রমজানে টাস্কফোর্স কতটা কাজে আসবে?
৩১ মার্চ ২০২২১৭ সদস্যের এই টাস্কফোর্সের প্রধান হলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। গত ১৩ মার্চ এই টাস্কফোর্স গঠন করা হলেও প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় ২৭ মার্চ। টাস্কফোর্সের সদস্য, ভোক্তা অধিদপ্তরের চেয়ারম্যান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানান,"৪ এপ্রিল আমাদের বৈঠক আছে। আমরা বাজার মনিটরিং থেকে শুরু করে টার্মস অব রেফারেন্সে যা আছে সব করব। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তো সংসদে বলেই দিয়েছেন এব্যাপারে। আগে আমরা বৈঠকটা করি। তারপরে সবকিছু জানাব।”
টাস্কফোর্সের কাজের মধ্যে রয়েছে- দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা, আন্তর্জাতিক বাজার দর এবং আমদানি তথ্য বিশ্লেষণ করে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখলে তা নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম গ্রহণ, পণ্য উৎপাদন, পরিশোধন, আমদানি এবং স্থানীয় পর্যায়ে বিক্রয়সহ সবকিছু পর্যবেক্ষণ ও দিক নির্দেশনা দেয়া, নিত্যপণ্যের চেইন স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ, বাজার মনিটরিং কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ এবং দিক নির্দেশনা দেয়া।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়াম্যান মো. আফজাল হোসেনও টাস্কফোর্সের সদস্য। তিনি বলেন," দেশি এবং আমদানি করা কোনো ধরনের পণ্যের বাজারেই যাতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অথবা বাজারে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তার করে পণ্যের দাম কেউ বাড়াতে না পারে সেটাই আমরা প্রধানত দেখব। আমাদের এই টাস্কফোর্সে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা আছেন। মাঠ পর্যায়ে তারা তাদের জ্যুরিসডিকশন অনুযায়ী কাজ করবেন। বিশেষ করে রমজান মাসে তারা খুবই সতর্ক থাকবেন। যাতে কেউ কোনো সুযোগ নিতে না পারেন। আমরা নিয়মিত বিভিন্ন পণ্যের দেশি এবং আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণ করি। সেখান থেকে যৌক্তিক দামের বাইরে গেলেই আমরা ইন্টারাপ্ট করব। আর ২০ ধরনের পণ্য রয়েছে যার দাম বাড়াতে হলে আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। আমাদের তথ্য উপাত্ত দিয়ে বুঝাতে হবে যে দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি আছে কী না। পণ্য ধরে রেখে এবং কোনো কৌশল করে পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রচেষ্টা আমরা প্রতিরোধ করব।”
এবার রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখতে কয়েক ধরনের কৌশল প্রয়োগ করতে চায় সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে জানা গেছে ওইসব কৌশলের মধ্যে রয়েছে, আমদানি করা পণ্য দ্রুত ছাড় করানোর ব্যবস্থা, পণ্যবাহী যানবাহন চাঁদামুক্ত রাখা, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় পণ্যের বাজার মনিটরিং, টাক্সফোর্সের মনিটরিং কাজে জেলা ও উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত কর্মকর্তাদের কাজে লাগানে, ভ্রাম্যমাণ আদালতগুলো শতভাগ সক্রিয় রাখা এবং কৃত্রিম সংকট ও মজুদের ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি বাড়ানো। এর বাইরে রমজানে এক কোটি পরিবারকে টিসিবির পণ্য কম দামে দেয়া অব্যাহত থাকবে। সরকার এরই মধ্যে সয়াবিন তেলের ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে।
১৩ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে টাস্কফোর্স গঠনের বৈঠকে ওই কৌশলগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। তাই টাস্কফোর্সে বানিজ্য মন্ত্রণালয় ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, খাদ্য, কৃষি,শিল্প, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবদের প্রতিনিধি হিসেবে রাখা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, প্রতিযোগিতা কমিশন , ট্যারিফ কমিশন, ভোক্তা অধিদপ্তর, গোয়েন্দা সংস্থা এবং এফবিসিসিআইর প্রধানেরাও আছেন।
অবশ্য কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের(ক্যাব) সহ- সভাপতি এস এম নাজের হোসেন মনে করেন, এই টাস্কফোর্স কতটা কার্যকরভাবে কাজ করে তার ওপর নির্ভর করছে রমজানে বাজার কতটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
তার কথা,"প্রথমে সমস্যাকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। সমস্যাকে সমস্যা মনে না করলে তো কাজে গতি আসবে না। গতকাল(বুধবার) প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছেন দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে আছে। বাজার মনিটরিং-এর জন্য টাস্কফোর্স আগেও করা হয়েছে। জেলা-উপজেলা পর্যন্ত কমিটি আছে। মনিটরিং তো হচ্ছেনা। আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা শহরে বাজার মনিটরিং-এর জন্য ১৬টি টিম আছে। আমরা একটি টিমও বাজারে দেখছি না।”
তার অভিযোগ,"এইসব টাক্সফোর্স বা মনিটরিং কমিটিতে সরাসরি ভোক্তাদের প্রতিনিধি নেই। গণমাধ্যমেরও কোনো প্রতিনিধি নাই। আমরা সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ কমিটিতেও ভোক্তা ও সাংবাদিক প্রতিনিধি রাখার দাবি করেছিলাম। রাখা হয়নি। তার মানে হলো এই সব কমিটি ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কাজ করে।” এমনকি এইসব কমিটির বৈঠক চলাকালেও সাংবাদিকদের ভিতরে ঢুকতেও দেয়া হয় না বলে জানান এই ক্যাব নেতা।