বলা হয় প্রথম বিশ্বকাপে অংশ নিতে না পেরে রাজনৈতিক অহমে লেগেছিল মুসোলিনির৷ আর তাই ১৯৩৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বকাপকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ইটালির ঘরেই রেখে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল এই ফ্যাসিস্ট৷ এখন কি দিন বদলেছে?
বিজ্ঞাপন
খেলার সাথে রাজনীতি অনেকেই ফারাকে রাখতে চান৷ বলতে চান খেলা হচ্ছে, এর সাথে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই৷ আসলে মোটেও তা নয়! খেলার মাঠে রাজনীতি ঢুকেই পড়ে৷ বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাস ব্যতিক্রম হবে এমন ভাবার কারণ নেই৷ এবারের বিশ্বকাপ শুরুর আগেই তো পরিস্থিতি যথেষ্ট তেতে উঠেছিল৷
এ বছরের ৪ মার্চ সাবেক রুশ গোয়েন্দা সের্গেই স্ক্রিপাল ও তাঁর মেয়েকে সোভিয়েত আমলের নার্ভ এজেন্ট দিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইংল্যান্ড থেকে ২৩ জন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে দেশটির সরকার৷ এর প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া থেকেও ২৩ জন ব্রিটিশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়৷
ঘটনা গড়াতে শুরু করলে ইংল্যান্ডের সরকার দলের মন্ত্রী এবং রাজপরিবার থেকে ঘোষণা আসে, তাঁরা কেউ রাশিয়া বিশ্বকাপের খেলা দেখতে যাবেন না৷
ইংল্যান্ড দলেরও বিশ্বকাপ বয়কটের শঙ্কা দেখা দিয়েছিল৷ অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও পোল্যান্ডের মতো দেশগুলোও বিশ্বকাপ বয়কটের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা চিন্তা করছিল৷ তবে শেষ পর্যন্ত সব দলই বিশ্বকাপে আসছে৷ যেমনটা এসেছিল গত বিশ্বকাপের আগ দিয়েও৷
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তারকাদের প্রিয় দল
মাশরাফি, সাকিব, তামিম, জেসি, আকরাম বা ক্রিকেটের বর্তমান ও সাবেক অন্য তারকাদের প্রিয় দল কোনটি? ফুটবল, দাবা, টেবিল টেনিসসহ অন্যান্য খেলার তারকারাই বা কোন দলের হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি দেখতে চান? ছবিঘরে থাকছে তারই বিস্তারিত...
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
মাশরাফি বিন মুর্তজা
মারাদোনাকে দেখে আর্জেন্টিনার সমর্থক হয়েছেন৷ কিন্তু গতবার আর্জেন্টিনা ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর ফুটবল দেখাই বন্ধ করে দিয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক, ‘‘২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালের পর টিভিতে আর কোনো ফুটবল দেখিনি৷ চার বছর পর সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল দেখলাম একটু৷’’ বিশ্বকাপ অবশ্য দেখবেন, তবে সেটি কোনো প্রত্যাশা নিয়ে নয়, ‘‘তারপর যদি মেসি জিতিয়ে দেয়, তো ভালো৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/I.S. Kodikara
সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালি সাব্বির
