এক সময় নিজের এমনই নাম দিয়েছিলেন মিয়ানমারের বৌদ্ধ ভিক্ষু আশিন ভিরাডু৷ মুসলিমবিরোধী বক্তব্য দেয়ার জন্য পরিচিত তিনি৷ বুধবার তিনি দেশটির মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্য সফরে গেছেন৷
বিজ্ঞাপন
রাজ্যের এক পুলিশ কর্মকর্তা নিয়ান ভিন এ সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন৷ ‘‘এখানে তিনি দুই-তিনদিন থাকবেন৷ অমুসলিমরা বাস করেন এমন গ্রামগুলো পরিদর্শনে যাবেন তিনি,’’ বলেন নিয়ান ভিন৷ ভিরাডুকে পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
মিয়ানমারের সাবেক সামরিক শাসনামলে একবার ভিরাডুকে কারাবন্দি করা হয়েছিল৷ ২০১১ সালে দেশটিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর আলোচনায় আসেন তিনি৷ সেই সময় দীর্ঘদিন ধরে চাপা পড়ে থাকা ধর্মীয় উত্তেজনা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে৷ ২০১২ সালে রোহিঙ্গা ও রাখাইনের বৌদ্ধদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়৷ এতে এক লক্ষ ৪০ হাজারের বেশি মানুষ গৃহহীণ হয়ে পড়েছিলেন, যার বেশিরভাগই ছিলেন মুসলমান৷
বাংলাদেশে জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশুরা
মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন৷ অনেক গর্ভবতী মা বাংলাদেশে এসে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
স্বামীর খবর জানেন না তিনি
রামিদা বেগমের স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী৷ এরপর তাঁদের বাড়িঘরও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ তার সপ্তাহখানেক পর পালিয়ে বাংলাদেশে চলে যান তিনি৷ ফলে স্বামীর খবর এখন জানেন না রামিদা৷ ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে যখন ছবিটি তোলা হয় তখন তাঁর কন্যার বয়স ছিল ১০ দিন৷ তখনও মেয়ের কোনো নাম দেয়া হয়নি রামিদার৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
এই শিশুর বাবাকে হত্যা করা হয়েছে
স্বামীকে মিয়ানমারের সেনারা হত্যা করায় বাবামা-র সঙ্গে বাংলাদেশে চলে যান ১৮ বছরের নূর কায়েস৷ কোলে তাঁর ২৬ দিনের সন্তান, যার এখনও কোনো নাম দেননি তিনি৷ ছবিটি ৯ ফেব্রুয়ারি তোলা৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
সাত দিনের মেয়ে
ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখে যখন ছবিটি তোলা হয় তখন আসমত আরার মেয়ের বয়স ছিল মাত্র সাত দিন৷ মাসখানেক আগে তিনি প্রতিবেশীদের সঙ্গে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে যান৷ বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার আগে তাঁর শ্বশুরকেও হত্যা করা হয়৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
সন্তানদের বাঁচাতে বাংলাদেশে
একমাস বয়সি ছেলে সন্তানের সঙ্গে রাজুমা বেগম৷ যখন বাংলাদেশে আসছিলেন তখন গর্ভবতী ছিলেন তিনি৷ সঙ্গে ১১ মাসের আরেকটি সন্তানও ছিল৷ ‘‘আমি বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি কারণ মিয়ানমারের ভয়ের মধ্যে ছিলাম৷ আমার সন্তানদের বাঁচাতে চেয়েছি আমি’’, রয়টার্সকে বলেন বেগম৷ ছবিটি ১২ ফেব্রুয়ারি তোলা৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
দেশে ফিরতে আগ্রহী সানোয়ারা
৯ ফেব্রুয়ারি তোলা এই ছবিতে ২৫ দিনের কন্যা কোলে ২০ বছর বয়সি মা সানোয়ারা বেগমকে দেখা যাচ্ছে৷ প্রায় আড়াই মাস আগে স্বামীর সঙ্গে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন তিনি৷ এখন আছেন কক্সবাজারের কুতুপালাং আশ্রয়কেন্দ্রে৷ মিয়ানমারের পরিস্থিতি ভাল হলে নিজ ঘরে আবারও ফিরে যেতে চান সানোয়ারা৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে
ফেব্রুয়ারির ৯ তারিখে তোলা এই ছবিতে মারিজানকে তাঁর ২৫ দিন বয়সি কন্যা সন্তান সহ দেখা যাচ্ছে৷ পাশে তাঁর ছেলে৷ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ঘর পুড়িয়ে দেয়ায় মাসখানেক আগে তাঁরা নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছান৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
কন্যার জ্বর
