বাংলাদেশে নির্বাচন মানেই উত্সব৷ কিন্তু ২০১৪ সালের শুরুতে একতরফা জাতীয় নির্বাচনে উত্সবের পরিবর্তে হয়েছে সংঘাত৷ নির্বাচনের পর প্রায় একবছর কেটে গেছে৷ কিন্তু এ সময় বড় আকারের সংঘাত না হলেও, বছর জুড়েই ছিল অস্বস্তিকর অবস্থা৷
বিজ্ঞাপন
এ সময়ে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সূচকে অনেক ইতিবাচক দিক দেখা গেলেও, রাজনৈতিক সূচকের অধঃপতন হয়েছে৷ আর নতুন বছরে সেই অস্বস্তি থেকে স্বস্তি নয়, বরং নতুন করে সংঘাতের আশঙ্কাই করা হচ্ছে৷ রাজনৈতিক সংকট ফের সংঘাতে রূপ নেয়ার সব আলামত এখন স্পষ্ট৷ বিশ্লেষকরা বলছেন রাজনৈতিক অধঃপতনের মাধ্যমে বাংলাদেশে এক ভারসাম্যহীন উন্নয়ন ঘটছে, যা আখেরে ভালো নয়৷
যদি প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশে গত এক বছরে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় কী ছিল? এর জবাব হবে একটিই৷ তা হলো ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন৷ বাংলাদেশে অনেক নির্বাচন হয়েছে৷ কিন্তু সাধারণ মানুষ দিন তারিখসহ যে দু-একটি নির্বাচনের কথা মনে রেখেছে বা রাখবে, তা হলো ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন৷
অন্যরকম নির্বাচন
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ১৫৩টি আসনে একক প্রার্থী থাকায় রবিবার অর্ধেকের বেশি আসনে ভোট গ্রহণ হয়নি৷ নির্বাচনের দিনের কিছু ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে এই ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. Mamun
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফল করতে সরকার ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি গ্রহণ করে৷ এজন্য ৫৯ জেলায় বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় সাড়ে চার লাখ সদস্য মোতায়েন করা হয়৷ বাকি পাঁচটি জেলায় নির্বাচনের প্রয়োজন পড়েনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
অলস সময়
ভোটার না থাকায় ঢাকার মিরপুরের হাজী আশ্রাফ আলী হাইস্কুলে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রের সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অলসভাবে সময় কাটাতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভোটারের জন্য অপেক্ষা
ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাকাডেমি ভোটকেন্দ্রের ছবি এটি৷ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে ভোটারদের জন্য বাঁশ ও দড়ি দিয়ে নির্ধারিত স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে৷ কিন্তু ভোটার নেই৷
ছবি: DW/M. Mamun
এখানেও একই অবস্থা
ছবিটি হারম্যান মাইনার কলেজ কেন্দ্রের৷ পাশাপাশি স্থাপিত কয়েকটি বুথ যেন খাঁ-খাঁ করছে৷ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ, জানিপপ-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে জানান, ভোটার উপস্থিতি কম হবে এটাই স্বাভাবিক৷ কারণ এটি একটি ভিন্ন ধরনের নির্বাচন৷ একতরফার সঙ্গে আছে ব্যাপক সহিংসতা এবং বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধ৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিড়ম্বনার শিকার
নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে ভোটার তালিকায় নাম খুঁজে না পেয়ে অনেক ভোটার ফিরে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ তবে কেউ কেউ অবশ্য কষ্টটা শিকার করেই ভোট দিয়েছেন৷ ছবিতে মিরপুরের একটি কেন্দ্রে ভোটারদের সিরিয়াল নম্বর খুঁজতে দেখা যাচ্ছে৷ তাঁদের সহায়তা করছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা৷
ছবি: DW/S. Kumar Dey
ভোটাধিকার প্রয়োগ
ভোট দিচ্ছেন একজন ভোটার৷ অবশ্য তাঁর মতো ভাগ্যবান হতে পারেননি দেশের মোট ভোটারের শতকার ৫২ জন৷ অর্ধেকেরও বেশি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এসব ভোটারের ভোট দেয়ার সুযোগ ছিল না৷ এই কারণে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীও ভোট দিতে পারেননি৷
ছবি: DW/M. Mamun
নারী ভোটার
ঢাকার একটি কেন্দ্রে ভোট প্রয়োগের অপেক্ষায় কয়েকজন নারী ভোটার৷
ছবি: DW/M. Mamun
উৎসাহে কমতি নেই
আব্দুল হাকিম নামে ৮৯ বছরের এই ভোটার দুই ব্যক্তির সহায়তায় ঢাকার একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
সেনা সদস্যদের পাহারা
দুজন ভোটার ভোট দিতে যাচ্ছেন৷ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় সেখানে ছিলেন সেনা সদস্যরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