তাঁর আদুরে নাম ছিল ‘বাংলার ম্যারাডোনা’৷ অথচ সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালি সাব্বিরের প্রিয় দল ব্রাজিল! সে দল এবার ২০১৪ সালের মতো হতাশ করবে না বলেই সাবেক এই বলপ্লেয়ারের বিশ্বাস, ‘‘গত বিশ্বকাপে ইনজুরির কারণে নেইমার খেলতে না পারায় জার্মানির কাছে ওভাবে হারতে হয়েছে৷ এবার সেই নেইমার ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতাবে বলে আমার বিশ্বাস৷’’
ছবি: Noman Mohammad
সাথিরা জাকির জেসি
২০০২ বিশ্বকাপের সময় বিকেএসপিতে পড়তেন৷ প্রথম রাউন্ডে আর্জেন্টিনার বিদায়ের পর যা করেছিলেন তা মনে করে এখনো হাসেন সাথিরা জাকির জেসি, ‘‘তখন ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়তাম৷ আর্জেন্টিনা বাদ পড়ার পর হাত কেটে-টেটে খুব বাজে অবস্থা করেছিলাম৷’’ বিশ্বকাপে এখন আরেকটি দলও সমর্থন করছেন এই নারী ক্রিকেটার, ‘‘আর্জেন্টিনার পর আমি জার্মানি৷ গত তিন বিশ্বকাপেই জার্মানির কাছে হেরেছে আর্জেন্টিনা৷ আমার তাই বেশি দুঃখ নেই৷’’
ছবি: Mir Farid
শেখ মোহাম্মদ আসলাম
বাংলাদেশ ফুটবলের স্বর্ণসময়ের প্রতিনিধি তিনি৷ আর বিশ্ব ফুটবলের সুবর্ণ সময়ের দলটির সমর্থক শেখ মোহাম্মদ আসলাম, ‘‘পেলের ব্রাজিলকেই সমর্থন করেছি সব সময়৷’’ এখন না হয় পেলে নেই, তবে উত্তরসূরিদের কাছে প্রত্যাশা কমেনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এই স্ট্রাইকারের, ‘‘ফুটবল গোলের খেলা৷ আর সেই গোল করার মতো অনেক ফুটবলার রয়েছেন এখনকার ব্রাজিল দলে৷ আমার তাই মনে হয়, তাঁদের বিশ্বকাপ জয়ের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
সাকিব আল হাসান
মেসি আর আর্জেন্টিনার পাগলপারা ভক্ত তিনি৷ বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সতীর্থদের সঙ্গে এ নিয়ে সাকিব আল হাসানের তর্কযুদ্ধ চলে নিয়মিত৷ বছরজুড়ে তা মেসির দল বার্সেলোনাকে নিয়ে, বিশ্বকাপে হবে আর্জেন্টিনার পক্ষ নিয়ে৷ বিশ্বকাপে প্রিয় দল হতাশ করেছে বারবার; কিন্তু আবারও আশায় বুক বাঁধেন সাকিব৷ এবার মেসির হাতে উঠবে বিশ্বকাপ– এ আশায় জাতীয় দলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সময়ও টিভিতে খেলা দেখবেন চ্যাম্পিয়ন অলরাউন্ডার৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
মাবিয়া আক্তার সীমান্ত
১৪ জনের এক দল আছে তাঁদের– কাজিন ও বন্ধু মিলিয়ে৷ বিশ্বকাপের সময় তাঁরা তিন ভাগ– ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল৷ মাবিয়া আক্তার সীমান্ত ব্রাজিলের পক্ষে৷ কিন্তু বিশ্বকাপের সময় তাঁদের এই গ্রুপের কী যে হবে, এ নিয়ে কপট দুশ্চিন্তায় এসএ গেমসে স্বর্ণপদকজয়ী এই ভারোত্তলক, ‘‘আমরা বলেছি, বিশ্বকাপের সময় ব্রাজিলের ম্যাচ সবাই মিলে দেখতে হবে৷’’ প্রিয় দল ব্রাজিলের শিরোপা জয়ের ব্যাপারে খুব আশাবাদী সীমান্ত৷
ছবি: Khandakar Tarek
কায়সার হামিদ
১৯৮২-র বিশ্বকাপ জিততে পারেনি ব্রাজিল, কিন্তু হৃদয় জিতে নিয়েছিল বিশ্বজোড়া অনেক ভক্তের৷ কায়সার হামিদেরও৷ বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এই ডিফেন্ডারের চোখে এখনো ভাসে জিকো-সক্রেতিসের খেলা৷ এখনকার ব্রাজিল দল নিয়েও আশাবাদী৷ প্রিয় দল ফাইনালে গেলে ইচ্ছে আছে রাশিয়া যাবার, ‘‘২০০২-র ফাইনাল গ্যালারিতে বসে দেখেছি৷ জার্মানিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল৷ এবারও সেমিফাইনাল, ফাইনালের টিকেটের জন্য চেষ্টা করছি৷ ’’
