বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহণ করছেন ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট এব্রাহিম রাইসি৷ এমন এক সময়ে তিনি দেশটির ক্ষমতায় বসছেন যখন বড় ধরনের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে ইরান৷
বিজ্ঞাপন
এতদিন দেশের প্রধান বিচারকের দায়িত্ব পালন করা এব্রাহিম রাইসি ইরানের নতুন সরকার প্রধান৷ গত ১৮ জুলাই মাত্র ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়া নির্বাচনে জয়ী হন ৬০ বছর বয়সি রাইসি৷ ঘরে-বাইরে তার নীতি কেমন হবে সেটি বিশ্লেষণের জন্য বিচারক হিসেবে তার ভূমিকা খতিয়ে দেখা যেতে পারে৷ ১৯৭৯ সালের ইরানের বিপ্লবের সময় থেকেই দেশটির বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত তিনি৷ সেসময়ে বিপুল রাজনৈতিক বন্দি ও ১৯৮০ এর দশকে বামপন্থিদের মৃত্যুদণ্ডে তিনি সরাসরি ভূমিকা রেখেছেন৷ পরবর্তীতে সরকারবিরোধি আন্দোলনকারী, মানবাধিকার বা পরিবেশকর্মীদেরও কারাগারে পাঠানোতেও তার প্রত্যক্ষ অবদান রয়েছে ৷ এসব ভূমিকার কারণে ২০১৯ সালেই যুক্তরাষ্ট্র রাইসিকে তাদের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে৷
ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসির পরিচয়
ইরানের প্রেসিডেন্ট এব্রাহিম রাইসি৷ ছবিঘরে তার পরিচয় তুলে ধরা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Salemi
জন্ম
১৯৬০ সালে ইরানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মাশহাদে জন্মগ্রহণ করেন এব্রাহিম রাইসি৷ শিয়া মুসলমানদের জন্য শহরটি অন্যতম পবিত্র স্থান৷ সেখানেই ইমাম রেজার মাজার শরিফ অবস্থিত৷ ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ঐ মাজার পরিচালনা কমিটির প্রধান ছিলেন রাইসি (ডানে)৷
ছবি: MIZAN
ইসলাম বিশেষজ্ঞ
রাইসি একজন ‘হুজ্জাত আল-ইসলাম’ যার অর্থ ‘ইসলাম বিশেষজ্ঞ’৷ এটি ইরানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মানিত পদ৷
ছবি: raisi.org
পেশাজীবনের শুরু
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর মাত্র ২০ বছর বয়সে তেহরানের কাছের কারাজ শহরের প্রোসিকিউটর জেনারেল হিসেবে কাজ শুরু করেন রাইসি৷ এরপর তিনি বিচারক হন৷ ২০১৯ সালে তিনি ইরানের প্রধান বিচারপতি হন৷
ছবি: Atta Kenare/AFP/Getty Images
অভিযোগ
১৯৮৮ সালে ইরানের ‘ডেথ কমিশনের’ সদস্য ছিলেন রাইসি৷ ঐ সময় সরকারবিরোধী অন্তত পাঁচ হাজার জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন বলে ২০১৮ সালে প্রকাশিত অ্যামনেস্টির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়৷ এরপর ট্রাম্প প্রশাসন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাইসির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল৷
ছবি: Vahid Salemi/picture alliance/AP
ইরান চুক্তি সম্পর্কে মত
নির্বাচনি প্রচারণার সময় রাইসি বলেছিলেন, তিনি জয় পেলে ২০১৫ সালে পশ্চিমা ছয় শক্তির সঙ্গে স্বাক্ষরিত ইরান চুক্তি মেনে চলবেন- যদি ইরান, যুক্তরাষ্ট্র নয়, সেই চুক্তির শর্ত ঠিক করতে পারে৷ বারাক ওবামার আমলে সই হওয়া ঐ চুক্তি থেকে সরে এসেছিল ট্রাম্প প্রশাসন৷ এখন বাইডেন এসে সেই চুক্তি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে আলোচনা চলছে৷
ছবি: Ebrahim Noroozi/AP/picture alliance
ইসরায়েল, বাকস্বাধীনতা
পর্যবেক্ষকদের ধারনা, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এখনকার চেয়েও বেশি কঠোর হবেন রাইসি৷ বাকস্বাধীনতার ক্ষেত্রও আরো সংকুচিত হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের৷ কারণ রাইসির সময়ে ইরানে হোয়াটসঅ্যাপের প্রতিদ্বন্দ্বী সিগন্যালের ব্যবহার কয়েকমাস বন্ধ ছিল৷
ছবি: Atta Kenare/Getty Images/AFP
পরবর্তী সুপ্রিম নেতা?
