রসায়নে নোবেল পেলেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তিন বিজ্ঞানী
৪ অক্টোবর ২০২৩
রসায়নশাস্ত্রে ২০২৩ সালের নোবেল পুরস্কার পেলেন ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে জন্ম নেয়া তিন বিজ্ঞানী। তারা হলেন—মুঙ্গি বাওয়েন্ডি (ফ্রান্স), লুই ব্রুস (যুক্তরাষ্ট্র) ও আলেক্সি ইয়াকিমভ (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন)।
বিজ্ঞাপন
আজ বুধবার সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে এক অনুষ্ঠানে রসায়নশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস।
'কোয়ান্টাম ডট আবিষ্কার ও সংশ্লেষণ'র জন্য এই তিন বিজ্ঞানীকে চলতি বছর রসায়নে নোবেল দেওয়া হলো।
পুরস্কারের সঙ্গে পাওয়া ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা ভাগ করে নেবেন তারা।
২০২২ সালে রসায়নে নোবেল পান যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী ক্যারোলিন আর বারতোজ্জি, ডেনমার্কের বিজ্ঞানী মর্টেন মেলডাল ও মার্কিন বিজ্ঞানী কে ব্যারি শার্পলেস। ক্লিক কেমিস্ট্রি অ্যান্ড বায়োঅর্থগোনাল কেমিস্ট্রির উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখায় গত বছর তারা নোবেল পান।
২ অক্টোবর চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেলজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। চলতি বছর চিকিৎসাবিজ্ঞানে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পান কাতালিন কারিকো ও ড্রু ওয়েজমান। নিউক্লিওসাইড বেস পরিবর্তনের বিষয়ে তাদের আবিষ্কারের জন্য এ বছর তারা নোবেল পুরস্কার পান, যেটি কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে কার্যকর ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে সহায়তা করেছে।
কাতালিন কারিকোর জন্ম ১৯৫৫ সালে হাঙ্গেরির সোলনক শহরে। শেগেড ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করার পর ১৯৮০ এর দশকে পরিবারসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। ড্রু ওয়েজম্যানের জন্ম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৫৯ সালে। ১৯৮৭ তিনি বোস্টন ইউনিভার্সিটি থেকে ইমিউনোলজিতে পিএইচডি করেন।
রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস ১৯০১ সাল থেকে প্রতিবছর এই পুরস্কার প্রদান করে। প্রত্যেক ক্ষেত্রে পুরস্কার বিজয়ীরা একটি পদক এবং ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রাউন পান। অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় ১৯৬৯ সাল থেকে।
এমকে/এসিবি (দ্য ডেইলি স্টার)
নোবেল ২০২২: যারা, যে কারণে পেলেন
কোয়ান্টাম বলবিদ্যা, মানবজাতির বিবর্তন আর ক্লিক ক্যামিস্ট্রি নিয়ে গবেষণা করা বিজ্ঞানীরা, সাহিত্যে নতুন দিগন্ত রচনা করা লেখিকা আর মানবাধিকারের মশালবাহী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ বছরের নোবেলজয়ী৷ বিস্তারিত জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: Jens Schlueter/Getty Images
যুগান্তকারী গবেষণা
পদার্থে নোবেলজয়ী ফ্রান্সের অ্যালেইন অ্যাসপেক্ট, যুক্তরাষ্ট্রের জন ক্লজার এবং অস্ট্রিয়ার অ্যান্টন সাইলিঙ্গার৷ কোয়ান্টাম বলবিদ্যা নিয়ে এই তিন বিজ্ঞানীর কাজ যুগান্তকারী বলে অ্যাখ্যায়িত করেছে নোবেল কমিটি৷ কিভাবে দুটি অণুকে আলাদা করার পরও একটি অণুর মতো আচরণ করে তা নিয়ে গবেষণা করেন তারা৷ এর ফলাফল কোয়ান্টাম তথ্য ভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহারের নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে বলে জানিয়েছে নোবেল কমিটি৷
