আগামী ১২ থেকে ১৪ মাসের মধ্যে সেখানে একটি পার্ক গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন৷ নগরবাসী তাঁদের রাগসহ বিভিন্ন চাপ কমাতে সেখানে যেতে পারবেন বলে জানিয়েছেন মেয়র সাঈদ খোকন৷
বিজ্ঞাপন
গত সপ্তাহান্তে ‘গোস্বা নিবারণী পার্ক' তৈরির কাজ উদ্বোধন করেন তিনি৷ মেয়র বলেন, একসময় গ্রামে নদীর ধারে একটি জায়গা থাকত, যেখানে রাগ কমানোর জন্য গ্রামবাসীরা যেতেন৷ ‘‘সেই ঐতিহ্য অনেক আগে চলে গেছে৷ শহুরে জীবনে অনেক চাপ আছে৷ ফলে শহরবাসীরা সহজেই ধৈর্য্য হারিয়ে মানসিক চাপে পড়তে পারেন'' বলেন তিনি৷ ‘‘আপনার যদি স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া হয়, তাহলে এই পার্কে এসে আরাম করতে পারবেন,'' উদ্বোধনী অনু্ষ্ঠানে উপস্থিতদের উদ্দেশে বলেন মেয়র সাঈদ খোকন৷
অতিরিক্ত রাগ কমাতে যা করবেন
কিছুটা রাগ থাকা স্বাভাবিক৷ তবে অতিরিক্ত রাগের কারণে যদি কারো সংসার ভেঙে যায়, তিনি যদি চাকরিচ্যুত হন কিংবা মানসিক রোগে ভোগেন, তাহলে অবশ্যই তাঁকে সচেতন হতে হবে৷ জেনে নিন কীভাবে৷
ছবি: Fotolia/Picture-Factory
নিজের সাথে বোঝাপড়া
যাঁর অতিরিক্ত রাগ, তাঁকে অনেকেই ভয় পায় বা তাঁকে সবকিছু থেকে একটু দূরে রখতে চায়৷ যিনি রেগে যান, তাঁর জন্য এটা অবশ্যই আনন্দের নয়৷ তাই অতিরিক্ত রাগের মানুষকে নিজের সাথে বোঝাপড়া করতে হবে, খুঁজে বের করতে হবে তাঁর রাগের আসল কারণ৷
ছবি: Colourbox/M.U Spohn
মনকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিন
রাগ বাড়ে সাধারণত মানসিক চাপ থেকে৷ এ রকম অবস্থায় গান শুনুন, ভালো কোনো বই পড়তে পড়ুন৷ এছাড়া ছবি আঁকতে বা রং করতেও পারেন৷ বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, ছবি রং করলে মন শান্ত হয়৷ আর তাই তো যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনে বই অর্ডার দেওয়ার লিস্টের এক নম্বরে প্রায়ই বড়দের ছবি রং করার বই থাকতে দেখা যায়৷ আর এই ট্রেন্ড এখন জার্মানিতেও এসেছে৷
ছবি: APTN
শিশুর রাগ
অনেকের মধ্যে শিশু বয়স থেকেই রাগে লক্ষণ দেখা যায়৷ অনেক শিশু ছোট-খাটো জিনিস না পেলেই জেদ বা চিৎকার করে৷ এটা থেকেই কিন্তু রাগের শুরু৷ অনেক মা-বাবা আদর করে তখন কিছু বলেন না বা মনে করেন বড় হলে এই রাগ চলে যাবে৷ তবে শিশু মনোচিকিৎসকরা জানান, পরবর্তীতে আরো বড় দুঃখ বা কষ্টের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য শিশুকে ছোটবেলা থেকেই তার ‘সীমানা’ তা তাকে জানিয়ে দিতে হবে৷ একমাত্র তবেই সে তা বুঝতে শিখবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Marks
ব্যায়াম
অতিরিক্ত রাগ, জেদ বা ক্রোধ কমাতে প্রতিদিন ব্যায়াম করুন৷ এই যেমন জগিং, বক্সিং, যোগচর্চা বা অন্যকিছু৷ বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকাল এবং মধ্যবয়সে যখন শরীরে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে, তখন নিয়মিত ব্যায়াম করা খুবই উপকারী৷
ছবি: Colourbox
রাগ কমাতে প্রকৃতি
মনকে শান্ত করতে প্রকৃতির জুড়ি নেই৷ আর তা শুধু শুনে বা পড়ে নয়, নিজে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে পারেন৷ কারো সাথে ঝগড়া হতে পারে এমন আশঙ্কা থাকলে বা ঝগড়া হওয়ার পরে কিছুক্ষণের জন্য বাইরে থেকে জোর জোরে হেঁটে আসুন, দেখবেন ঘণ্টা খানেকের মধ্যে রাগ পড়ে গিয়ে মন অনেকটাই শান্ত হয়ে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কারণ খুঁজতে হবে
তেমন বড় কোনো কারণ ছাড়াই দেখা যায় অনেক স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে ক’দিন পরপরই অতিরিক্ত রাগের কারণে প্রচণ্ড ঝগড়া হয়৷ জার্মান মনস্তত্ত্ববিদ হাইকে স্ট্যুভেল জানান, এক্ষেত্রে রাগের কারণ খুঁজে বের করে আলোচনার মাধ্যমে রাগ কমাতে হবে৷ এমনকি প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শও নেয়া যেতে পারে৷ তা না হলে মা-বাবার রাগ সন্তানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং পরবর্তীতে এর ফল পুরো পরিবারকে ভোগ করতে হতে পারে৷
ছবি: Fotolia
ঘটতে পারে...