দু’মাস বয়সি মেয়ের জ্বর কিন্তু মা আরাফা বেগম জানেন না ক্লিনিক কোথায়৷ আড়াই মাস আগে স্বামী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে আসেনি তিনি৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
বাচ্চা পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে না
মিনারা বেগমের এক মাস বয়সি সন্তান পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে না, কারণ তার মা পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে পান না৷ ফলে স্বাস্থ্যকর না হলেও স্থানীয় বাজার থেকে গুঁড়া দুধ কিনে খাওয়াতে হচ্ছে তাকে৷ ছবিটি ১০ ফেব্রুয়ারি তোলা৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
এলোপাথাড়ি গুলি
১৬ দিনের সন্তান কোলে মা আমিনা৷ ‘‘মাস দেড়েক আগে মিয়ামারের সেনাবাহিনী আমাদের গ্রামে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে৷ আমি কোনোরকমে প্রতিবেশীদের সঙ্গে পালিয়ে বেঁচেছি৷ তারা আমার চাচা আর ছোটভাইকে ধরে নিয়ে গেছে৷ তারা বেঁচে আছে কিনা জানিনা’’, ৮ ফেব্রুয়ারি রয়টার্সকে কথাগুলো বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
বয়স মাত্র একদিন
ফাতেমার সন্তানের বয়স মাত্র একদিন৷ ছবিটি ফেব্রুয়ারির ৯ তারিখে তোলা৷ মিয়ানমারে তাদের ঘর পুড়িয়ে দেয়ায় মাস দুয়েক আগে স্বামীর সঙ্গে বাংলাদেশে চলে আসেন৷ এখন তাঁর স্বামী দিনমজুর হিসেবে কাজ করছেন৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
10 ছবি1 | 10
রাখাইন ছাড়িয়ে মিয়ানমারের অন্যান্য অঞ্চল মুসলমানদের বিরুদ্ধে সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে ভিরাডু বৌদ্ধদের মুসলিম মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বয়কট করা ও মুসলমানদের বিয়ে না করার আহ্বান জানান৷
২০১৩ সালে ‘টাইম’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে ‘বৌদ্ধ সন্ত্রাসের মুখ’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল তাকে৷
মিয়ানমার সরকার মার্চ মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ভ্রমণে ভিরাডুর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে৷ এর প্রতিবাদে টেপ দিয়ে নিজের মুখ ঢাকা একটি ছবি অনলাইনে প্রকাশ করেন তিনি৷
এদিকে, রাখাইন রাজ্যে ভিরাডুর আগমন উপলক্ষ্যে সেখানকার মুসলমান সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ সম্প্রদায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বলেন, ‘‘আমরা তাঁর সফর নিয়ে উদ্বিগ্ন, কারণ, তিনি সবসময় মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়ে থাকেন৷’’
জাতিসংঘের তদন্ত প্রত্যাখ্যান করলেন সু চি
রাখাইন রাজ্যে মুসলমানদের উপর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তে সেখানে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল৷ কিন্তু মঙ্গলবার এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণা না করার কথা জানান শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চি৷ ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিনির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন সু চি৷ ‘‘আমরা জাতিসংঘের এই রেজ্যুলেশনের সঙ্গে থাকছি না, কারণ, আমরা মনে করি এই রেজ্যুলেশন প্রকৃত অর্থে রাখাইনে যা ঘটছে তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়৷’’ তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যের জন্য আসলেই প্রয়োজনীয় এমন পরামর্শ তাঁর দেশ ‘খুশি মনে গ্রহণ করবে’৷ কিন্তু ‘‘এসব পরামর্শ রাখাইনে বাস করা দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে আরও বিভেদ তৈরি করবে৷ তাই আমরা এই রেজ্যুলেশন গ্রহণ করব না৷ কারণ, এটি সমস্যার সমাধানে সহায়তা করবে না,’’ বলেন নোবেলজয়ী সু চি৷
সংবাদ সম্মেলনে সু চির পাশে থাকা ইইউর পররাষ্ট্র বিষয়ক কর্মকর্তা ফেডেরিকা মোগেরিনি জাতিসংঘের তদন্ত মেনে নিতে সু চি’র প্রতি আহ্বান জানান৷
জেডএইচ/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...