1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাজনীতির কুনাট্যে সরগরম ভবানীপুর

গৌতম হোড়
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

বৃহস্পতিবার ভবানীপুরের উপনির্বাচন। কিন্তু  তার প্রচার ঘিরে যা হলো, তা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।

ভবানীপুর উপনির্বচন নিয়েও উত্তেজনা চরমে। ছবি: Satyajit Shaw/DW

বহু বছর আগে মাইকেল মধুসূদন দত্ত লিখেছিলেন, 'অলীক কুনাট্য রঙ্গে, মজে লোক রাঢ়-বঙ্গে'। ভবানীপুর কেন্দ্রের উপনির্বাচনে যে কাণ্ডকারখানা হচ্ছে, তা দেখে মাইকেলের কথাটা বড় বেশি মনে পড়ে যাচ্ছে। তবে এখানে কুনাট্য হচ্ছে রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে। আর সেখানে প্রধান সব কুশীলব এমন সব কাণ্ড করছেন, কথা বলছেন তা দেখে চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার জোগাড়।

একটা বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন ঘিরে যে ধরনের ঘটনা ঘটছে, তা ভারতের অন্য কোনো রাজ্যের অন্য কোনো নির্বাচনে এখন কল্পনাতীত। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও কোথাও এরকম ছবি দেখা যায় না। কিন্তু রাজ্যটা যেহেতু পশ্চিমবঙ্গ, আর সহিংস রাজনীতি যেহেতু এখন পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং মুখ্যমন্ত্রী যেহেতু নন্দীগ্রামে হেরে এবার ঘরের কেন্দ্রে লড়ছেন, তাই উত্তেজনা, নাটকীয় ঘটনা, অশোভনীয় কার্যকলাপের কোনো খামতি নেই।

মৃতদেহ সামনে রেখে

দিন পাঁচেক আগের ঘটনা। মগরাহাটে ভোট পরবর্তী সহিংসতায় আহত বিজেপি নেতা মানস সাহার মৃত্যু হয়েছে সেদিন। আর তার মৃতদেহ নিয়ে সোজা ভবানীপুরে হাজির বিজেপি-র সদ্য মনোনীত রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, অর্জুন সিং, বিজেপি প্রার্থী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়ালরা। সেই মৃতদেহ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির দিকে মিছিল করার চেষ্টা। দেহ রাস্তায় নামিয়ে বিক্ষোভ। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ। ধুন্ধুমার কাণ্ড।

সহিংসতা সবসময়ই নিন্দনীয়। সেই সহিংসতায় যদি কোনো মৃত্যু হয়, তা আরো নিন্দনীয়, অনভিপ্রেত এবং ভোটের আগে ও পরে পশ্চিমবঙ্গে যে রাজনৈতিক সহিংসতা হয়েছে, তা লজ্জাজনক। একসময় রাজনৈতিক সহিংসতার জন্য কুখ্যাত উত্তর প্রদেশ, বিহার পর্যন্ত এখন শান্ত। যত কাণ্ড শুধু পশ্চিমবঙ্গেই। কলকাতার মিনিবাসে যেমন কেবলই পিছনের দিকে এগিয়ে যেতে বলা হয় যাত্রীদের, পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সংঘর্ষও সেরকম শুধু পিছনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কাহিনি।

কিন্তু তাই বলে মৃতদেহকে সামনে রেখে রাজনীতি, তা মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা, উত্তেজনা ছড়ানো কি শোভনীয় রাজনীতি? না কি এই ধরনের কাণ্ড করলে টিভি ও সংবাদপত্রে জায়গা পাওয়া যায় বলে তা করতেই হবে?

মমতার প্রতিক্রিয়া এবং পচা কুকুর

এর জবাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘আর তুমি আমার বাড়ির সামনে ডেড বডি নিয়ে চলে যাচ্ছো? তোমার বাড়ির সামনে যদি আমি পাঠিয়ে দিই একটা কুকুরের ডেডবডি? ভাল হবে? মেশিনারি আমার কাছে নেই? এক সেকেন্ড লাগবে। পচা কুকুর তোমার বাড়ির সামনে ফেলে আসবো। তুমি খেতে পারবে না ১০ দিন গন্ধে। বদমাইশি করতে চাইলে কী না করা যায়।''

এখানেও কি শোভনীয়তার লক্ষ্মণরেখা পিছনে চলে গেল না? যার মৃতদেহ নিয়ে বিজেপি কর্মীরা ওই  কাজ করেছেন, তিনি তো একজন রাজনৈতিক কর্মী। মানুষ। পচা কুকুরের প্রসঙ্গ আসে কী করে?