রাইসির মতোই ইরানের বর্তমান সুপ্রিম নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনেইর (বামে) জন্ম মাশহাদ শহরে৷ নির্বাচনি প্রচারণা চলার সময় খামেনেই রাইসিকে ‘বিশ্বস্ত ও অভিজ্ঞ মানুষ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন৷ খামেনেইর বয়স আগামী মাসে ৮২ হবে৷ ফলে তার পরবর্তীতে রাইসি দেশটির সুপ্রিম নেতা হতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকে৷
ছবি: leader.ir
7 ছবি1 | 7
তেহরান ভিত্তিক মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভোটারদের বড় একটি অংশ রাইসিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চাননি৷ গত চার দশক ধরে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনে তার ভূমিকার কথা তাদের ভালোই জানা রয়েছে৷'' নার্গিসের মতে রাইসি ও তার সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটি হতে যাচ্ছে ইরানের মানবাধিকার পরিস্থিতি৷
অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ
যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ আরোপের পর থেকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ইরান৷ তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে অর্থনীতি ছয় শতাংশ সংকুচিত হয়েছে৷ মহামারি সেই পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তুলেছে৷ দেশটির বাজেট ঘাটতি ৫০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে৷ বার্ষিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫০ ভাগ, ৭০ ভাগ বেড়েছে খাবারের দাম৷
অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের জেরে ২০১৯ সালে দেশটির মানুষ রাস্তায় নেমে আসে৷ সেসময় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহিংস পদ্ধতিতে সেই আন্দোলন দমন করে৷ আগামী বছরগুলোতে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে জন অসন্তোষ আরো বাড়ার আশঙ্কা থাকছে৷ এমন পরিস্থিতি নতুন সরকার কিভাবে সামলাবে সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন অনেকের কাছে৷ দেশটির নাগরিক সমাজের উদ্বেগ আছে পরিবেশ ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে৷ কিন্তু রাইসির অতীত অবস্থান থেকে সেখানেও উন্নতির চেয়ে বরং অবনতির আশঙ্কাই দেখেন বিশেষজ্ঞরা৷
নার্গিস মোহাম্মদি বলেন, ‘‘আমি মনে করি না রাইসি আমাদের নাগরিক অধিকার মেনে নিবে কিংবা সংবিধানে দেয়া শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বা এনজিও গঠনের অধিকার দিবে৷ তার আশেপাশে যারা আছেন তারা মানবাধিকার বা নাগরিক সমাজের সঙ্গে সংলাপের বিষয়টিই বোঝেন না৷''
ইসরায়েলসহ মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী ১০ দেশ
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সামরিক শক্তির দিক থেকে কোন দশটি দেশ সবচেয়ে এগিয়ে? বিশ্বের ১৩৮টি দেশকে নিয়ে করা বিশ্ব র্যাংকিং অনুযায়ী তার একটা তালিকা থাকছে ছবিঘরে৷ দেখুন...
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Hassan
মরক্কো, বিশ্ব র্যাংকিং ৫৭
