ড্যুসেলডর্ফের গবেষকরা জরিপ করে দেখেছেন যে, আজকাল রাজনীতিতেও সুন্দর মুখের জয়৷ ‘সুশ্রী' প্রার্থীরা নাকি অপেক্ষাকৃত ‘কুশ্রী' প্রার্থীদের চেয়ে পাঁচ শতাংশের বেশি ভোট পাবার আশা করতে পারেন৷
বিজ্ঞাপন
অধ্যাপক উলরিশ রোজার বিষয়টি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন ২০০২ সালে৷ ড্যুসেলডর্ফের সমাজতত্ত্ববিদরা সেই গবেষণাই আরো এগিয়ে নিয়ে গিয়ে দেখেছেন যে, জার্মানিতে গত সেপ্টেম্বর মাসের সংসদীয় নির্বাচনে প্রার্থীদের ‘সুশ্রীতা' বা ‘কুশ্রীতা' ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে৷ বলতে কি, এর আগের কোনো নির্বাচনে প্রার্থীদের ‘চেহারা' এই পরিমাণ গুরুত্ব পায়নি৷
প্রার্থীর দলগত আনুগত্য বা নীতি আজও ভোট পাওয়া-না-পাওয়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলেও, গবেষকরা তাঁদের জরিপে ওই দু'টি উপাদান বাদ দিয়েছেন৷
গবেষক দলের লেনা মার্শের বিবৃতি অনুযায়ী, মুখ্য রাজনৈতিক দলগুলির প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রথম দশজনের তালিকার শীর্ষে রয়েছেন বিরোধী বামদলের সাহরা ভাগেনক্নেশ্ট৷
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ভোট অনুযায়ী, বিশিষ্ট রাজনীতিকদের মধ্যে চিত্তগ্রাহীতায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন মুক্ত গণতন্ত্রী এফডিপি দলের প্রধান ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার, যিনি গত নভেম্বর মাসে তথাকথিত জামাইকা জোট সৃষ্টির পথে বাদ সাধেন৷
যে সুন্দরী প্রেসিডেন্টের জন্য অনেকেই ‘পাগল’
ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট তিনি৷ তবে প্রেসিডেন্ট হবার আগে থেকেই কোলিন্ডা গ্রাবার-কিটারোভিচ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বাড়তি মনযোগে৷ তাঁর যৌন আবেদনময় সুন্দর চেহারার জন্য এখনো অনেকেই ‘পাগল’৷
ছবি: Reuters/H. Romero
ক্রোয়েশিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট
কোলিন্ডা গ্রাবার-কিটারোভিচের সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি এখন ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট৷ অবশ্য শুধু এইটুকু বললে তাঁর কৃতিত্ব আসলে বোঝানো হয় না৷ দেশের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট তিনি!
ছবি: Getty Images/AFP/STR
বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার
২০০৫ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ক্রোয়েশিয়ার বৈদেশিক সম্পর্ক মন্ত্রী ছিলেন কোলিন্ডা গ্রাবার-কিটারোভিচ৷ তারপর ২০০৮ থেকে ২০১১ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ক্রোয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন৷ ২০১১ থেকে ২০১৪ – এই তিন বছর প্রথম নারী হিসেবে ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন ৪৭ বছর বয়সি কোলিন্ডা গ্রাবার-কিটারোভিচ৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Samad
দেশের ক্ষমতার শীর্ষে
২০১৫ সালের ডিসেম্বরেই ক্রোয়েশিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন কোলিন্ডা গ্রাবার-কিটারোভিচ৷ তখনকার বিরোধী দলীয় ‘প্যাট্রিয়টিক কোয়ালিশন’, অর্থাৎ ‘দেশপ্রেমিক জোট’-এর সদস্যরা নির্বাচনে জয় লাভের পর তাঁকেই বেছে নেয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে৷ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Andersen
দুর্নিবার আকর্ষণ
এক মাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিশেষ কিছু করে সবার মন জয় করা প্রায় অসম্ভব৷ তবে ক্রোয়েশিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট তাঁর মোহনীয় রূপ এবং আকর্ষণীয় দেহবল্লরির সুবাদে দেশের সীমানার বাইরেও কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছেন৷ তাঁর রূপে মুগ্ধ হয়ে নাকি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ ক্রোয়েশিয়ার নাগরিক হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন!