ছবি: Noman Mohammad
ইমতিয়াজ সুলতান জনি
বাংলাদেশে সমর্থকদের মূল বিভক্তি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায়৷ জাতীয় দলের সাবেক ডিফেন্ডার ইমতিয়াজ সুলতান জনি সেখানে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম৷ জার্মানির কট্টর সমর্থক তিনি৷ কেন? ‘‘জার্মানরা ম্যাচ শেষ হবার আগে কখনো হাল ছাড়ে না৷ আর লড়াই করে সবাই মিলে,’’ কারণটা জানান এভাবে৷ এই বিশ্বকাপে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে যাচ্ছে প্রিয় দল৷ শিরোপা ধরে রাখায় আশাবাদী তিনি, ‘‘অবশ্য ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা-স্পেনকে গোনায় ধরতে হবে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
তামিম ইকবাল
বন্ধু সাকিব আল হাসানের সঙ্গে প্রিয় দল, প্রিয় খেলোয়াড় কিছুই মেলে না তামিম ইকবালের! বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনার ভক্ত সাকিব; রিয়াল মাদ্রিদ ও ব্রাজিলের ভক্ত তামিম৷ ব্রাজিলের সমর্থক হয়েছেন তিনি চট্টগ্রামের বিখ্যাত খান পরিবারের আবহের কারণে৷ বাবা-চাচা সবাই যে ওই দলের সমর্থক! এবারের টুর্নামেন্টে নেইমারের হাতে ট্রফিটা খুব করে দেখতে চান তামিম৷ প্রিয় বন্ধু সাকিবকে তাহলে খোঁচানো যাবে খুব!
ছবি: Getty Images/J. Mansfield
সাবিনা খাতুন
নতুন প্রজন্মের অনেকেই আর্জেন্টিনাকে ভালোবেসেছেন মেসিকে দেখে৷ যেমন, সাবিনা খাতুন৷ বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক বলছিলেন, ‘‘ফুটবল যখন থেকে বুঝি, তখন থেকে তো মেসিকেই কেবল দেখছি৷ মেসির কারণেই আমি আর্জেন্টিনার সমর্থক৷’’ এ বছর ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগে খেলে আসা সাবিনা জানালেন, ‘‘প্রতি বিশ্বকাপই আশা নিয়ে দেখতে বসি৷ এবারও আশায় থাকবো, মেসি যেন আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতাতে পারেন৷’’
ছবি: Mir Farid
আলফাজ আহমেদ
কিশোর লিগ খেলা ছোট্ট ছেলেটি প্রথম বিশ্বকাপ দেখে ১৯৮৬ সালে৷ আর দিয়েগো মারাদোনাকে দেখার পর মনে হয়, ফুটবলার তাঁকে হতেই হবে৷ তা হয়েছেন আলফাজ আহমেদ৷ প্রিয় দল আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন মারাদোনা৷ বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এই স্ট্রাইকারের এবারের প্রত্যাশা লিওনেল মেসির কাছে, ‘‘ও তো ফুটবলে সব শিরোপাই পেয়েছে৷ আশা করি এবার বিশ্বকাপটাও পাবে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
শফিকুল ইসলাম মানিক
১৯৯৮ সালে এক কোচিং কোর্সের জন্য ব্রাজিলে গিয়ে দেখা হয় রোমারিও, বেবেতো, কার্লোস আলবের্তো পারেইরা, মারিও জাগালোর মতো কিংবদন্তিদের সঙ্গে৷ জাতীয় দলের সাবেক কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক অবশ্য ব্রাজিলকে সমর্থন করেন আরো অনেক আগে থেকেই৷ প্রিয় দলকে নিয়ে এবারও আশাবাদী তিনি, ‘‘আগে গ্রুপ পর্ব পেরোতে হবে৷ এরপর তো নকআউট পর্বের প্রতিটি ম্যাচই ফাইনাল৷ তবে এবারের ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী৷’’