উত্তর আফ্রিকার মাগরেব অঞ্চলের দেশ মরক্কোর সক্রিয় সেনাসদস্য সংখ্যা তিন লাখ ১০ হাজার৷ সামরিক খাতে বাজেট এক হাজার কোটি ডলার৷ জিএফপি স্কোর ০. ৮৪০৮৷ ছবিতে মরক্কোর জাতীয় পতাকা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Sputnik/N. Seliverstova
সিরিয়া, বিশ্ব র্যাংকিং ৫৫
দীর্ঘ দিন ধরে যুদ্ধ চলছে সিরিয়ান আরব রিপাবলিকে৷ ফলে বাশার আল আসাদের অনুগত বাহিনীর শক্তিও কমেছে অনেক৷ তারপরও নয় নাম্বারে রাখতে হবে তাদের৷ দেশটির সক্রিয় সেনা সদস্য এক লাখ ৪২ হাজার জন৷ জিএফপি স্কোর ০. ৮২৪১৷ সামরিক খাতে বাজেট ১৮০ কোটি ডলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Str
ইরাক, বিশ্ব র্যাংকিং ৫০
যুদ্ধে বিধ্বস্ত হলেও, অর্থনীতি দুর্বল হয়ে গেলেও আট নাম্বারে রয়েছে ইরাক৷ সামরিক খাতে বার্ষিক ব্যয় ১৭৩ কোটি ডলার৷ সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী ইরাকের সক্রিয় সামরিক সদস্য সংখ্যা এক লাখ ৬৫ হাজার৷ জিএফপি স্কোর ০.৭৯১১৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J.al-Helo
সংযুক্ত আরব আমিরাত, বিশ্ব র্যাংকিং ৪৫
সামরিক শক্তির দিক থেকে আরব বিশ্বের সব দেশের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত থাকছে সাত নাম্বারে৷ তাদের জিএফপি স্কোর০.৭০৩৪, সক্রিয় সেনা সদস্য ৬৪ হাজার জন৷ সামরিক খাতে বার্ষিক ব্যয় ২২৭৫ কোটি ডলার৷
ছবি: Imago/imagebroker
আলজেরিয়া, বিশ্ব র্যাংকিং ২৮
উত্তর আফ্রিকার মাগরেব অঞ্চলের আরেক মুসলিম অধ্যুষিত (৯৯%) দেশ আলজেরিয়ার এক লাখ ৩০ হাজার সদস্য নিয়ে গড়া সামরিক বাহিনীর জন্য বাজেট ১৩০০ কোটি ডলার৷ জিএফপি স্কোর ০.৪৬৫৯৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Belghoul
ইসরায়েল, বিশ্ব র্যাংকিং ১৮
এক লাখ ৭০ হাজার সক্রিয় সেনাসদস্য নিয়ে ইসরায়েল আছে পঞ্চম স্থানে৷ সামরিক খাতে বাজেট ২০০০ কোটি ডলার৷ জিএফপি স্কোর ০.৩১১১৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Hollander
সৌদি আরব, র্যাংকিং ১৭
কিংডম অব সৌদি অ্যারাবিয়ার সক্রিয় সেনাসদস্য চার লাখ ৭৮ হাজারেরও বেশি৷ সামরিক খাতে বাজেট ৬৭৬০ কোটি ডলার৷ তবে বিশাল বাজেট হলেও ০.৩০৩৪ জিএফপি স্কোর নিয়ে সৌদি আরব রয়েছে চতুর্থ স্থানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Hassan
ইরান, বিশ্ব র্যাংকিং ১৪
ইরানের সক্রিয় সেনাসদস্য সংখ্যা পাঁচ লাখ ২৩ হাজার৷সামরিক খাতে বার্ষিক ব্যয় ১৯৬০ কোটি ডলার৷ইরানের জিএফপি স্কোর ০.২১৯১৷
ছবি: picture-alliance/R. Fouladi
তুরস্ক, বিশ্ব র্যাংকিং ১১
এর্দোয়ানের দেশ তুরস্কের সক্রিয় সেনাসদস্য সংখ্যা তিন লাখ ৫৫ হাজারেরও বেশি৷ সামরিক খাতে বছরে ব্যয় ১৯০০ কোটি ডলার৷ জিএফপি স্কোর ০. ২০৯৮৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
মিশর, বিশ্ব র্যাংকিং ৯
আরব বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে সামরিক শক্তির দিক থেকে সবার ওপরে রয়েছে আরব রিপাবলিক অব ইজিপ্ট৷ তাদের সামরিক খাতে বাজেট ১১২০ কোটি ডলার এবং সক্রিয় সেনাসদস্য সংখ্যা চার লাখ ৪০ হাজার৷ জিএফপি স্কোর ০.১৮৭২৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Desouki
10 ছবি1 | 10
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা না বিরোধ?