ছবি: Ren Pengfei/Xinhua/IMAGO
অজ্ঞাত হোমিনিনের খোঁজে
এ বছর চিকিৎসায় নোবেল পেয়েছেন সুইডিশ বিজ্ঞানী সাভান্তে পাবো৷ তিনি এমন কাজ করে দেখিয়েছেন যা একসময় অসম্ভব বলে মনে হতো৷ কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া নিয়ান্ডারথালদের জিনোম রহস্য উন্মোচন করেছেন তিনি৷ সেইসঙ্গে হোমিনিনের অন্তর্ভুক্ত অজ্ঞাত নতুন প্রজাতি ডেনিসোভারও খোঁজ দিয়েছেন জার্মানির ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউটের এই বিজ্ঞানী৷ তার কাজ মানবজাতির বিবর্তনে নিয়ে গবেষণার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে৷
ছবি: Jens Schlueter/Getty Images
ক্লিক কেমিস্ট্রির কারিগর
দুইটি অণুকে দ্রুত ও কার্যকরভাবে যুক্ত করার এক কৌশলের নাম ‘ক্লিক কেমিস্ট্রি’৷ কাজটি আগে ছিল ভীষণ জটিল৷ ক্লিক কেমেস্ট্রির ভিত গড়ে সেটিই সহজ করেছেন মার্কিন গবেষক ব্যারি শার্পলেস ও ডেনমার্কের মর্টেন মেলডাল৷ যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিজ্ঞানী ক্যারোলিন বার্টোজি প্রক্রিয়াটি প্রাণীদেহে ব্যবহারের উপায় বের করে গবেষণায় নতুন মাত্রা যোগ করেন৷ ২০০০ সালের পর দ্বিতীয়বারে রসায়নে নোবেল পেলেন শার্পলেস৷
ছবি: TT NEWS AGENCY/REUTERS
সাহিত্যে নতুন দিগন্ত
সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন ফরাসী লেখিকা আনি এর্নো৷ নোবেল কমিটি তাদের ঘোষণায় বলেছে এর্নো তার লেখায় বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে জেন্ডার, ভাষা ও শ্রেণি বৈষম্যকে তুলে ধরেছেন৷ ১৯৪০ সালে আনি এর্নো ফ্রান্সের লিলবনে জন্ম নেন৷ নিরীক্ষাধর্মী স্মৃতিচারণমূলক লেখার মধ্য দিয়ে তিনি সাহিত্যের নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করেছেন বলে উল্লেখ করেছে নোবেল কমিটি৷
ছবি: JULIE SEBADELHA/AFP
মানবাধিকারের জন্য লড়াই
শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন জেলবন্দি বেলারুশিয়ান মানবাধিকার কর্মী আলিয়্যেস বিয়ালিয়াৎস্কি, রাশিয়ার মানবাধিকার সংস্থা মেমোরিয়াল এবং ইউক্রেনের সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ৷ ঘোষণায় বলা হয়েছে, পুরস্কারপ্রাপ্তরা সরকারের সমালোচনা ও নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় বছরের পর বছর কাজ করে চলেছেন৷ যুদ্ধাপরাধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ক্ষমতার অপব্যাবহারের দলিল তৈরিতে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন তারা৷
ছবি: Sergei Grits/AP Photo/picture alliance
যা পাবেন তারা
চলতি বছর প্রতিটি ক্যাটারগরিতে নোবেলের অর্থমূল্য এক কোটি সুইডিশ ক্রোনা৷ একাধিক বিজয়ীর মধ্যে এই টাকা ভাগ করে দেয়া হবে৷ প্রতি বিজয়ী ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের একটি মেডেল ও একটি দলিলও পাবেন৷ সুইডিশ ও নরওয়েজীয় শিল্পীদের তৈরি প্রতিটি দলিলই একেকটি অনন্য শিল্পকর্ম৷ ১০ ডিসেম্বর পুরস্কার তুলে দেয়া হবে তাদের হাতে৷ (ছবি: ২০০৭ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিনিধি তাসলিমা বেগম৷)