রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় করা হত্যা মামলার রায় পিছিয়ে গেছে৷ ঘটনার ১৩ বছর পর সোমবার রায় ঘোষণার কথা থাকলেও তা পরিবর্তন করে৷ আগামী ২৩শে জুন রায় ঘোষণার নতুন তারিখ ধার্য করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার রায় ঘোষণা উপলক্ষ্যে এ মামলায় কারাগারে থাকা নয় আসামিকে ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন আদালতে হাজির করা হয়৷ আসামিদের হাজির করার পর বিচারক রাষ্ট্র এবং আসামিপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আজ রায় ঘোষণা করা সম্ভব হচ্ছে না৷ ২৩ জুন রায় ঘোষণার নতুন তারিখ ধার্য করা হয়েছে৷''
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানান, মামলার রায় ঘোষণার প্রস্তুতি পর্যাপ্ত না হওয়ায় সোমবার রায় ঘোষণা পিছিয়ে দেয়া হয়৷ তাঁরা দাবি করেন, আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত ছিলনা৷ এবং এ ধরনের মামলার রায় ঘোষণার জন্য করে আদালত এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নেয়ায় সম্ভবত সোমবার রায় ঘোষণা করা হয়নি৷
বাঙালিকে পরিশুদ্ধ করার উত্সব
ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় বর্ষবরণ৷ এরপর সারাদিন ধরে সেটা চলছে৷ ছবিঘরে থাকছে তারই কিছু আমেজ৷
ছবি: DW/M. Mamun
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
বৈশাখকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি বাঙালি গেয়ে ওঠে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর!/তোরা সব জয়ধ্বনি কর!/ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল-বোশেখীর ঝড়/তোরা সব জয়ধ্বনি কর...৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
এসো হে বৈশাখ
ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকার রমনা বটমূলে শুরু হয় বাংলা বর্ষবরণ৷ ছায়ানটের শিল্পীরা বিশ্বকবির – ‘‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’’ গেয়ে বাংলা ১৪২১ সালকে স্বাগত জানান৷
ছবি: DW/M. Mamun
সার্বজনীন উৎসব
রমনা বটমূলে নতুন বছরের সূর্য উঁকি দিতেই সমবেত কণ্ঠে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন সব বয়সের, সব শ্রেণির মানুষ৷ পুরনো বছরের জরা, দুঃখ, পাপ, তাপকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে শপথ নিয়েছেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
মঙ্গল শোভাযাত্রা
মঙ্গল শোভাযাত্রার ‘‘জাগ্রত করো উদ্যত করো নির্ভয় করো হে’’ – এই বাণী সব প্রাণের ভয় দূর করে বাঙালির চিত্তকে যেন করেছে ভয়শূণ্য৷ এ উত্সবে মিলেছে সব প্রাণ, সব ধর্ম, সব বর্ণ৷
ছবি: DW/M. Mamun
সমৃদ্ধির প্রতীক
বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রায় সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে ছিল লক্ষ্মী পেঁচা, শিশু হরিণ, মা ও শিশু, হাঁস এবং মাছের ঝাঁক; লোক ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে বিড়ালের মুখে চিংড়ি, শখের হাঁড়িসহ মোট ১৩টি বড় ভাস্কর্য৷ এছাড়াও ময়ূর, বাঘের দুইটি বড় মুখোশ, ১০টা ছোট পাখি, প্রায় এক হাজার কাগজে কাটা ছোট মুখোশ, ১০০টি বড় মুখোশ৷
ছবি: DW/M. Mamun
কাণ্ডারির প্রতীক
হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের দুঃসময়ের কাণ্ডারির প্রতীক হিসেবে এবারের শোভাযাত্রায় স্থান পেয়েছে ‘গাজী ও বাঘ’৷
ছবি: DW/M. Mamun
২৬ বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রা
বৈশাখ উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন বলেন, ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রার ২৬ বছরে পদার্পণ ও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে এবারের আয়োজন অন্যবারের চেয়ে দ্বিগুণ৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
বাঙালিকে পরিশুদ্ধ করে
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলা নববর্ষ বাঙালির সার্বজনীন উত্সব৷ এই উত্সবের রঙ পবিত্র৷ এই উত্সব বাঙালিকে পরিশুদ্ধ করে৷ করে জরামুক্ত৷ এছাড়া বাংলা নববর্ষ অশুভকে বিদায় দিয়ে শুভ এবং কল্যাণের দিকে আহ্বান জানায়৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের মিশেল
বাঙালির আবহমান সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য মিশে আসে এই বাংলা বর্ষবরণের সঙ্গে৷ এই উত্সব বাঙালিকে তার আত্ম পরিচয়ের সন্ধান দেয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
বসেছে মেলা
নববর্ষকে ঘিরে বৈশাখী মেলার আয়োজন বসেছিল৷
ছবি: DW/M. Mamun
10 ছবি1 | 10
২০০১ সালের ১৪ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে জঙ্গিদের বোমা হামলায় ১০ জন নিহত হন৷ আহত হন অনেকে৷ বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রায় আট বছর পর ২০০৮ সালের ২৯শে নভেম্বর হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আইনে হরকাতুল জিহাদ বা হুজি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)৷ ১৬ই এপ্রিল হত্যা মামলায় মুফতি হান্নান ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত৷ গত বছরের ২৩শে অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়৷ ১০ই নভেম্বর আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন৷
হত্যা মামলায় চলতি বছরের ৮ই মে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে৷ ২৮শে মে আইনগত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়৷ আর ঐদিনই মামলার রায় ঘোষণার দিন ঠিক করা হয় ঘটনার ১৩ বছর পর৷
মামলার আসামিদের মধ্যে মুফতি হান্নান, আরিফ হাসান সুমন, শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হাফেজ মওলানা আবু তাহের, মওলানা আবদুর রউফ, মওলানা সাব্বির ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, মওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, হাফেজ মওলানা ইয়াহিয়া ও মওলানা আকবর হোসাইন কারাগারে আটক আছেন৷ আসামি মওলানা তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আবদুল হাই পলাতক আছেন৷
এই ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলাটির কার্যক্রম থেমে আছে ২০০৯ সাল থেকে৷ মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ১-এ বিচারাধীন৷