ছবি: Noman Mohammad
জোবেরা রহমান লিনু
ছিলেন ব্রাজিলের সমর্থক৷ কিন্তু ১৯৮৬ বিশ্বকাপে মারাদোনার খেলা দেখে সমর্থন পাল্টে যায় জোবেরা রহমান লিনুর, ‘‘মারাদোনার খেলা দেখার পর থেকে আমি আর্জেন্টিনার ভক্ত৷’’ টেবিল টেনিসে জাতীয় পর্যায়ে সর্বাধিক শিরোপায় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লেখানো এই খেলোয়াড় বিশ্বকাপ ফুটবল দেখেন নিয়মিত৷ বাবার অসুস্থতার কারণে এবার সেদিকে মনোযোগ নেই খুব একটা৷ ‘‘তবে আর্জেন্টিনা শিরোপা জিতলে ভালো লাগবে’’–বলেছেন লিনু৷
ছবি: Khandakar Tarek
আমিনুল হক
তাঁর কাজ ছিল গোল ঠেকানো৷ কিন্তু আমিনুল হক ব্রাজিলের ভক্ত হয়ে যান দলটির গোল করার ক্ষমতা দেখে৷ ‘‘ছোটবেলা থেকেই বিশ্বকাপ দেখি নিয়মিত৷ আর সব সময়ই দেখেছি, ব্রাজিলের গোল করতে সমস্যা হয় না কোনো৷ ডিফেন্সে সমস্যা থাকে৷ কিন্তু এবারের দলটির ডিফেন্সও ভালো৷ আমার তাই মনে হয়, এই ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিততে পারবে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
জাহিদ হাসান এমিলি
মারাদোনার শেষ বিশ্বকাপেই তাঁকে প্রথম দেখেন জাহিদ হাসান এমিলি; ১৯৯৪ সালে৷ তাঁর নিজের বয়স তখন সাত বছর৷ কান্নাভেজা ওই আর্জেন্টাইনকে দেখে আর্জেন্টিনার ভক্ত হয়ে যান বাংলাদেশ জাতীয় দলের এই ফরোয়ার্ড৷ তবে প্রিয় দলকে বিশ্বকাপ জিততে দেখেননি কখনো৷ এবারও সে সম্ভাবনা বেশি দেখেন না এমিলি, ‘‘আবেগ একপাশে রেখে বললে, আর্জেন্টিনার জন্য বিশ্বকাপ জয় কঠিন৷ ব্রাজিল, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেনকেই বরং আমি এগিয়ে রাখবো৷’’
ছবি: Noman Mohammad
আকরাম খান
শুধু বিশ্বকাপ নয়, ইউরোপিয়ান ফুটবলের বিভিন্ন লিগের খেলাও নিয়মিত দেখেন আকরাম খান৷ বিশ্বকাপে প্রিয় দল ব্রাজিল৷ ২০১২ অলিম্পিকে ব্রাজিলের ম্যাচ দেখেছেন গ্যালারি থেকে৷ এবারও যাবেন বিশ্বকাপে৷ সেখানে প্রিয় দলের হাতে ট্রফি দেখতে চান আইসিসি ট্রফিজয়ী বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক, ‘‘আমি জুলাইয়ের ১০ তারিখ রাশিয়া যাবো৷ একটি সেমিফাইনাল ও ফাইনাল দেখবো৷ আশা করি, নেইমারের হাতে ট্রফি দেখেই ফিরতে পারবো দেশে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
রানী হামিদ
বাংলাদেশে ‘দাবার রানী’ তিনি৷ ছেলে কায়সার হামিদ আবার ফুটবলের কিংবদন্তি৷ রানী হামিদের তাই ফুটবলও প্রিয়৷ আর বিশ্বকাপের প্রিয় দল? ‘‘বাসার সবাই ব্রাজিল সমর্থন করতো বলে আমাকেও তা করতে হতো৷ আমার কিন্তু মনে মনে ইংল্যান্ডকে ভালো লাগতো৷ কারণ, আমাদের সিলেটিদের জন্য ইংল্যান্ড দ্বিতীয় বাড়ির মতো৷ এবারের বিশ্বকাপে এ দুটো দলের একটি চ্যাম্পিয়ন হলে ভালো লাগবে৷’’
ছবি: Khandakar Tarek
মিনহাজুল আবেদীন নান্নু
৮৬ বিশ্বকাপের সময় মাইনর কাউন্টি খেলার জন্য ইংল্যান্ডে ছিলেন৷ আর্জেন্টিনা-ইংল্যান্ড ম্যাচের কথা মনে আছে স্পষ্ট, ‘‘আমি আর নোবেল একটি পাবে খেলা দেখছিলাম৷ মারাদোনা হাত দিয়ে গোল করার পর চিত্কার করে উঠেছিল নোবেল৷ বাকি সবাই চোখ ঘুরিয়ে দেখছিলো ওকে৷’’ ভাইয়ের মতো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়কের প্রিয় দল অবশ্য আর্জেন্টিনা নয়, ‘‘আমার পছন্দ ইংল্যান্ড৷ ওরা বাদ পড়ে গেলে জার্মানিকে সমর্থন করবো৷’’
