স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে যে বিশ্বের প্রাচীনতম রেস্তোরাঁ চালু রয়েছে, অনেকেই সে খবর রাখেন না৷ ডয়চে ভেলের এক কর্মী সেই ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে অনেক তথ্য সংগ্রহ করেছেন এবং অভিনব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
মাদ্রিদের বিখ্যাত প্লাসা মাইয়র স্কোয়্যার প্রায় ৪০০ বছর পুরানো৷ বুলফাইট থেকে শুরু করে ইনকুইজিশন আমলে বিচার প্রক্রিয়ার সাক্ষী এই চত্বর৷ ডয়চে ভেলের সাংবাদিক মেগিন লেই সেখানে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘আমি মাদ্রিদের কেন্দ্রে প্লাসা মাইয়র চত্বরে দাঁড়িয়ে রয়েছি৷ এখানে কত কী যে চলছে! চারিদিকে রেস্তোরাঁ, ক্যাফে ও সুভেনিরের দোকান৷ অনেকেই জানেন না, যে ধনুকের মতোপথের পেছনে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন রেস্তোরাঁ রয়েছে৷সঙ্গে এলেই দেখতে পাবেন৷''
প্লাসা মাইয়র-কে ঘিরে পুরানো যুগের অনেক চিহ্ন রয়েছে৷ বেশ কয়েকটি করিডোর ও পাথর বসানো পথ কয়েক'শো বছর আগে তৈরি৷ কোনায় কোনায় গোপন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে৷ তার মধ্যে একটি বিশেষভাবে নজর কাড়ার মতো৷ মেগিন জানালেন, ‘‘এই হলো বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন রেস্তোরাঁ৷ নাম ‘সোব্রিনো দে বোতিন'৷ স্প্যানিশ ভাষায় এর অর্থ ‘বোতিন-এর ভাইপো'৷ বোতিন পরিবার এই রেস্তোরাঁর আসল মালিক ছিল৷ প্রথমে সরাইখানা ছিল৷ এক ফরাসি দম্পতি সেটি চালু করে৷ ভিতরে গিয়ে দেখা যাক৷''
পানির নীচে এসব কাজও করা যায়!
ডাইভিং বা সাঁতার অথবা স্নোরকেলিং কি আর আপনার মনে কোনো রোমাঞ্চ সৃষ্টি করে না? তাহলে পানির নীচে যেতে পারেন৷ রেস্তোরাঁ এবং জাদুঘরগুলো আপনার অপেক্ষায় আছে৷ দেখে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: Jason deCaires Taylor - creator & photographer
বিভিন্ন ড্রামারের ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গ
ড্যানিশ ব্যান্ড ‘বিটুইন মিউজিক’ এমন সব বাদ্যযন্ত্র আবিষ্কার করেছে, যেগুলো আপনি পানির নীচে বাজাতে পারেন৷ এগুলোর মধ্যে আছে হাইড্রাউলোফোন, পানির নীচে বাজে এমন অর্গান, ক্রিস্টালোফোন, গ্লাস হারমোনিকা এবং বিশেষ ড্রাম৷ তাঁদের অ্যালবাম ‘অ্যাকোয়াসনিক’ রেকর্ড করা হয়েছে উষ্ণ পানির বিভিন্ন পুলে, যেখানে তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি৷ তাঁ@রা অবশ্য গান গাওয়ার জন্য বিশেষ কণ্ঠস্বর ব্যবহার করে থাকেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/J, Nackstrand
কোনো সাধারণ বাগান নয়
আপনার অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছ কি প্রায়ই সেখানকার উদ্ভিদ খেয়ে ফেলে? তাহলে আপনি ‘অ্যাকোয়াস্কেপিং’ চেষ্টা করে দেখতে পারেন৷ এর মাধ্যমে আপনি পানির নীচে দারুণ সব দৃশ্য সৃষ্টি করতে পারেন৷ কেবল উদ্ভিদ ব্যবহার করেই নয়, পাথর, গাছের শেকড়, কাঠও ব্যবহার করতে পারেন আপনি৷
ছবি: DW
পানির তলদেশে খাওয়া
বেলজিয়ামের রেস্তোরাঁ ‘দ্য পার্ল’ ব্রাসেলসে অবস্থিত, যেটি বিশ্বের অন্যতম গভীর পুলে নির্মাণ করা হয়েছে৷ এর ভেতরে যেতে হলে অতিথিদের সাঁতারের পোশাক পরতে হবে এবং একটা ক্যাপসুলের ভেতর দিয়ে ৫ মিটার সাঁতরে যেতে হবে৷ আর মেন্যুতে কী থাকছে? অবশ্যই সামুদ্রিক খাবার! প্রতিটি খাবার ওয়াটারপ্রুফ কাঁচ দিয়ে প্যাক করা৷ প্রতি জনের খাবারের মূল্য মাত্র ১০০ ইউরো!
