প্রতিবছর যে পরিমাণ নারী ক্যানসারে মারা যান তার মধ্যে স্তন ক্যানসার আক্রান্ত সবচেয়ে বেশি৷ মেমোগ্রাফি করে শনাক্ত করার আগেই রক্ত পরীক্ষা করে নির্ণয় করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন জার্মান বিজ্ঞানীরা৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের গবেষকরা এমন একটি রক্ত পরীক্ষা পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন সম্প্রতি৷ গবেষকরা দাবি করছেন, এই পরীক্ষার মাধ্যমে আরো সঠিকভাবে ও দ্রুত স্তন ক্যানসার শনাক্ত করা সম্ভব হবে৷
স্তন ক্যানসার থেকে সাবধান!
ক্যানসারের কথা শুনলে কে ভয় না পায়? আর তা যদি তাঁর নারীত্বের প্রতীক, সুন্দর, সডৌল স্তনটিতে হয়, তাহলে ভয়ের মাত্রা আরো বেড়ে যায়৷ দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি যে অন্যান্য ক্যানসারের চেয়ে স্তন ক্যানসারেই মারা যায় সবচেয়ে বেশি নারী৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জার্মান ক্যানসার সোসাইটির তথ্য
জার্মান ক্যানসার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, জার্মানিতে প্রতি বছর প্রায় ৭০ হাজার নারীর স্তন ক্যানসার নির্ণয় করা হয়, যার মধ্যে মারা যায় ১৭ হাজার৷ নারীদের অন্যান্য ক্যানসারের মধ্যে স্তন ক্যানসারেই হয় সবচেয়ে বেশি নারী৷ এতে মানুষ মারা গেলেও, এ ক্যানসার খুব মারাত্বক নয়৷ কারণ সময় মতো ধরা পড়লে এ রোগ প্রতিরোধ সম্ভব৷
ছবি: Fotolia/S. Bähren
স্তন ক্যানসারের লক্ষণ
স্তনের চামড়ায় ভাজ, লাল হওয়া বা কুচকে যাওয়া, স্তনবৃন্ত ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া কিংবা বৃন্ত থেকে রস ক্ষরণ হওয়া – স্তনে এ ধরনের কোনো পরিবর্তন দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার৷ তবে সব টিউমার বা পরিবর্তনই যে ক্যানসারে রূপ নেয়, তা কিন্তু নয়!
ছবি: Getty Images/J. Sullivan
মেমোগ্রাফি
‘মেমোগ্রাফি’ এমন একটি পরীক্ষা যাতে স্তনে একেবারে ক্ষুদ্র গিট, চাকা বা মাংসপিণ্ডের উপস্থিতি ধরা পড়ে৷ তাই সময়মতো মেমোগ্রাফি করানো প্রয়োজন৷ বিশেষকরে ৫০-এর ঊর্ধে যাঁদের বয়স, তাঁদের ক্ষেত্রে অবশ্যই এটা নিয়মিত করাতে হবে৷ তাছাড়া প্রত্যেক নারীরই বছরে অন্তত একবার স্ত্রী বিশেষজ্ঞের কাছে স্তন ও জরায়ু পরীক্ষা করানো উচিত৷
ছবি: Colourbox
নিজেই পরীক্ষা করুন
৩০ বছর বয়সের পর থেকে প্রত্যেক নারীর নিজেরই নিজের স্তন পরীক্ষা করা উচিত৷ এই পরীক্ষা করতে হবে ‘পিরিয়ড’ বা মাসিক হওয়ার ঠিক পরে, অর্থাৎ মাসে অন্তত একবার৷ স্তনের ওপর থেকে নীচে, নীচ থেকে ওপরে এবং এপাশ থেকে ওপাশ – নানাভাবে স্তন দুটি টিপে পরীক্ষা করতে হবে৷ বোঝার চেষ্টা করতে হবে স্তনের ভেতর শক্ত কিছু আছে কিনা৷ তবে স্তনে গিট, চাকা বা টিউমার আছে কিনা তা বোঝার জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়াই স্রেয়৷
ছবি: Fotolia/Forgiss
স্তন ক্যানসার রোধে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
হলিউডের ‘আইকনিক’ অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলির মা মারা যান স্তন ক্যানসারে৷ সেই জিন রয়েছে অ্যাঞ্জেলিনার শরীরে৷ আর সেজন্যই অ্যাঞ্জেলিনা স্তন ক্যানসারকে প্রতিরোধ করতে ‘মাস্টেকটমি’ বা স্তনব্যবচ্ছেদ করিয়েছেন৷ শুধু তাই নয়, অন্য মহিলাদের সচেতন করতে জানিয়েছেন তাঁর নিজের অভিজ্ঞতার কথাও৷
