মিয়ানমারের রাখাইনে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হামলায় নয় পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির তথ্য মন্ত্রণালয়৷
বিজ্ঞাপন
মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ৬০ আরাকান জঙ্গি শনিবার রাতে একটি পুলিশ পোস্টে হামলা চালায়৷ স্কুলের মেট্রিক পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তরপত্রের নিরাপত্তায় পুলিশ সদস্যরা সেখানে নিয়োজিত ছিলেন৷
স্থানীয় পুলিশ কার্যালয়ের ফাঁস হওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ঘটনায় নয় পুলিশ সদস্য নিহত ও দুইজন আহত হওয়ার পাশাপাশি ১২টি অস্ত্রও ছিনিয়ে নিয়েছে হামলাকারীরা, যার মধ্যে রয়েছে দশটি বিএ-৬৩ রাইফেল৷ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, হালকা ও ভারী অস্ত্র নিয়ে তিন দিক থেকে তারা পুলিশের উপর শক্তিশালী হামলা চালায়৷
গত বছরের জানুয়ারির ৪ তারিখে এক হামলায় ১৩ পুলিশ সদস্য নিহত ও নয়জন আহত হওয়ার জের ধরে তাদেরকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে ঘোষণা করে দেশটির সরকার৷ গত আট মার্চ আরেক সংঘর্ষে সরকারি বাহিনীর ১০ সদস্যকে হত্যার দাবি করেছে সংগঠনটি, যদিও এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷
রোহিঙ্গাদের খবরের কারণে কারাগারে, অতঃপর মুক্তি
মিয়ানমারের রাখাইনে ১০ মুসলিম রোহিঙ্গার হত্যা নিয়ে প্রতিবেদনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে আটক হয়েছিলেন ওয়া লন ও কিঁয় সোয়ে৷ ৫১১ দিন বন্দি থাকার পর প্রেসিডেন্টের ক্ষমা পেয়ে মঙ্গলবার তাঁরা ছাড়া পেয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP/T. Zaw
হাসিমুখ
৫১১ দিন পর কারাগারের বাইরে মুক্ত মানুষ হিসেবে হাঁটা৷ রোহিঙ্গা হত্যা নিয়ে প্রতিবেদন করতে গিয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে আটক হয়েছিলেন তাঁরা৷ এরপর তাঁদের সাত বছরের জেলও হয়েছিল৷ অবশেষে প্রেসিডেন্টের সাধারণ ক্ষমতার আওতায় তাঁরা মঙ্গলবার মুক্তি পান৷
ছবি: picture-alliance/AP/T. Zaw
যে অভিযোগ আনা হয়েছিল
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ১০ মুসলিম রোহিঙ্গা পুরুষ ও ছেলেকে হত্যা করা হয়৷ সেই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে হিয়ে ঐ বছরের ডিসেম্বরে রয়টার্সের হয়ে কাজ করা মিয়ানমারের ঐ সাংবাদিককে আটক করা হয়েছিল৷ তাঁদের বিরুদ্ধে ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’ ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছিল৷
ছবি: Reuters/A. Wang
সমালোচনা
দুই সাংবাদিক আটকের ঘটনায় নোবেলজয়ী অং সান সুচির আমলের মিয়ানমারে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছিল৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন দেশ সাংবাদিকদের মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিল৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সেই সময় বলেছিল, রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূলের ঘটনা যাতে কেউ জানতে না পারে সে জন্য এই সাংবাদিকদের আটক করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Wang
নির্ভীক সাংবাদিক
পুলিশি প্রহরাতেও সাংবাদিক ওয়া লনের মুখে হাসি ছিল অবিরাম৷ মিয়ানমারের তথ্য মন্ত্রণালয় সেই সময় জানিয়েছিল, বিদেশি গণমাধ্যমে প্রচারের জন্য তাঁরা অবৈধভাবে তথ্য সংগ্রহ করছিলেন৷
ছবি: Reuters/A. Wang
সহচর
ছবিতে দুই সাংবাদিকের একজন কিঁয় সোয়েকে দেখতে পাচ্ছেন৷ গতবছরের এপ্রিলে আদালতে শুনানির পর পুলিশি ভ্যানে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর সময় এই ছবিটি তোলা৷
ছবি: Reuters/A. Wang
পাশে ছিলেন স্ত্রী
গতবছরের ফেব্রুয়ারিতে তোলা এই ছবিতে স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে কিঁয় সোয়েকে দেখতে পাচ্ছেন৷ আদালতে শুনানির পর চোখের জল ফেলেছিলেন সোয়ের স্ত্রী৷
ছবি: Reuters/A. Wang
6 ছবি1 | 6
দেশটির সরকারি বাহিনীর সাথে আরাকান আর্মির সংঘাত প্রতি বছরই বাড়ছে৷ গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত মিয়ানমারের সামরিক দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫ সালে ১৫ বার, ২০১৬ সালে ২৬ বার, ২০১৭ সালে ৫৬ বার ও ২০১৮ সালে মোট ৬১ বার এই বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷
২০০৯ প্রতিষ্ঠিত আরাকান আর্মির কয়েক হাজার সশস্ত্র সদস্য রয়েছে৷ কচিনসহ অন্য সম্প্রদায় অধ্যুষিত বিভিন্ন রাজ্যে তারা সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছে৷ বৌদ্ধ অধ্যুষিত রাখাইনে আরাকান আর্মি দীর্ঘদিন ধরেই স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানিয়ে আসছে৷ এই অঞ্চলেই দেশটির সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত হামলার শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন সাত লাখ রোহিঙ্গা৷ যার শুরুটাও হয়েছিল পুলিশ বাহিনীর উপর রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী গ্রুপ আরসার এক হামলার ঘটনার পর৷