9 ছবি1 | 9
এই নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ এক নজিরবিহীন সময় পার করেছে৷ নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতা শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও ব্যাপক আলোচিত হয়েছে৷ প্রধান বিরোধী বিএনপি-জামায়াত জোটের নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার একটি একতরফা নির্বাচন করে৷ সেই নির্বাচনে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ জন সাংসদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন৷ বাকি ১৪৭ আসনের নির্বাচনে ভোট পড়ে শতকরা ২০ ভাগেরও কম৷ এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য ক্ষমতায় যায়৷
বিএনপি জোটের দাবি ছিল একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন৷ তারা আওয়ামী লীগ, তথা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে কোনো নির্বাচন চায়নি৷ তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চেয়েছিল৷ কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকেই নির্বাচনের ব্যাপারে অনঢ় থাকে৷ প্রসঙ্গত, এর আগে আদালতের রায়ের আলোকে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়৷
নির্বাচনের আগে সংলাপের কথা বলেছিলেন সবাই৷ এমনকি আওয়ামী লীগ-বিএনপিও৷ শেখ হাসিনা ফোনও করেছিলেন খালেদা জিয়াকে৷ আন্তর্জাতিক চাপ ছিল সংলাপের মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের৷ জাতিসংঘও উদ্যোগ নিয়েছিল৷ কিন্তু কোনো উদ্যোগই শেষ পর্যন্ত কাজে আসেনি৷
একতরফা নির্বাচনের পর গত এক বছর ধরে আরেকটি নির্বাচনের জন্য দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি৷ তারা আগের অবস্থানেই আছে৷ তা হলো, একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন৷ এ জন্য সংলাপের দাবিও জানাচ্ছে তারা৷ কিন্তু সরকার এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই আগের চেয়ে আরো শক্ত অবস্থানে চলে গেছে৷ নির্বাচনের আগে বলা হয়েছিল, এটা সংবিধান রক্ষার নির্বাচন৷ পরে সব দলের অংশগ্রহণে আরেকটি নির্বাচন হবে৷ কিন্তু সেই কথায় সরকার এখন আর নেই৷ তারা বলছে, নতুন নির্বাচনের জন্য এই সরকারের মেয়াদপূর্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷ তার মানে আরো চার বছর৷ এছাড়া নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে তা তখন দেখা যাবে, বলছে আওয়ামী লীগ৷
অন্যদিকে বিএনপি তার দাবি আদায়ে গত এক বছর ধরে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে৷ নতুন বছরে অবশ্য তারা চাইছে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলতে৷ ২০১৫ সালের ৫ই জানুয়ারিকে সামনে রেখে তারা চাইছে সরকারের ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি করতে৷ ৫ই জানুযারির আগে ও পরে বিএনপি-র নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ঢাকাসহ সারাদেশে বড় ধরণের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ তবে সরকারও তা ঠেকাতে প্রস্তুত৷
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি তাত্পর্যপূর্ণভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে গেলেও প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ৷ ‘শাসন পরিস্থিতি, বাংলাদেশ: গণতন্ত্র, দল, রাজনীতি' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি ডিসেম্বর মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়৷ তাতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক অগ্রগতির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য অবশ্যই একটা ঝুঁকি৷ এ অবস্থা থেকে উত্তরণে জাতীয় সংলাপই একমাত্র সমাধান৷
গত ২০শে ডিসেম্বর প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিআইডিএস-এর গবেষণা পরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন যদি রাজনৈতিক উন্নয়নকে ছাপিয়ে যায় তাহলে সমাজে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়৷ অর্থনীতি ও রাজনীতির সমান ও সমান্তরাল উন্নয়ন প্রয়োজন৷'' তাই এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ও সহিংসতা বন্ধে আওয়ামী লীগকে সংলাপে বসার ও বিএনপি-কে জামায়াত ত্যাগের আহ্বান জানান তিনি৷