ছবি: DW
পানির তলদেশে শিল্পকর্ম
২০১৬ সালে ব্রিটিশ ভাস্কর জেসন ডি কেয়ার্স টেইলর তাঁর নতুন প্রকল্প চালু করেন ক্যানারিসের ল্যানসারোট উপকূলে৷ তাঁর ‘মুসিও আটলান্টিকো’ শিল্পকর্মটি পানির ১৪ মিটার গর্ভীরে তৈরি করেছেন তিনি, যেখানে ২০০টিরও বেশি ভাস্কর্য রয়েছে৷ পরিবেশবান্ধব পদার্থ ব্যবহার করেই ভাস্কর্যগুলো নির্মাণ করা হয়েছে৷ এর ফলে সমুদ্র তলদেশে প্রাণী বা উদ্ভিদের কোনো ক্ষতি হবে না৷
ছবি: Jason deCaires Taylor - creator & photographer
বুদবুদের মাধ্যমে বার্তা
বিয়ের বর-কনের অবশ্যই অতিথিদের একটা মজার তালিকা হতেই পারে: রঙিন মাছ, শৈবাল, স্টিং রে, এমনকি হাঙর পর্যন্ত৷ আপনি যদি ইউরোপে থাকেন, তাহলে কিন্তু এটা সম্ভব৷ এই মহাদেশজুড়ে এমন অনেক অ্যাকোয়ারিয়াম রয়েছে, যেখানে গিয়ে আপনি বিয়ের কাজটি সেরে ফেলতে পারেন৷ আর বিয়ের অঙ্গীকার, অর্থাৎ ‘আই ডু’ বলার সময় একটি বুদবুদের মাধ্যমে সেই বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার বার্তা পৌঁছে দিতে পারেন অন্য সবার কাছে৷
ছবি: MICHAEL KAPPELER/AFP/Getty Images
5 ছবি1 | 5
১৯৩০-এর দশকে গনসালেস পরিবার এই রেস্তারাঁর মালিক হয়৷ তৃতীয় প্রজন্মের আন্তোনিও গনসালেস এখন রেস্তোরাঁর কর্ণধার৷ পারিবারিক ঐতিহ্যই সাফল্যের চাবিকাঠি৷ রেস্তোরাঁর সাজসজ্জার মধ্যে মৌলিক স্টাইলের পাশাপাশি মালিকের ব্যক্তিগত রুচির ছাপও রয়েছে৷
১৯৮৬ সালে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস নির্দিষ্ট কারণেই এটিকেবিশ্বের সবচেয়েপ্রাচীন রেস্তোরাঁর স্বীকৃতি দেয়৷ আন্তোনিও গনসালেস বলেন, ‘‘শর্ত ছিল, একই নামে, একই জাগয়ায়, শুরু থেকে কোনো বিরতি ছাড়াই চালু থাকতে হবে৷ আমরা সেটা হাসিল করতে পেরেছি৷''
প্রতিদিন দুপুর ১টার সময় রেস্তোরাঁ খোলে৷ আন্তোনিও মনে করিয়ে দিলেন, যে রান্নাঘরের নীচে একটি খাবার ঘর এমনকি রেস্তোরাঁর থেকেও প্রাচীন৷ সেই ১৫৮০ সালেও তার অস্তিত্ব ছিল৷ সেখান থেকে একটি ঐতিহাসিক গুহাপথে ঢোকা যায়৷ ঘরটিতে আর্দ্রতা বেশি বলে শুধু ওয়াইনের বোতল রাখা আছে৷ আন্তোনিও মনে করেন, ‘‘সম্ভবত নবম শতাব্দীতে সেই আরব আমল থেকেই প্রতিরক্ষার স্বার্থে এই জায়গাটি কাজে লাগানো হয়েছে৷ আরব নির্মাণশিল্পের ঐতিহ্য অনুযায়ী, মাদ্রিদের পুরানো অংশে সব বাড়ির মধ্যে যোগাযোগ রাখা হতো৷''
উপরে উঠে মধ্যাহ্নভোজের পালা৷ ঐতিহ্যবাহী শুকরের রোস্ট অবশ্যই মেনুতে রয়েছে৷ দীর্ঘদিনের ওয়েটার খাবিয়ের সানচেস তা পরিবেশন করেন৷ ৪০ বছর ধরে কাজ করে তিনিও রেস্তোরাঁর অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছেন৷ তিনি বলেন, ৫ জন পর্যন্ত এই পদ ভাগ করে খেতে পারেন৷ মেগিন লেই মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘মার্কিন লেখক অ্যার্নেস্ট হেমিংওয়ে এই রেস্তোরাঁর নিয়মিত গ্রাহক ছিলেন৷ তিনি এতটাই গুণমুগ্ধ ছিলেন, যে ‘দ্য সান অলসো রাইজেস' ও ‘ডেথ ইন দ্য আফটারনুন' বইয়ে তিনি এর উল্লেখ করেছেন৷ আন্তোনিও এখানে হেমিংওয়ে-র সময় সম্পর্কে কী জানেন?''
