1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে আসিফ মহিউদ্দীন

২৮ জানুয়ারি ২০১৪

গত বছরের শুরুতেই দুর্বৃত্তের আঘাতে গুরুতর আহন হন ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন৷ অসুস্থ শরীরেই ফেব্রুয়ারিতে যোগ দেন শাহবাগ চত্বরে, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে৷ এরপর কারাভোগ৷ সবশেষে তিনি এখন জার্মানিতে৷

Asif Mohiuddin in Deutschland
ছবি: DW/A. Islam

ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন নানা কারণেই আলোচিত, সমালোচিত৷ ডয়চে ভেলের ‘দ্য বব্স' অ্যাওয়ার্ডজয়ী এই ব্লগার সর্বপ্রথম আলোচনায় আসেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে৷ ২০১১ সালের ঘটনা সেটি৷ সেসময় গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হলেও কারাবাস এড়াতে সক্ষম হন তিনি৷

এরপর তেল, গ্যাস রক্ষার আন্দোলনে অংশ নিয়ে, নারী অধিকারের নিশ্চিতে লেখালেখি করে আলোচনায় ছিলেন আসিফ মহিউদ্দীন৷ কিন্তু এসব কর্মকাণ্ড ছাপিয়ে গুরুত্ব পেতে থাকে তাঁর নাস্তিক পরিচয়৷ এই ব্লগার নিজের নাস্তিক পরিচয় লুকাননি৷ বরং ক্রমশ তিনি হয়ে ওঠেন ‘মিলিট্যান্ট এথিস্ট'৷ পরিণতি – গত বছরের ১৪ জানুয়ারি ঢাকার উত্তরায় হামলার শিকার হন তিনি৷

হামলাকারীদের ক্ষমা ঘোষণা

গুরুতর আহত হলেও সেই হামলায় প্রাণে বেঁচে যান আসিফ৷ বর্তমানে জার্মানিতে অবস্থানরত এই ব্লগার বলেন, ‘‘হামলাটি করেছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিম৷ তারা আল-কায়েদা নেটওয়ার্কের বাংলাদেশ অংশ৷ যারা আমাকে আক্রমণ করেছিল, তাদের সঙ্গে আমার জেলে দেখা হয়েছে৷ আমি তাদের খাবার খেতে দিতে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু তারা নাস্তিকের খাবার খেতে চায়নি৷''

জার্মানিতে আসিফ

This browser does not support the audio element.

নিজের উপর হামলাকারীদের ক্ষমা করে দিয়েছেন আসিফ মহিউদ্দীন৷ এমনকি গোয়েন্দা পুলিশকে অনুরোধ করেছেন, তাদের যেন নির্যাতন করা না হয়৷ আসিফ বলেন, ‘‘হামলাকারীদের আমি ক্ষমা করে দিয়েছি৷ তারা আসলে জানে না যে, তারা কি করছে৷ তাদের ধর্মগুরুরা বা তাদের নেতারা যা বলেছে, তারা সেটাই পালন করছে৷ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যদি পরিবর্তন না হয় তাহলে এদের দোষ দিয়ে কিছু হবে না৷''

আন্দোলনটা ‘খেয়ে ফেলেছে'

জার্মানির বিলেফেল্ড শহরে রবিবার দুপুরে ডয়চে ভেলের মুখোমুখি হন ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন৷ বিলেফেল্ড তখন তুষারের চাদরে ঢেকে আছে৷ আসিফের জন্য এই অভিজ্ঞতা একেবারেই নতুন৷ শীতটাও এখন অসহনীয় পর্যায়ে রয়েছে৷ কিন্তু শুভ্র তুষার কিংবা ঠান্ডার চেয়ে শাহবাগ নিয়েই কথা বলতে বেশি আগ্রহী ছিলেন তিনি৷

তাঁর মতো আরো অনেক ব্লগারের আহ্বানে ২০১৩ সালের পাঁচ ফেব্রুয়ারি ঢাকার শাহবাগ চত্বরে সমবেত হন কয়েক হাজার মানুষ৷ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শুরু হওয়া এই আন্দোলন দ্রুতই গণআন্দোলনে রূপ নেয়৷ শাহবাগের এই আন্দোলনকে সাংস্কৃতিক বিপ্লব মনে করেন আসিফ মহিউদ্দীন৷ তিনি বলেন, ‘‘জনগণের সাংস্কৃতিক মানের উন্নয়ন ঘটেছে৷ জনগণের রাজনৈতিক চেতনা তৈরি হয়েছে৷ এই বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷ সবচেয়ে বড় কথা, তরুণরা উজ্জীবিত হয়েছে৷ সেই দিক থেকে শাহবাগ আন্দোলন সফল৷''

