রাইফ হয়ত খুব শিগগিরই মুক্তি পাবে
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ এ বছরই প্রথম ‘দ্য বব্স’ প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে বাকস্বাধীনতা বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে ডয়চে ভেলে৷ আর সেই পুরস্কার পেয়েছেন সৌদি আরবের কারাবন্দি ব্লগার রাইফ বাদাউয়ি৷
সৌদি আরবের মানবাধিকারকর্মী ও ব্লগার রাইফ বাদাউয়ি ২০১২ সাল থেকে কারাবন্দি৷ ব্লগ লিখে দেশের প্রযুক্তি আইন লঙ্ঘন এবং ইসলাম ধর্মের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে৷ গত জুনে ‘দ্য ববস’ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়৷ বাদাউয়ি কারাবন্দি থাকায় তখন তাঁর পুরস্কারটি দেয়া যায়নি৷ তাই শুক্রবার বার্লিনে এসে স্ত্রী এনসাফ (বানানভেদে ইনসাফ) হায়দার ডয়চে ভেলের মহাপরিচালক পেটার লিমবুর্গের কাছ থেকে পুরস্কারটি গ্রহণ করে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করলেন৷
পুরস্কার নিতে এসে ডয়চে ভেলেকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এনসাফ হায়দার৷ দু’বছর ধরে তিনি তাঁর স্বামীকে মুক্ত করার জন্য লড়ছেন – এ প্রসঙ্গ তুলে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ‘‘কেমন আছেন?’’ এনসাফ বললেন, ‘‘খুব কষ্টে আছি আমি৷ আমাকে এবং আমার স্বামীকে চার বছর ধরে পরস্পরের কাছ থেকে দূরে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে৷ অথচ আমরা কোনো অন্যায় করিনি৷ আমার সন্তানেরা তাদের বাবাকে ছাড়া বড় হচ্ছে৷ এমন শাস্তি পাওয়ার মতো কিছু করেনি রাইফ৷ আমাদের অবস্থা খুবই শোচনীয়৷’’
দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে সন্তানরা তাদের বাবার সাহচর্য পাচ্ছে না৷ কেমন আছে তারা? ভারাক্রান্ত মন নিয়ে এনসাফ জানালেন, ‘‘ওরা ভালো নেই৷ ওরা চায় ওদের বাবা তাড়াতাড়ি ওদের মাঝে ফিরে আসুক৷ বাবাকে তারা খুব ‘মিস’ করছে৷ ওরা তাদের আনন্দ-দুঃখ সবই বাবার সঙ্গে ভাগ করতে চায়৷ ওরা বাবার সঙ্গে খেলতে চায়৷ আমার ছেলে দু’টো সবসময় দেখে ওর সহপাঠীদের বাবা-মা ফুটবল প্র্যাকটিসে নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ওর বেলায় তা হয় না৷’’
২০১৪ সালের নভেম্বরে আদালত ৩১ বছর বয়সি ব্লগার রাইফ বাদাউয়ির বিরুদ্ধে ১০ বছরের কারাভোগ এবং ১ হাজার দোররার শাস্তি ঘোষণা করে৷ সারা বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও শাস্তি প্রত্যাহার করা হয়নি৷
বাদাউয়ির বর্তমান অবস্থা জানাতে দিয়ে এনসাফ হায়দার বললেন, ‘‘শারীরিক বা মানসিক কোনোদিক থেকেই ভালো নেই রাইফ৷ ওর বিরুদ্ধে তো দশ বছরের জেল এবং এক হাজার দোররা বা বেত্রাঘাতের শাস্তি ঘোষণা করা হয়েছে৷ ৫০টি বেত মারা হয়ে গেছে৷ তাছাড়া ও তো জানে যে, ওর সন্তানরা ওকে ছাড়া বড় হচ্ছে৷ এটা মেনে নেয়া খুব কঠিন৷’’
বার্লিনে শুধু বাদাউয়ির হয়ে পুরস্কার নিতে আসেননি এনসাফ হায়দার৷ বাদাউয়ির নামে একটি ফাউন্ডেশনের উদ্বোধন ঘোষণাও করেছেন তিনি৷ সাক্ষাৎকারে এনসাফ জানান, ‘‘ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য হলো মুক্ত চিন্তা এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের সংস্কৃতিকে সমর্থন দেয়া৷ আমাদের দেশের মানুষ নিজেদের মতামত প্রকাশের জন্য উদগ্রীব৷ সে কারণেই স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলার সময় এসেছে বলে আমরা মনে করি৷ আমার স্বামীর বিরুদ্ধে শুধু মন খুলে কথা বলার জন্যই দশ বছরের কারাদণ্ড এবং এক হাজার বেত্রাঘাতের শাস্তি ঘোষণা করা হয়েছে৷’’
সারা বিশ্ব থেকে বাদাউয়ির মুক্তি দাবি করা হলেও সৌদি সরকার এখনো তাঁকে মুক্তি দেয়নি৷ এখনো মনের দিক থেকে শক্ত আছেন জানিয়ে এনসাফ বললেন, ‘‘আমি এখনো আশা ছাড়িনি৷ আমার কেন যেন মনে হয়, রাইফ হয়ত খুব তাড়াতাড়িই মুক্তি পাবে৷ ও শান্তিপ্রিয় মানুষ৷ অহিংস উপায়েই সে মত প্রকাশ করেছে৷ আমি আশা করি, সৌদি সরকার এবং বাদশাহ সালমান পুরো বিষয়টি আবার ভেবে দেখবেন এবং ক্ষমা করবেন৷’’