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘‘বহুদলীয় গণতন্ত্রে সব বিষয়ে সব দলের ঐক্য হবে না, এটাই স্বাভাবিক৷ তবে তা হতে হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়৷ রাজনৈতিক দলগুলোর বিবাদে দেশে অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে৷ এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার পথ সুষ্ঠু নির্বাচন৷''
ভোটকেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুরের ছবি
দশম জাতীয় নির্বাচনের ভোট গ্রহণের সময় ব্যাপক সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে৷ পাঁচ জানুয়ারি বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুর এবং জনপ্রতিক্রিয়ার কিছু ছবি পেয়েছে ডয়চে ভেলে৷ পাঠকের জন্য গ্যালারি আকারে সেসব ছবি প্রকাশ করা হলো৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মারধর
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন রাজশাহীর বাগমারায় নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘর্ষ চলাকালে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের পেটায় বিএনপি সমর্থকরা৷ পাঁচ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের সময় বিরোধী দলের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংঘর্ষে আহতকে সহায়তা
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় নির্বাচন চলাকালে সংঘর্ষে আহত এক ব্যক্তিকে সহায়তা করছেন অন্যরা৷ নির্বাচন চলাকালে একশো’র বেশি ভোটকেন্দ্রে হামলা চালায় নির্বাচন বিরোধীরা৷ সহিংসতা এবং ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়ার কারণে ১৩৯টি ভোটকেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আগুনে পোড়া ভোট কেন্দ্র
নির্বাচনের দিন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার আজিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা৷
ছবি: DW
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
গাইবান্ধায় ভোট গ্রহণ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় স্লোগান দিচ্ছে নির্বাচন বর্জন করা বিরোধী দলের সমর্থকরা৷ বিরোধী দলবিহীন রবিবারের নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল৷ তাছাড়া এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি মহলে প্রশ্ন উঠেছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন পর্যবেক্ষণ থেকে বিরত থেকেছে৷
ছবি: Reuters
আহতকে সেবা
গাইবান্ধায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত এক ব্যক্তিকে ঘিরে রেখেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা৷ রবিবারের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর বিরোধী দল বিএনপি ‘‘নির্বাচনের ফলাফল বাতিল ও ভোটের দিন সারা দেশে নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে’’ সোমবার সকাল ছ’টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান করেছে৷
ছবি: Reuters
ভোটকেন্দ্রে হামলা
বগুড়ার একটি ভোটকেন্দ্রে হামলা চালায় নির্বাচন বিরোধীরা৷ এসময় তারা ভোটকেন্দ্রে রাখা ব্যালট বাক্স ভাঙচুর করে এবং তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়া৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
ভোটকেন্দ্রের সামনে আগুন
বগুড়ার একটি ভোটকেন্দ্রের সামনে নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্যে আগুন ধরিয়ে দেয় নির্বাচন বিরোধীরা৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
লাঠিসোঁটা নিয়ে উচ্ছ্বাস
বগুড়ার একটি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচন বিরোধীরা হামলা চালানোর পর লাঠিসোঁটা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা৷ ঐতিহাসিকভাবে বগুড়া বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
সন্দেহভাজনকে আটক
বগুড়ায় একটি ভোটকেন্দ্রে হামলায় সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে আটক করছে পুলিশ৷ নির্বাচন চলাকালে অনেক ভোটকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে নির্বাচন বিরোধীরা৷ এসময় হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
বাদ যায়নি বাড়িও
বগুড়ার এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হামলা চালায় নির্বাচন বিরোধীরা৷ হামলার পর আগুনে পোড়া অবশিষ্টের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পাওয়া যায় কিনা, তা খুঁজে দেখছেন সেই নেতার এক আত্মীয়া৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
টায়ার জ্বেলে অবরোধ সৃষ্টি
