ফলের বাগানে সার হিসেবে নাইট্রোজেন ব্যবহার হয় এবং গাছে পোকা মারার বিষ দেয়া হয়, সেই সব ফল খাওয়া খুবই বিপজ্জনক৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে মাত্রা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, তা না মেনে অতিরিক্ত পরিমাণে নাইট্রোজেন ব্যবহার করা হয়ে থাকে৷ তাই এ রকম ‘নন-অরগ্যানিক’ ফল বেশি খেলে দীর্ঘদিন পর এর ক্ষতিকর প্রভাব শরীরেও দেখা যায়৷