ছবি: Noman Mohammad
হাবিবুল বাশার সুমন
১৯৮২ বিশ্বকাপ তাঁর মনে আছে আবছা৷ ১৯৮৬ বিশ্বকাপ পুরোপুরি৷ এ দুটো আসর ব্রাজিলের জন্য হতাশার হলেও হাবিবুল বাশার সুমনের ভালোবাসার বদল হয়নি৷ এবারও প্রিয় দলের বিশ্বকাপ জয়ের আশায় টিভির সামনে থাকবেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক, ‘‘আর্জেন্টিনার ব্যক্তিবিশেষের খেলা হয়তো ভালো লাগে৷ আগে যেমন ছিলেন মারাদোনা, এখন মেসি৷ কিন্তু ব্রাজিল দল হিসেবে খেলে চমত্কার৷ আশা করছি এবার বিশ্বকাপ জিতে সে হতাশা কাটাবো৷’’
ছবি: Noman Mohammad
আবদুল্লাহ হেল বাকি
কমনওয়েলথ গেমসে রৌপ্যপদকজয়ী শুটার আবদুল্লাহ-হেল বাকি আর্জেন্টিনার পাঁড় সমর্থক৷ কেন? উত্তরটাও ওই পাঁড় সমর্থকের মতো, ‘‘খেলা যাঁরা বোঝেন, তাঁরা সবাই আর্জেন্টিনাই সমর্থন করেন৷’’ কিন্তু সেই ‘খেলা বুঝেই’ প্রিয় দলকে নিয়ে এবার খুব একটা আশাবাদী হতে পারছেন না বাকী, ‘‘সত্যি বলতে কী, খুব একটা আশা আমি দেখছি না৷ তবে একজন মেসি যখন রয়েছে আর্জেন্টিনার, তখন কিছুই অসম্ভব না৷’’
ছবি: Noman Mohammad
20 ছবি1 | 20
২০১৪ সালের ওই বিশ্বকাপের আগ দিয়ে ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া নিয়ে রাশিয়া ও অ্যামেরিকার মধ্যে সম্পর্ক অনেকটা নব্বই-পূর্ববর্তী স্নায়ুযুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল৷
বিশ্বকাপ ফুটবল সামনে রেখে তখন অ্যামেরিকার দু'জন সিনেটর এবং রাশিয়ার দুই সিনেটর একে অপরের দেশকে বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কারের জন্য ফিফার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছিলেন৷ ফিফা অবশ্য খেলার সঙ্গে রাজনীতিকে যুক্ত না করার নীতি অনুযায়ী অ্যামেরিকা বা রাশিয়া কোনো পক্ষের চিঠিকেই পাত্তা দেয়নি৷
সেই সময় থেকেই অ্যামেরিকা ও ইংল্যান্ড রাশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ বন্ধ করতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছিল রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এ নিয়ে টিভিতে সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন৷
ইতিহাসও কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবলে রাজনীতি ঢুকে পড়ার সাক্ষ্যই দিচ্ছে৷ ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পরপরই ইরানের সাথে অ্যামেরিকার রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক চরম আকার ধারণ করে৷
প্রায় ২০ বছর পর ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপে দুই দল মুখোমুখি হয়৷ এই খেলার আগে নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা৷ সে সময়ের ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি দেশটির খেলোয়াড়দের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘‘খেলা শুরুর আগে ইরানের খেলোয়াড়দের অবশ্যই অ্যামেরিকান ফুটবলাদের সাথে করমর্দন করা উচিত নয়৷''
