1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাংবাদিকের ডায়েরি

অমৃতা পারভেজ২৬ আগস্ট ২০১৩

১৭ই আগস্ট৷ জার্মানি এসেছি ১৬ দিন পেরিয়েছে৷ এখনও বাতাসে দেশের মাটির গন্ধ খুঁজে বেড়াই৷ খুঁজে বেড়াই জলের স্পর্শ৷ ছোটবেলা থেকেই আমার ঘুরে বেড়ানোর দারুণ শখ৷

ছবি: Fotolia

ডয়চে ভেলেতে কাজের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সাথে এখানে যোগ দেয়ার এটাও একটা কারণ৷ কিন্তু নতুন দেশে এসে থিতু হতে তো কিছুটা সময় লাগে! ১লা আগস্ট বনে এসেই অফিসে যোগ দেয়া৷ এরপর কাজ শুরু৷ কিন্তু এখানে এসে চেনা বলতে বাংলা বিভাগের কর্মীরা৷ কিন্তু তাঁরাও তো ব্যস্ত৷ তবে ঐ দিন সুযোগ এসে গেল আমাদের বাংলা বিভাগের প্রধান দেবারতিদির এক বন্ধু বনে ঘুরতে আসায়৷

এমন একটি তরীতে করেই রাইনে ঘোরাঘুরি করা যায়ছবি: Imago/Werner Otto

দেবারতিদির বন্ধু তনুশ্রী, তাঁর স্বামী সুমনদা আর ছোট্ট পরী হিয়া৷ তাঁরা এখানে এসে পৌঁছানোর দিন, ১৪ তারিখেই একসাথে ঘুরতে গেলাম বেটোফেনের বাসায়৷ এরপর তাঁরা চলে গেলেন কোলোনে, আমি রয়ে গেলাম বনে৷

যাই হোক, অপেক্ষায় রইলাম ছুটির দিনের৷ শনিবার সুযোগ হলো৷ সকাল সাতটায় স্টাইনভেগের বাসা থেকে বাস ধরে সোজা হাউপ্টবানহফ, মানে বন শহরের কেন্দ্রীয় রেল স্টেশন৷ সেখানে ট্রেন ধরে সকাল সোয়া আটটায় পৌঁছে গেলাম কোলোন শহরে৷ সেখানেই সবাই একসাথে হয়ে রওনা হলাম রাইনের তীরে৷ উদ্দেশ্য জাহাজ ধরা৷ সকাল সাড়ে ন'টা৷ ‘মবি ডিক' জাহাজে উঠে পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেড়ে দিল সেটি৷ ঝটপট জাহাজের ছাদে উঠে টেবিল দখল করলাম আমরা ছয়জন৷ আমি, দেবারতিদি, গাব্রিয়েল, তনুশ্রীদি, সুমনদা আর ছোট্ট হিয়া৷ ভোরবেলা উঠে মেঘলা আকাশ দেখে মনটা যত খারাপ হয়েছিল, জাহাজে উঠে ততটাই মন ভালো হয়ে গেল ঝকঝকে আকাশ দেখে৷

ড্রাখেনবুর্গ প্রাসাদছবি: Fotolia

নদীর দুধারে প্রচুর সবুজ গাছপালা, সুনীল আকাশ আর ঝিরঝিরে বাতাসে প্রবাসে আসার দুঃখ অনেকটা ভুলিয়ে দিল৷ চার ঘণ্টার নদী ভ্রমণ৷ দু'পাশে অনেক পুরোনো গির্জা, চকোলেট তৈরির কারখানা, জাহাজ সারানোর কারখানা, ভাসমান রেস্তোঁরা – এমন অনেক কিছু চোখে পড়ল৷

এরমধ্যে চলল ছোটখাটো আড্ডা৷ বাঙালিরা একসাথে হবে, আর আড্ডা হবে না তাতো হতে পারে না৷ সেইসাথে দেবারতিদি আর সুমনদা একটা অভিনব শব্দ খেলায় মেতে উঠলেন৷ জাহাজ থেকে নামার মাত্র আধ ঘণ্টা আগে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শুরু হলো৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই তাড়াহুড়ো করে শেষ করা হলো সেটি৷

জাহাজ অবশেষে এসে ভিড়ল ক্যোনিগসভিন্টারে৷ সেখানে আমাদের জন্য আগেই অপেক্ষা করছিলেন সহকর্মী সঞ্জীবদা৷ তাঁকে সাথে নিয়ে আমাদের এবারের গন্তব্য ড্রাখেনফেলস৷