বিলেফেল্ডের ‘লিনেন উয়িভার স্ট্যাচু'-র সামনে আসিফ মহিউদ্দীন৷ শহরের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতীক এই মূর্তি৷ছবি: DW/A. Islam

তবে হতাশাও রয়েছে৷ শাহবাগ আন্দোলন খুব বেশি দিন ব্যাপক জনসমর্থন ধরে রাখতে পারেনি৷ বরং এই নিয়ে রাজনীতি হয়েছে প্রচুর৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা যখন শাহবাগ আন্দোলন শুরু করি, তখন আমাদের স্বপ্ন ছিল বিশাল৷ আমরা মনে করেছিলাম, বাংলাদেশকে পাল্টে দেবো৷ নতুন বাংলাদেশের জন্ম হবে৷ কিন্তু রাজনৈতিক দল এবং আমাদের রাজনীতিক নেতারা আসলে আমাদের আন্দোলনটা খেয়ে ফেলেছে৷''

সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ

শাহবাগ আন্দোলনের এক পর্যায়ে বিভিন্ন মহল থেকে বাংলা ব্লগারদের ‘ইসলাম ধর্ম বিরোধী নাস্তিক' হিসেবে আখ্যা দেয়ার চেষ্টা শুরু হয়৷ বিশেষ করে ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে উগ্র ইসলামপন্থিরা প্রচার করতে থাকেন, তাঁরা লেখালেখির মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে ইসলামধর্মে বিশ্বাসীদের আঘাত করেছেন৷ আসিফের নাম এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে ছড়িয়ে পড়ে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থার উপর ধর্ম যখন আগ্রাসন চালায়, আমাদের ভাষার উপরে যখন ধর্ম আগ্রাসন চালায়, যখন সংস্কৃতির উপর আগ্রাসন চালায়....যেমন ধরেন শহিদ মিনারে ফুল দেয়া যাবে না৷ এ ধরনের একটি প্রচার ইসলামপন্থিরা করে থাকে৷ কিন্তু আমি কেন শহিদ মিনারে ফুল দিতে পারবো না?

‘‘আমার অধিকার আছে শহিদ মিনারে ফুল দেয়ার৷ এটা ইসলামবিরোধী বলে প্রচারণা চালায় তারা৷ আমরা যখন এর বিরুদ্ধে কথা বলি, তখন আমাদের বলা হয় সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াচ্ছি আমরা৷''

বিলেফেল্ডের একটি গির্জায় প্রদর্শিত বাংলাদেশের ছবির পাশে ব্লগার আসিফছবি: DW/A. Islam

গ্রেপ্তার, কারাভোগ

সামহয়্যার ইন ব্লগে থাকা আসিফ মহিউদ্দীনের ব্লগ প্রোফাইলে লেখা ছিল, ‘‘আমাদের যুক্তিশূন্য ঈশ্বর নামেই শুধু সর্বক্ষমতাবান, বাস্তবে নির্বীর্য৷'' সরকারি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বিটিআরসি-র নির্দেশ তাঁর এই প্রোফাইলটি গত বছর মুছে ফেলা হয়৷ এরপর এপ্রিলের শুরুতে গ্রেপ্তার হন তিনি৷ আসিফ মনে করেন, মূলত হেফাজতে ইসলাম নামক একটি ইসলামপন্থি সংগঠনের দাবির কারণে তাঁকেসহ কয়েক ব্লগারকে সেসময় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের শুরুতে আমাদের গ্রেপ্তার করা হয়৷ আমরা যদি আসলেই কিছু করে থাকি, তাহলে সরকার আগে কেন দেখেনি৷ এটা পরিষ্কার যে, হেফাজতে ইসলামের চাপের কারণেই সরকার আমাদের গ্রেপ্তারে বাধ্য হয়েছে৷''

ইন্টারনেটে বিভিন্ন ব্লগে ইসলাম ধর্ম নিয়ে উসকানিমূলক মন্তব্য ও কটূক্তির অভিযোগে মামলা হয়েছে আসিফসহ কয়েকজন ব্লগারের বিরুদ্ধে৷ বর্তমানে জামিনে রয়েছেন আসিফ৷ এসেছেন জার্মানিতে৷ তবে তিনি জানান, নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে ঢাকার আদালতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন তিনি৷ ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়' করা এই মামলাটি অত্যন্ত দুর্বল বলেও মনে করেন তিনি৷

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আমন্ত্রণে বর্তমানে জার্মানিতে অবস্থান করছেন আসিফ মহিউদ্দীন৷ আগামী কিছু দিন তিনি জার্মানিসহ ইউরোপে বিভিন্ন সভা, সেমিনার নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন বলে জানিয়েছেন৷

সাক্ষাৎকার: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