ছবি: Reuters/D. Moloshok
ক্যানসারের জিন
স্তন ক্যানসার হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই৷ তবে কারুর পরিবারে মা, খালা, ফুপু বা দাদি-নানির স্তন ক্যানসার থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ এমনটা হলে সেক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতার প্রয়োজন৷ অর্থাৎ খামখেয়ালি না করে নিয়মিত ডাক্তারি চেকাআপ করানো আর পাশাপাশি শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার৷ছবিতে মায়ের সাথে অ্যাঞ্জেলিনা৷
ছবি: Reuters
ক্যানসার নির্ণয়ে মেমোগ্রাফিই সবচেয়ে ভালো পন্থা
‘‘গবেষকরা সবসময়ই ব্রেস্ট ক্যানসারের নতুন নতুন জিন খুঁজে পাচ্ছেন৷ তাই এর চিকিৎসাও নির্ভর করে স্তনের টিউমারের ধরণের ওপর৷ মেমোগ্রাফি ব্রেস্ট ক্যানসার নির্ণয় করার জন্য সবচেয়ে ভালো পন্থা৷ তবে স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া প্রয়োজন৷’’ বলেন জার্মানির অন্যতম ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. কার্ল হাইৎস ম্যুলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়...
প্রকৃতি নারীদের স্তনযুগল উপহার দিয়েছে, যাতে তাঁরা শিশুদের দুধ পান করাতে পারেন৷ তাই অনেকের কাছেই স্তন নারীত্বের প্রতীক৷ তবে এই নারীত্ব ধরে রাখতে প্রয়োজন সচেতনতার৷ জার্মান ক্যানসার সমিতির করা এক সমীক্ষা থেকে জানা যায়, প্রতিদিন আধঘণ্টা ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার, ধূমপান না করা, শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা ইত্যাদি করলে শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ ক্যানসারের ঝুঁকি কমে৷
ছবি: lunamarina/Fotolia.com
পুরুষদেরও কিন্তু স্তন ক্যানসার হয়!
পুরুষরা মনে করেন যে, স্তন ক্যানসার কেবল নারীদেরই হয়৷ তাই তারা এ ব্যাপারে মোটেই সচেতন নন৷ পুরুষদেরও স্তন ক্যানসার হয়, যদিও তা তুলনামূলকভাবে নারীদের চেয়ে অনেক কম৷ তাই পুরুষদেরও নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করানো উচিত৷
ছবি: Benny Weber/Fotolia
9 ছবি1 | 9
গবেষক দলের প্রধান ক্রিস্টফ সন ‘বিল্ড' পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এই পদ্ধতিটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘হেইস্ক্রিন'৷ তিনি বলেন, এই পরীক্ষা পদ্ধতিতে বর্তমানে ব্যবহৃত প্রযুক্তিতে ক্যানসার শনাক্ত করার আগেই সম্ভাব্যতা জানা যাবে৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্যমতে, প্রতি বছর ৬ লাখ নারী স্তন ক্যানসারে মারা যান৷ এর মধ্যে নির্ণয় করতে দেরি হয়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ নারী মারা যান৷ অধ্যাপক সন জানান, ৫০ বছরের নীচে নারীদের ক্ষেত্রে এটি ৮৬ শতাংশ সঠিক তথ্য দেবে৷ এবং দ্রুত সেসব নারীদের চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হবে৷
তিনি আরো বলেন, এই রক্ত পরীক্ষা পদ্ধতি মেমোগ্রাফির মতোই নির্ভরযোগ্য৷ এটিতে খরচও কম, একইসঙ্গে এই পদ্ধতিতে কোনো ধরনের রেডিয়েশনের প্রভাব নেই৷
অধ্যাপক সন বলেন, এই পরীক্ষা পদ্ধতিতে জরায়ু ক্যানসার নির্ণয়ও করা যাবে৷ চলতি বছরই এই পরীক্ষা পদ্ধতি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলে জানান তিনি৷