ড্রাখেনফেলস থেকে দেখা বন শহরছবি: picture-alliance/Rolf Kosecki

ক্যোনিগসভিন্টারের পুরোনো সব রাস্তা পেরিয়ে আমরা পৌঁছালাম পাহাড়ি রেল স্টেশনে৷ ইচ্ছে করলে হেঁটেও যাওয়া যায় সেখানে৷ কিন্তু হিয়া সাথে থাকায় আমরা ট্রেনকেই বেছে নিলাম৷ ট্রেনে উঠার পর সর্পিল সরু পথ বেয়ে উঠে গেলাম ১০৫৩ ফিট উচুঁতে৷ ট্রেন থেকে নেমে যখন রেলিং ধরে নীচে তাকালাম, অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম পুরো জার্মানি আমার পায়ের নীচে৷ বন শহর এবং তার আশেপাশের বহু বসতি এখান থেকে দেখা যায়৷ এমনকি, খুব মন দিয়ে দেখলে দেখা যায় কোলোন শহরের বিখ্যাত চার্চ ‘ক্যোলনার ডোম'-টিকেও৷ রোদের আলো পড়ে অভূতপূর্ব এক দৃশ্য সৃষ্টি হয়েছিল, যা দেখে অভিভূত আমি৷

ড্রাখেনফেলস নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১১৩৮ সালে, ১১৬৭ সালে এর নির্মাণ শেষ হয়৷ ক্যোনিগসভিন্টার শহরটিকে ঘিরে যে সাতটি পাহাড়ের বেষ্টনী, তার একটির ওপর নির্মিত এই দুর্গ৷ এরপর এর কিছু অংশ বিভিন্ন সময় ভেঙে পড়লেও এখনও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এটি৷

রাইনের ধারছবি: DW/@jgayarre

দুর্গে ওঠার আগে একটি ড্র্যাগন বানানো হয়েছে, যেটি এই দুর্গের ইতিহাস বর্ণনা করে৷ কতশত বছর আগে এখানে ড্র্যাগনদের রাজত্বের গল্প শোনায় এই ড্র্যাগন, যেটি ছোটদের কাছে ভীষণ পছন্দের৷

আমাদের ছোট্ট হিয়া প্রথমে এই ড্র্যাগনকে ভয় পেলেও একটা সময় ড্র্যাগনের গল্প নিয়েই পুরো সফরে মশগুল হয়েছিল৷ যাই হোক আমরা আরো উপরে উঠে দুর্গের ভগ্নস্তূপ দেখে যখন নীচে নামলাম, তখন অনেকেই ক্ষুধার্ত৷ তাই আইসক্রিম খাওয়া হলো৷ এবার নীচে নামার পালা৷ আবারো ছোট্ট ট্রেনে করে নীচে নামতে থাকলাম৷ অর্ধেক নেমে যাত্রা বিরতি৷ কেননা এবার গন্তব্যস্থল ড্রাখেনবুর্গ৷ এটি একটি প্রাসাদ৷

প্রাসাদের চেয়েও চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য আমার মন কেড়ে নিল৷ এত বড় বড় গাছ চতুর্দ্দিকে আর এত সবুজ – এক কথায় অসাধারণ৷ প্রাসাদের ভেতরে আর দশটা প্রাসাদের মতোই বড় বড় ঘর-আসবাব, দেয়ালে পেইন্টিং৷ তবে একটা চেয়ার আমাদের সবার মনোযোগ কেড়ে নিল৷ দিদিরা এর নাম দিল ‘চুম্বন চেয়ার'৷

অমৃতা পারভেজছবি: DW/D. Guha

ঘরগুলো দেখে যখন হতাশ, তখন হঠাৎই একটা সিঁড়ি খুঁজে পেলাম, সেটা দিয়ে উপরে উঠতে থাকলাম আমি আর তনুদি৷ একদম উপরে ওঠার পর যে অনুভূতি তা ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়৷

এরপর নীচে যখন নেমেছি, তখন দেখি বাকিরা ঘাসে লুটিয়ে পড়েছেন৷ সময় বিকেল চারটা৷ তাই দেরি না করে আবারো ট্রেনের জন্য দাঁড়ালাম৷ ট্রেন থেকে নেমে এবার গন্তব্য সঞ্জীবদার বাড়ি, যেটা ক্যোনিগসভিন্টারেই৷ তাঁর বাসা দেখে সবাই রীতিমত মুগ্ধ৷ পুরোনো বাড়িগুলো যেরকম হয় আর কি! সেখান থেকে চা খেয়ে ঠিক ছয়টায় আমরা বেড়িয়ে পড়লাম রেলস্টেশনের উদ্দেশ্যে, কেননা আমি আর সঞ্জীবদা ছাড়া বাকিরা কোলোনে ফিরে যাবেন৷ পৌনে সাতটায় তাঁদের ট্রেনে তুলে দিয়ে আমরা দু'জন গেলাম ট্রাম স্টপে, সেখান থেকে বনের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম সাড়ে সাতটায়৷ তখনও বিকেল, আলো অনেকটা উজ্জ্বল৷ বাসায় যখন পৌঁছালাম, তখন ঘড়িতে সাড়ে আটটা৷ কেবল সন্ধ্যা নামছে...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