অতিরিক্ত রাগ ও উত্তেজনায় রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে৷ এমনকি তা থেকে ঘটে যেতে পারে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো ঘটনাও৷ তাই রাগী মানুষরা যতটা সম্ভব হাসিখুশি থাকুন এবং রাগকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন৷
ছবি: Colourbox/E. Wodicka
সবকিছু গুছিয়ে রাখুন
যে কাজগুলো বেশি ঝামেলার মনে হয় বা যে সব কাজে সময় বেশি লাগে, সেগুলো সম্ভব হলে আগে থেকেই করে নিন অথবা গুছিয়ে রাখুন৷ জার্মান মনস্তত্ত্ববিদ হাইকে স্ট্যুভেলের কথায়, জরুরি কাজগুলো গোছানো থাকলে মন এমনিতেই শান্ত থাকবে৷ ফলে উত্তেজিত হবার বা রাগ বাড়ার তেমন কোনো কারণ থাকবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
8 ছবি1 | 8
প্রায় ৩৮ একর এলাকা জুড়ে পার্কটি গড়ে তোলা হচ্ছে৷ খরচ হবে ৭০ লক্ষ ডলার৷ পার্কে লেক ছাড়াও থাকবে খাবারের দোকান, গান শোনার ব্যবস্থা ও একটি বড় স্ক্রিনের টেলিভিশন৷
রাগ কমানোর পার্ক তৈরির কাজ শুরুর খবরে সামাজিক মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে৷ এক দল এই সংবাদকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ তবে অন্যদের আশঙ্কা, ভবিষ্যতে হয়ত এই পার্কের অবস্থা ঢাকার অন্য অনেক পার্কের মতো হতে পারে, যেখানে মাদকসেবী, যৌনকর্মী আর ছিঁচড়ে অপরাধীদের দৌরাত্ম থাকবে৷ ইফতেখার আলম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘ভাল উদ্যোগ, যতক্ষণ পর্যন্ত না এটি যৌনকর্মী আর মাদকসেবীদের আস্তানা হয়ে ওঠে৷''
ঢাকার কয়েকটি উদ্যান
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আছে কয়েকটি উদ্যান৷ ইটপথরের শহরের মাঝে এসব উদ্যানগুলো যেন একেকটি সবুজ স্বর্গ৷ ছবিঘরে দেখুন ঢাকা শহরের কয়েকটি উদ্যান৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রমনা পার্ক
ঢাকা শহরের রমনা এলাকায় অবস্থিত এ উদ্যানকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়৷ ১৬১০ সালে মোঘল সেনাপতি ইসলাম খান এই উদ্যানটির প্রতিষ্ঠা করেন৷ প্রায় ৬৯ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এ উদ্যানটি গাছপালায় ভরপুর ৷ প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ আসেন এখানে৷ ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান রমনার প্রাচীন বটমূলেই অনুষ্ঠিত হয়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রমনা পার্কের কিছু তথ্য
রমনা পার্কে বর্তমানে ২১১টি প্রজাতির উদ্ভিদ আছে৷ এর মধ্যে ফুল ও শোভাবর্ধক ৮৭টি প্রজাতি, ফলজাতীয় ৩৬টি প্রজাতি, ঔষধি বৃক্ষ ৩৩টি প্রজাতি, কৃষি বনায়নের উদ্ভিদ তিনটি প্রজাতি, বনজ ও জলজ উদ্ভিদ দু’টি প্রজাতি এবং মশলা উদ্ভিদ তিন প্রজাতির৷ পার্কটিতে একটি লেকও আছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
সোহরাওয়ার্দি উদ্যান
রমনা পার্কের পাশেই অবস্থিত৷ আগে এটা রমনা রেসকোর্স নামে পরিচিত ছিল৷ ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রমনা রেসকোর্সের মহাসমাবেশে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন৷ দীর্ঘ ন’মাস যুদ্ধের পরে ৭১’ এর ১৬ ডিসেম্বর পাক সেনারা এখানেই নতি স্বীকার করে৷ বর্তমানে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে গড়ে তোলা হয়েছে স্বাধীনতা স্তম্ভ ও জাদুঘর৷ স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘটনাবলী স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৯৯ সালে এখানে স্থাপন কর হয় ‘শিখা চিরন্তনী’৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বলধা গার্ডেন
