1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাজধানীর রাজপথে ভোটের উত্তাপ নেই, গণমাধ্যমে আছে

৩০ ডিসেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশে সাত জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ কিন্তু সেই নির্বাচনের উত্তাপ ঢাকার রাজপথে তেমন একটা অনুভব করছেন না ভোটাররা৷ কেন এই পরিস্থিতি?

নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের সামনে ব়্যাবের একটি দল
নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের সামনে নিরাপত্তার দায়িত্বে ব়্যাবের একটি দলছবি: Arafatul Islam/DW

ঢাকা বিমানবন্দরের নামার পরেই একটা পোস্টার চোখে পড়লো৷ ইমিগ্রেশন ডেস্কের আগে ইংরেজিতে লেখা ‘‘বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তর গণতন্ত্রের দেশে ভোট হতে যাচ্ছে৷ আমরা আপনাদের সবাইকে তাতে অংশ নিতে এবং পর্যবেক্ষণ করতে আহ্বান জানাচ্ছি৷’’

পোস্টারটিতে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, নির্বাচন কমিশন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লোগো রয়েছে৷ বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে৷ দেশটির অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি এই নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তাদের সঙ্গে একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছোটবড় আরো অনেক রাজনৈতিক দল৷ তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়৷ সেই দাবি পূরণ না হওয়ায় নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত তাদের৷

অন্যদিকে, যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাদের মধ্যে প্রভাবশালীরাক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা আওয়ামী লীগের জোটে থাকা বা আওয়ামী লীগ সমর্থিত বিভিন্ন দলের প্রার্থী৷ এসব দলের মধ্যে আসন ভাগাভাগিও হয়ে গেছে ইতোমধ্যে বলে লিখেছে সংবাদমাধ্যম৷ ফলে ভোট গ্রহণের আগেই নির্বাচনের ফলাফল সবাই ধারনা করে নিয়েছে৷ আর এমন নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দেশেবিদেশে বিতর্কও চলছে বিস্তর৷

এরকম এক পরিস্থিতিতে বিমানবন্দরের পোস্টারটি বেশ কৌতুহলোদ্দীপক৷ অন্তত কাগজে কলমে হলেও সবাইকে নির্বাচনে যেতে উৎসাহিত করা হচ্ছে৷

ঢাকার বিমানবন্দরের বেশ উন্নতি হয়েছে গত কয়েকবছরে৷ ইমিগ্রেশন পার হয়ে লাগেজ সংগ্রহ করতে আগে দুয়েকঘণ্টা লেগে যেতো৷ এবার দেখলাম খুব অল্প সময়েই সব হয়ে গেছে৷

দিনটা শুক্রবার হওয়ায় রাস্তায় যানজটও তেমন একটা ছিল না৷ কদিন পরেই নির্বাচন৷ সেই নির্বাচনের প্রচারপ্রচারণায় মুখর থাকবে ঢাকা৷ এরকম একটা প্রত্যাশা নিয়েই চারদিকে চোখ বোলাচ্ছি৷ কিন্তু নির্বাচনী পোস্টারগুলো দূর থেকে দেখতে একই রকম লেগেছে শুরুতে৷ পরে কাছাকাছি গিয়ে নৌকার পাশাপাশি আরো কিছু প্রতীকের পোস্টারও দেখেছি ঝুলতে৷ মুশকিল হচ্ছে কিছু পোস্টারের মার্কা আলাদা হলেও প্রার্থীরা মুজিব কোর্ট পরেই ছবি তুলেছেন৷ ফলে একটু দূর থেকে তাদের আলাদা করা কঠিন৷ পাশাপাশি নৌকার ভিড়ে অন্যান্য প্রতীকের কোণঠাসা দশা তো রয়েছেই৷

শনিবার নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে গিয়ে খুব একটা কর্মব্যস্ততা দেখা গেলো না৷ নির্বাচন কমিশনাররা নানা সফরে সময় কাটাচ্ছেন৷ কমিশনের সামনে কিছু সাংবাদিক জট পাকিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন৷ কদিন আগে ছবিতে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি দেখেছিলাম৷ শনিবার দেখলাম ব়্যাবের কয়েকটি গাড়ি৷ বাহিনীর সদস্যরা সেখানে অলস সময় কাটাচ্ছেন বলে মনে হলো৷ 

