1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
বিচার ব্যবস্থাবাংলাদেশ

রাজনীতি ও বিচার ব্যবস্থা: মৃত ব্যক্তিও সাজা পেলেন

৮ ডিসেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে৷ গত কয়েক মাসে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অতীতে দায়ের হওয়া মামলায় একের পর এক রায় ও দণ্ড হওয়ায় এই অভিযোগ করছেন বিএনপি নেতারা৷

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
(ফাইল ছবি) সাড়ে তিন মাসে বিএনপির ৮১৪ নেতা-কর্মীকে সাজা দিয়েছে দেশের বিভিন্ন আদালত৷ছবি: Getty Images/AFP/Strdel

তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক কারণে কোনো মামলার রায় হচ্ছে না- যা হচ্ছে তা আইনি প্রক্রিয়া মেনে হচ্ছে৷

দেশে লাখ লাখ মামলা জট থাকলেও বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে৷

সাড়ে তিন মাসে বিএনপির ৮১৪ নেতা-কর্মীর সাজা

একইদিনে বিএনপির ৩০-৪০ জন নেতা-কর্মীর বিভিন্ন মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হচ্ছে৷ এই মামলাগুলোর অধিকাংশরই বাদী পুলিশ৷ মামলাগুলো বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি চলাকালে ভাঙচুর, আগুন, নাশকতা ও পুলিশের ওপর হামলার মামলা৷ গত সাড়ে তিন মাসে মোট ৫২টি মামলায় বিএনপির ৮১৪ জন নেতা-কর্মীর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে৷

বুধবারও (৬ ডিসেম্বর) তিনটি মামলায় বিএনপির ৪৬ জন নেতা-কর্মীকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ যে তিনটি মামলায় সাজা হয়েছে তা ২০১৮ সালের মামলা৷

একটি মামলা ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ক্যান্টনমেন্ট থানায় দায়ের করা৷ ওই মামলার বাদী পুলিশ৷ মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ভাঙচুর ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ছোড়া হয়৷ এতে চার পুলিশ সদস্য আহত হন৷

২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর কোতয়ালী থানায় পুলিশের দায়ের করা আরেকটি মামলায় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে যানবাহন ভাঙচুর এবং পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করা হয়৷ ওই সময়ে দুইজন পুলিশ সদস্য আহত হন৷

২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর শাহআলি থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ করে পুলিশ৷

স্থগিতাদেশ থাকার পরও রায় দেওয়ার অভিযোগ

গত ৪ ডিসেম্বর বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের ১৫ জন নেতা-কর্মীকে ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর সবুজবাগ থানায় দায়ের করা একটি মামলায় তিন বছর ছয়মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়৷ মামলার আইনজীবীদের অভিযোগ, ওই মামলাটির কার্যক্রম হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত থাকার পরও তা উপেক্ষা করে মামলার রায় দেওয়া হয়৷

এই মামলার আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মাসুদ মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘‘বিএনপির মিছিল, সমাবেশকে কেন্দ্র করে ২০১২ সালে সবুজবাগ থানায় মামলাটি হয়৷ ১৫ জনকে আসামি করা হয়৷ ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট এই মামলার সকল কার্যক্রম স্থগিত করেন এবং রুল দেন৷ এখনো সেই অবস্থায় আছে৷ বিচার আদালতে হাইকোর্টের আদেশের সার্টিফায়েড কপিও দেয়া হয়েছে৷ রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী কিছুদিন আগে বললেন বিএনপির বিরুদ্ধে সকল মামলার রায় দিতে হবে৷ তারপর আদালত সাক্ষী তলব করে মামলার রায় দেয়৷ ১৫ জনকে সাড়ে তিন বছর করে কারাদণ্ড দেয়৷ যা বেআইনি এবং অন্যায়৷''

তিনি বলেন, ‘‘শুধু বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার রায় দিতে হবে এই একটি মানসিকতা নিম্ন আদালতের বিচারকদের মধ্যে তৈরি হয়ে গেছে৷ এটি একটি রাজনৈতিক মামলা৷ বিচারক হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন৷ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এবং রায় প্রত্যাহার করা উচিত৷ আমরা এটা নিয়ে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেব৷''

মৃত ব্যক্তির সাজা!