থাইল্যান্ডের রাস্তার খাবার
থাইল্যান্ডের পথের ধারের খাবার তার স্বাদে বিশ্ববিখ্যাত৷ কিন্তু ব্যাংকক নগর প্রশাসন সদ্য এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাস্তায় আর কোনো খাবারের দোকান থাকবে না৷ তা হলে কি থাইল্যান্ডের এই সড়ক ঐতিহ্যের অবসান ঘটতে চলেছে?
থাই খাবারের মধ্যে বিশেষ প্রসিদ্ধি তার সামুদ্রিক খাবারের, যেমন, চিংড়ি মাছ৷ টাটকা চিংড়ি চোখের সামনে আগুনে ঝলসে দেওয়া হয়৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
মেছোহাটা
নানা ধরনের মাছও পাওয়া যায় রাস্তার ধারের দোকানে৷ পছন্দেরটি বেছে নিলেই হলো৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
খাদ্যবিলাসী
থাইল্যান্ডের নাগরিক জীবনযাত্রায় এই সুখাদ্য, তাই এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ৷ ওরা খেতে ভালোবাসেন৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
বৈচিত্র্যপ্রিয়
স্কুইড, অক্টোপাস থেকে ঝিনুক, গেঁড়ি-গুগলি, সব ধরনের খাবার জায়গা পায় থাই রন্ধনশালায়৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
এবার শেষ?
স্থানীয় বাসিন্দা এবং পর্যটক, সবার সমান পছন্দের এই রাস্তার খাবারের সংস্কৃতির কি এখানেই শেষ? প্রশাসন তো সেরকমই ঠিক করেছে!
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
14 ছবি1 | 14
আন্তোনিও স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘‘তিনি আমাদের খুবই পরিচিত ছিলেন৷ তিনি বোতিন রেস্তোরাঁয় খুবই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন৷ একবার তিনি নিজেই পায়েইয়া রান্না করার চেষ্টা করেছিলেন৷ তবে তার স্বাদ খুব ভালো হয়নি৷ আমার পিতামহ তাঁকে বলেছিলেন, অ্যার্নেস্টো তুমি লিখে যাও আর আমাকে পায়েইয়া রান্না করতে দাও৷''
ডয়চে ভেলের সাংবাদিক মেগিন লেই এই প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘আমাকে হেমিংওয়ে-র বইয়ের অংশ পড়ে শোনাতেই হচ্ছে, কারণ তিনি সেখানে ঠিক এই পদেরই উল্লেখ করেছেন৷ তিনি লিখেছেন, আমরা বোতিন রেস্তোরাঁয় উপর তলায় মধ্যাহ্নভোজ করলাম৷ এটি বিশ্বের সেরা রেস্তোরাঁগুলির অন্যতম৷ আমরা শুকরের রোস্ট খেলাম ও রিওখা ওয়াইন পান করলাম৷ এই প্রসঙ্গেই গেলাস তুলে ‘সালুদ' বলে বোতিন রেস্তোরাঁর আগামী কয়েক'শ বছরের উদ্দেশ্যে পান করা যাক৷''