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন নারায়ণগঞ্জে সড়কে টায়ার জ্বেলে অবরোধ সৃষ্টি করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা৷
ছবি: DW
আহত ভোটার
ঢাকায় বিরোধী দলের সমর্থকদের ছোড়া হাতে তৈরি বোমার আঘাতে আহত এক ভোটার৷ ভোট গ্রহণ চলাকালে নির্বাচন বিরোধীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রে বোমা ফাটিয়েছে৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
12 ছবি1 | 12
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘দলের তহবিল বাড়াতে এখন ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হচ্ছে৷ বহুদলীয় গণতন্ত্র থেকে একচ্ছত্র দলতন্ত্রের বিকাশ ঘটছে৷ বড় দলগুলো বিশেষত সরকারি দল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘দখলে' নিয়ে নিজেদের পক্ষে ব্যবহার করছে৷ সুশীল সমাজ, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সবখানে পড়েছে দলীয়করণের প্রভাব৷ ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোও দলীয় রাজনীতির বলয়ে আবদ্ধ৷''
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যে উন্নয়ন আমরা দেখছি তাকে বলা যায় একটা ‘আনইভেন গ্রোথ'৷ এটাকে ভালো বলার কোনো উপায় নেই৷ কারণ রাজনৈতিক সংঘাত এই উন্নয়নকে স্থিতিশীল হতে দেবে না৷''
তিনি বলেন, ‘‘৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর আসল বিরোধী দল বাইরে৷ আর বিরোধী দল বলতে যাঁরা আছেন, তাঁরা আবার সরকারেই বসেছেন৷ এটা একটা অদ্ভুত রাজনৈতিক পরিস্থিতি৷ এই অবস্থা যতদিন চলবে, ততদিন দেশে প্রকৃত উন্নয়ন হবে না৷''
এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অধ্যাপক আহমেদ বলেন, ‘‘সরকারি দল এখন চাইছে সব কিছু ঠিক-ঠাক আছে কিনা, তা দেখাতে৷ এ জন্য তারা নানা কৌশল নিচ্ছে৷ ওদিকে বিএনপি চাইছে দেশ যে ঠিকমত চলছে না, তা দেখাতে৷ ফলে সার্বক্ষণিক এক ধরণের সংঘাত লেগেই আছে৷ বিএনপি যখন এই সংঘাতকে আরো স্পষ্ট করার সক্ষমতা অর্জন করবে, তখন তা রাজপথের সংঘাতে রূপ নেবে৷ তাই ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যতদিন না একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান আসবে, ততদিন দেশে প্রকৃত অর্থে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসবে না৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘দেশে রাজনৈতিক বিরোধিতা নেই, যেটা গণতন্ত্রে দরকার৷ আছে রাজনৈতিক শত্রুতা আর প্রতিহিংসা, যা সব উন্নয়নকে শেষ পর্যন্ত বিপর্যস্ত করে দেবে৷''
মালোপাড়ার হিন্দুদের কান্না থামেনি
বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেয়াকে ঘিরে যশোরের অভয়নগর উপজেলার মালোপাড়ায় ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় হিন্দুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ার পাশাপাশি লুটপাটও করা হয়৷
ছবি: DW
নেই নিরাপত্তাকর্মীর সাড়া
যশোরের অভয়নগরের চাপাতলী গ্রামের প্রবেশপথে পুলিশের সতর্ক অবস্থান৷ গত ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের দিন এই গ্রামের নিম্নবর্ণের হিন্দু অধ্যুষিত মালোপাড়ায় বসবাসরতদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে৷ আক্রান্তরা জানান, ঘটনাস্থলের মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে থানার অবস্থান হলেও অনেক ফোন করেও সে সময়ে পুলিশ কিংবা কোনো নিরাপত্তাকর্মীর সাড়া মেলেনি৷
ছবি: DW
‘নদী ঠাকুর’
দুর্বৃত্তদের হামালায় লণ্ডভণ্ড মায়া রানি বিশ্বাসের একমাত্র মাথা গোঁজার ছোট্ট নিবাস৷ সেদিন হামলা শুরু হলে পাশের বুড়ি ভৈরব নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ওপারে উঠে প্রাণে বেঁচে যান বিধবা এই নারী৷ তাঁর ভাষায় ‘নদী ঠাকুর’ সেদিন না থাকলে জানটা হয়ত থাকতো না৷
ছবি: DW
প্রাণ বাঁচাতে নদীতে
নিজের ঘরের ভাঙা আসবাব, টেলিভিশনের পাশে মালোপাড়ার গৃহবধু উজ্জ্বলা বিশ্বাস৷ হামলাকারীদের ভয়াবহ রূপ সামান্য দেখেছিলেন তিনি৷ প্রাণ বাঁচাতে তিনিও ঝাঁপ দেন বুড়ি ভৈরবে৷ হামলার সময়ে তাঁর মনে হয়েছিল যে ভগবান সেদিন পাশে ছিলেন না৷
ছবি: DW
বই-পত্র পুড়িয়ে দিয়েছে
কলেজ পড়ুয়া মঙ্গলা বিশ্বাসের বই-পত্র, এমনকি সার্টিফিকেটও পুড়িয়ে দিয়েছে হামলাকারীরা৷
ছবি: DW
সুন্দর স্বপ্নে চির
হামলাকারীদের ভেঙে দেয়া আয়নায় কলেজ পড়ুয়া মঙ্গলা বিশ্বাসের প্রতিবিম্ব৷ বাড়ির দেয়ালে টাঙানো এই ভাঙা আয়নার মতোই মঙ্গলার সুন্দর স্বপ্নেও চির ধরিয়েছে হামলাকারীরা৷ মঙ্গলার আক্ষেপ, তাঁর বই-পত্র আর সার্টিফিকেট কী দোষ করলো?
