1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রমজানের বাজার কতটা নিয়ন্ত্রণে?

ফয়সাল শোভন
১০ মে ২০১৯

রোজা এলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ে৷ এবারও বেশ কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে৷ তবে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে সার্বিকভাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী৷

ছবি: bdnews24.com/T. Ahammed

সারা বছরের তুলনায় রোজায় চিনির চাহিদা তুলনামূলক বেশি থাকে৷ এই এক মাসে ৩ লাখ মেট্রিক টন চিনি লাগে, যার বিপরীতে আমদানি করা ছিল সাড়ে ১০ লাখ মেট্রিক টনের বেশি৷ ফেব্রুয়ারির পর বিশ্ববাজারে পণ্যটির দামও ছিল পড়তির দিকে৷ তারপরও টিসিবির হিসাবে রোজার আগের সপ্তাহে চিনির দাম এক মাস আগের তুলনায় সাড়ে নয়ভাগ বেড়ে যায়৷ একইভাবে মসুর ডাল, আদা, ছোলা রসুন অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে৷ কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সভাপতি গোলাম রহমানও বলেন, চিনি, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে৷ সার্বিকভাবে বাজার উর্দ্ধমুখী৷ তাঁর মতে, ‘‘সরকার যে হিসাব-নিকাশ করেছে তাতে চাহিদার চেয়ে রোজা সংশ্লিষ্ট যেসব পণ্য, সেগুলোর আমদানি মজুদ সবই ভালো ছিল৷ এর মানে সাধারণ নিয়মে দাম বাড়ার কথা নয়৷’’

বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে রোজার আগে প্রতিবারের মতো ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী৷ কিছু পণ্যের দাম বাড়লেও সার্বিকভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেই মনে করেন তিনি৷ ‘‘আমরা প্রথম থেকেই বাজার মনিটরিংয়ের চেষ্টা করেছি যেন দাম না বাড়ে৷ সব বড় ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলা হয়েছে৷ আগে থেকেই টিসিবিকে তৈরি রেখেছি, তারাও বাজারে যথেষ্ট পরিমাণ মালপত্র নিয়ে এসেছে৷ ব্যবসায়ীরাও কথা দিয়েছিল দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে৷ মোটামুটি যেটা আমাদের প্রত্যাশা ছিল, তার মধ্যেই আছে,’’ ডয়চে ভেলেকে বলেন টিপু মুনশি৷

কেন দাম বাড়ে?

সাধারণ নিয়মে জোগান বা সরবরাহের চেয়ে চাহিদা বেশি থাকলে পণ্যের দাম বাড়ে৷ কিন্তু পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও কেন দাম বৃদ্ধি পায়? ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘‘দুটি কারণে দাম বেড়েছে বলে মনে হয়৷ একটা কারণ হলো, রোজার প্রথম দিকে অনেক ক্রেতা একসাথে বেশি জিনিস কেনে৷  তার ফলে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়৷ আর দ্বিতীয় কারণ হলো, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রোজা উপলক্ষ্যে সব সময় দাম বাড়াতে চায়৷’’

দুটি কারণে দাম বেড়েছে বলে মনে হয়: গোলাম রহমান

This browser does not support the audio element.

বাণিজ্যমন্ত্রী মনে করেন, ব্যবসায়ীদের দাম বৃদ্ধির সুযোগ করে দেন ভোক্তারাই৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা মানসিকভাবে একটা সমস্যা৷ ভোক্তারা রোজার শুরুতেই সারামাসের কেনাকাটা করে ফেলতে চান৷ তার জন্য একটুখানি চাপ পড়ে, সেটা এক দুইদিনের জন্য৷'' তিনি মনে করেন, ১৫ রমজানের পর ব্যবসায়ীরা উদ্বৃত্তের কারণে মজুদ পণ্য বিক্রিই করতে পারবেন না৷ তখন কেনা দামের চেয়েও কম দামে তাদের পণ্য ছাড়তে হবে৷

ভ্রাম্যমান আদালতের তৎপরতা

তবে এবার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে অন্যবারের চেয়ে বেশি উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ রাজধানীতে প্রতিদিনই বাজার মনিটরিংয়ে নামছে সিটি কর্পোরেশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দল৷ করা হচ্ছে জরিমানাও৷

ভোক্তারা রোজার শুরুতেই সারামাসের কেনাকাটা করে ফেলতে চান: বাণিজ্যমন্ত্রী

This browser does not support the audio element.

ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী নির্ধারিত মূল্যে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করা হলে ১ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে৷ যারা কারসাজি করছে, তাদের বিরুদ্ধে এই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানান সিটি কর্পোরেশনের হয়ে বাজার মনিটরিং করা আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুল হক৷ এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না বলেও জানান তিনি৷ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শফিকুল ইসলাম লস্কর বলেন, ‘‘সাধারণত আমরা দিনে (ঢাকায়) দুটি বাজার মনিটরিং করি, এখন চারটি করছি দৈনিক৷ অন্য সময় সপ্তাহে ৫ দিন করা হয়, এখন শুক্র, শনিবারও করছি৷’’

ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দামে অসঙ্গতি পাওয়ায় জরিমানা করেছে৷ এমনকি নামিদামি সুপারশপগুলোকেও বড় অংকের জরিমানা করা হয়েছে৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘শপিংমলগুলোতে ষাট টাকা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল, আমরা বাধ্য করেছি ৩০ টাকায় বিক্রি করতে৷’’

এখন ঢাকায় দিনে চারটি বাজার মনিটর করছি: শফিকুল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতি টের পেয়ে অনেক সময় খোলা বাজারগুলোতে ব্যবসায়ীরা দাম কমিয়ে দেয়, তাৎক্ষণিকভাবে মূল্য তালিকা ঝুলায়৷ এবার কিছুক্ষেত্রে ক্রেতা সেজেও পরিদর্শকরা আগে দাম জেনে নিচ্ছেন৷ পরে জরিমানা করছেন৷ এ ব্যাপারে শামসুল হক বলেন, ‘‘মোবাইল কোর্ট যখন করি, আমরা কাউকে জানিয়ে যাই না৷ আমি থানাকেও বলি না যে, আমি ওখানে মোবাইল কোর্টে যাবো৷ আমাদের যে জরিমানাগুলো হচ্ছে, তাতেই বোঝা যাচ্ছে যে তারা টের পায় না৷ মোবাইল কোর্টটা নিয়ে আমরা অতর্কিতেই যাই, হঠাৎ করে একটা অভিযান চালাই৷’’ প্রথম দুই দিনে তিনি ছয় জন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন বলে জানান৷

যদিও সারা দেশের ব্যাপ্তির তুলনায় বাজার মনিটরিংয়ের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে৷ ঢাকায় প্রায় ২০০টি বাজার পর্যবেক্ষণে সব মিলিয়ে সরকারের আটটি টিম কাজ করছে৷ ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে ঢাকার বাইরে জেলা পর্যায়ে একজন মাত্র কর্মকর্তা দিয়ে বাজারে নজরদারি করছে৷ তার মধ্যে ১৫-১৬ টি জেলায় তাদের কোনো অফিসই নেই৷ উপজেলা পর্যায়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যক্রমই নেই৷

মোবাইল কোর্ট যখন করি, আমরা কাউকে জানিয়ে যাই না: শামসুল হক

This browser does not support the audio element.

‘সরকার কঠোর’

সীমাবদ্ধতা থাকলেও রোজায় বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী৷ বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে সব বিভাগীয় কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে৷ পুলিশের ডিআইজিকে চিঠি দেয়া হয়েছে, তাঁরাও যেন সতর্ক থাকে, রাস্তাঘাটে যাতে কোনো চাঁদাবাজি না হয়, নিয়মিত যাতে বাজার মনিটরিং করা হয়৷ প্রথম তিন দিনে সারা দেশে কমপক্ষে ৫০ টি জায়গায় ব্যবসায়ীদের জেল, জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান তিনি৷ বলেন, ‘‘আমরা শক্ত অবস্থানে আছি৷ রমজানে ভোক্তাদের যাতে কষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছি৷’’

সরকারের এই অবস্থানের কিছুটা সুফল মিলেছে বলে মনে করেন গোলাম রহমান৷ তিনি বলেন, ‘‘যদি কার্যক্রম একেবারে না থাকত, তাহলে ভেজাল, নকল ও দাম বৃদ্ধি আরো ব্যাপকতর হতো৷ সরকারের মনিটরিং ও তত্ত্বাবধানের কারণে এটা বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণে আছে৷ তবে কার্যক্রমটা জোরদার করা দরকার, যাতে ভোক্তারা অসাধু ব্যবসায়ীদের হয়রানির শিকার না হয়৷’’

৩ মে’র ছবিঘরটি দেখুন...

ফয়সাল শোভন ডয়চে ভেলের মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক৷@FaisalShovon14
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