রাজউক এলাকার অর্ধেকের বেশি ভবনসহ স্থাপনা অনুমোদনহীন, বলেছেন খোদ রাজউক চেয়ারম্যান৷ তাঁর দাবি, লোকবলের অভাবে তাদের পক্ষে মনিটরিং করা সম্ভব হয় না৷ তবে বিশ্লেষকরা বলছেন দুর্নীতি, স্বজন প্রীতি আর রাজনৈতিক কারণেই এরকম হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নূরুল হুদা ডয়চে ভেলেকে জানান, ঢাকা এবং তার আশেপাশের এলাকায় ৫৫০ বর্গ কিলোমিটার রাউজকের আওতাভুক্ত৷ ঢাকা শহরের বাইরে সাভার, গাজীপুর এবং নারায়নগঞ্জে ভবন নির্মাণ করতে হলে রাজউকের অনুমোদন লাগে৷ আর এই এলাকায় এখন ভবনসহ সাড়ে ১২ লাখ পাকা অবকাঠামো আছে৷ কিন্তু এর অর্ধেকেরই কোনো অনুমমোদন নেই৷
সাভারে ‘রানা প্লাজা’ ধসে বহু হতাহত
২৪ এপ্রিল সকাল ৯ টায় সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত নয় তলা ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ে৷
ছবি: Reuters
আগেই ফাটল দেখা দিয়েছিল
২৪ এপ্রিল সকাল ৯ টায় সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত নয় তলা ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ে৷ সাভার মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার সকালে ফাটল দেখা দেয়ার পরপরই ওই ভবনে থাকা চারটি গার্মেন্ট কারখানা ও ব্যাংক বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল৷ তবে ২৪ এপ্রিল সকালে কারখানায় আবার কাজ শুরু হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বহু হতাহত
১০ মে সকাল পর্যন্ত ধসে পড়া রানা প্লাজা থেকে ১০৩৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে৷ এসব লাশের অধিকাংশই পোশাক শ্রমিকদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘প্রয়োজনীয় যন্ত্র নেই’
ফায়ার সার্ভিসসহ উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা বলছেন, ব্যাপক ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছে৷ এমন ধ্বংসস্তূপ সরানোর মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্র নেই৷ এ কারণে উদ্ধারকাজ চালাতে সমস্যা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters
এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন
সাভারে ধসে পড়া বহুতল ভবনে এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন বলে জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা৷ সকালে ভবন ধসের পরপরই স্থানীয়রা উদ্ধার তৎপরতায় এগিয়ে আসেন৷ এরপর ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন৷
ছবি: Reuters
রক্ত চাই
ধ্বংসস্তুপ থেকে থেকে উদ্ধার করা শত শত আহতের জন্য প্রচুর রক্ত প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা৷ এজন্য ব্লগ, ফেসবুকের মাধ্যমে সকলকে রক্ত দানে আহ্বান জানানো হয়েছে৷ বিভিন্ন সংগঠনও রক্ত সংগ্রহে নেমেছে৷
ছবি: Reuters
জোর করে ঢোকানোর অভিযোগ
আগের দিন ভবনে ফাটল দেখা দেয়ায় ঐ ভবনে থাকা পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যেতে না চাইলেও মালিকরা তাদেরকে জোর করে ঢুকিয়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে৷
ছবি: Reuters
ইমারত বিধিমালা মানা হয়নি
‘রানা প্লাজা’ ইমারত বিধিমালা সঠিকভাবে অনুসরণ করে নির্মিত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর৷ বুধবার দুপুরে তিনি ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন৷ বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন৷ ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে৷'' (ফাইল ফটো)
ছবি: Reuters
হরতাল প্রত্যাহার
উদ্ধার তৎপরতা নির্বিঘ্ন এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার পথে বাঁধা দূর করতে হরতাল প্রত্যাহার করেছে বিএনপি৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এজন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷
ছবি: Harun Ur Rashid
সরকারের আশ্বাস
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷ এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য যা যা করা দরকার তা করা হবে বলে জানিয়েছে সরকার৷
ছবি: dapd
খালেদার শোক প্রকাশ
ভবন ধসে প্রাণহানির ঘটনায় বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷ উদ্ধারকাজ যথাযথভাবে চালাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷ খালেদা জিয়া শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন৷
ছবি: Reuters
10 ছবি1 | 10
রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, লোকবলের অভাবে তারা ঠিকমতো মনিটরিং করতে পারেন না৷ তিনি বলেন, সাভার রাজউকের আওতায় হলেও ধসে পড়া রানা প্লাজা তাদের অনুমোদ নিয়ে নির্মাণ করা হয়নি৷ রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ৬ তলার অনুমোদন নিয়ে ১০ তলা বানানো হয়৷ ভবনে ফাটল দেখা দেয়ার পরও প্রভাশালী মালিক পৌরসভার সতর্ক নোটিশকে আমলে নেননি৷ এ কারণে ভবনের মালিক সোহেল রানার বিরুদ্ধে মামলা করেছে রাজউক৷
মানা হয়না ইমারত নির্মাণ বিধিমালা
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক একেএম মাকসুদ কামাল ডয়চে ভেলেকে জানান, শুধু ঢাকা শহরেই ৩ লাখ ৬০ হাজার ভবন আছে৷ এর মধ্যে ৭২ হাজার ভবন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ৷ এগুলো যে কোনো ধরণের চাপে বা আঘাতে পুরোপুরি ধসে পড়বে৷ এছাড়া, আরো ১ লাখ ৩৫ হাজার ভবন আংশিক ঝুঁকিপূর্ণ৷ তিনি বলেন, এই ভবনগুলো ইমারত নির্মাণ বিধিমামালা মেনে তৈরি করা হয়নি৷ আর ঢাকার বাইরে নীতিমালার তেমন কোনো বালাই নেই৷ কারণ সেখানে পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ অনুমতি দেয়৷ তাদের দক্ষ কোনো প্রকৌশলী নেই৷ তিনি সাভাররের রানা প্লাজা ধসের পর তা পরিদর্শন করে জানান যে, ঐ ভবন নির্মাণে খুবই নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে৷ অথচ এটা দেখার দায়িত্ব ছিল কর্তৃপক্ষের৷
স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা মেনেই ভবন নির্মাণ করতে হবে৷ প্ল্যান পাশের পর সেই বিধিমালা মেনে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে কিনা – তা দেখার দায়িত্ব রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের৷ আর ভবনটি নির্মাণের পর ছাড়পত্র ছাড়া তা ব্যবহার করা যাবে না৷ এসব কাগজে থাকলেও বাস্তবে মানা হচ্ছে না৷ এর পিছনে রজউকের কিছু অসত্ কর্মচারী এবং রাজনৈতিক প্রভাবকে দায়ী করেন তিনি৷ তিনি বলেন, সাভারে শুধু রানা প্লাজা নয় সেখানে আরো প্রায় ১০০ ভবন আছে যা কোনো নীতিমালা মেনে তেরি করা হয়নি৷
এর জবাবে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, কিছু অসত্ কর্মচারী রাজউকে আছে এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই৷ কিন্তু লোকবলের অভাবই প্রধান বাধা৷ তিনি জানান, শীঘ্রই তারা নতুন লোকবল নিয়োগ দিয়ে মনিটরিং জোরদার করবেন৷ ব্যবস্থা নেবেন অনুমোদনহীন ভবনগুলোকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করার৷