বাংলাদেশের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে৷ তাই ডয়চে ভেলে এই ইস্যুটাকে ‘আলাপ'-এর এবারের বিষয় নির্বাচন করে৷ ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় অনেক পাঠক বন্ধু নিরাপত্তাহীনতার জন্য দেশের রাজনীতিক দলগুলোকেই দায়ী করেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/FARJANA K. GODHULY
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে চলছে ধর্মের রাজনীতি, ধর্মকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতিকরা ফায়দা লুটতে চায়৷ এমনটাই লিখেছেন পাঠক রুহুল আমিন কনক৷ ‘‘বাংলাদেশে ৯০ শতাংশেরও বেশি লোক মুসলিম, মুসলিমরা ধর্মের প্রতি দুর্বল আর এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চায় আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা৷ আসলে এরা মানুষকে বোঝাতে চায় যে, এদের দল মুসলিমদের খুব ভালোবাসে৷ বলতে পারেন, সাধারণ মানুষকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে চেয়ারটা দখল করার রাজনৈতিক কৌশল৷''
মোহাম্মদ মুন্নার মন্তব্য, ‘‘আওয়ামী লীগ ধর্মকে ব্যবহার করে তাদের স্বার্থের সুযোগ বুঝে আর বিএনপি ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে রাজনীতি করতে চায়৷''
‘‘সব দলই ইসলামকে ব্যবহার করে৷ কিন্তু পরে ক্ষমতায় না যেতে পারলে জঙ্গিদের সাহায্য নেয়৷ এটাই বাংলাদেশের রাজনীতি৷'' এ মন্তব্য বন্ধু শাকিলের৷
যে ১০ জেলা থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ বিদেশে গেছেন
বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৫৭ লক্ষ ৭৪ হাজার ৫৪০ জন বাংলাদেশি কর্মসূত্রে বিদেশে গেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Naamani
১. কুমিল্লা
সবচেয়ে বেশি গেছে এই জেলা থেকে৷ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বলছে, ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কুমিল্লা থেকে মোট ৬ লক্ষ ১৯ হাজার ১৩৮ জন বিদেশ গেছেন, যেটা রপ্তানি হওয়া মোট জনশক্তির প্রায় ১০.৯৪ শতাংশ৷
আপনি যদি এই ১০ জেলার না হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জেলার তথ্য জানতে উপরে ‘+’ চিহ্ন ক্লিক করুন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Naamani
11 ছবি1 | 11
অন্যদিকে আবুল বাশার তালুকদার বাংলাদেশের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নিরপত্তহীনতার কারণ হিসেবে বিএনপিকেই দোষারোপ করছেন৷ তাঁর মতে, ‘‘আওয়ামী লীগ কিন্তু বিএনপি-জামাতের মতো ইসলামকে ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ার মনে করে ব্যবহার করে না৷ তবে বিএনপি ও তাদের বন্ধুরা ইসলাম ব্যবহার করে ক্ষমতায় যেতে চায়৷''
‘‘সব কিছুর মূলেই যে ক্ষমতা তা বুঝতে কারোই কষ্ট হয় না৷'' এই মন্তব্য সুমন ফেরদৌসের৷
কোনো স্বাধীন দেশে যদি গণতন্ত্রের চর্চা না থাকে এবং অন্যমতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সেদেশে নিরাপত্তা থাকবে না৷ এমনটাই মনে করেন ডয়চে ভেলের পাঠক মির্জা হোসেন৷
‘‘ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে উভয় দল একই নীতি অবলম্বন করে থাকে৷'' লিখেছেন মজিবর রহমান৷
‘‘রাজনীতিকে ‘না' বলার সময় আসছে৷'' বলে মনে করেন পাঠকবন্ধু ফারুক আলম৷
সংকলন: নুরুন নাহার সাত্তার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
নিরাপত্তা নিয়ে যা ভাবছে দেশের মানুষ
বাংলাদেশে একের পর এক মুক্তমনা, ধর্মনিরপেক্ষ লেখক, প্রকাশক, ব্লগার ও ভিন্ন ধর্মের মানুষ খুন হচ্ছে৷ পুলিশ এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বললেও, দেশের মানুষ খুব উদ্বিগ্ন৷ ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে রিকশা চালক – আজ কতটা নিরাপদ আমরা?
