1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাজনীতির অধঃপতনে ভারসাম্যহীন উন্নয়ন

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৩১ ডিসেম্বর ২০১৪

বাংলাদেশে নির্বাচন মানেই উত্‍সব৷ কিন্তু ২০১৪ সালের শুরুতে একতরফা জাতীয় নির্বাচনে উত্‍সবের পরিবর্তে হয়েছে সংঘাত৷ নির্বাচনের পর প্রায় একবছর কেটে গেছে৷ কিন্তু এ সময় বড় আকারের সংঘাত না হলেও, বছর জুড়েই ছিল অস্বস্তিকর অবস্থা৷

Kombobild Khaleda Zia und Sheikh Hasina
ছবি: Getty Images/AFP/FARJANA K. GODHULY

এ সময়ে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সূচকে অনেক ইতিবাচক দিক দেখা গেলেও, রাজনৈতিক সূচকের অধঃপতন হয়েছে৷ আর নতুন বছরে সেই অস্বস্তি থেকে স্বস্তি নয়, বরং নতুন করে সংঘাতের আশঙ্কাই করা হচ্ছে৷ রাজনৈতিক সংকট ফের সংঘাতে রূপ নেয়ার সব আলামত এখন স্পষ্ট৷ বিশ্লেষকরা বলছেন রাজনৈতিক অধঃপতনের মাধ্যমে বাংলাদেশে এক ভারসাম্যহীন উন্নয়ন ঘটছে, যা আখেরে ভালো নয়৷

যদি প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশে গত এক বছরে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় কী ছিল? এর জবাব হবে একটিই৷ তা হলো ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন৷ বাংলাদেশে অনেক নির্বাচন হয়েছে৷ কিন্তু সাধারণ মানুষ দিন তারিখসহ যে দু-একটি নির্বাচনের কথা মনে রেখেছে বা রাখবে, তা হলো ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন৷

এই নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ এক নজিরবিহীন সময় পার করেছে৷ নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতা শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও ব্যাপক আলোচিত হয়েছে৷ প্রধান বিরোধী বিএনপি-জামায়াত জোটের নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার একটি একতরফা নির্বাচন করে৷ সেই নির্বাচনে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ জন সাংসদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন৷ বাকি ১৪৭ আসনের নির্বাচনে ভোট পড়ে শতকরা ২০ ভাগেরও কম৷ এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য ক্ষমতায় যায়৷

বিএনপি জোটের দাবি ছিল একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন৷ তারা আওয়ামী লীগ, তথা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে কোনো নির্বাচন চায়নি৷ তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চেয়েছিল৷ কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকেই নির্বাচনের ব্যাপারে অনঢ় থাকে৷ প্রসঙ্গত, এর আগে আদালতের রায়ের আলোকে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়৷

নির্বাচনের আগে সংলাপের কথা বলেছিলেন সবাই৷ এমনকি আওয়ামী লীগ-বিএনপিও৷ শেখ হাসিনা ফোনও করেছিলেন খালেদা জিয়াকে৷ আন্তর্জাতিক চাপ ছিল সংলাপের মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের৷ জাতিসংঘও উদ্যোগ নিয়েছিল৷ কিন্তু কোনো উদ্যোগই শেষ পর্যন্ত কাজে আসেনি৷

একতরফা নির্বাচনের পর গত এক বছর ধরে আরেকটি নির্বাচনের জন্য দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি৷ তারা আগের অবস্থানেই আছে৷ তা হলো, একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন৷ এ জন্য সংলাপের দাবিও জানাচ্ছে তারা৷ কিন্তু সরকার এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই আগের চেয়ে আরো শক্ত অবস্থানে চলে গেছে৷ নির্বাচনের আগে বলা হয়েছিল, এটা সংবিধান রক্ষার নির্বাচন৷ পরে সব দলের অংশগ্রহণে আরেকটি নির্বাচন হবে৷ কিন্তু সেই কথায় সরকার এখন আর নেই৷ তারা বলছে, নতুন নির্বাচনের জন্য এই সরকারের মেয়াদপূর্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷ তার মানে আরো চার বছর৷ এছাড়া নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে তা তখন দেখা যাবে, বলছে আওয়ামী লীগ৷