মৃত ব্যক্তিকে দণ্ড বা মামলার আসামি করার একাধিক নজির আছে৷ নজির আছে গায়েবি মামলার৷ গত ৩ নভেম্বর গাজীপুরের কাপাসিয়ায় একটি নাশকতার মামলায় এক মৃত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়৷ বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির ওই মামলায় স্থানীয় বিএনপির ২২ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়৷ তার মধ্যে ১৮ নাম্বার আসামি করা হয়েছে মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন মোল্লাকে৷ বয়স লেখা হয়েছে ৪৫ বছর৷ তিনি আসলে ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি মারা গেছেন৷

একইভাবে ২৪ জুলাই ঢাকার মিরপুরের বাংলা কলেজ এলাকায় ভাঙচুরের মামলার আসামিদের মধ্যে দুই জন বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম ও আব্দুল জব্বার৷ আব্দুল জব্বার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর৷ আর শফিকুল ইসলামও ঘটনার ৯ মাস আগে মারা যান৷

এদিকে ২৩ ও ২৯ নভেম্বর বিএনপির দুই মৃত ব্যক্তিকে সাজা দিয়েছেন আদালত৷ সবুজবাগ থানায় ২০১২ সালে করা এক মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ১৫ নেতাকর্মীকে ২৯ নভেম্বর দুই বছর ৬ মাস কারাদণ্ড দেন আদালত৷ এরমধ্যে ২০২১ সালের ১৩ জুলাই মারা যাওয়া ৭৩নং ওয়ার্ড বিএনপির নেতা সোহরাওয়ার্দী চেয়ারম্যানকেও সাজা দেয়া হয়েছে৷

আর ২০১৭ সালে করা পল্টন থানার এক মামলায় ২৩ নভেম্বর বিএনপির ৩৬ নেতাকর্মীকে চার বছরের কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১৭ দিন কারাদণ্ড দেওয়া হয়৷ এর মধ্যে রায়ের আদেশে উল্লিখিত ১২ নাম্বার আসামি তানভীর আদিল খান বাবু মারা গেছেন বলে জানান তার আইনজীবী আবু বক্কর৷

‘আগে এরকম দেখিনি'

সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘‘আদালতকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মানুষ কথা বলছে৷ এটা তো এমনিতেই বলছেন না৷ হঠাৎ করে দেখা যাচ্ছে দ্রুত কিছু মামলার রায় হয়ে যাচ্ছে৷ ওই মামলাগুলোর আসামি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা৷ আবার কেউ বার বার জামিন চেয়েও পাচ্ছে না৷ কিন্তু কেউ আবার অল্প সময়ের মধ্যে জামিন পেয়ে দল পরিবর্তন করে নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন৷ ফলে আদালতকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের কথা উঠছে৷ আগে আমরা এরকম দেখিনি৷''

আইনে রাজনৈতিক মামলা বলে কিছু নেই: আইনজীবী মনজিল মোরসেদ

This browser does not support the audio element.

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আইনে রাজনৈতিক মামলা বলে কিছু নেই৷ তবে রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কোনো ভাঙচুর বা পুলিশের সঙ্গে মারামারি- এসব ঘটনা ঘটে৷ এই ঘটনায় মামলা হলে সেখানে রাজনৈতিক উপাদান থাকে বলে আমরা রাজনৈতিক মামলা বলি৷ রাজনৈতিক মামলা আজকের নয়৷ বহু বছর ধরেই হচ্ছে৷ এইসব মামলায় আসলে শেষ পর্যন্ত কিছু হয় না৷ এরশাদ ও বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অনেক রাজনৈতিক মামলা হয়েছে৷ ওইসব মামলায় তো আমরা তেমন কিছু হতে দেখিনি৷ এখন হঠাৎ করে শাস্তি শুরু হওয়ার কারণে এটা নিয়ে কথা হচ্ছে৷''