এব্রাহিম রাইসি নির্বাচনী প্রচারে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ অর্থনৈতিক উন্নতির বিষয়টিকে সামনে রাখেন৷ সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হলে সবার আগে যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ তুলতে উদ্যোগী হতে হবে রাইসিকে, এমনটাই মনে করেন ওয়াশিংটন ভিত্তিক থিংক ট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞ সিনা আজোদি৷ তার মতে, রাইসি সরকারকে একই সঙ্গে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দুই দিকেরই বড় ধরনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে৷
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কতটা উদ্যোগী হবেন রাইসি? সেটি নির্ভর করছে ইরানের পরমাণু চুক্তিতে ফেরার সম্ভাবনার উপরে৷ ২০১৮ সালে ডনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়, অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে ইরানের উপর৷ পরবর্তীতে ইরানও নিজেদের চুক্তি থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করে৷ বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর এই বিষয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে৷ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিও ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে ফেরার বিষয়ে ইরানের আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন৷ তবে সরকারের পট পরিবর্তনে সেটি কতটা এগুবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে৷
প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির অধীনে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ৷ ২০ বছর যুক্তরাষ্ট্রে কাটানো এবং জাতিসংঘে দায়িত্ব পালন করা জারিফই ইরানের পক্ষে পরমাণু আলোচনা এগিয়ে নিয়েছেন৷ সিনা আজাদি বলেন, ‘‘তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সম্পর্কে ভালো জানেন৷ জারিফের মতো একজন পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞ রাইসির সঙ্গে নেই৷ এটি একটি বড় সমস্যা হবে বলে আমি মনে করি৷''
পর্যবেক্ষকদের বিশ্বাস রাইসি সরকারের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন উপ প্রধান বিচারক আকি বাঘেরি কানি৷ তিনি বরং ইরানের পরমাণু চুক্তির কড়া সমালোচক হিসেবেই পরিচিত৷ যে কারণে কূটনৈতিক সংকটগুলো মোকাবিলায় সামনে খুব একটা ইতিবাচক ফলাফলের আশা করছেন না বিশেষজ্ঞরা৷
ইরানের ইসলামি বিপ্লব
৭০-এর দশকে শিয়া অধ্যুষিত ইরানে মুহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভির শাসনে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ইরানের জনগণ৷ সেই ক্ষোভের সুযোগ নিয়ে ধর্মীয় নেতা ইমাম খোমেনী ১৯৭৯ সালে অভ্যুত্থান ঘটান৷ ছবিতে তারই কিছু দৃশ্য...
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Salemi
ক্ষোভের বীজ
ইরানের শাসক রেজা শাহ পাহলভির একনায়কতন্ত্র ও অত্যাধিক আমেরিকাপ্রীতিকে বিপ্লবের বীজ বপনের কারণ বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক৷ ইরানের হাজার বছরের সংস্কৃতিতে পশ্চিমা, বিশেষত মার্কিন আগ্রাসনকে মেনে নিতে পারেনি দেশটির জনগণ৷ সে কারণেই খোমেনিকে সমর্থন দিয়েছেন হাজারো জনগণ৷
ছবি: picture-alliance/Everett Collection
রেজা শাহ পাহলভি
ইরানের শেষ সম্রাট রেজা শাহ পাহলভি৷ পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজতন্ত্রের বংশধর ছিলেন তিনি৷ তাঁর বংশ আড়াই হাজার বছরের পুরোনো পারস্য রাজতন্ত্রের ধারক ছিল৷ ১৯৫৩ সালে জনভোটে বিজয়ী প্রধানমন্ত্রী মোসাদ্দেককে হটিয়ে ব্রিটিশ ও মার্কিন মদতে সর্বময় ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করেন রেজা শাহ পাহলভি৷ ৬৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন।
ছবি: picturealliance/AP Photo
‘অ্যামেরিকার পাপেট’
অ্যামেরিকার পাপেট বা পুতুল বলে পরিচিত ছিলেন রেজা শাহ পাহলভি৷ তাঁর শাসনামলে ইরানের সংস্কৃতিগত সংকটের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকটও পরিলক্ষিত হচ্ছিল৷ বিশেষ করে তেল ব্যবসায় প্রায় একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে ছিল ব্রিটিশ ও অ্যামেরিকান কোম্পানি৷ সংস্কৃতিগত অবক্ষয়ে ধর্মপ্রাণ ইরানি মুসলমানদের মধ্যে রাজতন্ত্রবিরোধী ক্ষোভ দানা বাঁধে৷
ছবি: picture-alliance/akg-images/H. Vassal
আয়াতোল্লাহ খোমেনি