কিন্তু সবাইকে বিস্মিত করে দিয়ে ওই খেলার আগে প্রত্যেক ইরানি খেলোয়াড় অ্যামেরিকান খেলোয়াড়দের ফুল উপহার দিয়েছিলেন৷ খেলার কাছে প্রতিহিংসার রাজনীতি হয়ত পরাজিত হয়, কিন্তু উত্তেজনা থেকেই যায়৷
১৯৮২ সালে নিজেদের সীমানার ৩০০ মাইল দূরে ফকল্যান্ড দ্বীপ দখল করে আর্জেন্টিনা৷ দ্বীপটি ব্রিটিশ শাসনের আওতায় ছিল৷ ফলে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যায়৷ দু'পক্ষের ৯০০ লোকের প্রাণহানি হয়৷ এর চার বছর পরে ভাগ্যের ফেরে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে দু'দেশের দেখা হয়ে যায়৷ ওই বিশ্বকাপের নায়ক মারাদোনা পরবর্তীতে বলেছিলেন, ইংল্যান্ডের সাথে ওই ম্যাচ জেতার ক্ষেত্রে ফকল্যান্ড যুদ্ধে নিহত আর্জেন্টাইন সেনাদের মুখচ্ছবি তাঁকে প্রেরণা দিয়েছিল৷
১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপ ছিল অদ্ভুত৷ পুঁজিবাদী ও কমিউনিস্ট ভাবধারার দেশগুলোর মধ্যে চলছিল স্নায়ুযুদ্ধ৷ ঠিক এ সময়ে ইউরোপের ফুটবল পরাশক্তি ও পুঁজিবাদী ভাবধারার রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন এবং পর্তুগাল প্রতিযোগিতার বাছাই পর্বেই বাদ পড়ে৷ তাদের বদলে বিস্ময়করভাবে ইউরোপ থেকে বিশ্বকাপে ঠাঁই নেয় সমাজতান্ত্রিক বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড, যুগোশ্লাভিয়া এবং পূর্ব জার্মানি৷
ঐ বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে মুখোমুখি হয়েছিল পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি৷ ফুটবল দক্ষতায় পশ্চিম জার্মানি অনেক এগিয়ে থাকলেও পূর্ব জার্মানি সেবার ১-০ গোলে জিতেছিল৷ অবশ্য পরে বিশ্বকাপটি জিতেছিল পশ্চিম জার্মানি৷
২০০৬ সালে বিশ্বকাপে অ্যাঙ্গোলা-পর্তুগালের খেলাকে ঘিরেও যথেষ্ট উত্তেজনা ছড়িয়েছিল৷ ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতা লাভের আগে অ্যাঙ্গোলা প্রায় ৫০০ বছর পর্তুগিজ উপনিবেশ ছিল৷ ২০০১ সালে দু'দেশ এক বন্ধুত্বপূর্ণ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল, তবে পরে ম্যাচটি ঘিরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়৷ ম্যাচটিতে অ্যাঙ্গোলার চারজন খেলোয়াড় লালকার্ড দেখার পর সংঘর্ষ শুরু হয়৷ পরে ৬৭ মিনিটে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়৷ পর্তুগাল ৫-১ গোলে জেতে৷
অবশ্য ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে অবশ্য কোনোরকম অঘটন বা লালকার্ড ছাড়াই খেলা শেষ হয়েছিল৷
রাজনীতি আর খেলার মধ্যে সম্পর্ক বাংলাদেশের দিকে তাকালেও পাওয়া যাবে৷ আমাদের দেশে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের সমর্থক বেশি থাকার একটি বড় কারণ সম্ভবত তারাও আমাদের মতোই গরিব রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করে বিশ্বকাপে৷
রাজনৈতিক দর্শন থেকে, এমনকি পশ্চিমা ক্লাব ফুটবলও বাদ যায় না৷ সে আলোচনা করতে গেলে লেখা দীর্ঘ হবে৷ আশার কথা এই যে, বিগত চার-পাঁচ দশকে প্রতিহিংসার রাজনীতি ফুটবলের সৌন্দর্য্যে শঙ্কা তৈরি করলেও, শেষ পর্যন্ত জয় হয়েছে খেলারই৷
বিশ্বকাপ রাশিয়ায় না বাংলাদেশে?