ছবি: Getty Images/AFP/STR
পর্ন তারকা এবং ভুল
কয়েকদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় সাড়া জাগিয়েছিল কয়েকটি ছবি৷ বিকিনি পরা অনিন্দ্য সুন্দরীর ছবি দেখে সবাই ‘শেয়ার’ করা শুরু করলেন৷ পত্র-পত্রিকায় লেখা শুরু হয়ে গেল, ‘‘প্রেসিডেন্ট হয়েও বিকিনি পরে সমুদ্র অবগাহন করেন ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট!’’ অনেক পরে জানা গেল, ছবির সুন্দরীকে হুবহু কোলিন্ডা গ্রাবার-কিটারোভিচের দেখালেও তিনি আসলে একজন পর্ন তারকা! ওপরের ছবিতে আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে কোলিন্ডা৷
সবচেয়ে আকর্ষণীয় বলে যে দু'জন প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন, তাঁরা ফেডারাল পর্যায়ে বিশেষ পরিচিত নন৷ তাঁরা হলেন হেসে রাজ্যের ভাল্ডেক থেকে আগত এএফডি প্রার্থী ইয়ান রাল্ফ নল্টে ও ডর্টমুন্ড শহরের একটি নির্বাচনি এলাকায় বামদলের প্রার্থী সেলিনে এর্লেনহোফার৷
সৌন্দর্যের সংজ্ঞায় বিশেষ হেরফের নেই
ড্যুসেলডর্ফের গবেষকরা বলেছেন যে, জরিপে সংশ্লিষ্ট ১২ জন মহিলা ও ১২ জন পুরুষের মধ্যে সুশ্রীতা বা কুশ্রীতার মাপকাঠি সম্পর্কে বিশেষ পার্থক্য নেই৷ ২৪শে সেপ্টেম্বর জার্মান বুন্ডেস্টাগের নির্বাচনের ১,৭৮৬ জন প্রার্থীর ছবি দেখিয়ে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের বাছাই করতে বলা হয়েছিল, কে বা কাদের তাঁরা সবচেয়ে আকর্ষণীয় বলে মনে করেন৷ সমাজতত্ত্ববিদ মার্শ বলেছেন, যেসব প্রার্থী আগে থেকেই সুপরিচিত ছিলেন, তাঁরা এই জরিপে কিছুটা সুবিধা পেয়ে থাকতে পারেন৷ অপরদিকে শিক্ষার মান, অভিবাসনের পটভূমি, অথবা নারী কিংবা পুরুষ, এ সবের কোনো কিছুই আকর্ষণীয়তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়নি৷
গতবছর প্রফেসর রোজার কোলনের ‘রুন্ডশাউ' পত্রিকাকে বলেন যে, মানুষ ‘খুবই অনুরূপ' প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে থাকেন ও আকর্ষণীয়তার ক্ষেত্রে একই ধরণের শারীরিক বৈশিষ্ট্যের সন্ধান করেন, ‘‘যেমন, আমরা সবাই জুলিয়া রবার্টসকে খুবই আকর্ষণীয় মনে করি৷''
লেনা মার্শছবি: privat
‘‘অন্য সব উপাদান সমান হলে, একজন বিশেষভাবে আকর্ষণীয় প্রার্থী একজন বিশেষভাবে অনাকর্ষণীয় প্রার্থীর চেয়ে পাঁচ শতাংশ বেশি সরাসরি ভোট প্রত্যাশা করতে পারেন'' – একজন স্থানীয় প্রার্থী ও দলীয় তালিকার এক প্রার্থীর দৃষ্টান্ত দিয়ে মার্শ মন্তব্য করেন৷
যেসব দলীয় তালিকার প্রার্থীরা বিশেষ আকর্ষণীয় বলে গণ্য হন, সেইসব তালিকা তিন শতাংশ অবধি বেশি ভোট পেয়ে থাকে বলে মার্শ জানান৷
অবচেতন যখন ভোট দিতে যায়...