৪০ বছর আগে আয়াতোল্লাহ খোমেনি ফ্রান্সে তাঁর নির্বাসিত জীবন শেষে ইরানে ফিরে ইসলামি বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন৷ খোমেনি ছিলেন ইরানের ধর্মীয় নেতা৷ ১৯৭৮ সালে আয়াতোল্লাহ খোমেনি ইরাকে শিয়াদের পবিত্র নগরী নাজাফে কড়া পাহারায় নির্বাসিত ছিলেন৷ পরে ইরাক থেকে তাঁকে বিতাড়িত করা হয়৷ তখন তিনি ফ্রান্সে আশ্রয় নেন এবং পরে ইরানের বিপ্লবে ভূমিকা রাখেন৷
ছবি: Imago/Zuma/Keystone
ইরানের ব্ল্যাক ফ্রাইডে
১৯৭৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার তেহরানে শাহবিরোধী এক বিশাল জনসমাবেশ হয়৷ সেদিন শাহের বাহিনী নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে কয়েকশ’ বিক্ষোভকারীকে৷ সেই সমাবেশে ৬০-৭০ লাখ জনসমাগম হয়৷ ইরানের বিপ্লবের পর সেই দিনটিকে ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ নাম দেওয়া হয়৷
ছবি: akairan.com
শাহের পলায়ন
১৯৭৯ সালের ১৬ জানুয়ারি পালিয়ে যান শাহ৷ এর আগে জনবিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে ৪ জানুয়ারি তিনি প্রধানমন্ত্রী শাপর বখতিয়ারকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ঘোষণা করেন৷ শাহ পালিয়ে পরিবারসহ তিনি মিশরে চলে যান৷
ছবি: akairan.com
দেশে ফিরলেন খোমেনি
১৯৭৯ সালের জানুয়ারি মাসেই নির্বাসিত খোমেনিকে দেশে ফেরার অনুমতি দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান শাপর বখতিয়ার৷ ১৫ বছর নির্বাসনে কাটিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরেন খোমেনি৷ সেই সময় বিমানবন্দরে লাখো লোক তাঁকে স্বাগত জানান৷
ছবি: akairan.com
বিপ্লব দিবস
১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারিতে ইমাম খোমেনির নেতৃত্বে শাহের ক্ষমতাসীন প্রশাসনকে হটানো হয়৷ সেই সময় ইসলামী বিপ্লবের প্রধান নেতা হিসেবে প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন খোমেনি৷ এরপর থেকেই ১১ ফেব্রুয়ারিকে ইরানের বিপ্লব দিবস হিসেবে পালন করা হয়৷
ছবি: atraknews.com
ইসলামিক প্রজাতন্ত্র
ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের মাত্র দুই মাস পর ৩০ মার্চ দেশটিতে এক ঐতিহাসিক গণভোট অনুষ্ঠিত হয়৷ ওই গণভোটের মাধ্যমে ইরানের জনগণ ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে রায় দেন৷ সেই সময় ইসলামী প্রজাতন্ত্রের পক্ষে ৯৮ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পড়েছিল৷ এরপর ১৯৭৯ সালের ১ এপ্রিল ইরানকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Salemi
9 ছবি1 | 9
জার্মানি যেভাবে দেখছে
২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলেও জার্মানিসহ বাকি রাষ্ট্রগুলো তা প্রত্যাহার করেনি ৷ পরমাণু চুক্তি বিষয়ক আলোচনাই গত আট বছরে জার্মানি-ইরান সম্পর্কের কেন্দ্রে ছিল বলে মনে করেন, জার্মান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস এর অ্যাসোসিয়েট ফেলো কর্নেলিউস আডেভার৷ তবে তার মতে দেশটির অভ্যন্তরীন রাজনীতি, মানবাধিকার ও আঞ্চলিক ইস্যুগুলোও আলোচনায় থাকা উচিত৷ তিনি বলেন, ‘‘এই ইস্যুগুলোতে জার্মানি তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়নি৷''
সাবেক প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ইরানের তুলনামূলক উদারপন্থি নেতা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন৷ জার্মান-ইরানিয়ান রাজনীতি বিশেষজ্ঞ আলি ফাতোল্লাহ নেজাদ মনে করেন সেকারণে জার্মানি ও ইউরোপ তার সরকারের আমলে ইরানের অভ্যন্তরীন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইস্যুগুলোতে চুপ ছিল৷ কিন্তু নতুন সরকারের ক্ষেত্রে এই অবস্থান বজায় রাখা তাদের জন্য কঠিন হবে৷
রাইসির অতীত ইতিহাস টেনে জার্মানির সবুজ দলের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক মুখপাত্র অমিড নুরিপুর বলেন, ‘‘একজন বিচারক যার হাতে রক্তের দাগ রয়েছে তিনি যদি দেশটির প্রেসিডেন্ট হন, তাহলে আমাদের উচিত হবে সবার আগে মানবাধিকারের ইস্যুকে সামনে রাখা৷'' তার মতে, রুহানি সরকারের আমলেও আন্দোলনকারীদের উপর সরকারের নিষ্ঠুর আচরণের কোন প্রতিবাদ করেনি জার্মানি৷ এই নীরবতার অবশ্যই অবসান হতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি৷
অন্যদিকে ফ্রি ডেমোক্রেটিক পার্টির (এফডিপি) পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র বিজান দিয়ার সারাই মনে করেন, ইরান বিষয়ক একটি নতুন কৌশলপত্র থাকা উচিত জার্মানির৷ সেটি শুধু পরমাণু চুক্তি রক্ষার জন্য চলমান আলোচনা ভিত্তিক যেন না হয় সেই পরামর্শ তার৷