অন্যদিকে বিএনপি তার দাবি আদায়ে গত এক বছর ধরে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে৷ নতুন বছরে অবশ্য তারা চাইছে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলতে৷ ২০১৫ সালের ৫ই জানুয়ারিকে সামনে রেখে তারা চাইছে সরকারের ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি করতে৷ ৫ই জানুযারির আগে ও পরে বিএনপি-র নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ঢাকাসহ সারাদেশে বড় ধরণের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ তবে সরকারও তা ঠেকাতে প্রস্তুত৷

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি তাত্‍পর্যপূর্ণভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে গেলেও প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ৷ ‘শাসন পরিস্থিতি, বাংলাদেশ: গণতন্ত্র, দল, রাজনীতি' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি ডিসেম্বর মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়৷ তাতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক অগ্রগতির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য অবশ্যই একটা ঝুঁকি৷ এ অবস্থা থেকে উত্তরণে জাতীয় সংলাপই একমাত্র সমাধান৷

গত ২০শে ডিসেম্বর প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিআইডিএস-এর গবেষণা পরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন যদি রাজনৈতিক উন্নয়নকে ছাপিয়ে যায় তাহলে সমাজে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়৷ অর্থনীতি ও রাজনীতির সমান ও সমান্তরাল উন্নয়ন প্রয়োজন৷'' তাই এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ও সহিংসতা বন্ধে আওয়ামী লীগকে সংলাপে বসার ও বিএনপি-কে জামায়াত ত্যাগের আহ্বান জানান তিনি৷

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘‘বহুদলীয় গণতন্ত্রে সব বিষয়ে সব দলের ঐক্য হবে না, এটাই স্বাভাবিক৷ তবে তা হতে হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়৷ রাজনৈতিক দলগুলোর বিবাদে দেশে অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে৷ এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার পথ সুষ্ঠু নির্বাচন৷''

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘দলের তহবিল বাড়াতে এখন ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হচ্ছে৷ বহুদলীয় গণতন্ত্র থেকে একচ্ছত্র দলতন্ত্রের বিকাশ ঘটছে৷ বড় দলগুলো বিশেষত সরকারি দল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘দখলে' নিয়ে নিজেদের পক্ষে ব্যবহার করছে৷ সুশীল সমাজ, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সবখানে পড়েছে দলীয়করণের প্রভাব৷ ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোও দলীয় রাজনীতির বলয়ে আবদ্ধ৷''

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যে উন্নয়ন আমরা দেখছি তাকে বলা যায় একটা ‘আনইভেন গ্রোথ'৷ এটাকে ভালো বলার কোনো উপায় নেই৷ কারণ রাজনৈতিক সংঘাত এই উন্নয়নকে স্থিতিশীল হতে দেবে না৷''

তিনি বলেন, ‘‘৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর আসল বিরোধী দল বাইরে৷ আর বিরোধী দল বলতে যাঁরা আছেন, তাঁরা আবার সরকারেই বসেছেন৷ এটা একটা অদ্ভুত রাজনৈতিক পরিস্থিতি৷ এই অবস্থা যতদিন চলবে, ততদিন দেশে প্রকৃত উন্নয়ন হবে না৷''

এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অধ্যাপক আহমেদ বলেন, ‘‘সরকারি দল এখন চাইছে সব কিছু ঠিক-ঠাক আছে কিনা, তা দেখাতে৷ এ জন্য তারা নানা কৌশল নিচ্ছে৷ ওদিকে বিএনপি চাইছে দেশ যে ঠিকমত চলছে না, তা দেখাতে৷ ফলে সার্বক্ষণিক এক ধরণের সংঘাত লেগেই আছে৷ বিএনপি যখন এই সংঘাতকে আরো স্পষ্ট করার সক্ষমতা অর্জন করবে, তখন তা রাজপথের সংঘাতে রূপ নেবে৷ তাই ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যতদিন না একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান আসবে, ততদিন দেশে প্রকৃত অর্থে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসবে না৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘দেশে রাজনৈতিক বিরোধিতা নেই, যেটা গণতন্ত্রে দরকার৷ আছে রাজনৈতিক শত্রুতা আর প্রতিহিংসা, যা সব উন্নয়নকে শেষ পর্যন্ত বিপর্যস্ত করে দেবে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