গোপনীয়তা ও রহস্যের বেড়াজালে ঘেরা দেশ উত্তর কোরিয়ার জীবনযাত্রার কিছু ঝলক দেখার সুযোগ পাচ্ছেন একদল বিদেশি সাংবাদিক৷ উপলক্ষ্য ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট দলের বিরল পার্টি সম্মেলন৷
বিজ্ঞাপন
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার চাপে প্রায় একঘরে হয়ে রয়েছে উত্তর কোরিয়া৷ এমনকি সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও প্রতিবেশী দেশ চীনের সঙ্গেও সম্পর্ক আগের মতো ইতিবাচক নেই৷ আন্তর্জাতিক রোষ উপেক্ষা করে পরমাণু অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্রে বিনিয়োগ করে চলেছে কিম জং উন প্রশাসন৷ এমনই প্রেক্ষাপটে প্রায় ৩৬ বছর পর শাসক দল ওয়ার্কার্স পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ এই সিদ্ধান্তের কারণ ও উদ্দেশ্য নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে৷
উল্লেখ্য, চীনের কোনো প্রতিনিধি এই সম্মেলনে উপস্থিত থাকছেন না৷ শোনা যাচ্ছে, চীনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি৷
তবে একটি বিষয়ে বেশিরভাগ পর্যবেক্ষকই একমত৷ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সুং এবং তাঁর পুত্র কিম জং ইল যে মাত্রার ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন, বংশের তৃতীয় প্রজন্মের নেতা কিম জং উন দেশে-বিদেশে এখনো তার প্রমাণ দিতে পারেন নি৷ এই কংগ্রেসে সেই কাজটি সারতে চাইছেন তিনি৷ তিন থেকে চার দিনের এই সম্মেলনে কিম জং উন তাঁর বোন কিম ইয়ো জং-এর হাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তুলে দিতে চলেছেন বলেও মনে করা হচ্ছে৷
এত বড় আকারের সম্মেলন আয়োজন করতে অসংখ্য মানুষকে জোর করে কাজ করানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷
আন্তর্জাতিক আঙিনায় পার্টি কংগ্রেস সম্পর্কে প্রচার নিশ্চিত করতে উত্তর কোরিয়ার সরকার বেশ কিছু বিদেশি সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷ সরাসরি সম্মেলন সম্পর্কে রিপোর্ট করতে না পারলেও তাঁরা ছবি ও ভিডিও-র মাধ্যমে সে দেশের বিরল খণ্ডচিত্র তুলে ধরেছেন৷ ডেইলি মেল সংবাদপত্রের প্রতিনিধি তাঁদের মধ্যে অন্যতম৷
সিবিএস-এর সাংবাদিক উত্তর কোরিয়ার সরকারি প্রচারণার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন৷
উত্তর কোরিয়ার কিছু বিরল ছবি
বিশ্বের অন্যতম বিচ্ছিন্ন দেশ উত্তর কোরিয়া৷ সে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বার্তা সংস্থা এপি-র একদল সাংবাদিককে শর্ত সাপেক্ষে ঘুরে বেড়ানোর অনুমতি দিয়েছিল সরকার৷ ছবিঘরে থাকছে তাদের তোলা কিছু বিরল ছবি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
নির্জন সড়ক
উত্তর কোরিয়ায় প্রায় ২৫ হাজার কিলোমিটার সড়কপথ রয়েছে৷ এর মধ্যে সাংবাদিকরা ২,১৫০ কিলোমিটারেরও বেশি সড়ক পাড়ি দিয়েছেন৷ ছবির এই রাস্তাটি উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য হোয়ানঘায়-এর৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
আগুন ধরিয়ে রান্না
রায়ানগাং রাজ্যের এই ব্যক্তিটি আলু ও মুরগি রান্নার জন্য আগুন ধরিয়েছেন৷ এপি-র সাংবাদিকদের ঘোরাঘুরির শর্ত ছিল তাঁরা কোনো ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিতে পারবেন না৷ আর ছবি প্রকাশের আগে দেখিয়ে নিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
পূজনীয় পাহাড়
ছবিটি ‘মাউন্ট পেকটু’ নামক পাহাড়ি এলাকার৷ উত্তর কোরীয়রা মনে করেন এই এলাকা থেকেই তাঁদের পূর্বপুরুষরা এসেছেন৷ এছাড়া উত্তর কোরীয় বিপ্লবের সঙ্গেও পাহাড়টির নাম জড়িয়ে আছে৷ সবমিলিয়ে সে দেশের নাগরিকদের কাছে মাউন্ট পেকটু নামেই একটি পূজনীয় স্থান৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
সাধারণ কৃষক
রায়ানগাং রাজ্যের এই কৃষক পরিবার গরু নিয়ে কোথাও যাচ্ছেন৷ সাংবাদিকরা রাজধানী পিয়ংইয়ং ছেড়ে বাইরে যাওয়ার পথে ছবিটি তুলেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
স্কুলের শিশুরা রাস্তা ঠিক করতে যাচ্ছে
হামগং রাজ্যের এই শিশুরা তাদের এলাকার রাস্তা ঠিক করতে বের হয়েছে৷ পিয়ংইয়ং এবং ওনসান শহরের মধ্যে থাকা ২০০ কিলোমিটার রাস্তা সে দেশের সবচেয়ে ভালো সড়ক৷ এর বাইরে রাস্তাগুলোর অবস্থা ভালো নয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
একসময় জমজমাট, এখন ধুলোময়
হামগং রাজ্যের খনিশহর কিলজু ও কিমচাক শহর দুটি একসময় বেশ জমজমাট ছিল৷ কিন্তু আর সে অবস্থা নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
দারিদ্রতা লুকিয়ে রাখা
বার্তা সংস্থা এপি-র সাংবাদিকদের সঙ্গে সবসময় সরকারি কর্মকর্তারা ছিলেন৷ তাই সে দেশের নাগরিকদের আসল অবস্থা পুরোপুরি দেখতে পারেননি তাঁরা৷ তবে যেটুকু দেখেছেন তাতে তাঁদের মনে হয়েছে, বেশিরভাগ মানুষেরই একটা ভালো বাসস্থানের ব্যবস্থা করার সামর্থ্য নেই৷ আর এই ছবির মতো রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া তো দূরের কথা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
ফুটবল খেলা
রায়ানগাং রাজ্যের হাইসান শহরের এই ছেলেরা নিজের মনে ফুটবল খেলছে৷ বিদেশি একজন তাদের যে ছবি তুলছে সেদিকে নজর দেয়ার যেন সময় নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
স্থানীয় খাবার, বিয়ার
একদল উত্তর কোরীয় তাদের স্থানীয় খাবার ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিয়ার দিয়ে পিকনিকে মেতে উঠেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
খাদ্য সরবরাহের সংগ্রাম
উত্তর কোরিয়ার চার-পঞ্চমাংশ জমিই চাষের অনুপযোগী৷ তাই দেশের মানুষের জন্য খাদ্যের যোগান দেয়া সরকারের জন্য একটু কষ্টকরই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Wong Maye-E
কোনো কথা নয়
সাংবাদিকরা শুধু এই রেললাইনের ছবিই তুলতে পেরেছেন৷ ছবিতে যাদের দেখা যাচ্ছে তাদের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি ছিল না৷ সফরের পুরোটা সময় এভাবেই কেটেছে সাংবাদিকদের৷ তারপরও সফর শেষে এক সরকারি কর্মকর্তা তাঁদের জানান, তাঁদের নাকি নজিরবিহীন প্রবেশাধিকার দেয়া হয়েছে!