ছবি: DW
আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয়
হামলার ছয় দিন পরে এঁরা ফিরছেন বাড়িতে৷ হামলার সময় পার্শ্ববর্তী গ্রামে আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁরা৷
ছবি: DW
হামলার প্রত্যক্ষদর্শী
৮৬ বছর বয়সি মৃত্যুঞ্জয় সরকার সেদিনের হামলার প্রত্যক্ষদর্শী৷ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও দেশ ছাড়েননি তিনি৷ কিন্তু হামলার পর তাঁর মনে হচ্ছিল যে, সে সময়ে ছেড়ে যাওয়াটাই উচিত ছিল তাঁর৷
ছবি: DW
গাছও রেহাই পায়নি
বাড়ি-ঘরের পাশাপাশি মালোপাড়ার গাছও জ্বালিয়ে দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা৷
ছবি: DW
পলাতক জামায়াত নেতা
মালোপাড়ায় হামলার পরে চাপাতলী গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রাম বালিয়াডাঙ্গায় স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর থানা আমীর মাওলানা আব্দুল আজিজের বাড়ি ভাঙচুর করে যৌথবাহিনী৷ ঘটনার আগে থেকেই পলাতক রয়েছেন এ জামায়াত নেতা৷
ছবি: DW
আক্রান্তদের অভিযোগ
জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আব্দুল ওহাব৷ মালোপাড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলার জন্য জামায়াত শিবির ছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলকেও দায়ী করেছেন অনেকে৷ সাবেক এই সাংসদ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়েছেন৷ সেখানে নতুন প্রার্থী হিসেবে রণজিৎ রায় মনোনয়ন পাওয়ায় এই দুই জনের সমর্থকদের মাঝে বেশ উত্তেজনা ছিল পুরো নির্বাচনের সময়টায়৷
ছবি: DW
গণধর্ষণ
যশোরের আরেক ভয়াল জনপদ মনিরামপুর উপজেলার হাজরাইল গ্রামের দাসপাড়ার বাসিন্দা অনারতী দাস৷ ৭ জানুয়ারি রাতে তাঁর সামনেই অস্ত্রের মুখে একদল দুবৃত্ত গণধর্ষণ করে পুত্রবধু মনিমালা দাস আর ভাতিজি রূপালী দাসকে৷
ছবি: DW
ভয়াবহ দৃশ্যের প্রত্যক্ষদর্শী
কার্তিক দাসকেও সেদিন রাতে সেই ভয়াবহ দৃশ্যের প্রত্যক্ষদর্শী হতে হয়েছিল৷ দাসপাড়ায় গণধর্ষণের শিকার নিম্নবর্ণের হিন্দু মনিমালা দাসের শ্বশুর ও রূপালী দাসের চাচা তিনি৷
ছবি: DW
বাড়িঘর ছেড়েছেন
দাসপাড়ায় গণধর্ষণের শিকার হওয়া পরিবার দুটি আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়েছেন৷
ছবি: DW
শুধুই আতঙ্ক
দাসপাড়ার এক নারী৷ দাসপাড়ার নারীদের এখন নির্ঘুম রাত কাটে আতঙ্কে৷