মিয়ানমারের রাখাইনে বৃহস্পতিবার সকালে সেনাবাহিনীর গুলিতে ছয়জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জ মিন তান৷ এছাড়া আহত হয়েছেন আটজন৷
বিজ্ঞাপন
রাখাইনেরউত্তরাঞ্চলের ব়াথেডাউং শহরের কিয়াউক তান গ্রামে এই ঘটনা ঘটে৷ রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী বৌদ্ধদের আরো স্বাধীনতার দাবিতে ‘আরাকান আর্মি' নামে একটি সংগঠন ঐ এলাকায় সক্রিয়৷ তাদের দমন করতে সম্প্রতি ঐ এলাকায় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে৷
স্থানীয় ও সামরিক সূত্রে এএফপি জানিয়েছে, সেনাসদস্যরা মঙ্গলবার কিয়াউক তান গ্রামে গিয়ে ১৫ থেকে ৫০ বছর বয়সি পুরুষদের ধরে নিয়ে একটি স্কুলে বন্দি করে রেখেছিল৷
তদন্তের স্বার্থে তাঁদের সেখানে রাখা হয় বলে জানিয়েছেন সেনা মুখপাত্র মিন তান৷ কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে একদল ব্যক্তি সেনাদের অস্ত্র লুট করতে চাইলে প্রথমে তাঁদের মৌখিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়, পরে সতর্ক করতে গুলি চালানো হয় বলে দাবি করেন তিনি৷ কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় তাঁদের ওপর গুলি চালানো হয় বলে জানিয়েছেন সেনা মুখপাত্র মিন তান৷
এদিকে স্থানীয় সাংসদ তিন মাউং উইন ঐ গ্রামে যেতে চাইলে সেনাবাহিনী তাঁকে সেখানে যেতে বাধা দেয় বলে জানিয়েছেন তিনি৷
তবে সেনা অভিযানের কারণে উত্তর রাখাইন থেকে পাওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)
১২ ডিসেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...
রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংসতার চিত্র
মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে৷ রয়টার্সের আলোকচিত্রীর ছবিতে সেইসব নৃশংসতার ছবি ফুটে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
একবছরের শিশু
মনকে নাড়া দেয়া ব্যান্ডেজে মোড়ানো তুলতুলে ছোট্ট এই দু’টি পা শহিদের৷ বয়স মাত্র এক বছর৷ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে দাদি তাহেরা যখন পালাচ্ছিলেন, তখন তাঁর কোল থেকে পড়ে যায় ছোট্ট শহিদ৷ ছবিটি কক্সবাজারে রেডক্রসের এক হাসপাতালে ২৮ অক্টোবর তোলা৷
ছবি: Reuters/H. McKay
কালাবারো, ৫০
রাখাইনের মংদুতে তাঁদের গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয় সেনা সদস্যরা৷ এতে স্বামী, মেয়ে ও এক ছেলেকে হারান কালাবারো৷ তাঁর ডান পায়ে আঘাত করা হয়৷ যেখানে পড়ে গিয়েছিলেন সেখানেই কয়েক ঘণ্টা মারা যাওয়ার ভান করে ছিলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
সেতারা বেগম, ১২
নয় ভাই-বোনের মধ্যে একজন সে৷ সেনারা যখন তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়, তখন বাকি আটজন বের হয়ে যেতে পারলেও সে আগুনের মধ্যে আটকা পড়ে গিয়েছিল৷ পরে তাকে উদ্ধার করা হয়৷ তবে পা পুড়ে যায়৷ এই অবস্থায় বাংলাদেশে পৌঁছেছে সে৷ বাংলাদেশেই তার চিকিৎসা করা হয়৷ এখন তার দুই পা থাকলেও নেই কোনো আঙুল৷
ছবি: Reuters/J. Silva
নূর কামাল, ১৭
নিজের ঘরে লুকিয়ে ছিল সে৷ সেখান থেকে সৈন্যরা তাকে খুঁজে বের করে প্রথমে রাইফেলের বাট, পরে ছুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করে৷ ছবিতে সেটিই দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
আনোয়ারা বেগম, ৩৬
ঘরে আগুনের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুম থেকে উঠে পালাতে গিয়েছিলেন তিনি৷ তবে এর মধ্যেই পুড়ে যাওয়া ছাদ তাঁর মাথায় ভেঙে পড়ে৷ ফলে শরীরে থাকা নাইলনের কাপড় গলে হাত পুড়িয়ে দেয়৷ ‘‘আমি মনে করেছিলাম, মরে যাব৷ তবে আমার সন্তানদের জন্য বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি,’’ রয়টার্সকে বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মমতাজ বেগম, ৩০
সেনারা তাঁর বাড়িতে ঢুকে মূল্যবান জিনিসপত্র দিতে বলেছিল৷ তখন মমতাজ তাঁদের দারিদ্র্যের কথা জানালে সৈন্যরা বলেছিল, ‘‘যদি তোমার কোনো অর্থ না থাকে, তাহলে আমরা তোমাকে হত্যা করব৷’’ এই বলে, সৈন্যরা তাঁকে ঘরে বন্দি করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল৷ কোনোরকমে সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে বের হয়ে দেখেন তাঁর তিন ছেলে মৃত, আর মেয়েকে প্রহার করা হয়েছে, তার রক্ত ঝরছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
ইমাম হোসেন, ৪২
মাদ্রাসায় পড়িয়ে ফেরার পথে তিন ব্যক্তি ছুরি নিয়ে তাঁর উপর হামলা করেছিল৷ পরের দিনই তিনি তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে গ্রামের অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন৷ এরপর তিনিও কক্সবাজারে পৌঁছান৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মোহাম্মদ জাবাইর, ২১
গ্রামের বাড়িতে এক বিস্ফোরণে তার শরীরের এই অবস্থা৷ ‘‘আমি কয়েক সপ্তাহ অন্ধ ছিলাম৷ কক্সবাজারের এক সরকারি হাসপাতালে ২৩ দিন চিকিৎসাধীন ছিলাম,’’ বলেছে সে৷