আফগানিস্তানে নারী নির্যাতন বিরোধী নতুন একটি আইন হতে যাচ্ছে৷ প্রথমে শুনে খবরটা আনন্দের মনে হলেও, আসলে হতে যাচ্ছে উল্টোটাই৷ আইনটি অনুমোদন হলে আফগান নারীরা কিন্তু আইনি সহায়তা থেকে বঞ্চিতই হবেন৷
বিজ্ঞাপন
নতুন এই আইনটির কথা মঙ্গলবার জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷ সেখানে বলা হয়েছে, এই আইনটি অনুমোদন হলে হয়রানির প্রতিরোধে আইনি সহায়তা থেকে একরকম বঞ্চিত হবেন নারীরা৷ এরই মধ্যে পার্লামেন্টে উচ্চ ও নিম্ন কক্ষে আইনের খসড়াটি পাস হয়েছে৷ তবে আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই এতে সই না করায় খসড়াটি এখনও আইনে পরিণত হয়নি৷ আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অবশ্য এটি প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো হবে৷
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, নতুন এই আইন কার্যকর হলে সম্ভাব্য অপরাধী এবং নির্যাতনের শিকার কোনো নারীর আত্মীয়কে আইনজীবীরা জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন না৷ অর্থাৎ পারিবারিক নির্যাতনের শিকার নারী, যাঁকে শিশু বয়সে বিয়ে দেয়া হচ্ছে বা হয়েছে, বা যাঁর ওপর নির্যাতন করা হয়েছে, তাঁর পরিবারের সদস্যদের সামনে ঘটনাটি ঘটলেও তাঁরা সাক্ষ্য দিতে পারবেন না৷
আফগানিস্তানে জীবন ও যুদ্ধ
দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানের ছবি তুলছেন ইরানের ফটোগ্রাফার মাজিদ সাঈদি৷ ছবিগুলো অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কারও এনে দিয়েছে তাঁকে৷ চলুন তাঁর ক্যামেরার চোখে দেখা যাক আফগানিস্তানকে৷
ছবি: Majid Saeedi
খেলনা!
কাবুলে যু্দ্ধাহতদের জন্য তৈরি একটা নকল হাত নিয়ে খেলছে দুই কিশোরী৷ এমন কিছু ছবিই তেহরানের মাজিদ সাঈদিকে এনে দিয়েছে বেশ কিছু পুরস্কার৷
ছবি: Majid Saeedi
ছবিই বলে হাজার কথা
১৬ বছর বয়স থেকে ছবি তুলছেন মাজিদ৷ মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের কারণে মানবিক বিপর্যয়ের দিকেই তাঁর সমস্ত মনযোগ৷ জার্মানির ডেয়ার স্পিগেল, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমসের মতো ম্যাগাজিন এবং আন্তর্জাতিক পত্রিকায় ছাপা হয় তাঁর তোলা ছবি৷
ছবি: Majid Saeedi
আফগানিস্তানের শিশুরা
ডিডাব্লিউকে সরবরাহ করা মাজিদের ছবির অনেকগুলোতেই ফুটে উঠেছে আফগান শিশুদের জীবনে যুদ্ধের প্রভাব৷ এ ছবিটি যুদ্ধের কারণে হাত হারানো এক আফগান শিশুর৷
ছবি: Majid Saeedi
মাদকের অভিশাপ
আফগানিস্তানের খুব বড় এক সমস্যা মাদক৷ বলা হয়ে থাকে বিশ্বের শতকরা ৯০ ভাগ মাদকদ্রব্যই নাকি উৎপন্ন হয় আফগানিস্তানে৷ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আফিম হয় দেশটিতে৷ দেশের অনেক নাগরিক আফিমসেবী৷ জাতিসংঘের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আফগানিস্তানের অন্তত তিন লক্ষ শিশু নিয়মিত আফিম সেবন করে৷
ছবি: Majid Saeedi
রোল কল
কাবুলের এক অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ শুরুর আগে ক্যাডেটদের রোল কল চলছে৷ জার্মান সেনাবাহিনী ‘বুন্ডেসভেয়ার’ আফগান নিরাপত্তাকর্মীদের অনেক আগে থেকেই প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল৷ প্রশিক্ষণের লক্ষ্য, আফগান সেনাবাহিনী এবং পুলিশকে দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় আত্মনির্ভরশীল করে তোলা৷ ২০১৪ সালের শেষেই অবশ্য আফগানিস্তান থেকে নিজেদের সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে জার্মানি৷
ছবি: Majid Saeedi
ভয়ংকর শৈশব