শুক্রবারের ছুটির দিনে যানজটে দেখা না মিললো শনিবারের দিনটার একটা বড় অংশই কেটেছে যানজটে৷ ঢাকা শহরের বড় বড় সড়কগুলো ছেয়ে গেছে ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেসওয়ে আর মেট্রোরেলের কাঠামোতে৷ সেগুলোকে উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে দেখান অনেকে৷ কিন্তু বাস্তবে যে যানজট দেড় যুগ আগে মোকাবেলা করতাম সেটার দেখা ভালোভাবেই পেলাম৷ পরিচিত সড়কগুলোতে আগের মতোই যানজট লেগে থাকে মনে হলো৷

শাহবাগ মোড়ে কথা হচ্ছিল রিকশাচালক খোকনের সঙ্গে৷ সেই এরশাদ সরকারের আমল থেকে রিকশা চালান তিনি৷ ঢাকারই বাসিন্দা, কাটাবনের ভোটার৷ নির্বাচন নিয়ে ভাবনার কথা জানতে চাইলেই বললেন, ‘‘ভোট দিতে গেলেইতো বলে আপনার ভোট হয়ে গেছে৷ আপনি যান গা৷ কথা হলো ভোটটা দিলো কারা?’’

ঢাকায় আওয়ামী লীগের এক প্রার্থীর পোস্টারছবি: Arafatul Islam/DW

নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে চান খোকন৷ কিন্তু সেই সুযোগ গত দুই নির্বাচনে পাননি বলে জানালেন৷    

‘‘আমার ভোট যাকে ভালো লাগবে তাকে দেবো৷ দেশ যে ভালো চালাবে তাকে দেবো,’’ বলেন খোকন৷

দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যে সুবিধাজনক অবস্থায় নেই সেটা তিনি টের পান তার যাত্রীদের আচরণে৷ আগের মতো ভাড়া পান না কারণ যাত্রীদের পকেটে আগের মতো টাকা নেই বলে মত তার৷ ফলে চার সদস্যের সংসার চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে তার৷  

খোকন বলেন, ‘‘রিকশা চালিয়ে পাঁচশো টাকা আয় করি৷ পেঁয়াজের কেজি একশো টাকা, চাল এত টাকা৷ এখন পাঁচশো টাকা দিয়ে সংসার কীভাবে চালাবো, ঘর ভাড়া কীভাবে দেবো?’’

বিএনপিবিহীন মোটা দাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনেও ভোট দিতে না পারার শঙ্কা প্রকাশ করলেন আরো কয়েকজন৷ তবে, ব্যতিক্রমও আছে৷ তাদের একজন মোহাম্মদ জসিম৷ শাহবাগ মোড়ে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ২২ বছর ধরে আইসক্রম বিক্রি করেন তিনি৷ ভোট দিতে চাঁদপুরে নিজের গ্রামে যাবেন তিনি৷

জসিম বলেন, ‘‘সরকার যা করে সেটাই ভালো৷ আমাদের ইচ্ছা কিছুই নেই৷ সরকার যেটা করবে সেটাই আমাদের জন্য ভালো, সেটাই মনে নিতে হবে৷’’

সরকারের ইচ্ছামতো চলতে ভোট দিতে যাচ্ছেন বলেও ইঙ্গিত দিলেন তিনি৷ সঙ্গে এটাও যোগ করলেন যে ‘‘আরতো কোনো দল নেই, দলতো একটাই, নৌকা৷’’

‘‘যেখানে যাবেন সেখানেই নৌকা৷ নৌকা ছাড়া আর কোনো প্রতীক নেই৷ নৌকায় ভোট দিলেও উনি পাশ করবেন, ভোট না দিলেও উনি পাশ করবেন৷ প্রতিদ্বন্দ্বী একই৷’’

ঢাকার রাজপথে নির্বাচনের উত্তাপ তেমন একটা অনুভূত না হওয়ার একটি কারণ অবশ্য প্রথম আলো পত্রিকা জানিয়েছে৷ ঢাকা জেলা ও মহানগরের ১৯টি আসনের মধ্যে ১৪টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিপরীতে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীই নেই৷ পাঁচটি আসনে যতটুকু প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেটাও আওয়ামী লীগের মূল প্রার্থী এবং দলটির মনোনয়ন না পাওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে হতে পারে৷ একটি আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ৷

এমন নির্বাচন নিয়ে ঢাকার রাজপথে উত্তাপ না ছড়ানোটাই কি স্বাভাবিক নয়?

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