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) গত ২৬ নভেম্বর বলেছে, ‘‘সাধারণ নির্বাচনের আগে প্রতিযোগিতা দূর করতে বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক ও সহিংস দমন-পীড়ন শুরু হয়েছে এবং ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশের দিন থেকে এপর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ গ্রেপ্তার হওয়া অধিকাংশই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতাকর্মী৷ তাদের একটি বড় অংশের বিরুদ্ধে বিচারিক ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে৷'' বিএনপির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এইচআরডাব্লিউ জানায়, দলটির প্রায় ৫০ লাখ সদস্যের অর্ধেকই বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিচারের সম্মুখীন৷

‘আদালতকে সরকার রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে তা স্পষ্ট‘

This browser does not support the audio element.

রাজনৈতিক বিবেচনায় কাজ

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘‘আদালতকে যে এই সরকার রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে তা নানা ঘটনায় স্পষ্ট৷ এটা শুধু আমরা বলছি না আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও বলছে৷ হঠাৎ করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা পুরনো মামলায় দণ্ড দেওয়া শুরু হয়েছে গত তিন-সাড়ে তিন মাস ধরে৷ যে মামলায় ৫০ জন সাক্ষী আছে সেই মামলায় চারজনের সাক্ষ্য নিয়ে রায় দিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ ফৌজদারি মামলার বিধান মতে আসামিদের এবং সাক্ষীদের কোনো সমন দেয়া হচ্ছে না৷ পলাতক থাকলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে না৷''

তার কথা, ‘‘মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে৷ আবার সেই মৃত ব্যক্তিকে শাস্তিও দেওয়া হচ্ছে৷ হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করার পরও সেই মামলায় শাস্তি দিচ্ছে বিচার আদালত৷ তারা কোনো বিচারিক নিয়ম-নীতি অনুসরণ করছেন বলে মনে হচ্ছে না৷ তারা কাজ করছেন রাজনৈতিক বিবেচনায়৷''

‘এখন সাক্ষীদের রিয়েলাইজেশন হয়েছে যে সাক্ষ্য দেয়া প্রয়োজন'

তবে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আবু এই সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘কোনো রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলার রায় হচ্ছে না৷ এই সব মামলা অনেক পুরনো৷ দীর্ঘদিন ধরেই মামলার বিচারকাজ চলছিল৷ সাক্ষ্য নেয়া হচ্ছিল৷ ধারাবাহিক প্রক্রিয়াই মামলার রায় হচ্ছে৷''

কোনো রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলার রায় হচ্ছে না: আব্দুল্লাহ আবু

This browser does not support the audio element.

হঠাৎ করে একের পর এক রায় কেন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এতদিন সাক্ষীরা আসেনি৷ এখন সাক্ষীদের মধ্যে রিয়েলাইজেশন হয়েছে যে সাক্ষ্য দেয়া প্রয়োজন তাই তারা আদালতে সাক্ষী দিতে আসছেন৷ মামলার রায় হচ্ছে৷ আমরা তো আর সাক্ষীদের ফিরিয়ে দিতে পারি না৷ আর যাদের বিরুদ্ধে রায় হচ্ছে তাদের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তো রায় হচ্ছে৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘কোনো আসামি মারা গেলে তা তো আসামি পক্ষকে আদালতে জানাতে হবে৷ পুলিশও জানাতে পারে৷ না জানালে বিচারক জানবেন কীভাবে? এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি৷ আর উচ্চ আদালত কোনো মামলার বিচার স্থগিত করলে বিচার আদালতে তার রায় হতে পারে না৷ কিন্তু সেটাও তো আসামি পক্ষকে আদালতে জানাতে হবে৷ তারা জানায়নি৷ এটা আসামি পক্ষের দায়৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