যেসব নির্বাচনি এলাকায় প্রার্থীরা বেশি আকর্ষণীয় বলে গণ্য হন, সেখানে দৃশ্যত অনেক বেশি ভোটার ভোট দিতে যান৷ এই প্রসঙ্গে চাক্ষুষ প্রতীক অধ্যুষিত মাল্টিমিডিয়ার দুনিয়ায় অবচেতন যে তার ছাপ রেখে যেতে বাধ্য, মার্শ সে কথা স্মরণ করিয়ে দেন৷
‘‘যখন কোনো প্রার্থীকে স্বাস্থ্যবান, আকর্ষণীয় ও শারীরিকভাবে পটু বলে মনে হয়, তখন ভোটাররা তাকে সরকারি কাজকর্মের জন্য যোগ্যতর বলে গণ্য করেন৷ কোনো প্রার্থী অগোছালো বা কুশ্রী হলে, ভোটাররা তাকে কম দক্ষ বলে মনে করেন,'' মার্শ জানান৷
প্রার্থীদের ব্যক্তিগত আকর্ষণীয়তা-অনাকর্ষণীয়তা অধিকতর গুরুত্ব পাওয়ার আরেকটি কারণ সম্ভবত এই যে, রাজনৈতিক দলগুলি আর কোনো বাঁধা নীতির সঙ্গে যুক্ত নয় – যেমন প্রকৃতি সংরক্ষণ আর জার্মানির সবুজদের পেটোয়া নয়৷ কাজেই:
‘‘আমরা এমন একটা যুগে বাস করছি, যখন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা ব্যক্তিগত চেহারা নিতে চলেছে৷''
জার্মানির যে সাত রাজনৈতিক দলের নামও শোনেননি আপনি
জার্মানরা শুধু সিডিইউ বা এসপিডি নয়, কিছু ছোট এবং বিরল দলকেও ভোট দিতে পারে৷ এই যেমন, প্রাণী সুরক্ষা পার্টি কিংবা মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট পার্টি৷ ভাবছেন, এরা কারা? চলুন দেখে নিই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
প্রাণী সুরক্ষা দল
জার্মানিতে প্রাণী অধিকার বিষয়ক অ্যাক্টিভিস্টরা সুযোগ পেলে পুরো হাইওয়ে বন্ধ করে দেন যাতে ব্যাঙেরা নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারে৷ এমন দেশে তাই ‘অ্যানিমেল প্রোটেকশন পার্টি’ বা প্রাণী সুরক্ষা দল থাকবে না, তা কি হতে পারে? তবে গ্রিন পার্টির কারণে এ দলের পালে হাওয়া কম থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
দ্য রিপাবলিকানস
ব্যাপারটা কিছুটা বিভ্রান্তিকর৷ জার্মানির রয়েছে নিজস্ব রিপাবলিকান পার্টি, নাম আরইপি৷ তবে এই দলের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনো সম্পর্ক নেই৷ জার্মান রিপাবলিকনরা হচ্ছেন ডানপন্থি জাতীয়তাবাদী, যারা নিজেদের ‘রক্ষণশীল দেশপ্রেমিক’ এবং দেশের ‘সংস্কৃতি এবং আত্মপরিচয়’ রক্ষায় লড়াইরত বলে মনে করেন৷
ছবি: DW
দ্য পার্টি
হ্যাঁ, এই দলের নাম ‘দ্য পার্টি’৷ জার্মানির স্যাটায়ার ম্যাগাজিন ‘টাইটানিক’ এর সম্পাদকরা ২০০৪ সালে এই দলটি প্রতিষ্ঠা করেন৷ দলটির প্রধান হচ্ছেন মার্টিন স্যোনেবর্ন (ছবিতে)৷ ২০১৪ সালে তিনি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে দলটির জন্য একটি আসন নিশ্চিত করেন৷ ভবিষ্যতে দলটির অবস্থা আরো ভালো হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/Sven Simon/M. Ossowski
গণভোট দল
জার্মানির রেফারেন্ডাম পার্টি বা গণভোট দলের কাছে সুইজারল্যান্ড এক বিশাল অনুপ্রেরণা৷ দলটি চায় দেশের সব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গনভোটের মাধ্যমে জনগণ নেবে৷ সুইজারল্যান্ডে ২০১৬ সালে তেরোটি গণভোটের আয়োজন করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট পার্টি
জার্মানির এমএলপিডি একটি ছোট দল, যদিও দেশটির অর্ধেক মানুষ এক সময় কমিউনিস্ট ছিলেন৷ মানে ১৯৪৯ থেকে ১৯৮৯ সাল অবধি যখন জার্মানি দুই ভাগে বিভক্ত ছিল৷ তৎকালীন পূর্ব জার্মানি তখন শাসন করেছিল সোশ্যালিস্ট ইউনিটি পার্টি৷ বর্তমানে উগ্র বামপন্থি এমএলপিডি’র জার্মান রাজনীতিতে কোনো ভূমিকা নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Link
ক্রিশ্চিয়ানস ফর জার্মানি
‘অ্যালায়েন্স সি - ক্রিশ্চিয়ানস ফর জার্মানি’ একটি ক্রিশ্চিয়ান পার্টি, যেটির যাত্রা শুরু হয় ২০১৫ সালে৷ খ্রিষ্টান-মৌলবাদীদের একটি দল এবং শ্রমিক, পরিবেশ এবং পরিবারভিত্তিক একটি দল একত্র হয়ে এই দল গড়ে৷ বাইবেলের মান রক্ষা করে দেশ পরিচালনা করতে চায় এই দল৷