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
আব্দুল্লাহ রিফাত, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্র
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ রিফাত৷ তার মতে, বাড়ি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় – কোথাও তেমন নিরাপদ না কেউই৷ তবে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে তিনি ভাবছেন না এই মুহূর্তে৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
নাফিউল হাসান, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিউল হাসান মনে করেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউই নিরাপদ নয়৷ আমরা একরকম ভয়ের মধ্যেই বসবাস করছি৷ যতক্ষণ বাইরে থাকি, বাসায় অভিভাবকরা চিন্তায় থাকেন৷ অনেক সময় তো স্বাভাবিক ঘোরাফেরাও বন্ধ করতে হচ্ছে৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
প্যারিস তালুকদার, তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল বিভাগের ছাত্র
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া প্যারিস তালুকদার মনে করেন, গত দুই বছরের আগ পর্যন্ত নিজের নিরাপত্তা নিয়ে কখনো ভাবিনি, গভীর রাত পর্যন্তও ঘুরে বেড়াতাম বিভিন্ন জায়গায়৷ তবে গত দিনগুলোর নানান ঘটনায় আমার নিজেরই খুব ভয় হয়৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
ফারিয়া রিফাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী
বেশ নির্ভিক টাইপের মানুষ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ফারিয়া রিফাত৷ কিন্তু দেশের বর্তামান পরিস্থিতিটা তার কাছে খুবই ঘোলাটে মনে হচ্ছে৷ প্রত্যেক দিনই বড় কোনো অঘটন ঘটছে৷ পত্রিকা খুললেই খুন-খারাবির খবর, মনে হচ্ছে ‘মার্ডার’ করাটা এখন সহজ ক্রাইম৷ আমরা প্রত্যেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি৷ ঘর থেকে বেড়িয়ে আবার যে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারব, এই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছে না৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
আরিফ জেবতিক, ব্লগার
ব্লগার আরিফ জেবতিক বললেন, ‘‘নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেই আছি৷ ব্যক্তিগতভাবে যে যেভাবে পারছি সাবধানে থাকার চেষ্টা করছি৷ জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন আনতে হয়েছে৷ এই যেমন, ‘পাবলিক প্লেসে’ যাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছি৷ সিনেমা দেখতাম, নাটক দেখতাম, জগিং করতাম৷ এখন এগুলো আর করতে পারি না৷ যেহেতু পরিস্থিতির কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই, তাই এভাবেই সাবধানে থাকতে হচ্ছে৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
হযরত আলী, ব্যবসায়ী
পুরনো ঢাকার ব্যবসায়ী হযরত আলী৷ তাঁর মতে, দেশের কোনো শ্রেণির মানুষেরই নিরাপত্তা নেই৷ দিনে-দুপুরে খুন-খারাবি চলছে৷ তাই দিন কিংবা রাত – কখনোই নিরাপদ নই আমরা৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
হারিছ মিয়া, ফল ব্যবসায়ী
মাদারীপুরের হারিছ মিয়া গত প্রায় ১৭ বছর ধরে ঢাকায় ফলের ব্যবসা করেন৷ গত কয়েক বছরের তুলনায় বর্তমানে খুন-খারাবি বেড়ে যাওয়ায় খুবই চিন্তিত তিনি৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
আক্কাস আলী, দিনমজুর
পুরনো ঢাকায় ঠেলাগাড়ি চালান আক্কাস মিয়া৷ জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবার সময় নেই তাঁর৷ আপাতত সন্তানদের মুখে তিনবেলা খাবার তুলে দিতে পালেই সন্তুষ্ট তিনি৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
আব্দুর রহমান, রিকশা চালক
লালমনির হাটের আব্দুর রহমান ঢাকায় রিকশা চালান গত প্রায় ছ’বছর ধরে৷ জীবনের নিরাপত্তার চেয়েও তাঁর কাছে বেশি চিন্তার বিষয় ছিনতাই৷ রাস্তায় থাকা হয় বলে প্রতিনিয়ত অনেক ছিনতাইয়ের সাক্ষী তিনি্৷ কিন্তু জীবনের ভয়ে সেগুলোর প্রতিবাদ না করে নিরব দর্শকের ভূমিকাই পালন করতে হয় তাঁকে৷ কিন্তু এতে খুবই মনোকষ্টে ভোগেন বিদ্যালয়ের প্রাথমিকের গণ্ডি পার হতে না পারা এই রিকশা চালক৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigr Rahman
আবুল কালাম, অটোরিকশা চালক
শেরপুরের আবুল কালাম অটোরিকশা চালান ঢাকা শহরে৷ তাঁর কথায়, দেশে কোনো নিরাপত্তা নেই৷ যে যেভাবে পারছে খুন-খারাবি করে যাচ্ছে৷ অপরাধীরা থাকছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে৷ অনেকে ধরা পড়ার খবর শুনলেও তাদের বিচারের আর কোনো খবর পান না বলে জানালেন এই অটোরিকশা চালক৷