ঢাকার ওয়ারী এলাকায় অবস্থিত প্রাচীন উদ্ভিদ উদ্যান৷ ভাওয়াল জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী ১৯০৯ সালে তাঁর বাগানবাড়ি হিসেবে উদ্যানটি প্রতিষ্ঠা করেন৷ এর দু’টি অংশ হলো ‘সিবিলি’ ও ‘সাইকি’৷ নরেন্দ্র নারায়ণ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে দুর্লভ প্রজাতির গাছপালা এনে বাগানটি ক্রমাগত সমৃদ্ধ করেছেন৷ বলধা গার্ডেন বর্তমানে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান বা বোটানিক্যাল গার্ডেনের একটি অংশ হিসেবে বন বিভাগের অধীনে আছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বাহাদুর শাহ পার্ক
এ পার্কের অতীত নাম ছিল ভিক্টোরিয়া পার্ক৷ উনিশ শতকের প্রথমার্ধে নওয়াব স্যার আব্দুল গণির উদ্যোগে ঢাকার সদরঘাট এলাকায় এ পার্কটি তৈরি করা হয়েছিল৷ ১৮৫৭ সনের সিপাহী বিদ্রোহের সময় কয়েকজন বিদ্রোহীকে ফাঁসি দেওয়া হয় এখানে৷ স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারীদের স্মরণে ১৯৫৭ সালে এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়৷ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ’র স্মরণে পার্কের পুনঃনামকরণ করা হয় বাহাদুর শাহ পার্ক৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
ওসমানী উদ্যান
প্রায় ২৩ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত উদ্যানটি ঢাকার সচিবালয় ও নগর ভবনের মাঝে অবস্থিত৷ মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনয়াক লে. জে. এম এ জি ওসমানির নামে এর নামকরণ করা হয়েছিল৷ ঢাকার সবচেয়ে অরক্ষিত উদ্যান বলা যায় এটাকে৷ তার ওপর এর ভেতরে সংরক্ষিত মীর জুমলার কামান দেখতে অনেকেই যান সেখানে৷ সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রধান সেনাপতি মীর জুমলা এই কামানটি আসাম যুদ্ধে ব্যবহার করেছিলেন বলে কথিত আছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
চন্দ্রিমা উদ্যান
ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবনের পাশে অবস্থিত বিশাল উদ্যান৷ এরশাদ সরকারের সময়ে প্রতিষ্ঠিত এ উদ্যানটির নাম ছিল ‘চন্দ্রিমা উদ্যান’৷ বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে সমাধিস্থ করার পর বিএনপি সরকার এর নাম রাখে ‘জিয়া উদ্যান’৷ এরপরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সরকারের আমলে কয়েক দফায় নাম পাল্টাপাল্টি করে করে বর্তমানে ‘চন্দ্রিমা উদ্যান’ নামেই আছে৷ ৭৪ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত এ উদ্যানের পাশেই ক্রিসেন্ট লেক৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান
ঢাকার মিরপুরে চিড়িয়াখানার পাশে অবস্থিত এ উদ্যান ন্যাশনাল বোটানিক্যাল গার্ডেন নামেই বেশি পরিচিত৷ বাংলাদেশের উদ্ভিদ প্রজাতি সংরক্ষণ, গবেষণা ও প্রদর্শনের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র এটি৷ ১৯৬১ সালে প্রায় ২০৮ একর জায়গা জুড়ে এ উদ্যানটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের কিছু তথ্য
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে ১১৭টি গোত্রভুক্ত ৯৫২ প্রজাতির গাছপালা রয়েছে৷ এর মধ্যে ২৫৬টি প্রজাতির ৩৫ হাজার বৃক্ষ, ৩১০ প্রজাতির ১০ হাজার গুল্ম , ৩৭৮ প্রজাতির ১২ হাজার লতা জাতীয় উদ্ভিদ৷ এতে আছে বিভিন্ন আকারের মোট সাতটি জলাশয়৷ শীতে এ সব জলাশয়ে অতিথি পাখির সমাগম ঘটে৷ দেশীয় পাখির অভয়ারণ্যও এই উদ্যান৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
9 ছবি1 | 9
জেডএইচ/ডিজি (এএফপি, এপি)
এ বিষয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