প্রচারে বাধা

ভবানীপুর কেন্দ্রের মধ্যেই হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে মমতার বাড়ি। এখন সেখানে কড়া পুলিশি প্রহরা। বিজেপি প্রার্থীর অভিযোগ, তাকে ওদিকে প্রচার করতে দেয়া হয়নি। সিপিএম প্রার্থী শ্রীজীব বিশ্বাস দলের নেতাদের নিয়ে প্রচারে গেলে তাদের আটকে দেয়া হয়। তারপর নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নিয়ে পাঁচজন গিয়ে প্রচার করেন। প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রের সব বাড়িতে প্রচারে যাওয়ার অধিকার তো তাদের আছে। নিয়ম মেনে প্রচার করলে অসুবিধা কোথায়? মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতেও বিজেপি ও সিপিএমের প্রার্থীরা ভোট চাইতে যেতে পারেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ভোট মানে শত্রুতা, চরম উত্তেজনা, তুনীরের যাবতীয় তির বের করে সমানে আক্রমণ করে যাওয়া। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার প্রশ্নও আছে। আর প্রচারও করতে দিতে হবে। দুয়ের মেলবন্ধন তো অসম্ভব কোনো ব্যাপার নয়। 

প্রচারে নেমে ঢাক বাজাচ্ছেন বিজেপি প্রার্থী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল। ছবি: Satyajit Shaw/DW

দিলীপ ঘোষ কাণ্ড

ভবানীপুরে প্রচারে গেছিলেন দিলীপ ঘোষ। বিজেপি-র সভাপতি পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্তরে সহ সভাপতি করা হয়েছে। কিন্তু তিনি বলে দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গেই তিনি কাজ করবেন। ভবানীপুরেও প্রচারে গেছেন। তারপরই গন্ডগোল। দিলীপ ঘোষ ও বিজেপি কর্মীদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ। ধাক্কাধাক্কি। পরিস্থিতি দেখে দিলীপের দেহরক্ষীরাও পিস্তল তাক করে। সবমিলিয়ে কেলেঙ্কারি কাণ্ড। বিরোধী নেতা প্রচারে গিয়েছেন। তাকে ধরে ধাক্কা মারাটা এবং দেহরক্ষীদের পিস্তল তাক করা দুটি ঘটনাই সমান ভয়ংকর। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে এটাই দস্তুর।

হাইকোর্টের রায়

তার উপর কলকাতা হাইকোর্ট মঙ্গলবার  বলেছে, ভবানীপুরে নির্বাচন করানো নিয়ে মুখ্যসচিব নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে ভুল করেছিলেন। আনন্দবাজার জানাচ্ছে, আদালত বলেছে, মুখ্যসচিব কমিশনকে চিঠি দিয়ে অধিকারের সীমা লঙ্ঘন করেছেন।  এক জনের স্বার্থরক্ষার জন্য এত খরচ কে বহন করবে? তবে ভবানীপুরের উপনির্বাচনে স্থগিতাদেশ দেয়নি হাইকোর্ট। তাই উপনির্বাচন হচ্ছে।

টার্গেট নিয়ে

তৃণমূলের লক্ষ্য মমতার রেকর্ড ভোটে জয়। আর বিজেপি চাইছে, অন্ততপক্ষে গত বিধানসভায় হারের মার্জিন কমিয়ে আনা। সেটা করতে পারলেই তাদের নৈতিক জয় হবে। তাদের মনে হচ্ছে, নন্দীগ্রামের পর অঘটন যদি হয়। কিন্তু এই টার্গেটে পৌঁছতে গিয়ে যা হচ্ছে তা বলার নয়।

এই উপনির্বাচন, তার উত্তেজনা, রাজনৈতিক দলগুলির ব্যবহার বুঝিয়ে দিচ্ছে, মাইকেলই ঠিক, পশ্চিমবঙ্গ সত্যিই 'অলীক কুনাট্য রঙ্গে' মজে আছে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