বিশ্বকাপে মুখোমুখি হবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা? হতে পারে, না-ও হতে পারে৷ কিন্তু বাংলাদেশে তারা মুখোমুখি৷ পুরো বাংলাদেশ যেভাবে মেতেছে ফুটবল উন্মাদনায়, তাতে চট করে মনে হতে পারে, বিশ্বকাপ যেন শুরু হলো বাংলাদেশে৷
ছবি: Noman Mohammad
পল্টন ময়দানে মুখোমুখি তারা
ঢাকার পল্টন ময়দানে আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিলের ম্যাচ৷ নাইন স্টার যুব সংঘ নামের একটি ক্লাব এই প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করে৷ এর আগেও দু’বার তারা এমন ম্যাচের আয়োজন করেছিল৷
ছবি: Noman Mohammad
গুলিস্তান যেন বিশ্বকাপের বাজার
নানান দেশের পতাকা আর বিশ্বকাপের জার্সির বাজার হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান৷ ক্রেতারাও যেন লাইন ধরেছেন৷ আগেভাগেই কিনতে শুরু করেছেন প্রিয় দলের পতাকা বা জার্সি৷
ছবি: Bdnews24.com
ক্রিকেটার তারেক আজিকের দোকানে
ক্রিকেটার তারেক আজিজ তাঁর স্পোর্টস সামগ্রীর দোকানে বিশ্বকাপের নানান জার্সির পসরা সাজিয়ে বসেছেন৷ বিক্রিও হচ্ছে খুব৷
ছবি: Noman Mohammad
ব্রাজিল, না আর্জেন্টিনা?
ব্রাজিল, না আর্জেন্টিনা? তর্কের শেষ নেই৷ মেসি, না নেইমার, কে ভালো, কত ভালো তার বিশ্লেষণ চলছে৷ দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে চলছে চাপা দ্বন্দ্ব, ফোঁসফাঁস৷ দোকানে সাজিয়ে রাখা বিপুল পরিমাণ জার্সির একটি বড় অংশই উঠবে এ দুই দলের সমর্থকদের গায়ে৷
দেয়ালে দেয়ালে এমন ছবিও চোখে পড়ছে শহরের অলিগলিতে৷ ব্রাজিলের তারকা নেইমারের অনেকগুলো ছবি ক্যামেরাবন্দি হয়েছে৷
ছবি: Noman Mohammad
জার্মান সমর্থক
ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার সমর্থক বেশি হলেও বাংলাদেশে জার্মান সমর্থকও খুব কম নয়৷ আর সমর্থক না হলেও ভালোবাসেন জার্মান জার্সিকে৷
ছবি: Noman Mohammad
দরদাম
বিশ্বকাপ ফুটবলকে সামনে রেখে ঢাকার গুলিস্তানে পতাকা কিনেছেন এই সমর্থকরা৷ চলছে বিক্রেতার সাথে দরদাম৷
ছবি: Bdnews24.com
পোস্টার ও ক্যালেন্ডারেও তারা
প্রিয় দলের খেলোয়াড়রা জায়গা পেয়েছে পোস্টার ও ক্যালেন্ডারেও৷
ছবি: Noman Mohammad
রাস্তার ওপর
রাজউকের সামনে রাস্তার ওপরও পতাকা উড়তে দেখা গেছে৷
ছবি: Noman Mohammad
বাড়ির ছাদে
পতাকা উড়ছে বাড়ির ছাদে ছাদে৷ এ সময়টায় এ চিত্র দেখা যায় সারা দেশে৷ তবে সম্প্রতি একটি রিটের কারণে অন্য দেশের পতাকা উত্তোলন নিয়ে বিতর্ক চলছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পতাকার ফেরিওয়ালা
একমাত্র বিশ্বকাপ এলেই পতাকার ফেরিওয়ালার বাঁশে আশ্রয় নেয় এমন রঙ-বেরঙের নানা দেশের পতাকা৷ অন্য সময় বাংলাদেশেরই বিভিন্ন সাইজের পতাকা থাকে সেখানে৷
ছবি: Bdnews24.com
ঈদেও জার্সি
সামনে রোজার ঈদ৷ অনেকেই গ্রামের বাড়ি যাবেন৷ তাই গ্রামের বাড়িতে থাকা স্বজনদের জন্যও কেউ কেউ নিয়ে যাবেন জার্সি৷ ঈদের আনন্দের সাথে ভাগাভাগি হবে খেলার আনন্দ৷
ছবি: Bdnews24.com
13 ছবি1 | 13
ক্রীড়ার ওপর রাজনীতির প্রভাব কতটা? লিখুন নীচের ঘরে৷