স্কুলে লেখাপড়া করতে যাওয়ার সুযোগ শিশুদের কমই মেলে৷ স্কুলে গেলে নগণ্য কারণেও হতে হয় শিক্ষকের কঠোর শাসনের শিকার৷ তা সহ্য করেও পুরো সময় থাকা হয়না, পরিবারের জন্য টাকা রোজগার করতে আগেভাগেই স্কুল থেকে বেরিয়ে পড়তে হয় তাদের৷ আফগানিস্তানে শিক্ষার হার খুবই কম৷ ২০১১ সালে জার্মান সরকারের উদ্যোগে একটি তথ্যবিবরণী প্রকাশ করা হয়েছিল৷ তখন আফগানিস্তানের শতকরা ৭২ ভাগ পুরুষ আর ৯৩ ভাগ নারীই ছিল নিরক্ষর৷
ছবি: Majid Saeedi
বোরখা এবং পুতুল
আফগান নারীরা পুতুল বানাতে শেখার ক্লাসে৷ মালয়েশিয়ার একটি বেসরকারি সংস্থার অর্থায়নে এখানে পুতুল বানাতে শেখানো হয় তাঁদের৷ আফগান নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্যই এ উদ্যোগ৷
ছবি: Majid Saeedi
তালেবানের প্রতিশোধ
২০১১ সালে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করার পরই আফগানিস্তানে হামলা চালায় তালেবান৷ প্রতিশোধমূলক সে হামলায় প্রাণ যায় চারজনের, আহত হয়েছিলেন ৩৬ জন৷ ছবিতে দু’জন আহতকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Majid Saeedi
খেলাধুলা
হাড়ভাঙা খাটুনি শেষে একটু বিশ্রাম৷ আফগানিস্তানে শরীর চর্চা খুব জনপ্রিয়৷
ছবি: Majid Saeedi
যুদ্ধের আবাদ
গত ৩০টি বছর ভীষণ প্রভাব ফেলেছে আফগানদের জীবনে৷ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যায় যুদ্ধের প্রভাব৷
ছবি: Majid Saeedi
মাদ্রাসা
কান্দাহারের মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত শিশুরা৷
ছবি: Majid Saeedi
হত্যার প্রশিক্ষণ
কুকুরের লড়াইও আফগানিস্তানে খুব জনপ্রিয়৷ কুকুরদের এমনভাবে লড়াই করতে শেখানো হয় যাতে তারা প্রতিপক্ষকে একেবারে মেরে ফেলে৷ কুকুরের জীবনেও যুদ্ধের প্রভাব!
ছবি: Majid Saeedi
12 ছবি1 | 12
এর ফলে নির্যাতিতের পক্ষে যাঁরা লড়বেন তাঁদের জন্য আইনি প্রক্রিয়াটা ভীষণ জটিল হয়ে দাঁড়াবে৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস সম্ভাব্য এই আইনের একটা অন্য জটিলতাও তুলে ধরেছেন৷ তিনি জানান, এটা যদি আইনে পরিণত হয়, তবে আত্মীয়দের দ্বারা নিগৃহীত নারীরা আইনি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবেন৷ কেননা এমন অনেক আত্মীয় আছেন, যাঁরা কেবল নির্যাতনই নয় নারীদের পাচার ও বিক্রির সাথেও জড়িত ৷
নিউ ইয়র্কভিত্তিক এই সংস্থাটি জানায়, আফগানিস্তানে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা নির্মূল বা ইভিএডাব্লিউ-এর যে আইনটি রয়েছে, নতুন আইনটি আসলে তার বিরুদ্ধে যাবে৷ ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই কট্টরপন্থি ইসলামি নেতা এবং রাজনীতিবিদদের বিরোধিতা সত্ত্বেও ঐ আইনটি অনুমোদন করেন৷ আইনটিতে নারী নিগ্রহ, যেমন ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন, বাল্য বিবাহ, জোরপূর্বক বিয়েসহ ২২টি বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল৷
এদিকে, মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, কারজাই তাঁর সরকারের সাথে তালেবান জঙ্গিদের শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য গোপনে বৈঠক করেছেন৷ তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারজাইয়ের মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷ তবে মুখপাত্র এটুকু জানিয়েছেন, গত দু'মাস ধরে দু'পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে, যা ইতিবাচক৷
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামী এপ্রিলের নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই কারজাই দেশের নানা আইন ও বিভিন্ন পদক্ষেপে পরিবর্তন আনছেন৷ এ কারণেই হয়ত তালেবানের সাথে আলোচনা এবং তার ফলস্বরূপ নারী নির্যাতন বিরোধী আইনে এই পরিবর্তন৷